বিজন সাহা
১৫ দিন পর মস্কো গেলাম। পরীক্ষা অনলাইনে, তবে ডিফেন্ড অব লাইনে। তাই যাওয়া। সকালে গুলিয়া মস্কো গিয়েছে, আমি যাব রাত ৯টার ট্রেনে। শেষ পর্যন্ত এক ছেলের সঙ্গে ওর কারে গেলাম। ও বাসা থেকে তুলে নিল বলে বাচ্চাদের জন্য স্মোকড মাংস, ক্রিস্টিনার কিছু জিনিস বাদে বিড়ালের ঘরটাও সঙ্গে নিলাম। সেভা ফ্রি থাকলে মেট্রোতে দেখা করে। সামার জবে ঢুকেছে বলে পারবে না। ইশ! হঠাৎ যদি মনিকা বা ক্রিস্টিনার সঙ্গে দেখা হতো! স্পোরতিভনায়া এসে মনে হলো এস্কেলেটরের একটু ওপরে মনিকা দাঁড়িয়ে। মুখ দেখা যাচ্ছিল না বলে নিশ্চিত ছিলাম না। ওপরে উঠতেই দেখি দরজা দিয়ে মনিকা বেরিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম, আমি বেরিয়েই ডাকব। দেখি, মিশা ওর জন্য অপেক্ষা করছে। তাই আর ডাকা হলো না। ইচ্ছে করেই ওদের দৃষ্টি এড়িয়ে চলে গেলাম। মিশা ওকে নিতে মেট্রো পর্যন্ত এসেছে দেখে খুশিই হলাম। ছেলেরা মেয়েদের আগলে রাখলে কোন বাবা-মা খুশি না হন? ওরা কি আমাকে দেখতে পেয়েছে? বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ফিরল।
পাপ, তুমি কখন এলে?
এই মাত্র। আমি যে ওদের দেখেছি, সেটা বুঝতেই দিলাম না। দুবনা থেকেই খেয়ে এসেছি, তাই শুধু চা আর হালকা কিছু খাব। মিশা দেখলাম রান্না করে রেখেছে মনিকার জন্য। আমাদের বাসায় এসব কাজ দেখি ছেলেরাই করে! আমি, আন্তন, সেভা। এখন মিশা। গুলিয়া, মনিকা, ক্রিস্টিনা—ভালোই আছে ওরা।
১৬ জুন সকাল ১০টা থেকে বেলা প্রায় ৩টা পর্যন্ত ১৪ জন ডিফেন্ড করল।
ক্যাফে বন্ধ। না খেয়েই বাসায় এলাম।
বাসায় কে?
মিশার উত্তর পেলাম। আর কেউ নেই। মনিকা খুব ভোরে কাজে চলে গেছে। পরে ক্রিস্টিনা আর সেভাও। কিছুক্ষণ পর মনিকা এল। মিশা ওর জন্য চা করে নিয়ে গেল। বেচারা মিশা!
ক্রিস্টিনা এসে বিরাট এক ফর্দ ধরিয়ে দিল ওর কী কী লাগবে। ওর নাকি গ্যাস্ট্রিক। তাই বেছে বেছে খেতে হবে। সুপার মার্কেট থেকে ফিরে ভাবলাম মুরগি ভাজতে যাব, ক্রিস্টিনা বলল সেদ্ধ করতে। ওর জন্য সেদ্ধ করে আমি বাকি কিছু ভাজলাম। রাতে সেভা এল। ও ভাজা কিছু খায় না। মনিকাও খেলো না। মহা মুশকিল। এখন আমাকে এসব ছাইপাঁশ গিলতে হবে!
পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখি সেভা একা বাসায়। কাজে যাবে ৬টার দিকে। আমার গাড়ি রাত ৮টায়। বিড়াল মশার নেট ছিঁড়ে ফেলেছে বাইরে যাবে বলে। সেটা ঠিক করলাম। ইতিমধ্যে মনিকা ফিরল।
পাপ, তুমি আমাকে আগামী মাসে কিছু টাকা ধার দিতে পারবে?
হ্যাঁ। কী হলো আবার?
ক্রিস্টিনার প্রায়ই ফটোসেশন থাকে। ভালো জুতা কিনব।
আমি না দুবনা থেকে একগাদা জুতা নিয়ে এলাম?
সব হাই হিল। ওর অসুবিধা হয়। আজ তাই একজোড়া কিনেছি।
তা বললে আমি টাকা পাঠাতাম। ভালো কিছু কিনতি।
ওটা ভালোই। দামও সাড়ে তিন হাজার রুবল। আমি আরও একজোড়া কিনব ভাবছি।
ঠিক আছে।
মিশার সঙ্গে কথা হয়েছে সেভার ব্যাপারে। আড়াই থেকে তিন লাখ রুবল লাগবে।
এটা কি করতেই হবে? একটু দেখুক, শিখুক। কম্পিউটার গেম খেলেই তো জীবন শেষ।
ও পারবে না।
তাহলে?
ভাবছি আমি ক্রেডিট নেব। সেভাও তো কাজ করছে। দুজনে মিলে শোধ করে দেব।
হুম। জানাস। চেষ্টা করব সাহায্য করতে।
ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব এড়ানো আমি একেবারেই পছন্দ করি না। জীবন থেকে পালিয়ে কত দিন চলা যায়? কিন্তু এখন ওরা বড় হয়ে যাচ্ছে। নিজেরাই বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। মনিকা অনেক আগে থেকেই ভাইবোনদের নিয়ে ভাবে। ওরা যাতে একটু ভালো জামাকাপড় পরে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ভালোই লাগে।
কাঁধটা বেশ ব্যথা করছে। একটু মালিশ করে দিবি?
অবশ্যই।
আমাকে অবাক করে দিয়ে খুব ভালো করে মালিশ করে দিল। বন্ধু-বান্ধবী থাকলে ছেলেমেয়েরা বেশ কেয়ারিং হয়। ছোটবেলায় আমি ওদের মালিশ করে দিতাম। এখন আন্তন, মনিকা, ক্রিস্টিনা, সেভা—কেউ-ই করে না। তবে আন্তন আর মনিকা বেশ সুন্দর করেই সেটা করে, ছোটরা দায়সারাভাবে। কয়দিন পরে ওরাও বড় হবে।
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক
১৫ দিন পর মস্কো গেলাম। পরীক্ষা অনলাইনে, তবে ডিফেন্ড অব লাইনে। তাই যাওয়া। সকালে গুলিয়া মস্কো গিয়েছে, আমি যাব রাত ৯টার ট্রেনে। শেষ পর্যন্ত এক ছেলের সঙ্গে ওর কারে গেলাম। ও বাসা থেকে তুলে নিল বলে বাচ্চাদের জন্য স্মোকড মাংস, ক্রিস্টিনার কিছু জিনিস বাদে বিড়ালের ঘরটাও সঙ্গে নিলাম। সেভা ফ্রি থাকলে মেট্রোতে দেখা করে। সামার জবে ঢুকেছে বলে পারবে না। ইশ! হঠাৎ যদি মনিকা বা ক্রিস্টিনার সঙ্গে দেখা হতো! স্পোরতিভনায়া এসে মনে হলো এস্কেলেটরের একটু ওপরে মনিকা দাঁড়িয়ে। মুখ দেখা যাচ্ছিল না বলে নিশ্চিত ছিলাম না। ওপরে উঠতেই দেখি দরজা দিয়ে মনিকা বেরিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম, আমি বেরিয়েই ডাকব। দেখি, মিশা ওর জন্য অপেক্ষা করছে। তাই আর ডাকা হলো না। ইচ্ছে করেই ওদের দৃষ্টি এড়িয়ে চলে গেলাম। মিশা ওকে নিতে মেট্রো পর্যন্ত এসেছে দেখে খুশিই হলাম। ছেলেরা মেয়েদের আগলে রাখলে কোন বাবা-মা খুশি না হন? ওরা কি আমাকে দেখতে পেয়েছে? বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ফিরল।
পাপ, তুমি কখন এলে?
এই মাত্র। আমি যে ওদের দেখেছি, সেটা বুঝতেই দিলাম না। দুবনা থেকেই খেয়ে এসেছি, তাই শুধু চা আর হালকা কিছু খাব। মিশা দেখলাম রান্না করে রেখেছে মনিকার জন্য। আমাদের বাসায় এসব কাজ দেখি ছেলেরাই করে! আমি, আন্তন, সেভা। এখন মিশা। গুলিয়া, মনিকা, ক্রিস্টিনা—ভালোই আছে ওরা।
১৬ জুন সকাল ১০টা থেকে বেলা প্রায় ৩টা পর্যন্ত ১৪ জন ডিফেন্ড করল।
ক্যাফে বন্ধ। না খেয়েই বাসায় এলাম।
বাসায় কে?
মিশার উত্তর পেলাম। আর কেউ নেই। মনিকা খুব ভোরে কাজে চলে গেছে। পরে ক্রিস্টিনা আর সেভাও। কিছুক্ষণ পর মনিকা এল। মিশা ওর জন্য চা করে নিয়ে গেল। বেচারা মিশা!
ক্রিস্টিনা এসে বিরাট এক ফর্দ ধরিয়ে দিল ওর কী কী লাগবে। ওর নাকি গ্যাস্ট্রিক। তাই বেছে বেছে খেতে হবে। সুপার মার্কেট থেকে ফিরে ভাবলাম মুরগি ভাজতে যাব, ক্রিস্টিনা বলল সেদ্ধ করতে। ওর জন্য সেদ্ধ করে আমি বাকি কিছু ভাজলাম। রাতে সেভা এল। ও ভাজা কিছু খায় না। মনিকাও খেলো না। মহা মুশকিল। এখন আমাকে এসব ছাইপাঁশ গিলতে হবে!
পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখি সেভা একা বাসায়। কাজে যাবে ৬টার দিকে। আমার গাড়ি রাত ৮টায়। বিড়াল মশার নেট ছিঁড়ে ফেলেছে বাইরে যাবে বলে। সেটা ঠিক করলাম। ইতিমধ্যে মনিকা ফিরল।
পাপ, তুমি আমাকে আগামী মাসে কিছু টাকা ধার দিতে পারবে?
হ্যাঁ। কী হলো আবার?
ক্রিস্টিনার প্রায়ই ফটোসেশন থাকে। ভালো জুতা কিনব।
আমি না দুবনা থেকে একগাদা জুতা নিয়ে এলাম?
সব হাই হিল। ওর অসুবিধা হয়। আজ তাই একজোড়া কিনেছি।
তা বললে আমি টাকা পাঠাতাম। ভালো কিছু কিনতি।
ওটা ভালোই। দামও সাড়ে তিন হাজার রুবল। আমি আরও একজোড়া কিনব ভাবছি।
ঠিক আছে।
মিশার সঙ্গে কথা হয়েছে সেভার ব্যাপারে। আড়াই থেকে তিন লাখ রুবল লাগবে।
এটা কি করতেই হবে? একটু দেখুক, শিখুক। কম্পিউটার গেম খেলেই তো জীবন শেষ।
ও পারবে না।
তাহলে?
ভাবছি আমি ক্রেডিট নেব। সেভাও তো কাজ করছে। দুজনে মিলে শোধ করে দেব।
হুম। জানাস। চেষ্টা করব সাহায্য করতে।
ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব এড়ানো আমি একেবারেই পছন্দ করি না। জীবন থেকে পালিয়ে কত দিন চলা যায়? কিন্তু এখন ওরা বড় হয়ে যাচ্ছে। নিজেরাই বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। মনিকা অনেক আগে থেকেই ভাইবোনদের নিয়ে ভাবে। ওরা যাতে একটু ভালো জামাকাপড় পরে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ভালোই লাগে।
কাঁধটা বেশ ব্যথা করছে। একটু মালিশ করে দিবি?
অবশ্যই।
আমাকে অবাক করে দিয়ে খুব ভালো করে মালিশ করে দিল। বন্ধু-বান্ধবী থাকলে ছেলেমেয়েরা বেশ কেয়ারিং হয়। ছোটবেলায় আমি ওদের মালিশ করে দিতাম। এখন আন্তন, মনিকা, ক্রিস্টিনা, সেভা—কেউ-ই করে না। তবে আন্তন আর মনিকা বেশ সুন্দর করেই সেটা করে, ছোটরা দায়সারাভাবে। কয়দিন পরে ওরাও বড় হবে।
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে