সেলিম জাহান
শনিবার, ১৭ জুলাই (আজ) থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সে শব্দতরঙ্গ। আর শোনা যাবে না: ‘ভয়েস অব আমেরিকা, বাংলা সংবাদ, পড়ছি ...।’ ১৯৫৮ সালে যে প্রক্রিয়ার শুরু, ৬৩ বছর পর তার সমাপ্তি ঘটল। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস। শুরু হয়েছিল যখন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান ছিল। আর সময়টা ছিল জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের কাল। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার জনগোষ্ঠীর উদ্দেশেই নিবেদিত ছিল ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস।
আসলে ভয়েস অব আমেরিকার বিবিধ ভাষার অনুষ্ঠান শুরু হয় একটি উদ্দেশ্য নিয়ে: একনায়কতান্ত্রিক, সামরিক শাসনাধীন, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, উদারনৈতিক মনোভাবে সেখানকার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। যেমন, আফগানিস্তানের জন্য পশতু ভাষায় অনুষ্ঠান শুরু। তেমনি নব্বইয়ের দশকে বসনিয়া সংকটের সময়ে শুরু হয় বসনিয়ার ভাষায় ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান।
১৯৫৮ সালেও সামরিক শাসনাধীন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে একই লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সামরিক শাসনের সময়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীন চিন্তা-চেতনা ও উদারপন্থী মনোভাব বজায় ও জোরদারের জন্যই ভয়েস অব আমেরিকার বাংলায় অনুষ্ঠান শুরু করার উদ্দেশ্য। বর্তমান সময়ে বাংলা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলেও রোহিঙ্গাদের জন্য অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি ভয়েস অব আমেরিকার বিবিধ আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণটিই প্রমাণ করে।
তবে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার বিবিধ ভাষার অনুষ্ঠান শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির নানান মাত্রিকতায় বিচরণ করে। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা ভাষার অনুষ্ঠানও তার ব্যত্যয় নয়। এ অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা-সাহিত্য, শিল্প, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের এনে আমাদের শিল্প-সাহিত্যের পরিসীমাকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা এসে নানান বিশ্লেষণে আমাদের বোধের গণ্ডিকে ঋদ্ধ করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রনেতা কিংবা সরকারপ্রধানরাও ছাড় পাননি।
শ্রোতা হিসেবে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিসের সঙ্গে আমার সংযোগ বেড়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। অবরুদ্ধ সে সময়ে যে দুটো প্রধান বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানের ওপর আমরা নির্ভরশীল ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের জন্য, অবরুদ্ধ দেশের সঠিক অবস্থা জানার জন্য, বিদেশে আমাদের পক্ষে সমর্থনের সংবাদের জন্য–তার একটি হচ্ছে বিবিসি বাংলা সার্ভিস আর অন্যটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিস। আমরা উৎকর্ণ হয়ে থাকতাম সংবাদের জন্য, বিছানার মধ্যে ট্রানজিস্টর রেডিও নিয়ে শব্দ যতটা সম্ভব নিচু করে দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান শুনতাম বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। ঠিক একই পদ্ধতিতে শোনা হতো বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান সকালে ও রাতে। ওই ৯ মাসে ওই দুটোই তো ছিল আমাদের পরম আস্থার জায়গা।
আমাদের কৈশোরে-যৌবনে বাঘা বাঘা সব ব্যক্তিত্ব কাজ করতেন ভয়েস অব আমেরিকায়–কাফি খান, ইকবাল বাহার চৌধুরী, ইকবাল আহমেদ, মাসুমা খান, দিলারা হাশেম, রোকেয়া হায়দার এবং আরও অনেকে। কাফি খানের গমগমে গলায় শোনা যেত সংবাদ। ইকবাল বাহার চৌধুরীর কণ্ঠের আবৃত্তি এখনো কানে বাজে। এসব ব্যক্তিত্বের উচ্চারণে আমরা উচ্চারণ শিখেছি, অভিনিবেশসহকারে পর্যবেক্ষণ করেছি তাঁদের শব্দপ্রেক্ষণ, মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করেছি উপস্থাপন। নব্বইয়ের প্রথম দিকে প্রয়াত সোহেল সামাদের কথাও খুব মনে পড়ছে।
গত ২৫ বছরে কত যে অনুষ্ঠান করেছি ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে–নানান আঙ্গিকে–সাক্ষাৎকার, কথিকা, বিতর্ক আলোচনা অনুষ্ঠান, ঘটনা বিশ্লেষণ। কোভিডকালেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি–নব্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুষ্ঠান চলেছে। অনুষ্ঠান করেছি সরকার কবীরউদ্দীনের সঙ্গে, আনিস আহমদের সঙ্গে, তাহিরা কিবরিয়া, আহসানুল হক ও অন্যদের সঙ্গে। পরিচিত হয়েছি নানান কুশীলবের সঙ্গে। এসব অনুষ্ঠানে একদিকে যেমন স্মৃতিচারণ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে করা হয়েছে নানান বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা। একদিকে যেমন আঞ্চলিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তেমনি বিশ্লেষণ করা হয়েছে দেশজ সমস্যা। মনে আছে, সরকার কবীরউদ্দীনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ভারতের মোদি সরকার প্রসঙ্গে, আনিস আহমেদের সঙ্গে বিতর্কে মেতেছি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তপ্ত সম্পর্ক নিয়ে, রোকেয়া হায়দারের সঙ্গে বিশ্লেষণে নেমেছি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। ‘হ্যালো ওয়াশিংটন’ অনুষ্ঠানে সরাসরি কথা বলেছি বিশ্বের নানান জায়গায় বসবাসকারী বাঙালিদের সঙ্গে।
এসব অনুষ্ঠানে কখনো কখনো আমিই ছিলাম একক আমন্ত্রিত অতিথি, কখনো কখনো তা ছিল যূথবদ্ধ। ঢাকা থেকে ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. ফাহমিদা খাতুন, ড. নাজনীন আহমেদের সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠান করেছি। বিদেশ থেকে অনেক সময় যোগ দিয়েছেন ড. আলী রীয়াজ, ড. জিয়াউদ্দীন চৌধুরী, ড. জিল্লুর রহমান খান। সেসব এক অনন্য অভিজ্ঞতা, অবিস্মরণীয় একগুচ্ছ স্মৃতি।
এই নতুন তথ্যপ্রযুক্তির প্রেক্ষাপটে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার সমর্থনে নানান বস্তুনিষ্ঠ অর্থবহ অকাট্য যুক্তি আছে নিঃসন্দেহে; কিন্তু তবু কথা থাকে। ছয় দশক তো শুধু একটি সময় নয়, এটি একটি পথযাত্রা। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস তো শুধু একটি বেতার অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের বেশ কয়েক প্রজন্মের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠান আমাদের মন ও মননকে ঋদ্ধ করেছে। এ প্রতিষ্ঠান সংবাদ সচেতনতা পৌঁছে দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে, বৃদ্ধি করেছে তাঁদের জানার পরিসীমা। রাস্তায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকেও দেখেছি ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদ শুনতে। এর সংবাদ বিশ্লেষণ জন্ম দিয়েছে কত মধ্যবিত্ত পরিবারে তর্কের। ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিসের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা ফ্যান ক্লাব। হাজার হাজার কিশোর-তরুণকে সংঘবদ্ধ করেছে এই ক্লাবগুলো, যার মাধ্যমে শাণিত হয়েছে বেশুমার তরুণ প্রাণ। এর সদস্যরা আয়োজন করেছেন নানান অনুষ্ঠানের, যার মাধ্যমে মননশীল চিন্তার বিস্তার ঘটেছে।
এসব অর্জন কম নয়। জানি, নতুন তথ্যপ্রযুক্তির কালে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু বেতারের শক্তিও বড় কম নয় এবং তার অভিঘাতও ক্ষুদ্র নয়। উন্নয়নশীল দেশে এর প্রয়োজন ও আকর্ষণও নেহাত ফেলনা নয়। সেসব মনে রেখে অন্তত সীমিত পরিসরে হলেও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার সপক্ষে জোরালো যুক্তি আছে–প্রায় ৩০ কোটি মানুষের ভাষাকে অগ্রাহ্য করা যায় কি?
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ,
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
শনিবার, ১৭ জুলাই (আজ) থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সে শব্দতরঙ্গ। আর শোনা যাবে না: ‘ভয়েস অব আমেরিকা, বাংলা সংবাদ, পড়ছি ...।’ ১৯৫৮ সালে যে প্রক্রিয়ার শুরু, ৬৩ বছর পর তার সমাপ্তি ঘটল। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস। শুরু হয়েছিল যখন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান ছিল। আর সময়টা ছিল জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের কাল। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার জনগোষ্ঠীর উদ্দেশেই নিবেদিত ছিল ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস।
আসলে ভয়েস অব আমেরিকার বিবিধ ভাষার অনুষ্ঠান শুরু হয় একটি উদ্দেশ্য নিয়ে: একনায়কতান্ত্রিক, সামরিক শাসনাধীন, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, উদারনৈতিক মনোভাবে সেখানকার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। যেমন, আফগানিস্তানের জন্য পশতু ভাষায় অনুষ্ঠান শুরু। তেমনি নব্বইয়ের দশকে বসনিয়া সংকটের সময়ে শুরু হয় বসনিয়ার ভাষায় ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান।
১৯৫৮ সালেও সামরিক শাসনাধীন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে একই লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সামরিক শাসনের সময়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীন চিন্তা-চেতনা ও উদারপন্থী মনোভাব বজায় ও জোরদারের জন্যই ভয়েস অব আমেরিকার বাংলায় অনুষ্ঠান শুরু করার উদ্দেশ্য। বর্তমান সময়ে বাংলা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলেও রোহিঙ্গাদের জন্য অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি ভয়েস অব আমেরিকার বিবিধ আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণটিই প্রমাণ করে।
তবে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার বিবিধ ভাষার অনুষ্ঠান শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির নানান মাত্রিকতায় বিচরণ করে। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা ভাষার অনুষ্ঠানও তার ব্যত্যয় নয়। এ অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা-সাহিত্য, শিল্প, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের এনে আমাদের শিল্প-সাহিত্যের পরিসীমাকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা এসে নানান বিশ্লেষণে আমাদের বোধের গণ্ডিকে ঋদ্ধ করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রনেতা কিংবা সরকারপ্রধানরাও ছাড় পাননি।
শ্রোতা হিসেবে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিসের সঙ্গে আমার সংযোগ বেড়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। অবরুদ্ধ সে সময়ে যে দুটো প্রধান বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানের ওপর আমরা নির্ভরশীল ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের জন্য, অবরুদ্ধ দেশের সঠিক অবস্থা জানার জন্য, বিদেশে আমাদের পক্ষে সমর্থনের সংবাদের জন্য–তার একটি হচ্ছে বিবিসি বাংলা সার্ভিস আর অন্যটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিস। আমরা উৎকর্ণ হয়ে থাকতাম সংবাদের জন্য, বিছানার মধ্যে ট্রানজিস্টর রেডিও নিয়ে শব্দ যতটা সম্ভব নিচু করে দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান শুনতাম বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। ঠিক একই পদ্ধতিতে শোনা হতো বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান সকালে ও রাতে। ওই ৯ মাসে ওই দুটোই তো ছিল আমাদের পরম আস্থার জায়গা।
আমাদের কৈশোরে-যৌবনে বাঘা বাঘা সব ব্যক্তিত্ব কাজ করতেন ভয়েস অব আমেরিকায়–কাফি খান, ইকবাল বাহার চৌধুরী, ইকবাল আহমেদ, মাসুমা খান, দিলারা হাশেম, রোকেয়া হায়দার এবং আরও অনেকে। কাফি খানের গমগমে গলায় শোনা যেত সংবাদ। ইকবাল বাহার চৌধুরীর কণ্ঠের আবৃত্তি এখনো কানে বাজে। এসব ব্যক্তিত্বের উচ্চারণে আমরা উচ্চারণ শিখেছি, অভিনিবেশসহকারে পর্যবেক্ষণ করেছি তাঁদের শব্দপ্রেক্ষণ, মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করেছি উপস্থাপন। নব্বইয়ের প্রথম দিকে প্রয়াত সোহেল সামাদের কথাও খুব মনে পড়ছে।
গত ২৫ বছরে কত যে অনুষ্ঠান করেছি ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে–নানান আঙ্গিকে–সাক্ষাৎকার, কথিকা, বিতর্ক আলোচনা অনুষ্ঠান, ঘটনা বিশ্লেষণ। কোভিডকালেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি–নব্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুষ্ঠান চলেছে। অনুষ্ঠান করেছি সরকার কবীরউদ্দীনের সঙ্গে, আনিস আহমদের সঙ্গে, তাহিরা কিবরিয়া, আহসানুল হক ও অন্যদের সঙ্গে। পরিচিত হয়েছি নানান কুশীলবের সঙ্গে। এসব অনুষ্ঠানে একদিকে যেমন স্মৃতিচারণ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে করা হয়েছে নানান বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা। একদিকে যেমন আঞ্চলিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তেমনি বিশ্লেষণ করা হয়েছে দেশজ সমস্যা। মনে আছে, সরকার কবীরউদ্দীনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ভারতের মোদি সরকার প্রসঙ্গে, আনিস আহমেদের সঙ্গে বিতর্কে মেতেছি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তপ্ত সম্পর্ক নিয়ে, রোকেয়া হায়দারের সঙ্গে বিশ্লেষণে নেমেছি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। ‘হ্যালো ওয়াশিংটন’ অনুষ্ঠানে সরাসরি কথা বলেছি বিশ্বের নানান জায়গায় বসবাসকারী বাঙালিদের সঙ্গে।
এসব অনুষ্ঠানে কখনো কখনো আমিই ছিলাম একক আমন্ত্রিত অতিথি, কখনো কখনো তা ছিল যূথবদ্ধ। ঢাকা থেকে ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. ফাহমিদা খাতুন, ড. নাজনীন আহমেদের সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠান করেছি। বিদেশ থেকে অনেক সময় যোগ দিয়েছেন ড. আলী রীয়াজ, ড. জিয়াউদ্দীন চৌধুরী, ড. জিল্লুর রহমান খান। সেসব এক অনন্য অভিজ্ঞতা, অবিস্মরণীয় একগুচ্ছ স্মৃতি।
এই নতুন তথ্যপ্রযুক্তির প্রেক্ষাপটে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার সমর্থনে নানান বস্তুনিষ্ঠ অর্থবহ অকাট্য যুক্তি আছে নিঃসন্দেহে; কিন্তু তবু কথা থাকে। ছয় দশক তো শুধু একটি সময় নয়, এটি একটি পথযাত্রা। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিস তো শুধু একটি বেতার অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের বেশ কয়েক প্রজন্মের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠান আমাদের মন ও মননকে ঋদ্ধ করেছে। এ প্রতিষ্ঠান সংবাদ সচেতনতা পৌঁছে দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে, বৃদ্ধি করেছে তাঁদের জানার পরিসীমা। রাস্তায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকেও দেখেছি ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদ শুনতে। এর সংবাদ বিশ্লেষণ জন্ম দিয়েছে কত মধ্যবিত্ত পরিবারে তর্কের। ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিসের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা ফ্যান ক্লাব। হাজার হাজার কিশোর-তরুণকে সংঘবদ্ধ করেছে এই ক্লাবগুলো, যার মাধ্যমে শাণিত হয়েছে বেশুমার তরুণ প্রাণ। এর সদস্যরা আয়োজন করেছেন নানান অনুষ্ঠানের, যার মাধ্যমে মননশীল চিন্তার বিস্তার ঘটেছে।
এসব অর্জন কম নয়। জানি, নতুন তথ্যপ্রযুক্তির কালে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু বেতারের শক্তিও বড় কম নয় এবং তার অভিঘাতও ক্ষুদ্র নয়। উন্নয়নশীল দেশে এর প্রয়োজন ও আকর্ষণও নেহাত ফেলনা নয়। সেসব মনে রেখে অন্তত সীমিত পরিসরে হলেও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার সপক্ষে জোরালো যুক্তি আছে–প্রায় ৩০ কোটি মানুষের ভাষাকে অগ্রাহ্য করা যায় কি?
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ,
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৬ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৬ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৬ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে