বিভুরঞ্জন সরকার
কয়েক বছর ধরে নানা কারণে আলোচনায় আসা সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ৭ জুন। দেড় মাস আগে বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী নতুন কমিটিতে আগের পদেই বহাল আছেন। ১৫১ সদস্যের অবশিষ্টদের পরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কাউকে নতুন কমিটিতে রাখা হবে না বলা হলেও রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত একাধিক ব্যক্তি কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের দু-একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
তবে সংগঠনের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নেতা, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ গ্রেপ্তার নেতারা অবশ্য কমিটিতে নেই। সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানিকে সহকারী মহাসচিব করা হলেও তিনি নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানা গেছে। আহমদ শফীর মৃত্যুর জন্য জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ছেলে আনাস মাদানির নেতৃত্বে হেফাজতের যে অংশটি জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটিকে মেনে নেয়নি, তারা নতুন কমিটি ঘোষণায় ক্ষুব্ধ। হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী নতুন কমিটিকে ‘নতুন বোতলে পুরোনো তেল’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের নতুন কমিটি সরকারের প্রতি কী মনোভাব দেখায় এবং নতুন কমিটির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হয়, তার ওপর হেফাজতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। হেফাজতকে নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে চিন্তার প্রার্থক্য আছে বলে শোনা যায়। হেফাজত এখন চাপের মুখে নমনীয়তা দেখালেও এই অবস্থান কত দিন বজায় থাকবে তা বলা যায় না। পরবর্তী নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে কী ধরনের মেরুকরণ হয়, তা বলার সময় এখনো আসেনি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগের কৌশলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
পরের জাতীয় নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের ভূমিকা বা অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার বাস্তব কারণ রয়েছে। ২০১০ সালের দিকে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বিভিন্ন সময়ে হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েই আলোচনায় এসেছে। নারীনীতির বিরোধিতা দিয়ে শুরু করে হেফাজত কার্যত দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার কাজই করছে। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জমায়েত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের খোয়াব দেখেছিল হেফাজত। আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক গড়ে হেফাজত তার শক্তি প্রদর্শন করতে দ্বিধা করেনি। তবে শাপলা চত্বরের সহিংসতার পর হেফাজতের সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতা হয় বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। হেফাজতের প্রথম আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে কৌশলের মৈত্রী করে সরকার হেফাজতকে আন্দোলনবিমুখ করতে সক্ষম হলেও তাদের এমন কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন এনে হেফাজতের মন রক্ষা করার সুদূরপ্রসারী কুফল পুরো জাতিকেই বহন করতে হবে।
হেফাজতের সরকারবিরোধী অংশ গত বছর থেকেই নেতৃত্ব কব্জা করার পাঁয়তারা করে সফল হয় আহমদ শফীর মৃত্যুর পর। আহমদ শফী মৃত্যুবরণ করেন গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। ১৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে শফীর অনুসারীদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং নূর হোসেন কাসেমীকে মহাসচিব করে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে জড়িতদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। হেফাজত সরকারবিরোধী অবস্থান দৃশ্যমান করে তোলে। যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ আরও কয়েকজন উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হেফাজতের নেতৃত্বে এসে ওয়াজ-মাহফিলের নামে দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালাতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তারা সরকারকে তাতিয়ে তোলে। এরপর মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করতে গিয়ে হেফাজত দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতার আশ্রয় নেয়, তা হজম করা সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।
সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় হেফাজত কিছুটা বিপাকের মধ্যেই পড়ে। আলোচিত-বিতর্কিত নেতা মামুনুল হকসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হওয়ায় হেফাজত দিশেহারা হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় ২৫ এপ্রিল রাতে। এটা হয়তো সরকারকে শান্ত করার একটি হেফাজতি কৌশল। তবে সরকারের কাছে যেসব তথ্য আছে, তা থেকে মনে হয় না হেফাজত এবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারবে। মামুনুল হকসহ গ্রেপ্তার নেতাদের নতুন কমিটিতে ঠাঁই না দেওয়া মানে অবশ্যই এটা নয় যে হেফাজত তার দৃষ্টিভঙ্গি বদল করেছে। সরকারি চাপের মুখে হেফাজত কৌশল বদল করলেও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি; বরং তারা অনুকূল পরিবেশের জন্য এখন কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে। তাদের দুষ্টছলে সরকার বিভ্রান্ত হলে অজ্ঞাত উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তি, পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগসহ যেসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পেয়েছে, গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তার ভিত্তিতে সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। হেফাজতকে শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, তাদের সমূলে উৎপাটনের কার্যকর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। হেফাজত যেমন ধর্মাশ্রয়ী বাংলাদেশ চায়, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা তেমন বাংলাদেশ চাননি।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যখন একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দুই খণ্ড হয়ে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল, তখন স্বভাবতই আশা করা হয়েছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আর পাকিস্তানি কোনো লিগ্যাসি বা মন্দ উত্তরাধিকার কিংবা ধারা বহন করবে না। পাকিস্তান ছিল ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকবে না। রাষ্ট্রটি হবে অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চরিত্রের। ধর্ম হবে মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আচরণ ও পালনের বিষয়। রাষ্ট্র হবে সবার—হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান—সব মানুষের। এমনকি গরিবের নিঃস্বের ফকিরেরও। রাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। বিত্তবান ও বিত্তহীনদের যে বৈষম্য, অর্থাৎ ধনবৈষম্য কমিয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র্রের আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছিল রক্তমূল্যে অর্জিত নতুন স্বাধীন দেশের বাহাত্তরের প্রথম সংবিধানে।
কিন্তু বাস্তবে সেরকম হলো না। দেশ স্বাধীন হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের মনোভূমির রং বদলাতে লাগল। আজ তা উজ্জ্বলতা হারিয়ে প্রায় ফ্যাকাশে।
হিন্দু-মুসলমানের মিলিত রক্তস্রোত সাঁতরে যে দেশ স্বাধীন হলো, সে দেশ আবার পাকিস্তানমুখী হবে—সেটা ছিল আমাদের তখনকার চিন্তার বাইরে! জাতি হিসেবে আমরা একটু আবেগপ্রবণ। যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা, নতুন দেশ, নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীত পাওয়ার উত্তেজনায় আমরা তখন আবেগ-উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছিলাম। কিছুটা যুক্তিরহিত আচরণ করেছিলাম। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন যে রাতারাতি হয় না, সেটা যে ধারাবাহিক চর্চা ও সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়, তা আমরা তখন ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি।
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের একটি অন্যতম মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কি ব্যক্তিজীবনে, কি রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থায় ‘ধর্ম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেই থেকে যায়। সাধারণ মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনার জন্য যে রকম প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন ছিল, শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার অনুকূলে যে রকম মজবুত গাঁথুনি তৈরি করা দরকার ছিল, তার কোনো কিছুই পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে পাকিস্তানের পরাজয় মানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিজয়। যে মানুষ ২৫ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত পাকিস্তানের ভৌগোলিক কাঠামোয় এবং রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী ছিল, রাতারাতি তার মধ্যে আদর্শিক পরিবর্তন ঘটার কোনো স্বাভাবিক কারণ ছিল না। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হয় ধীরে ধীরে, ক্রমাগত উন্নত বা অগ্রগামী দর্শনচর্চার মধ্য দিয়ে।
আমাদের দেশে সমাজ-রাজনীতি, মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় মনস্তত্ত্ব নিয়ে সিরিয়াস কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। কতগুলো সস্তা জনপ্রিয় ধারণাকে ভিত্তি করেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বছর না ঘুরতেই ভাষার মর্যাদা নিয়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে তৈরি মতভিন্নতা নিঃসন্দেহে আমাদের এই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের চিন্তার জগতে একটি বড় মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা ছিল। কিন্তু সেটা কত শতাংশ মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করেছিল, তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ-পরীবিক্ষণ হয়েছে কি? ভাষার লড়াইটা তৃণমূল পর্যায়ের মুসলিম মানসে যতটা অসাম্প্রদায়িক ভাবনার ঢেউ তুলেছিল বলে মনে করা হয়, বাস্তবটা কি আসলে তাই? পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, ঢাকা শহর রক্তে ভাসিয়েছিল বলে একধরনের কাতরতা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছিল; কিন্তু সে জন্য এটা বলা যায় না যে, দ্বিজাতিতত্ত্ব তখনই মানুষের মন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছিল!
বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র যে আজ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতে পারছে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা যে আজ এক চরম অন্তর্জ্বালা নিয়ে বসবাস করছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে অতীতের দিকে চোখ দিয়েই। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ বলে বিলাপসংগীত গেয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়া যাবে না। সেটা গড়তে হলে ঐতিহাসিকভাবে যে ভুলভ্রান্তি আমরা করে এসেছি, তা স্বীকার করে ফাঁকফোকর মেরামত করে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি, মামুনুল হকসহ গ্রেপ্তার হেফাজত নেতারা ইসলামি জলসা কিংবা ওয়াজ-মাহফিলের নামে কুরুচিপূর্ণ এবং জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার অপপ্রয়াস চালাতে অভ্যস্ত। যাদের ব্যক্তিজীবন অসততা ও নোংরামিতে পূর্ণ, তারা যদি ধর্মের হেফাজতের দায়িত্ব নেন, তাহলে সেটা যে ধর্মের মাহাত্ম্যকেই ম্লান করে এটা বুঝতে হবে সবাইকে। সরকারকে হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা যদি রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি নড়বড়ে করে দেয়, তাহলে সেটা খুবই দুঃখের ব্যাপার হয়।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
কয়েক বছর ধরে নানা কারণে আলোচনায় আসা সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ৭ জুন। দেড় মাস আগে বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী নতুন কমিটিতে আগের পদেই বহাল আছেন। ১৫১ সদস্যের অবশিষ্টদের পরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কাউকে নতুন কমিটিতে রাখা হবে না বলা হলেও রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত একাধিক ব্যক্তি কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের দু-একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
তবে সংগঠনের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নেতা, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ গ্রেপ্তার নেতারা অবশ্য কমিটিতে নেই। সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানিকে সহকারী মহাসচিব করা হলেও তিনি নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানা গেছে। আহমদ শফীর মৃত্যুর জন্য জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ছেলে আনাস মাদানির নেতৃত্বে হেফাজতের যে অংশটি জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটিকে মেনে নেয়নি, তারা নতুন কমিটি ঘোষণায় ক্ষুব্ধ। হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী নতুন কমিটিকে ‘নতুন বোতলে পুরোনো তেল’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের নতুন কমিটি সরকারের প্রতি কী মনোভাব দেখায় এবং নতুন কমিটির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হয়, তার ওপর হেফাজতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। হেফাজতকে নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে চিন্তার প্রার্থক্য আছে বলে শোনা যায়। হেফাজত এখন চাপের মুখে নমনীয়তা দেখালেও এই অবস্থান কত দিন বজায় থাকবে তা বলা যায় না। পরবর্তী নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে কী ধরনের মেরুকরণ হয়, তা বলার সময় এখনো আসেনি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগের কৌশলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
পরের জাতীয় নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের ভূমিকা বা অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার বাস্তব কারণ রয়েছে। ২০১০ সালের দিকে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বিভিন্ন সময়ে হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েই আলোচনায় এসেছে। নারীনীতির বিরোধিতা দিয়ে শুরু করে হেফাজত কার্যত দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার কাজই করছে। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জমায়েত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের খোয়াব দেখেছিল হেফাজত। আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক গড়ে হেফাজত তার শক্তি প্রদর্শন করতে দ্বিধা করেনি। তবে শাপলা চত্বরের সহিংসতার পর হেফাজতের সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতা হয় বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। হেফাজতের প্রথম আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে কৌশলের মৈত্রী করে সরকার হেফাজতকে আন্দোলনবিমুখ করতে সক্ষম হলেও তাদের এমন কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন এনে হেফাজতের মন রক্ষা করার সুদূরপ্রসারী কুফল পুরো জাতিকেই বহন করতে হবে।
হেফাজতের সরকারবিরোধী অংশ গত বছর থেকেই নেতৃত্ব কব্জা করার পাঁয়তারা করে সফল হয় আহমদ শফীর মৃত্যুর পর। আহমদ শফী মৃত্যুবরণ করেন গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। ১৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে শফীর অনুসারীদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং নূর হোসেন কাসেমীকে মহাসচিব করে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে জড়িতদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। হেফাজত সরকারবিরোধী অবস্থান দৃশ্যমান করে তোলে। যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ আরও কয়েকজন উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হেফাজতের নেতৃত্বে এসে ওয়াজ-মাহফিলের নামে দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালাতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তারা সরকারকে তাতিয়ে তোলে। এরপর মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করতে গিয়ে হেফাজত দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতার আশ্রয় নেয়, তা হজম করা সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।
সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় হেফাজত কিছুটা বিপাকের মধ্যেই পড়ে। আলোচিত-বিতর্কিত নেতা মামুনুল হকসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হওয়ায় হেফাজত দিশেহারা হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় ২৫ এপ্রিল রাতে। এটা হয়তো সরকারকে শান্ত করার একটি হেফাজতি কৌশল। তবে সরকারের কাছে যেসব তথ্য আছে, তা থেকে মনে হয় না হেফাজত এবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারবে। মামুনুল হকসহ গ্রেপ্তার নেতাদের নতুন কমিটিতে ঠাঁই না দেওয়া মানে অবশ্যই এটা নয় যে হেফাজত তার দৃষ্টিভঙ্গি বদল করেছে। সরকারি চাপের মুখে হেফাজত কৌশল বদল করলেও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি; বরং তারা অনুকূল পরিবেশের জন্য এখন কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে। তাদের দুষ্টছলে সরকার বিভ্রান্ত হলে অজ্ঞাত উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তি, পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগসহ যেসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পেয়েছে, গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তার ভিত্তিতে সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। হেফাজতকে শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, তাদের সমূলে উৎপাটনের কার্যকর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। হেফাজত যেমন ধর্মাশ্রয়ী বাংলাদেশ চায়, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারা তেমন বাংলাদেশ চাননি।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যখন একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দুই খণ্ড হয়ে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল, তখন স্বভাবতই আশা করা হয়েছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আর পাকিস্তানি কোনো লিগ্যাসি বা মন্দ উত্তরাধিকার কিংবা ধারা বহন করবে না। পাকিস্তান ছিল ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকবে না। রাষ্ট্রটি হবে অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চরিত্রের। ধর্ম হবে মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আচরণ ও পালনের বিষয়। রাষ্ট্র হবে সবার—হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান—সব মানুষের। এমনকি গরিবের নিঃস্বের ফকিরেরও। রাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। বিত্তবান ও বিত্তহীনদের যে বৈষম্য, অর্থাৎ ধনবৈষম্য কমিয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র্রের আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছিল রক্তমূল্যে অর্জিত নতুন স্বাধীন দেশের বাহাত্তরের প্রথম সংবিধানে।
কিন্তু বাস্তবে সেরকম হলো না। দেশ স্বাধীন হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের মনোভূমির রং বদলাতে লাগল। আজ তা উজ্জ্বলতা হারিয়ে প্রায় ফ্যাকাশে।
হিন্দু-মুসলমানের মিলিত রক্তস্রোত সাঁতরে যে দেশ স্বাধীন হলো, সে দেশ আবার পাকিস্তানমুখী হবে—সেটা ছিল আমাদের তখনকার চিন্তার বাইরে! জাতি হিসেবে আমরা একটু আবেগপ্রবণ। যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা, নতুন দেশ, নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীত পাওয়ার উত্তেজনায় আমরা তখন আবেগ-উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছিলাম। কিছুটা যুক্তিরহিত আচরণ করেছিলাম। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন যে রাতারাতি হয় না, সেটা যে ধারাবাহিক চর্চা ও সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়, তা আমরা তখন ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি।
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের একটি অন্যতম মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কি ব্যক্তিজীবনে, কি রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থায় ‘ধর্ম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেই থেকে যায়। সাধারণ মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনার জন্য যে রকম প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন ছিল, শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার অনুকূলে যে রকম মজবুত গাঁথুনি তৈরি করা দরকার ছিল, তার কোনো কিছুই পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে পাকিস্তানের পরাজয় মানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিজয়। যে মানুষ ২৫ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত পাকিস্তানের ভৌগোলিক কাঠামোয় এবং রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী ছিল, রাতারাতি তার মধ্যে আদর্শিক পরিবর্তন ঘটার কোনো স্বাভাবিক কারণ ছিল না। মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হয় ধীরে ধীরে, ক্রমাগত উন্নত বা অগ্রগামী দর্শনচর্চার মধ্য দিয়ে।
আমাদের দেশে সমাজ-রাজনীতি, মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় মনস্তত্ত্ব নিয়ে সিরিয়াস কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। কতগুলো সস্তা জনপ্রিয় ধারণাকে ভিত্তি করেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বছর না ঘুরতেই ভাষার মর্যাদা নিয়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে তৈরি মতভিন্নতা নিঃসন্দেহে আমাদের এই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের চিন্তার জগতে একটি বড় মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা ছিল। কিন্তু সেটা কত শতাংশ মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করেছিল, তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ-পরীবিক্ষণ হয়েছে কি? ভাষার লড়াইটা তৃণমূল পর্যায়ের মুসলিম মানসে যতটা অসাম্প্রদায়িক ভাবনার ঢেউ তুলেছিল বলে মনে করা হয়, বাস্তবটা কি আসলে তাই? পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, ঢাকা শহর রক্তে ভাসিয়েছিল বলে একধরনের কাতরতা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছিল; কিন্তু সে জন্য এটা বলা যায় না যে, দ্বিজাতিতত্ত্ব তখনই মানুষের মন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছিল!
বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র যে আজ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতে পারছে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা যে আজ এক চরম অন্তর্জ্বালা নিয়ে বসবাস করছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে অতীতের দিকে চোখ দিয়েই। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ বলে বিলাপসংগীত গেয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়া যাবে না। সেটা গড়তে হলে ঐতিহাসিকভাবে যে ভুলভ্রান্তি আমরা করে এসেছি, তা স্বীকার করে ফাঁকফোকর মেরামত করে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি, মামুনুল হকসহ গ্রেপ্তার হেফাজত নেতারা ইসলামি জলসা কিংবা ওয়াজ-মাহফিলের নামে কুরুচিপূর্ণ এবং জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার অপপ্রয়াস চালাতে অভ্যস্ত। যাদের ব্যক্তিজীবন অসততা ও নোংরামিতে পূর্ণ, তারা যদি ধর্মের হেফাজতের দায়িত্ব নেন, তাহলে সেটা যে ধর্মের মাহাত্ম্যকেই ম্লান করে এটা বুঝতে হবে সবাইকে। সরকারকে হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা যদি রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি নড়বড়ে করে দেয়, তাহলে সেটা খুবই দুঃখের ব্যাপার হয়।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে