মানবর্ধন পাল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাস করছি সাঁইত্রিশ বছর। ১৯৮৪ সাল থেকে। আমার জন্মস্থান ময়মনসিংহ হলেও কর্মক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া। হালুয়াঘাটের বীজতলা থেকে লিকলিকে চারাগাছটি রোপিত হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে। সেটি বড় হয়ে এখন প্রৌঢ়ত্বের সীমায়। জীবনবৃক্ষটি ডালপালা গজিয়ে বড় হয়েছে ঠিকই; কিন্তু ফুল ফোটায়নি, ফলও ধরায়নি। শুধু মাটির মমতা মেখে ও রস গ্রহণ করে বেহুদাই বড় হয়েছে! এটি বিনয় নয়। বিনয়ী হতে গেলে যে মহত্ত্বের প্রয়োজন, সত্যি বলি, তা আমার বিন্দুমাত্র নেই। নিজেকে চিনি বলেই এমন দুঃখের কথা লিখলাম এ কারণে যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সশরীরে বাস করেও এখানকার কত খ্যাতিমান মানুষের কথা জানি না! এমন আত্মস্বীকৃত শরমের কথা লিখে জানাতেও আমার দ্বিধা নেই! কারণ, তাতেও যদি আত্মদংশন কিছুটা লাঘব হয়! বিষয়টি একটু খোলাশা করেই লিখি।
গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ নম্বর সংসদীয় আসনের মাননীয় এমপি জনাব র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী মহোদয়ের পরামর্শক্রমে ‘চরিতাভিধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংকলনের কাজ করছি। এর উদ্দেশ্য, ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে যদ্দুর পেছনে যাওয়া যায়, সেখান থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই অঞ্চলের বিভিন্ন সেক্টরের খ্যাতিমান মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনতথ্য তুলে আনা। কাজটি করতে গিয়ে শ দুয়েক বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর পাতা ওল্টাতে হয়েছে। কত মানুষের কাছে খোঁজখবর নিতে হয়েছে, কথাবার্তা বলতে হয়েছ! ঘুরেফিরে গ্রহণ করতে হয়েছে সাক্ষাৎকার। একাধিক দিন, একাধিকবারও যেতে হয়েছে। মুলাচাষির মতো চষতে হয়েছে সারা জেলা! কেউ তো আর আমাকে সময় দেওয়ার জন্য বসে নেই! বই-পুস্তক তো বটেই, কতজনের কাছে কত রকমের সাহায্য যে গ্রহণ করতে হয়েছে, তার শেষ নেই! একটির সন্ধান করতে গিয়ে একাধিক মণি-মুক্তার সন্ধান পেয়েছি। সূক্তির ভেতর যেমন লুকিয়ে থাকে একাধিক মুক্তা, অনেকটা সেরকম। কিন্তু এমন একজন মানুষের সন্ধান আমাকে কেউ দেয়নি, যিনি সাম্প্রতিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাসে জ্ঞানে-গুণে ও পাণ্ডিত্যে কেবল মণি-মুক্তার তুল্যই নন, রীতিমতো বহুবর্ণিল ও জ্যোতির্ময় হিরে। এই মানুষটির কথা সংক্ষেপে লিখেই আমার কূপমণ্ডূকতার পরিচয় দিই।
তাঁর পুরো নাম সৈয়দ আশরাফউদ্দিন আহমেদ। লেখক নাম আশরাফ আহমেদ আর ফেসবুক আইডিতে নাম এস আশরাফ আহমেদ (১৯৫১)। তবে মধ্য ও মূল নাম আশরাফই। আমার মতো আতরাফের সঙ্গে তাঁর মতো আশরাফের পরিচয়, প্রণয় কিংবা সখ্য থাকার কথা নয়। কারণ আমাদের সমাজ-মনস্তত্ত্ব এমনই যে, আশরাফেরা সাধারণত আতরাফের সঙ্গে মেশে না! কিন্তু তাঁর মানসিক উদারতা এমনই যে ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সঙ্গে।’ তাই মাসখানেকের মধ্যেই আমি হয়ে গেলাম তাঁর বন্ধু, সখা, মিত্র। ফেসবুকের একটি তুচ্ছ লেখাই সুদূর আমেরিকাপ্রবাসী একজন বড় মাপের বিজ্ঞানী ও স্বনামধন্য লেখকের মন জয় করতে পারে জাদুমন্ত্রের মতো, তিনি তারই সাক্ষী।
আশরাফ আহমেদ তিতাসের পললভূমিসমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই সন্তান। বাড়ি শহরের কাজীপাড়ায়, সৈয়দ মঞ্জিল। অন্নদা হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রাণরসায়নের শিক্ষার্থী হিসেবে সেখান থেকে যে সত্যিকার প্রাণরস সংগ্রহ করে তিনি বেড়ে উঠেছেন, তা তাঁর কর্ম ও কৃতি দেখলেই বোঝা যায়! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করলেও পেশায় মূলত বিজ্ঞানী। জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে কর্মসূত্রে আমেরিকায় বাস করছেন ১৯৮৩ সাল থেকে। প্রায় চার দশক ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী ও বইয়ে শতাধিক মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিজ্ঞানী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। জাপান, আমেরিকা, ইতালি, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্মেলনের উপদেষ্টা, সংগঠক, অধিবেশন-সভাপতি বা আমন্ত্রিত বক্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। অসংখ্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত।
প্রায় চার দশক তিনি দেশের বাইরে। স্বপ্নের দেশ জাপান ও আমেরিকায়। ২০২০-এ ৭০ বছর বয়সে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়েছেন। এ দেশের মানুষ একবার স্বপ্নের দেশে গেলে আর ফেরে না। ভুলে যায় মাতৃভূমি ও জন্মস্থান। কিন্তু তিনি ভোলেননি। স্থায়ীভাবে না হলেও নাড়ির টানে বারবার আসেন বাংলাদেশে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি যে ভোলেননি দেশ ও জন্মস্থানের বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের স্মৃতিজাগানিয়া আখ্যান, তার সাক্ষ্য দেয় তাঁর বইগুলো। সারা জীবন লিখেছেন ইংরেজিতে। কিন্তু গত এক দশক ধরে লিখছেন মাতৃভাষায়। তাঁকে জানলে মনে পড়ে ‘বাঙালনামা’র লেখক প্রয়াত তপন রায় চৌধুরীর কথা। বাংলায় এ পর্যন্ত আশরাফ আহমেদের বইয়ের সংখ্যা দশ। এর মধ্যে মাত্র একটি উপন্যাস এবং দুটি কল্পবিজ্ঞান। আর সবই স্মৃতিচারণামূলক ও নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত। পরিচিত মুখ, আত্মীয়-পরিজন, জন্মস্থানের স্মৃতি-আখ্যান, বাংলাদেশের প্রসববেদনা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতিকথায় ভরপুর তাঁর রচনা। সারা জীবন ইংরেজিতে প্রাণরসায়নের জটিল বিজ্ঞান নিয়ে লিখলেও মাতৃভাষায় তাঁর ঈর্ষণীয় দক্ষতা। এককথায়, আশরাফ আহমেদের গদ্য সরল, ঋজু, সুঠাম ও সরস। আমি তাঁরে চোখে দেখিনি, প্রত্যক্ষ পরিচয় নেই; কিন্তু মনে হয় জন্মজন্মান্তরের চেনা! ফেবুতে এবং ফোনে এক মাসের মধ্যেই তাঁকে হৃদয় দিয়ে জেনেছি যে পাথর ঘষে আগুন জ্বালানো কঠিন; কিন্তু দেশলাইয়ের কাঠি এক ঘষাতেই জ্বলে। আমাদের পরিচয়ের প্রসঙ্গটি তেমনই। এই পরিচয়েই তিনি তাঁর আটটি বই ইতিমধ্যে আমাকে পাঠিয়েছেন আমেরিকায় বসে। আরও দুটি আছে পাইপলাইনে। এখন সেগুলো বুঁদ হয়ে পড়ছি আর জানছি তাঁর ঋদ্ধ জীবন, জীবনবীক্ষণ ও স্মৃতিময় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে।
সৌভাগ্যবশত আশরাফ আহমেদের সঙ্গে আকস্মিক পরিচয় না হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন গুণী মানুষটিকে অভিধানে যুক্ত করতে পারতাম না। একেই বলে ‘শাপেবর’। অভিধানটির অনেক অপূর্ণতার মধ্যে তা হতো কৃষ্ণগহ্বর! করাল করোনা বিষাক্ত ছোবল না দিলে ‘চরিতাভিধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ এত দিনে নিশ্চয়ই বেরিয়ে যেত! আর অজানাই থেকে যেত আত্মপ্রচারহীন আশরাফ আহমেদের জীবনবৃত্তান্ত জানা এবং জানানো।
লেখক∶ শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাস করছি সাঁইত্রিশ বছর। ১৯৮৪ সাল থেকে। আমার জন্মস্থান ময়মনসিংহ হলেও কর্মক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া। হালুয়াঘাটের বীজতলা থেকে লিকলিকে চারাগাছটি রোপিত হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে। সেটি বড় হয়ে এখন প্রৌঢ়ত্বের সীমায়। জীবনবৃক্ষটি ডালপালা গজিয়ে বড় হয়েছে ঠিকই; কিন্তু ফুল ফোটায়নি, ফলও ধরায়নি। শুধু মাটির মমতা মেখে ও রস গ্রহণ করে বেহুদাই বড় হয়েছে! এটি বিনয় নয়। বিনয়ী হতে গেলে যে মহত্ত্বের প্রয়োজন, সত্যি বলি, তা আমার বিন্দুমাত্র নেই। নিজেকে চিনি বলেই এমন দুঃখের কথা লিখলাম এ কারণে যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সশরীরে বাস করেও এখানকার কত খ্যাতিমান মানুষের কথা জানি না! এমন আত্মস্বীকৃত শরমের কথা লিখে জানাতেও আমার দ্বিধা নেই! কারণ, তাতেও যদি আত্মদংশন কিছুটা লাঘব হয়! বিষয়টি একটু খোলাশা করেই লিখি।
গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ নম্বর সংসদীয় আসনের মাননীয় এমপি জনাব র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী মহোদয়ের পরামর্শক্রমে ‘চরিতাভিধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংকলনের কাজ করছি। এর উদ্দেশ্য, ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে যদ্দুর পেছনে যাওয়া যায়, সেখান থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই অঞ্চলের বিভিন্ন সেক্টরের খ্যাতিমান মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনতথ্য তুলে আনা। কাজটি করতে গিয়ে শ দুয়েক বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর পাতা ওল্টাতে হয়েছে। কত মানুষের কাছে খোঁজখবর নিতে হয়েছে, কথাবার্তা বলতে হয়েছ! ঘুরেফিরে গ্রহণ করতে হয়েছে সাক্ষাৎকার। একাধিক দিন, একাধিকবারও যেতে হয়েছে। মুলাচাষির মতো চষতে হয়েছে সারা জেলা! কেউ তো আর আমাকে সময় দেওয়ার জন্য বসে নেই! বই-পুস্তক তো বটেই, কতজনের কাছে কত রকমের সাহায্য যে গ্রহণ করতে হয়েছে, তার শেষ নেই! একটির সন্ধান করতে গিয়ে একাধিক মণি-মুক্তার সন্ধান পেয়েছি। সূক্তির ভেতর যেমন লুকিয়ে থাকে একাধিক মুক্তা, অনেকটা সেরকম। কিন্তু এমন একজন মানুষের সন্ধান আমাকে কেউ দেয়নি, যিনি সাম্প্রতিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাসে জ্ঞানে-গুণে ও পাণ্ডিত্যে কেবল মণি-মুক্তার তুল্যই নন, রীতিমতো বহুবর্ণিল ও জ্যোতির্ময় হিরে। এই মানুষটির কথা সংক্ষেপে লিখেই আমার কূপমণ্ডূকতার পরিচয় দিই।
তাঁর পুরো নাম সৈয়দ আশরাফউদ্দিন আহমেদ। লেখক নাম আশরাফ আহমেদ আর ফেসবুক আইডিতে নাম এস আশরাফ আহমেদ (১৯৫১)। তবে মধ্য ও মূল নাম আশরাফই। আমার মতো আতরাফের সঙ্গে তাঁর মতো আশরাফের পরিচয়, প্রণয় কিংবা সখ্য থাকার কথা নয়। কারণ আমাদের সমাজ-মনস্তত্ত্ব এমনই যে, আশরাফেরা সাধারণত আতরাফের সঙ্গে মেশে না! কিন্তু তাঁর মানসিক উদারতা এমনই যে ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সঙ্গে।’ তাই মাসখানেকের মধ্যেই আমি হয়ে গেলাম তাঁর বন্ধু, সখা, মিত্র। ফেসবুকের একটি তুচ্ছ লেখাই সুদূর আমেরিকাপ্রবাসী একজন বড় মাপের বিজ্ঞানী ও স্বনামধন্য লেখকের মন জয় করতে পারে জাদুমন্ত্রের মতো, তিনি তারই সাক্ষী।
আশরাফ আহমেদ তিতাসের পললভূমিসমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই সন্তান। বাড়ি শহরের কাজীপাড়ায়, সৈয়দ মঞ্জিল। অন্নদা হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রাণরসায়নের শিক্ষার্থী হিসেবে সেখান থেকে যে সত্যিকার প্রাণরস সংগ্রহ করে তিনি বেড়ে উঠেছেন, তা তাঁর কর্ম ও কৃতি দেখলেই বোঝা যায়! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করলেও পেশায় মূলত বিজ্ঞানী। জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে কর্মসূত্রে আমেরিকায় বাস করছেন ১৯৮৩ সাল থেকে। প্রায় চার দশক ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী ও বইয়ে শতাধিক মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিজ্ঞানী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। জাপান, আমেরিকা, ইতালি, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্মেলনের উপদেষ্টা, সংগঠক, অধিবেশন-সভাপতি বা আমন্ত্রিত বক্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। অসংখ্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত।
প্রায় চার দশক তিনি দেশের বাইরে। স্বপ্নের দেশ জাপান ও আমেরিকায়। ২০২০-এ ৭০ বছর বয়সে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়েছেন। এ দেশের মানুষ একবার স্বপ্নের দেশে গেলে আর ফেরে না। ভুলে যায় মাতৃভূমি ও জন্মস্থান। কিন্তু তিনি ভোলেননি। স্থায়ীভাবে না হলেও নাড়ির টানে বারবার আসেন বাংলাদেশে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি যে ভোলেননি দেশ ও জন্মস্থানের বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের স্মৃতিজাগানিয়া আখ্যান, তার সাক্ষ্য দেয় তাঁর বইগুলো। সারা জীবন লিখেছেন ইংরেজিতে। কিন্তু গত এক দশক ধরে লিখছেন মাতৃভাষায়। তাঁকে জানলে মনে পড়ে ‘বাঙালনামা’র লেখক প্রয়াত তপন রায় চৌধুরীর কথা। বাংলায় এ পর্যন্ত আশরাফ আহমেদের বইয়ের সংখ্যা দশ। এর মধ্যে মাত্র একটি উপন্যাস এবং দুটি কল্পবিজ্ঞান। আর সবই স্মৃতিচারণামূলক ও নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত। পরিচিত মুখ, আত্মীয়-পরিজন, জন্মস্থানের স্মৃতি-আখ্যান, বাংলাদেশের প্রসববেদনা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতিকথায় ভরপুর তাঁর রচনা। সারা জীবন ইংরেজিতে প্রাণরসায়নের জটিল বিজ্ঞান নিয়ে লিখলেও মাতৃভাষায় তাঁর ঈর্ষণীয় দক্ষতা। এককথায়, আশরাফ আহমেদের গদ্য সরল, ঋজু, সুঠাম ও সরস। আমি তাঁরে চোখে দেখিনি, প্রত্যক্ষ পরিচয় নেই; কিন্তু মনে হয় জন্মজন্মান্তরের চেনা! ফেবুতে এবং ফোনে এক মাসের মধ্যেই তাঁকে হৃদয় দিয়ে জেনেছি যে পাথর ঘষে আগুন জ্বালানো কঠিন; কিন্তু দেশলাইয়ের কাঠি এক ঘষাতেই জ্বলে। আমাদের পরিচয়ের প্রসঙ্গটি তেমনই। এই পরিচয়েই তিনি তাঁর আটটি বই ইতিমধ্যে আমাকে পাঠিয়েছেন আমেরিকায় বসে। আরও দুটি আছে পাইপলাইনে। এখন সেগুলো বুঁদ হয়ে পড়ছি আর জানছি তাঁর ঋদ্ধ জীবন, জীবনবীক্ষণ ও স্মৃতিময় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে।
সৌভাগ্যবশত আশরাফ আহমেদের সঙ্গে আকস্মিক পরিচয় না হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন গুণী মানুষটিকে অভিধানে যুক্ত করতে পারতাম না। একেই বলে ‘শাপেবর’। অভিধানটির অনেক অপূর্ণতার মধ্যে তা হতো কৃষ্ণগহ্বর! করাল করোনা বিষাক্ত ছোবল না দিলে ‘চরিতাভিধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ এত দিনে নিশ্চয়ই বেরিয়ে যেত! আর অজানাই থেকে যেত আত্মপ্রচারহীন আশরাফ আহমেদের জীবনবৃত্তান্ত জানা এবং জানানো।
লেখক∶ শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৩ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে