আশরাফুল আযম খান
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে–এ ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে দেশের পরিস্থিতি আবার সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক অঞ্চল আবার দখলে নিয়েছে নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতাচ্যুত তালেবান গোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয় আফগান সেনাবাহিনী নিজেদের দুর্বলতার কারণে এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছে না। হয় তারা পরাজিত হচ্ছে, না হয় প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে শেষরক্ষার চেষ্টা করছে। জাতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তায় গঠিত সরকারের আধা মিলিশিয়া বাহিনীও দেশরক্ষায় তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থের অভাবে।
আমেরিকার মিত্রবাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা ও উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে তালেবানদের আগ্রাসী মনোভাবের মুখে সেনাবাহিনীর মনোবলে দারুণ চিড় ধরেছে। রয়েছে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট দেশটির গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকার অভাবে সেনাসদস্যরা মাসের পর মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। গত দুই বছরে দারিদ্র্যের হার ৫৫ থেকে বেড়ে ৭২ শতাংশ। জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশই এখন বেকার। এ অবস্থায় তালেবান বাহিনী কান্দাহার দখল করে রাজধানী কাবুলের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তালেবানদের হাতে কাবুলের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দেশটিতে মার্কিন বা মিত্রশক্তিকে সহায়তাকারী হাজার হাজার দোভাষী, খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী, কূটনীতিক, সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ ভিসার জন্য মার্কিন ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর সামনে ভিড় করছেন। তাঁদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা আর ভীতির ছায়া। কাবুলের পরাজয়ের মাধ্যমে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠার আগে উচ্চবিত্তসহ ব্যক্তিস্বাধীনতাকামী শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়াই মুক্তির পথ মনে করছেন।
কিন্তু কেন এমন হলো? দুই দশক ধরে ন্যাটো বাহিনী তাহলে আফগানিস্তানে কী করল? দুই দশক ধরে শুরু হওয়া আফগানিস্তানের পুনর্গঠন বা গণতন্ত্রায়ণের কাজ কেনই-বা সফল হলো না?
যদিও আমেরিকা ও মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: আফগান মিশন সফল হয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে সাধারণ আফগান, কূটনীতিক ও রাজনীতিবিশেষজ্ঞরা এই ব্যাখ্যার সঙ্গে মোটেই সহমত পোষণ করছেন না। তাঁদের মতে, মার্কিন ও মিত্রবাহিনী আফগানিস্তানকে এক অনিরাপদ ও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রেখে যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেন, যে দ্রুততার সঙ্গে শর্তহীনভাবে মার্কিন ও মিত্রবাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে; তাতে আফগান সংকট অতীতের চেয়ে গুরুতর পরিস্থিতি ধারণ করবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম আফগানিস্তান। দুই দশকে উন্নয়ন–সহযোগীরা যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছিল, তার সুফল পায়নি গ্রামের সাধারণ মানুষ। এর অধিকাংশ অর্থ দুর্নীতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা মানুষগুলো আত্মসাৎ করেছে অথবা ব্যবহৃত হয়েছে শহরের কিছুসংখ্যক মানুষের জন্য। নির্মাণ করা যায়নি অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। রাজধানী কাবুলে দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ বা খাওয়ার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। গ্রামে জীবিকার প্রধান অংশ কৃষি হলেও এর উন্নয়ন হয়নি। বরং বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিদেশি পরামর্শে আফগান সরকার পপি চাষ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ায় গ্রামীণ জনজীবন অর্থনৈতিকভাবে সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।
দেশের বিচারব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দীর্ঘসূত্রতা জনগণকে সরকারের প্রতি আস্থাহীন করে তুলেছে। সামাজিক অপরাধ, পারিবারিক বিরোধ থেকে শুরু করে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রচলিত বিচারব্যবস্থা অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
জনজীবন ও অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতি রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে দখলকৃত একটা বড় এলাকায় তালেবানরা বিকল্প সরকার বা ছায়া সরকার গঠন করেছে। জেলাভিত্তিক গভর্নর নিযুক্তি দিয়েছে। তাদের রয়েছে স্থানীয়ভাবে গঠিত কাউন্সিল বা কমিশন। জনগণের মধ্য থেকে নিয়মিত ট্যাক্স আদায়, নির্দেশনা প্রদান, রিক্রুটমেন্ট, বিচার সংঘটন, স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করছে তালেবান। তা ছাড়া, তালেবানদের রয়েছে রকেট লঞ্চারসহ আধুনিক অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত ৭৫ হাজারের বেশি ধর্মযোদ্ধা।
অন্যদিকে আমেরিকা ও মিত্রবাহিনীর ছায়ায় অর্জিত গত দুই দশকে আফগানিস্তানের কিছু ইতিবাচক দিক উল্লেখযোগ্য। ইউনেসকোর মতে, শিক্ষায় দুই দশকে আফগানিস্তান অনেক এগিয়েছে। বর্তমানে আফগান জনগোষ্ঠীর অর্ধেক লোক শিক্ষিত। মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও সাফল্য এশিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ দেশের নারীরা এখন ভোট দিতে পারেন, রাজনীতি করতে পারেন, ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। গত দুই দশকে দেশটিতে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা গেছে। সে আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, প্রশাসনিক কাঠামোসহ নিজস্ব প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি করা গেছে। দেশের মধ্যবিত্ত, সুশীল সমাজের পরিধি বেড়েছে অনেক গুণ।
ওপরের পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের সামনে কী ধরনের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে নানা রকম আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, আফগানিস্তানে ক্ষমতার পরিবর্তন গণহত্যা ও গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করবে। আফগান রাষ্ট্রের অগ্রগতি, নিরাপত্তা, অখণ্ডতা দারুণভাবে হুমকির মুখে পড়বে। আফগানিস্তানে বিশাল ভৌগোলিক কাঠামো ও ভূরাজনীতির বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যতীত তালেবানের মতো কোনো চরমবাদী একক শক্তির পক্ষে এর অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব বেশি দিন বজায় রাখা সম্ভব হবে না। ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানের সময়ের চেয়ে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ছোট-বড় দুই ডজন শক্তি আফগানিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল রয়েছে। এরা পরস্পর আফগানিস্তানের ঐক্য, অখণ্ডতা, নিরাপত্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন কায়েম হলে গত দুই দশকে অর্জিত আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক, মানবিক অগ্রগতি দারুণভাবে বাধগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
নারীশিক্ষা আবারও বন্ধ হয়ে যাবে, নারীরা চাকরি-ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নিতে পারবেন না, ভোটাধিকার-মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হবে, কালো বোরকায় নিজেকে ঢেকে নারীদের অন্তঃপুরে বন্দী হতে হবে। পুরুষকে দাড়ি রাখতে বাধ্য করা হবে। ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। রেডিও শোনা, টেলিভিশন দেখা, ছবি তোলা, গান শোনা, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি শক্তিশালী শরিয়াহ আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হবে। ইতিমধ্যে তালেবানের দখলকৃত এলাকায় নারীদের স্কুল, হাসপাতাল, বাজারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাজিকিস্তান, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ইসলামি মৌলবাদী শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আল কায়েদা-আইএস-হাক্কানির মতো উগ্র গোষ্ঠীগুলো বর্তমানে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও তালেবানদের মদদে এসব অঞ্চলে পুনর্গঠিত বা বিস্তৃত হতে পারে। ৯/১১-এর মতো নতুন করে পশ্চিমা বিশ্ব শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
তাহলে আফগানিস্তান সংকটের সমাধান কোন পথে? অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মনে করেন, আফগানদের নিজেদেরই এই সংকটের সমাধান বের করতে হবে। ক্রিয়াশীল দল বা শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতা, অস্ত্র ত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, নির্বাচন, ক্ষমতার ভাগাভাগি হতে পারে এর আশু শান্তিপূর্ণ সমাধান। দেশের বাইরে থেকে আসা কোনো ‘এক্সটার্নাল সেভিয়র’ আফগানিস্তানকে রক্ষা করতে পারবে না।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে–এ ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে দেশের পরিস্থিতি আবার সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক অঞ্চল আবার দখলে নিয়েছে নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতাচ্যুত তালেবান গোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয় আফগান সেনাবাহিনী নিজেদের দুর্বলতার কারণে এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছে না। হয় তারা পরাজিত হচ্ছে, না হয় প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে শেষরক্ষার চেষ্টা করছে। জাতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তায় গঠিত সরকারের আধা মিলিশিয়া বাহিনীও দেশরক্ষায় তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থের অভাবে।
আমেরিকার মিত্রবাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা ও উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে তালেবানদের আগ্রাসী মনোভাবের মুখে সেনাবাহিনীর মনোবলে দারুণ চিড় ধরেছে। রয়েছে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট দেশটির গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকার অভাবে সেনাসদস্যরা মাসের পর মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। গত দুই বছরে দারিদ্র্যের হার ৫৫ থেকে বেড়ে ৭২ শতাংশ। জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশই এখন বেকার। এ অবস্থায় তালেবান বাহিনী কান্দাহার দখল করে রাজধানী কাবুলের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তালেবানদের হাতে কাবুলের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দেশটিতে মার্কিন বা মিত্রশক্তিকে সহায়তাকারী হাজার হাজার দোভাষী, খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী, কূটনীতিক, সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ ভিসার জন্য মার্কিন ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর সামনে ভিড় করছেন। তাঁদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা আর ভীতির ছায়া। কাবুলের পরাজয়ের মাধ্যমে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠার আগে উচ্চবিত্তসহ ব্যক্তিস্বাধীনতাকামী শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়াই মুক্তির পথ মনে করছেন।
কিন্তু কেন এমন হলো? দুই দশক ধরে ন্যাটো বাহিনী তাহলে আফগানিস্তানে কী করল? দুই দশক ধরে শুরু হওয়া আফগানিস্তানের পুনর্গঠন বা গণতন্ত্রায়ণের কাজ কেনই-বা সফল হলো না?
যদিও আমেরিকা ও মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: আফগান মিশন সফল হয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে সাধারণ আফগান, কূটনীতিক ও রাজনীতিবিশেষজ্ঞরা এই ব্যাখ্যার সঙ্গে মোটেই সহমত পোষণ করছেন না। তাঁদের মতে, মার্কিন ও মিত্রবাহিনী আফগানিস্তানকে এক অনিরাপদ ও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রেখে যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেন, যে দ্রুততার সঙ্গে শর্তহীনভাবে মার্কিন ও মিত্রবাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে; তাতে আফগান সংকট অতীতের চেয়ে গুরুতর পরিস্থিতি ধারণ করবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম আফগানিস্তান। দুই দশকে উন্নয়ন–সহযোগীরা যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছিল, তার সুফল পায়নি গ্রামের সাধারণ মানুষ। এর অধিকাংশ অর্থ দুর্নীতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা মানুষগুলো আত্মসাৎ করেছে অথবা ব্যবহৃত হয়েছে শহরের কিছুসংখ্যক মানুষের জন্য। নির্মাণ করা যায়নি অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। রাজধানী কাবুলে দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ বা খাওয়ার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। গ্রামে জীবিকার প্রধান অংশ কৃষি হলেও এর উন্নয়ন হয়নি। বরং বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিদেশি পরামর্শে আফগান সরকার পপি চাষ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ায় গ্রামীণ জনজীবন অর্থনৈতিকভাবে সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।
দেশের বিচারব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দীর্ঘসূত্রতা জনগণকে সরকারের প্রতি আস্থাহীন করে তুলেছে। সামাজিক অপরাধ, পারিবারিক বিরোধ থেকে শুরু করে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রচলিত বিচারব্যবস্থা অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
জনজীবন ও অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতি রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে দখলকৃত একটা বড় এলাকায় তালেবানরা বিকল্প সরকার বা ছায়া সরকার গঠন করেছে। জেলাভিত্তিক গভর্নর নিযুক্তি দিয়েছে। তাদের রয়েছে স্থানীয়ভাবে গঠিত কাউন্সিল বা কমিশন। জনগণের মধ্য থেকে নিয়মিত ট্যাক্স আদায়, নির্দেশনা প্রদান, রিক্রুটমেন্ট, বিচার সংঘটন, স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করছে তালেবান। তা ছাড়া, তালেবানদের রয়েছে রকেট লঞ্চারসহ আধুনিক অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত ৭৫ হাজারের বেশি ধর্মযোদ্ধা।
অন্যদিকে আমেরিকা ও মিত্রবাহিনীর ছায়ায় অর্জিত গত দুই দশকে আফগানিস্তানের কিছু ইতিবাচক দিক উল্লেখযোগ্য। ইউনেসকোর মতে, শিক্ষায় দুই দশকে আফগানিস্তান অনেক এগিয়েছে। বর্তমানে আফগান জনগোষ্ঠীর অর্ধেক লোক শিক্ষিত। মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও সাফল্য এশিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ দেশের নারীরা এখন ভোট দিতে পারেন, রাজনীতি করতে পারেন, ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। গত দুই দশকে দেশটিতে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা গেছে। সে আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, প্রশাসনিক কাঠামোসহ নিজস্ব প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি করা গেছে। দেশের মধ্যবিত্ত, সুশীল সমাজের পরিধি বেড়েছে অনেক গুণ।
ওপরের পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের সামনে কী ধরনের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে নানা রকম আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, আফগানিস্তানে ক্ষমতার পরিবর্তন গণহত্যা ও গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করবে। আফগান রাষ্ট্রের অগ্রগতি, নিরাপত্তা, অখণ্ডতা দারুণভাবে হুমকির মুখে পড়বে। আফগানিস্তানে বিশাল ভৌগোলিক কাঠামো ও ভূরাজনীতির বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যতীত তালেবানের মতো কোনো চরমবাদী একক শক্তির পক্ষে এর অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব বেশি দিন বজায় রাখা সম্ভব হবে না। ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানের সময়ের চেয়ে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ছোট-বড় দুই ডজন শক্তি আফগানিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল রয়েছে। এরা পরস্পর আফগানিস্তানের ঐক্য, অখণ্ডতা, নিরাপত্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন কায়েম হলে গত দুই দশকে অর্জিত আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক, মানবিক অগ্রগতি দারুণভাবে বাধগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
নারীশিক্ষা আবারও বন্ধ হয়ে যাবে, নারীরা চাকরি-ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নিতে পারবেন না, ভোটাধিকার-মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হবে, কালো বোরকায় নিজেকে ঢেকে নারীদের অন্তঃপুরে বন্দী হতে হবে। পুরুষকে দাড়ি রাখতে বাধ্য করা হবে। ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। রেডিও শোনা, টেলিভিশন দেখা, ছবি তোলা, গান শোনা, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি শক্তিশালী শরিয়াহ আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হবে। ইতিমধ্যে তালেবানের দখলকৃত এলাকায় নারীদের স্কুল, হাসপাতাল, বাজারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাজিকিস্তান, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ইসলামি মৌলবাদী শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আল কায়েদা-আইএস-হাক্কানির মতো উগ্র গোষ্ঠীগুলো বর্তমানে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও তালেবানদের মদদে এসব অঞ্চলে পুনর্গঠিত বা বিস্তৃত হতে পারে। ৯/১১-এর মতো নতুন করে পশ্চিমা বিশ্ব শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
তাহলে আফগানিস্তান সংকটের সমাধান কোন পথে? অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মনে করেন, আফগানদের নিজেদেরই এই সংকটের সমাধান বের করতে হবে। ক্রিয়াশীল দল বা শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতা, অস্ত্র ত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, নির্বাচন, ক্ষমতার ভাগাভাগি হতে পারে এর আশু শান্তিপূর্ণ সমাধান। দেশের বাইরে থেকে আসা কোনো ‘এক্সটার্নাল সেভিয়র’ আফগানিস্তানকে রক্ষা করতে পারবে না।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে