সাজিদ মোহন
পুরোনো বই এক নেশা। অদ্ভুত অদ্ভুত সব বই পাওয়া যায় পুরোনো বইয়ের দোকানে। কিছু কিছু বই আছে আউট অব প্রিন্ট। কিছু বইয়ের আছে নতুন সংস্করণ। নতুন সংস্করণ পাওয়া গেলেও পুরোনো প্রথম সংস্করণে আলাদা একটা মাদকতা আছে। সেটা কেমন? দু-একটা উদাহরণ দিলে কিছুটা হয়তো বোঝা যাবে।
অরোরা ফেরদৌস নামের একজন গত ৬ মার্চ ২০২১ ‘গল্পসমগ্র’ নামের একটি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা কয়েকটি লাইনের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। লেখাগুলো এ রকম:
‘শীতের–
এক বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে
স্টেডিয়াম। বই’র দোকানে
সারিসারি বই– সুন্দর ঝকঝকে।
রুবির খুব বই পড়ার শখ।
কমজোর পকেট।
তবু কিনে ফেললাম।
মুহিত
১৮.১২.৯১ ইং’
অরোরার দেওয়া পোস্টটি শেয়ার হয় ৬২৮ বার। ছড়িয়ে পড়ে রাতারাতি। লেখাটি চোখে পড়ে স্বয়ং রুবির। ২ দিন পর ৮ মার্চ ফেসবুকে পোস্ট দেন রুবি পারভীন। লেখেন:
‘কি আশ্চর্য, মুহিত-এর দেওয়া এই বইটি আমি কীভাবে যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম... আজ মুহিতের এক বন্ধু আমাকে এই ফেসবুক পোস্টটা পাঠালেন...জানি না, অরোরা ফেরদৌসের হাতে কখন কীভাবে এই বইটি পৌঁছেছে!!!”
আরেকবার একটা বইয়ের ভেতরের প্রথম সাদা পৃষ্ঠায় দেখা গেল গোটা গোটা অক্ষরে লেখা কয়েকটা লাইন।
‘তুমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। খোদা নিজ হাতে আমাকে এই উপহার তুলে দিয়েছেন। আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমায় জয় করব। ভালো থেকো। আমার ভালোবাসা যেখানেই থাকো, সর্বদা আমারই থেকো। বাংলা নববর্ষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইল।
১লা বৈশাখ, ১৪১২
বীথি মেডিক্যাল ক্যাম্পাস’
লেখাটা পড়ে ধক্ করে উঠল বুকের ভেতর। একজন প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষকে বই উপহার দিয়েছে। লিখেছে তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কথা। সে বইটাও বিক্রি হয়ে গেল! কত প্রশ্ন ভেসে বেড়াল মনে। তারা কি একজন আরেকজনের হয়েছে? নাকি হতে পারেনি? যদিও হয়ে থাকে একজন আরেকজনের, আগের সে ভালোবাসা কি বেঁচে আছে? নাকি আর্থিক অনটনে অথবা বাসায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় অথবা ভিন্ন কোনো কারণে বইটা বেহাত হয়ে গেছে?
১১ অক্টোবর ২০১৯ এক ব্যক্তি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সামলাতে পারছেন না বলে ‘ব্যক্তিগত বাংলা লাইব্রেরি বিক্রি হবে’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন দেন একটি দৈনিক পত্রিকায়। প্রায় ৫০ বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত লাইব্রেরির বই এবং পত্রিকার সংগ্রহ বিক্রি করার ঘোষণা দেন তিনি।
বীথির প্রেমিকও হয়তো এ রকম কোনো কারণে বিক্রি করে দিয়েছিল বইটা। অথবা বইটা হারিয়ে ফেলেছিল রুবির মতো।
রুবি ও মুহিত একসঙ্গে আছে। বীথি ও তার প্রেমিক? তারা যদি একজন আরেকজনকে না পায়, ভাবতেই শিউরে উঠলাম। বইটা হাতে নিয়ে মনে হতে পারে আপনি নিজেই সেই ভালোবাসার মানুষ। বইটা যেন বীথি আপনাকেই দিয়েছে। তাকে আপনি এখন খুঁজবেন কোথায়? পুরোনো বইয়ের মাদকতা এখানেই।
কোনো কোনো বইয়ে অবশ্য ঠিকানা, ফোন নম্বরও লেখা থাকে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ এ রকম ঠিকানা ধরে পৌঁছে যায় বইয়ের আসল মালিকের কাছে। এ রকম ঘটনা বাস্তবে কি ঘটে? গল্পে অবশ্য ঘটতে দেখিছি। ‘দুজনার উপকথা’ নামে মশিউল আলমের গল্প ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় ২০১৫ সালে।
গল্পে নায়ক ‘রাশিয়ান উপকথা’ নামের একটি পুরোনো বইয়ের ভেতর দেখতে পায় এই লেখাটা:
‘নবম জন্মদিনে লাবনী মামনীকে বাবার শুভাশিষ।
তাজুল আহমদ
১৫ মে, ১৯৮৪
৪৮ পূর্ব রাজাবাজার, ঢাকা।’
বইটা এক বাবা উপহার দিয়েছেন তার নয় বছর বয়সী খুকিকে। হিসাব করে গল্পের নায়ক দেখল, ২৩ বছর পেরিয়ে গেছে। নয় বছরের খুকিটির বয়স এখন ৩২। এ কেমন মেয়ে? এত সুন্দর একটা বই, উপরন্তু বাবার দেওয়া উপহার, কেন সে বইটা বিক্রি না করে সযত্নে আগলে রাখেনি? নাছোড়বান্দা নায়ক নেমে পড়েন লাবনীকে খুঁজতে। একটাই উদ্দেশ্য—লাবনীকে বইটা ফিরিয়ে দিয়ে বলতে, ‘বাবার দেওয়া উপহার যত্ন করে রাখতে হয়।’ খুঁজতে খুঁজতে লাবনীর সঙ্গে নায়কের দেখা হয়। তবে বইয়ে উল্লেখ করা ঠিকানায় নয়। দেখা হয় খুলনায়। বইটা পেয়ে অবাক বিস্ময়ে লাবনী জানায়, ‘বইটা সে এক বান্ধবীকে দিয়েছিল পড়তে। তারপর সে সের দরে বিক্রি করে দিয়েছে।’
গল্পের নায়ক লাবনীকে খুঁজে পেয়েছিল। আপনারও কি ইচ্ছে করছে বীথিকে খুঁজে বের করি? কিন্তু লাবনীর মতো বীথির কোনো ঠিকানা দেওয়া নেই।
আবার এ রকম অনেক বইয়ের দেখাও মেলে বিখ্যাত বা জনপ্রিয় কোনো লেখককে নানান সম্বোধন লিখে উপহার দিয়েছেন অখ্যাত কোনো নবীন লেখক। বিখ্যাত, জনপ্রিয় লেখক হয়তো বইটা পড়েছেন, হয়তো পড়েননি। সংগ্রহে রাখার প্রয়োজন নেই মনে করে বিক্রি করে দিয়েছেন কেজি মেপে। এ রকম বইগুলো যখন ওল্টাই, নবীন সে লেখকের কোমল করুণ মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। যদি এ রকম হয়, যে দিয়েছে বইটা সে-ই আবার বইটা খুঁজে পায় পুরোনো বইয়ের দোকানে! অসম্ভব কিছু নয়।
এতক্ষণ তো শুধু বললাম বইয়ের ভেতরের প্রথম পৃষ্ঠার কথা। পুরোনো বইয়ের ভেতরে পাতায় পাতায়, পাতার ভাঁজে ভাঁজেও লুকানো থাকে গোপন বিস্ময়। ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ চোখে পড়ে যত্ন করে বানানো একটা বুকমার্কার, শুকিয়ে যাওয়া একটা গোলাপ ফুলের পাপড়ি, একটা প্রজাপতির পাখা, একটা ছবি, কিছু লিখে আবার কেটে দেওয়া, শত শত আন্ডারলাইন আর মার্জিনে মন্তব্য। একবার একটা বই পেয়েছিলাম মাহমুদুল হকের ‘কালো বরফ’। ভেতরে অনেকগুলো লাইন হলুদ মার্কারে আন্ডারলাইন করা। লাইনগুলো পড়ে বুঝলাম, কোনো এক প্রিয়জন তার প্রিয়জনকে এই লাইনগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে পরোক্ষভাবে বোঝাতে চাচ্ছে তার ভালোবাসার কথা। কে বলে ‘বুদ্ধিহীন মানব হৃদয়’?
একসময় বই উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন উপলক্ষে একজন আরেকজনকে বই উপহার দিত। এটা এখন অনেকটাই কমে গেছে। সেসব বইয়ের শুরুতে কত বিচিত্র কথা লেখা থাকে। আরেকটা বইয়ের কথা বলে শেষ করি। বইটার নাম ‘আমার আছে জল’, লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বইটা আগে পড়া থাকায় বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় শুধু কয়েকটা শব্দের একটা লাইন দেখে থমকে দাঁড়ালাম। বোঝার বাকি রইল না, কে কাকে কেন উপহার দিচ্ছে। গোটা গোটা অক্ষরে চরম অভিমান নিয়ে কে যেন লিখে রেখেছে: ‘জানি পড়বে না।’
(লেখাটি এসেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে)
পুরোনো বই এক নেশা। অদ্ভুত অদ্ভুত সব বই পাওয়া যায় পুরোনো বইয়ের দোকানে। কিছু কিছু বই আছে আউট অব প্রিন্ট। কিছু বইয়ের আছে নতুন সংস্করণ। নতুন সংস্করণ পাওয়া গেলেও পুরোনো প্রথম সংস্করণে আলাদা একটা মাদকতা আছে। সেটা কেমন? দু-একটা উদাহরণ দিলে কিছুটা হয়তো বোঝা যাবে।
অরোরা ফেরদৌস নামের একজন গত ৬ মার্চ ২০২১ ‘গল্পসমগ্র’ নামের একটি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা কয়েকটি লাইনের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। লেখাগুলো এ রকম:
‘শীতের–
এক বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে
স্টেডিয়াম। বই’র দোকানে
সারিসারি বই– সুন্দর ঝকঝকে।
রুবির খুব বই পড়ার শখ।
কমজোর পকেট।
তবু কিনে ফেললাম।
মুহিত
১৮.১২.৯১ ইং’
অরোরার দেওয়া পোস্টটি শেয়ার হয় ৬২৮ বার। ছড়িয়ে পড়ে রাতারাতি। লেখাটি চোখে পড়ে স্বয়ং রুবির। ২ দিন পর ৮ মার্চ ফেসবুকে পোস্ট দেন রুবি পারভীন। লেখেন:
‘কি আশ্চর্য, মুহিত-এর দেওয়া এই বইটি আমি কীভাবে যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম... আজ মুহিতের এক বন্ধু আমাকে এই ফেসবুক পোস্টটা পাঠালেন...জানি না, অরোরা ফেরদৌসের হাতে কখন কীভাবে এই বইটি পৌঁছেছে!!!”
আরেকবার একটা বইয়ের ভেতরের প্রথম সাদা পৃষ্ঠায় দেখা গেল গোটা গোটা অক্ষরে লেখা কয়েকটা লাইন।
‘তুমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। খোদা নিজ হাতে আমাকে এই উপহার তুলে দিয়েছেন। আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমায় জয় করব। ভালো থেকো। আমার ভালোবাসা যেখানেই থাকো, সর্বদা আমারই থেকো। বাংলা নববর্ষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইল।
১লা বৈশাখ, ১৪১২
বীথি মেডিক্যাল ক্যাম্পাস’
লেখাটা পড়ে ধক্ করে উঠল বুকের ভেতর। একজন প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষকে বই উপহার দিয়েছে। লিখেছে তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কথা। সে বইটাও বিক্রি হয়ে গেল! কত প্রশ্ন ভেসে বেড়াল মনে। তারা কি একজন আরেকজনের হয়েছে? নাকি হতে পারেনি? যদিও হয়ে থাকে একজন আরেকজনের, আগের সে ভালোবাসা কি বেঁচে আছে? নাকি আর্থিক অনটনে অথবা বাসায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় অথবা ভিন্ন কোনো কারণে বইটা বেহাত হয়ে গেছে?
১১ অক্টোবর ২০১৯ এক ব্যক্তি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সামলাতে পারছেন না বলে ‘ব্যক্তিগত বাংলা লাইব্রেরি বিক্রি হবে’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন দেন একটি দৈনিক পত্রিকায়। প্রায় ৫০ বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত লাইব্রেরির বই এবং পত্রিকার সংগ্রহ বিক্রি করার ঘোষণা দেন তিনি।
বীথির প্রেমিকও হয়তো এ রকম কোনো কারণে বিক্রি করে দিয়েছিল বইটা। অথবা বইটা হারিয়ে ফেলেছিল রুবির মতো।
রুবি ও মুহিত একসঙ্গে আছে। বীথি ও তার প্রেমিক? তারা যদি একজন আরেকজনকে না পায়, ভাবতেই শিউরে উঠলাম। বইটা হাতে নিয়ে মনে হতে পারে আপনি নিজেই সেই ভালোবাসার মানুষ। বইটা যেন বীথি আপনাকেই দিয়েছে। তাকে আপনি এখন খুঁজবেন কোথায়? পুরোনো বইয়ের মাদকতা এখানেই।
কোনো কোনো বইয়ে অবশ্য ঠিকানা, ফোন নম্বরও লেখা থাকে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ এ রকম ঠিকানা ধরে পৌঁছে যায় বইয়ের আসল মালিকের কাছে। এ রকম ঘটনা বাস্তবে কি ঘটে? গল্পে অবশ্য ঘটতে দেখিছি। ‘দুজনার উপকথা’ নামে মশিউল আলমের গল্প ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় ২০১৫ সালে।
গল্পে নায়ক ‘রাশিয়ান উপকথা’ নামের একটি পুরোনো বইয়ের ভেতর দেখতে পায় এই লেখাটা:
‘নবম জন্মদিনে লাবনী মামনীকে বাবার শুভাশিষ।
তাজুল আহমদ
১৫ মে, ১৯৮৪
৪৮ পূর্ব রাজাবাজার, ঢাকা।’
বইটা এক বাবা উপহার দিয়েছেন তার নয় বছর বয়সী খুকিকে। হিসাব করে গল্পের নায়ক দেখল, ২৩ বছর পেরিয়ে গেছে। নয় বছরের খুকিটির বয়স এখন ৩২। এ কেমন মেয়ে? এত সুন্দর একটা বই, উপরন্তু বাবার দেওয়া উপহার, কেন সে বইটা বিক্রি না করে সযত্নে আগলে রাখেনি? নাছোড়বান্দা নায়ক নেমে পড়েন লাবনীকে খুঁজতে। একটাই উদ্দেশ্য—লাবনীকে বইটা ফিরিয়ে দিয়ে বলতে, ‘বাবার দেওয়া উপহার যত্ন করে রাখতে হয়।’ খুঁজতে খুঁজতে লাবনীর সঙ্গে নায়কের দেখা হয়। তবে বইয়ে উল্লেখ করা ঠিকানায় নয়। দেখা হয় খুলনায়। বইটা পেয়ে অবাক বিস্ময়ে লাবনী জানায়, ‘বইটা সে এক বান্ধবীকে দিয়েছিল পড়তে। তারপর সে সের দরে বিক্রি করে দিয়েছে।’
গল্পের নায়ক লাবনীকে খুঁজে পেয়েছিল। আপনারও কি ইচ্ছে করছে বীথিকে খুঁজে বের করি? কিন্তু লাবনীর মতো বীথির কোনো ঠিকানা দেওয়া নেই।
আবার এ রকম অনেক বইয়ের দেখাও মেলে বিখ্যাত বা জনপ্রিয় কোনো লেখককে নানান সম্বোধন লিখে উপহার দিয়েছেন অখ্যাত কোনো নবীন লেখক। বিখ্যাত, জনপ্রিয় লেখক হয়তো বইটা পড়েছেন, হয়তো পড়েননি। সংগ্রহে রাখার প্রয়োজন নেই মনে করে বিক্রি করে দিয়েছেন কেজি মেপে। এ রকম বইগুলো যখন ওল্টাই, নবীন সে লেখকের কোমল করুণ মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। যদি এ রকম হয়, যে দিয়েছে বইটা সে-ই আবার বইটা খুঁজে পায় পুরোনো বইয়ের দোকানে! অসম্ভব কিছু নয়।
এতক্ষণ তো শুধু বললাম বইয়ের ভেতরের প্রথম পৃষ্ঠার কথা। পুরোনো বইয়ের ভেতরে পাতায় পাতায়, পাতার ভাঁজে ভাঁজেও লুকানো থাকে গোপন বিস্ময়। ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ চোখে পড়ে যত্ন করে বানানো একটা বুকমার্কার, শুকিয়ে যাওয়া একটা গোলাপ ফুলের পাপড়ি, একটা প্রজাপতির পাখা, একটা ছবি, কিছু লিখে আবার কেটে দেওয়া, শত শত আন্ডারলাইন আর মার্জিনে মন্তব্য। একবার একটা বই পেয়েছিলাম মাহমুদুল হকের ‘কালো বরফ’। ভেতরে অনেকগুলো লাইন হলুদ মার্কারে আন্ডারলাইন করা। লাইনগুলো পড়ে বুঝলাম, কোনো এক প্রিয়জন তার প্রিয়জনকে এই লাইনগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে পরোক্ষভাবে বোঝাতে চাচ্ছে তার ভালোবাসার কথা। কে বলে ‘বুদ্ধিহীন মানব হৃদয়’?
একসময় বই উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন উপলক্ষে একজন আরেকজনকে বই উপহার দিত। এটা এখন অনেকটাই কমে গেছে। সেসব বইয়ের শুরুতে কত বিচিত্র কথা লেখা থাকে। আরেকটা বইয়ের কথা বলে শেষ করি। বইটার নাম ‘আমার আছে জল’, লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বইটা আগে পড়া থাকায় বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় শুধু কয়েকটা শব্দের একটা লাইন দেখে থমকে দাঁড়ালাম। বোঝার বাকি রইল না, কে কাকে কেন উপহার দিচ্ছে। গোটা গোটা অক্ষরে চরম অভিমান নিয়ে কে যেন লিখে রেখেছে: ‘জানি পড়বে না।’
(লেখাটি এসেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে)
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে