মামুন আ. কাইউম
৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী। দীর্ঘ এ পথপরিক্রমায় দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম যুক্ত হয়েছে। শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্যারিস রোডের গগন শিরীষগাছগুলোর মতোই দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রেখে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশে এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি হয়। ১৯৫২ সালে শহরের ভুবনমোহন পার্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে জনসভা হয়। অনেক আন্দোলনের পর তৎকালীন আইনসভার সদস্য মাদার বখশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
ক্লাস শুরু হয় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজে। সাতটি বিভাগে মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৬১ সালে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের পরিকল্পনায় মতিহারের সবুজ চত্বরের নিজ ক্যাম্পাসটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা শহীদ হওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। মহান মুক্তিযুদ্ধেও বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাড়াও ৩০ জন ছাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন।
১৯৫৩ সালে শুরু হওয়া সাতটি বিভাগের ১৬১ জন ছাত্রের জায়গায় কলেরব বেড়ে এখন এর বিভাগ ৫৯টি এবং শিক্ষার্থী প্রায় চল্লিশ হাজার। এখানে শিক্ষক কর্মরত আছেন প্রায় ১২৫০ আর কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৬০০-র কাছাকাছি। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা করছেন। ৭৫৩ একর জায়গায় একাডেমিক ও আবাসিকের বাইরে এর সুবৃহৎ লাইব্রেরি, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একেকটা অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে। এর ছয়টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট আর ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরি বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
দীর্ঘ ৬৮ বছরের পথচলায় এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন দেশবরেণ্য জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, বিজ্ঞানী পিটার বার্টচি, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, প্রফেসর হাসান আজিজুল হক, প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক, প্রফেসর বদরুদ্দীন উমরের মতো শিক্ষকেরা। কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষকেরা গুণগত মানের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে স্ট্রবেরি, আমের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ, মসলিন পুনরুদ্ধার, খরাপ্রবণ অঞ্চলে পানির সংকট হ্রাস নিয়ে অভিজ্ঞ গবেষকেরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৯ সালে স্কোপাসের বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। এখানকার ছাত্ররাজনীতির দিকপালরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ও অদ্যাবধি করছেন। হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট এখন দেশ ও বিদেশের মাটিতে নিজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর্ম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আলোকিত করছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যালামনাইরাও তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্যোতি ছড়াচ্ছেন।
সব দিক থেকে বর্তমান শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা যেমন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পান, তেমনি কিছু বিষয় আবার সামনে এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে বিশ্বমানের করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ মাঝে মাঝেই পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে সিনেট ও রাকসু অকার্যকর রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সুশাসনের সংকট দেখা দিচ্ছে ও ছাত্ররাজনীতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে হলেও প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পদগুলো মাঝে মাঝে দীর্ঘদিন ফাঁকা রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে সরকার কতটা আন্তরিক, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক এবং মাঝে মাঝেই বিতর্কিত নিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে–তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সংকট নিরসনের প্রচেষ্টার পরও শিক্ষার্থীদের আবাসন, বিভাগের শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকদের চেম্বার সংকট আছেই। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাময় অ্যালামনাইদের একক বৃহৎ প্ল্যাটফর্মে আনা যাচ্ছে না। আরও মানসম্মত ও বিশ্বমানের গবেষণা, প্রকাশনা, বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণ, ভাবমূর্তির উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ওয়েবসাইটের আধুনিকায়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি। সে জন্য উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বিভিন্ন লিঙ্ক প্রোগ্রাম বাড়ানোটাও সময়ের দাবি। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সিলেবাসগুলো আরও আধুনিকায়নের বিকল্প নেই।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিলাসী ছোটগল্পে বলেছিলেন, ‘টিকিয়া থাকাই চরম সার্থকতা নয়, এবং অতীকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।’ বাংলাদেশের একজন মানুষের গড় আয়ু এখন সত্তরের ঘরে, যেটি ছুঁইছুঁই করছে এ প্রতিষ্ঠান। মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছু মিল রয়েছে। মানুষ বা প্রতিষ্ঠান যা-ই হোক না কেন, অন্য মানুষ বা বৃহৎ পরিসরে জাতির কল্যাণে কাজ না করতে পারলে কেউই মনে রাখে না। আবার মানুষ বা প্রতিষ্ঠান উভয়েরই পথচলায় হোঁচট খেতে হয় মাঝে মাঝেই। আমরা বিশ্বাস করি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিজের ও অ্যালামনাইদের কর্মের মাধ্যমে স্বমহিমায় যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে। সেখানে থাকবে বাধাবিপত্তিও। সেগুলো মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাবে। প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠবার্ষিকী শুভ হোক।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী। দীর্ঘ এ পথপরিক্রমায় দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম যুক্ত হয়েছে। শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্যারিস রোডের গগন শিরীষগাছগুলোর মতোই দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রেখে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশে এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি হয়। ১৯৫২ সালে শহরের ভুবনমোহন পার্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে জনসভা হয়। অনেক আন্দোলনের পর তৎকালীন আইনসভার সদস্য মাদার বখশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
ক্লাস শুরু হয় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজে। সাতটি বিভাগে মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৬১ সালে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের পরিকল্পনায় মতিহারের সবুজ চত্বরের নিজ ক্যাম্পাসটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা শহীদ হওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। মহান মুক্তিযুদ্ধেও বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাড়াও ৩০ জন ছাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন।
১৯৫৩ সালে শুরু হওয়া সাতটি বিভাগের ১৬১ জন ছাত্রের জায়গায় কলেরব বেড়ে এখন এর বিভাগ ৫৯টি এবং শিক্ষার্থী প্রায় চল্লিশ হাজার। এখানে শিক্ষক কর্মরত আছেন প্রায় ১২৫০ আর কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৬০০-র কাছাকাছি। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা করছেন। ৭৫৩ একর জায়গায় একাডেমিক ও আবাসিকের বাইরে এর সুবৃহৎ লাইব্রেরি, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একেকটা অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে। এর ছয়টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট আর ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরি বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
দীর্ঘ ৬৮ বছরের পথচলায় এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন দেশবরেণ্য জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, বিজ্ঞানী পিটার বার্টচি, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, প্রফেসর হাসান আজিজুল হক, প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক, প্রফেসর বদরুদ্দীন উমরের মতো শিক্ষকেরা। কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষকেরা গুণগত মানের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে স্ট্রবেরি, আমের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ, মসলিন পুনরুদ্ধার, খরাপ্রবণ অঞ্চলে পানির সংকট হ্রাস নিয়ে অভিজ্ঞ গবেষকেরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৯ সালে স্কোপাসের বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। এখানকার ছাত্ররাজনীতির দিকপালরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ও অদ্যাবধি করছেন। হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট এখন দেশ ও বিদেশের মাটিতে নিজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর্ম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আলোকিত করছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যালামনাইরাও তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্যোতি ছড়াচ্ছেন।
সব দিক থেকে বর্তমান শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা যেমন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পান, তেমনি কিছু বিষয় আবার সামনে এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে বিশ্বমানের করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ মাঝে মাঝেই পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে সিনেট ও রাকসু অকার্যকর রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সুশাসনের সংকট দেখা দিচ্ছে ও ছাত্ররাজনীতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে হলেও প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পদগুলো মাঝে মাঝে দীর্ঘদিন ফাঁকা রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে সরকার কতটা আন্তরিক, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক এবং মাঝে মাঝেই বিতর্কিত নিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে–তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সংকট নিরসনের প্রচেষ্টার পরও শিক্ষার্থীদের আবাসন, বিভাগের শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকদের চেম্বার সংকট আছেই। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাময় অ্যালামনাইদের একক বৃহৎ প্ল্যাটফর্মে আনা যাচ্ছে না। আরও মানসম্মত ও বিশ্বমানের গবেষণা, প্রকাশনা, বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণ, ভাবমূর্তির উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ওয়েবসাইটের আধুনিকায়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি। সে জন্য উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বিভিন্ন লিঙ্ক প্রোগ্রাম বাড়ানোটাও সময়ের দাবি। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সিলেবাসগুলো আরও আধুনিকায়নের বিকল্প নেই।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিলাসী ছোটগল্পে বলেছিলেন, ‘টিকিয়া থাকাই চরম সার্থকতা নয়, এবং অতীকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।’ বাংলাদেশের একজন মানুষের গড় আয়ু এখন সত্তরের ঘরে, যেটি ছুঁইছুঁই করছে এ প্রতিষ্ঠান। মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছু মিল রয়েছে। মানুষ বা প্রতিষ্ঠান যা-ই হোক না কেন, অন্য মানুষ বা বৃহৎ পরিসরে জাতির কল্যাণে কাজ না করতে পারলে কেউই মনে রাখে না। আবার মানুষ বা প্রতিষ্ঠান উভয়েরই পথচলায় হোঁচট খেতে হয় মাঝে মাঝেই। আমরা বিশ্বাস করি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিজের ও অ্যালামনাইদের কর্মের মাধ্যমে স্বমহিমায় যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে। সেখানে থাকবে বাধাবিপত্তিও। সেগুলো মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাবে। প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠবার্ষিকী শুভ হোক।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৯ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১০ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে