রফি হক
খুব ভোরে উঠেছি আজ। কী একটা স্বপ্ন দেখছিলাম—ছেলেবেলার স্কুলের মাঠ, ঈদগাহ, গভর্নমেন্ট কলেজ—ভাসা ভাসা স্বপ্ন। আমার জন্মস্থান কুষ্টিয়া। পড়েছি মুসলিম হাইস্কুলে, গভর্নমেন্ট কলেজে। আমার স্মৃতির মধ্যে স্কুলের মাঠ, ঈদগাহ মাঠ, গভর্নমেন্ট কলেজ এত গভীরভাবে গেঁথে আছে—চেতনে-অবচেতনে তা বারবার আসে।
আমি জন্ম থেকে সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় ছিলাম। জন্মস্থানের রূপ-মাধুর্য-সৌন্দর্য তখন অনুভব করিনি। এখন আটত্রিশ বছর ধরে ঢাকায় আছি, এটা জীবনের দীর্ঘসময়! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এখন কুষ্টিয়ার রূপ-মাধুর্য অনুভব করি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই। জন্মস্থানের প্রতি এরূপ ভালোবাসা আমি কুষ্টিয়ায় থাকলে হয়তো অনুভব করতে পারতাম না। ‘আমার জন্মস্থান’ শিরোনামে সিরিজধর্মী ছবি এঁকেছিলাম স্বনামখ্যাত আমেরিকান শিল্পী অ্যান্ড্রু সাফটেল-এর অনুপ্রেরণায়। একজন আমেরিকান সমকালীন কবিও আমাকে এই সিরিজের কাজগুলো করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আমার ইচ্ছা: এই শিল্পকর্মগুলো নিয়ে আমি কুষ্টিয়ায় কখনো আর্ট এক্সিবিশন করব।
আজকের ভোর-সকালটি অন্যরকমের ছিল। ঘষা স্লেটের মতো মেঘ থেকে ধোঁয়া-ওঠা ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল। তখনো কারও ঘুম ভাঙেনি। একা একা বৃষ্টি দেখছিলাম। বৃষ্টি কোথাও ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। বৃষ্টির আওয়াজ কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মনটা খুব অন্যরকম করে ফেলে। বরফপড়া দৃশ্যও আমার ভালো লাগে। স্মৃতিকাতর করে। সারা দিন ধরে বরফ পড়ছে—এমন দৃশ্য জাদুকরী, ম্যাজিকের মতো! আবার বৃষ্টির শব্দ বৃষ্টিকে বোধহয় কবিতার মতো করেছে। দুটোই তো ভালো লাগে!
আমার এই অনুভবগুলো কলমকরা ফুল-ফলের গাছের মতো। এমন প্রবল বৃষ্টির মধ্যে আমাদের বাড়ির উঠোন ভেসে যেত। টিনের চালে ঝুমবৃষ্টির আওয়াজে চারদিক প্রকম্পিত হতো। জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। বৃষ্টির ছাট গায়ে এসে লাগত—অপূর্ব ভালোলাগায় শিহরিত হতাম। ছড়া কাটতাম। ওইদিন আর স্কুলে যেতে হতো না! তবে, অঝোর বৃষ্টির মধ্যে স্কুলের পুকুরে সাঁতার কেটেছি। বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলেছি স্কুলের মাঠে। ইয়ার আলী স্যারের বকুনি খেয়েছি।
আমাদের স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন ইয়ার আলী স্যার। ভাঙা একটা সাইকেলে করে ঝড়ের বেগে আসা-যাওয়া করতেন, টায়ারের সঙ্গে মাডগার্ডের ঘষটানির শব্দ আমরা বহুদূর থেকে পেতাম। লংক্লথের পাঞ্জাবি পরতেন।
যে কোনো ছাত্রকে রাস্তায় দেখলেই সাইকেল থেকে নেমে পড়তেন। নির্ভুলভাবে তাঁর মনে থাকত সব ছাত্রের নাম। ওই ছাত্র ক্লাসে কোন পড়া পারেনি তা-ও মনে থাকত তাঁর। সাইকেল থেকে নেমে তাকে দাঁড় করিয়ে বলতেন: “এই গাধা বল তো, বাক্যের শেষে ‘ল-লে-লাম’, ‘ত-তে-তাম’ থাকলে কোন টেন্স? আই ড্রেমট আ ড্রিম, হি ফট আ ফাইট—বুঝতে পেরেছিস তো ঠিকমতো?” আমরা স্যারের নাম দিয়েছিলাম ‘ল-লে-লাম। ত-তে-তাম স্যার’।
ছেলেরা হাসাহাসি করত। ক্লাসে আমরা দুষ্টুমি করলে বা পড়া না-পারলে কাছে ডেকে নিয়ে হাতের তালু গোল করে তাতে ফুঁ দিয়ে হাওয়া ভরে নিয়ে ঘাড়ে ধরে নিচু করে পিঠে গুড়ুম করে মারতেন। তাতে লাগত না অত; কিন্তু শব্দ হতো! এখন মনে করে হাসছি…
আহা, ভোর-সকালের বৃষ্টি আমাকে কত কিছু মনে করিয়ে দিয়ে গেল!
লেখক: শিল্পী
খুব ভোরে উঠেছি আজ। কী একটা স্বপ্ন দেখছিলাম—ছেলেবেলার স্কুলের মাঠ, ঈদগাহ, গভর্নমেন্ট কলেজ—ভাসা ভাসা স্বপ্ন। আমার জন্মস্থান কুষ্টিয়া। পড়েছি মুসলিম হাইস্কুলে, গভর্নমেন্ট কলেজে। আমার স্মৃতির মধ্যে স্কুলের মাঠ, ঈদগাহ মাঠ, গভর্নমেন্ট কলেজ এত গভীরভাবে গেঁথে আছে—চেতনে-অবচেতনে তা বারবার আসে।
আমি জন্ম থেকে সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় ছিলাম। জন্মস্থানের রূপ-মাধুর্য-সৌন্দর্য তখন অনুভব করিনি। এখন আটত্রিশ বছর ধরে ঢাকায় আছি, এটা জীবনের দীর্ঘসময়! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এখন কুষ্টিয়ার রূপ-মাধুর্য অনুভব করি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই। জন্মস্থানের প্রতি এরূপ ভালোবাসা আমি কুষ্টিয়ায় থাকলে হয়তো অনুভব করতে পারতাম না। ‘আমার জন্মস্থান’ শিরোনামে সিরিজধর্মী ছবি এঁকেছিলাম স্বনামখ্যাত আমেরিকান শিল্পী অ্যান্ড্রু সাফটেল-এর অনুপ্রেরণায়। একজন আমেরিকান সমকালীন কবিও আমাকে এই সিরিজের কাজগুলো করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আমার ইচ্ছা: এই শিল্পকর্মগুলো নিয়ে আমি কুষ্টিয়ায় কখনো আর্ট এক্সিবিশন করব।
আজকের ভোর-সকালটি অন্যরকমের ছিল। ঘষা স্লেটের মতো মেঘ থেকে ধোঁয়া-ওঠা ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল। তখনো কারও ঘুম ভাঙেনি। একা একা বৃষ্টি দেখছিলাম। বৃষ্টি কোথাও ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। বৃষ্টির আওয়াজ কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মনটা খুব অন্যরকম করে ফেলে। বরফপড়া দৃশ্যও আমার ভালো লাগে। স্মৃতিকাতর করে। সারা দিন ধরে বরফ পড়ছে—এমন দৃশ্য জাদুকরী, ম্যাজিকের মতো! আবার বৃষ্টির শব্দ বৃষ্টিকে বোধহয় কবিতার মতো করেছে। দুটোই তো ভালো লাগে!
আমার এই অনুভবগুলো কলমকরা ফুল-ফলের গাছের মতো। এমন প্রবল বৃষ্টির মধ্যে আমাদের বাড়ির উঠোন ভেসে যেত। টিনের চালে ঝুমবৃষ্টির আওয়াজে চারদিক প্রকম্পিত হতো। জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। বৃষ্টির ছাট গায়ে এসে লাগত—অপূর্ব ভালোলাগায় শিহরিত হতাম। ছড়া কাটতাম। ওইদিন আর স্কুলে যেতে হতো না! তবে, অঝোর বৃষ্টির মধ্যে স্কুলের পুকুরে সাঁতার কেটেছি। বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলেছি স্কুলের মাঠে। ইয়ার আলী স্যারের বকুনি খেয়েছি।
আমাদের স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন ইয়ার আলী স্যার। ভাঙা একটা সাইকেলে করে ঝড়ের বেগে আসা-যাওয়া করতেন, টায়ারের সঙ্গে মাডগার্ডের ঘষটানির শব্দ আমরা বহুদূর থেকে পেতাম। লংক্লথের পাঞ্জাবি পরতেন।
যে কোনো ছাত্রকে রাস্তায় দেখলেই সাইকেল থেকে নেমে পড়তেন। নির্ভুলভাবে তাঁর মনে থাকত সব ছাত্রের নাম। ওই ছাত্র ক্লাসে কোন পড়া পারেনি তা-ও মনে থাকত তাঁর। সাইকেল থেকে নেমে তাকে দাঁড় করিয়ে বলতেন: “এই গাধা বল তো, বাক্যের শেষে ‘ল-লে-লাম’, ‘ত-তে-তাম’ থাকলে কোন টেন্স? আই ড্রেমট আ ড্রিম, হি ফট আ ফাইট—বুঝতে পেরেছিস তো ঠিকমতো?” আমরা স্যারের নাম দিয়েছিলাম ‘ল-লে-লাম। ত-তে-তাম স্যার’।
ছেলেরা হাসাহাসি করত। ক্লাসে আমরা দুষ্টুমি করলে বা পড়া না-পারলে কাছে ডেকে নিয়ে হাতের তালু গোল করে তাতে ফুঁ দিয়ে হাওয়া ভরে নিয়ে ঘাড়ে ধরে নিচু করে পিঠে গুড়ুম করে মারতেন। তাতে লাগত না অত; কিন্তু শব্দ হতো! এখন মনে করে হাসছি…
আহা, ভোর-সকালের বৃষ্টি আমাকে কত কিছু মনে করিয়ে দিয়ে গেল!
লেখক: শিল্পী
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে