ফারুক মেহেদী
আমি ঢাকা। আপনারা সবাই আমাকে চেনেন। শুধু চেনেন তাই নয়; খারাপভাবেই চেনেন! আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহর। আমি দুঃসহ যানজটের নগরী। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি এলাকা হিসেবেও আমার বদনাম। একটু বৃষ্টি হলেই আমি তলিয়ে যাই। আমি খুবই অসুন্দর। আমি আপনার কোনো নিরাপত্তা দিতে পারি না। আমার ভেতরে সব সময় ওত পেতে থাকে চোর, বাটপার, ছিনতাইকারী। মশা আর ময়লা পানির জন্য তো আপনারা আমাকে এক চোখেও দেখতে পারেন না! আপনাদের কাছে আমার বলতে গেলে কোনো ভালো গুণই নেই! তাই আমি সব সময়ই দেখি, আমাকে নিয়ে আপনাদের কত দুঃখ! আমি আপনাদের মনের মতো শহর হতে পারিনি, আমাকে নিয়ে আপনারা গর্ব করতে পারেন না, বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমার পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে, তা-ও আমি জানি। কী করব বলেন? আমিও যে নিজেকে বদলাতে পারি না! আপনাদের সব অভিযোগ, তিরস্কার সয়েও আমি টিকে আছি!
তবে আমারও দুঃখবোধ আছে। এমন বহুবার হয়েছে যে, আমি লজ্জা, অপমান আর ভর্ৎসনায় ভেঙে চুরমার হয়েছি। পরক্ষণেই সব ভুলে উঠে দাঁড়িয়েছি। তো আপনারা আমাকে বুঝতে চাননি। আমার কথা শুনতে চাননি। আমার ভেতরেও অনেক না–বলা কথা আছে। আমিও চিৎকার করে কাঁদতে চাই। আমারও বুক ফেটে কান্না আসে। করোনার প্রথম আঘাত আসার পর থেকেই ভাবছি, মনের যত দুঃখ আপনাদের বলব। পারিনি। এখন আর দম আটকে রাখতে পারছি না। করোনার ছোবলে আপনাদের যেমন নিশ্বাস আটকে জীবন প্রায় বিপন্ন হচ্ছে, আমারও তা–ই। এবার আমার দুঃখগুলো মন খুলে বলি, একটু তাহলে শুনুন।
এবার করোনা সবাইকে চেপে ধরেছে। গেল বছর থেকে আমি তা দেখে আসছি–কী হচ্ছে চারপাশে। সরকার আপনাদের বারবার বলেছে, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মিডিয়া বলেছে–সতর্ক হোন, ঘরে থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনারা মানলেন না! ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ালেন। বাজার, পার্লার, বিয়েশাদি, জন্মদিন, হামিনুন, সেলফি–সবই করলেন। কিন্তু বেপরোয়াভাবে। করোনাকে পাত্তা দিলেন না। বললেন, করোনার চেয়ে আপনারা শক্তিশালী। এ করোনা আপনাদের কিচ্ছু করতে পারবে না!
এবার দেখছেন তো, করোনা কি রকম শক্তিশালী? চারদিকে লাশ আর লাশ। আমি জানি, প্রতি রাতে কত লাশ আমার মাটির ওপর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আপনাদের স্বজনেরা। মৃতদেহ আর নিশ্বাস না নিতে পারা জীবন বিপন্নপ্রায় মানুষকে নিয়ে প্রতিদিন সাইরেন বাজিয়ে আমার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে কত-শত অ্যাম্বুলেন্স। এটা আমি জানি। কিছুই বলতে পারছি না। আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। চোখের সামনে প্রিয়জন চলে যাচ্ছে, এতে আপনার ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে আমি জানি। সরকার নিরুপায় হয়ে এবার কঠোর হয়েছে। আপনাদের জীবন বাঁচাতে কড়া লকডাউন দিয়েছে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছেন আপনারা। জীবন না জীবিকা? এই নিয়ে চলছে বিতর্ক। আমি বলব দুটোই। আপনারা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকুন–এটা যেমন আমি চাই, তেমনি কোনোভাবেই আপনাদের জীবিকাও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়–এটাও আমার চাওয়া। আমি দেখছি, অব্যাহত লকডাউনে আপনাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আমি নির্ঘুম সব দেখছি। তাই মনের ভেতরটা যেন কেমন করছে আপনাদের জন্য। আমার জন্য আপনাদের কোনো দুঃখবোধ নেই, আমি জানি। আমার মতো অস্পৃশ্য শহরের জন্য কারই-বা আপসোস! তবে আপনাদের জন্য আমার মন কাঁদে। আপনারা যে করোনার সংক্রমণে জীবন আর জীবিকা হারিয়ে মহাসংকটে পড়ছেন–এ আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
আপনারা ভাগ্যবদলে নিজ গ্রাম ছেড়ে আমার কাছে ছুটে আসেন। এখানে কাজ করেন। যা আয় করেন, তা পরিবারের কাছে পাঠান। এখন লকডাউনে আপনার কাজ নেই। পুরান ঢাকা, মতিঝিল, শান্তিনগর, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা, গাউছিয়া, ধানমন্ডি, শাহবাগ, নিউমার্কেট সব ফাঁকা, বিরান! যখন দেখি গুলশান, বনানী, যমুনা ফিউচার পার্ক, পুলিশ প্লাজা, মহাখালী, উত্তরার আধুনিক শপিং মলগুলো খাঁ খাঁ করছে, আপনাদের সারা জীবনের আয় দিয়ে গড়ে তোলা এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে–দেখে আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আপনাদের কতজনের কত টাকা ব্যাংকঋণ, কতজন থেকে ধারকর্জ করে আপনারা কেউ কেউ দোকান সাজিয়েছেন, মালামাল তুলেছেন–এখন সব পড়ে আছে অর্থহীন! ঋণের কিস্তি দিতেও পারছেন না। সামনে ঈদ; এ সময়ে আমার ওপর কত চাপ থাকে। আপনাদের ভিড়, যানজটে আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়! আমার কষ্ট হলেও আপনাদের ব্যস্ততা দেখে ভালো লাগত। বুঝতে পারতাম, আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশ ভালো আছেন। অথচ লকডাউনের কারণে ঈদের এই পিক সময়েও আপনারা দোকানপাট খুলতে পারছেন না। কোনো আয় নেই। কীভাবে ঈদ করবেন, প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাবেন–এই দুশ্চিন্তা আপনাদের মতো আমাকেও কুরে কুরে খাচ্ছে। কারণ, আমি যে আপনাদের মুখের ভাষা বুঝি!
আমি আপনাদের তিলোত্তমা শহর ঢাকা। সন্ধ্যা হলে আমার অস্তিত্বজুড়ে হাঁকডাক, ব্যস্ততায় জমজমাট থাকার কথা। অথচ এখন সন্ধ্যা হলেই যেন মরে যাই আমি! আমার পথে পথে কত সহস্র আপনাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আপনারা লাখো মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আমার বুকের ওপর দিয়ে কত সহস্র রাস্তাঘাট; সেখানে কত সহস্র বাস-মাইক্রো, কার, ট্রাক দিন-রাত দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে। এসব বাস-ট্রাক আপনাদের অনেকের রুটি-রুজি। এখন সব বন্ধ, আমারও পুরোটা জুড়ে ফাঁকা। আমার সত্যি খারাপ লাগে।
অনেকে আমাকে মেগা সিটি ঢাকা বলে। আপনাদের এই মেগা সিটির প্রতিটি সিগন্যালে এখন কিছু কিছু নতুন মুখ দেখি, যাঁরা করোনার আঘাতে গেল এক বছরে আগের চেয়ে গরিব হয়ে গেছেন। কোনো একটি ব্যক্তিগত কার বা ধনীর পাজেরো দাঁড়ালেই এই নতুন গরিবদের কাউকে গাড়ির কাছে ছুটে যেতে দেখি। বন্ধ কাচের গ্লাসে মুখ ঘষে শূন্য হাতটা সাহায্যের আশায় বাড়িয়ে দিতে দেখি। কারও বাসায় হয়তো ছোট শিশু খাবারের জন্য পাখির বাচ্চার মতো কাঁদছে! কাউকে আড়ালে চোখ মুছতেও দেখি। আমার ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে! বলতে পারি না, অথচ মনের ভেতরের দুঃখবোধটা ঠিকই মোচড় দিতে থাকে!
সরকার আপনাদের বাঁচানোর জন্যই নিরুপায় হয়ে কঠোর লকডাউন দিয়েছে। আপনাদের সচেতন ও সতর্ক হতে বললেও আপনারা তা হন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন না। এটা ঠিক, আপনাদের আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও আপনার নিজের ও প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে জেনেশুনেই এই ক্ষতি সবাইকে মানতে হচ্ছে। সবাই আরেকটু কষ্ট করুন। সবাই মিলে সচেতন হলে, করোনা কেটে গেলে, ঠিকই আপনারা আবার আমাকে ব্যস্ত করে তুলবেন, আমি জানি। আমি এ-ও জানি, আপনারা অনেক আত্মপ্রত্যয়ী এবং পরিশ্রমী। আমি যতই নোংরা আর অপরিচ্ছন্ন শহর হই না কেন; আমি নিশ্চিত যে, এ দফায় বেঁচে গেলে ঠিকই আপনারা আমাতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনবেন। তখন আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জাঁকজমক অবস্থায় আমিও আনন্দে আত্মহারা হব। ততক্ষণ পর্যন্ত একটু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন সবাই।
লেখক: সহকারী সম্পাদক
আজকের পত্রিকা
আমি ঢাকা। আপনারা সবাই আমাকে চেনেন। শুধু চেনেন তাই নয়; খারাপভাবেই চেনেন! আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহর। আমি দুঃসহ যানজটের নগরী। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি এলাকা হিসেবেও আমার বদনাম। একটু বৃষ্টি হলেই আমি তলিয়ে যাই। আমি খুবই অসুন্দর। আমি আপনার কোনো নিরাপত্তা দিতে পারি না। আমার ভেতরে সব সময় ওত পেতে থাকে চোর, বাটপার, ছিনতাইকারী। মশা আর ময়লা পানির জন্য তো আপনারা আমাকে এক চোখেও দেখতে পারেন না! আপনাদের কাছে আমার বলতে গেলে কোনো ভালো গুণই নেই! তাই আমি সব সময়ই দেখি, আমাকে নিয়ে আপনাদের কত দুঃখ! আমি আপনাদের মনের মতো শহর হতে পারিনি, আমাকে নিয়ে আপনারা গর্ব করতে পারেন না, বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমার পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে, তা-ও আমি জানি। কী করব বলেন? আমিও যে নিজেকে বদলাতে পারি না! আপনাদের সব অভিযোগ, তিরস্কার সয়েও আমি টিকে আছি!
তবে আমারও দুঃখবোধ আছে। এমন বহুবার হয়েছে যে, আমি লজ্জা, অপমান আর ভর্ৎসনায় ভেঙে চুরমার হয়েছি। পরক্ষণেই সব ভুলে উঠে দাঁড়িয়েছি। তো আপনারা আমাকে বুঝতে চাননি। আমার কথা শুনতে চাননি। আমার ভেতরেও অনেক না–বলা কথা আছে। আমিও চিৎকার করে কাঁদতে চাই। আমারও বুক ফেটে কান্না আসে। করোনার প্রথম আঘাত আসার পর থেকেই ভাবছি, মনের যত দুঃখ আপনাদের বলব। পারিনি। এখন আর দম আটকে রাখতে পারছি না। করোনার ছোবলে আপনাদের যেমন নিশ্বাস আটকে জীবন প্রায় বিপন্ন হচ্ছে, আমারও তা–ই। এবার আমার দুঃখগুলো মন খুলে বলি, একটু তাহলে শুনুন।
এবার করোনা সবাইকে চেপে ধরেছে। গেল বছর থেকে আমি তা দেখে আসছি–কী হচ্ছে চারপাশে। সরকার আপনাদের বারবার বলেছে, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মিডিয়া বলেছে–সতর্ক হোন, ঘরে থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনারা মানলেন না! ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ালেন। বাজার, পার্লার, বিয়েশাদি, জন্মদিন, হামিনুন, সেলফি–সবই করলেন। কিন্তু বেপরোয়াভাবে। করোনাকে পাত্তা দিলেন না। বললেন, করোনার চেয়ে আপনারা শক্তিশালী। এ করোনা আপনাদের কিচ্ছু করতে পারবে না!
এবার দেখছেন তো, করোনা কি রকম শক্তিশালী? চারদিকে লাশ আর লাশ। আমি জানি, প্রতি রাতে কত লাশ আমার মাটির ওপর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আপনাদের স্বজনেরা। মৃতদেহ আর নিশ্বাস না নিতে পারা জীবন বিপন্নপ্রায় মানুষকে নিয়ে প্রতিদিন সাইরেন বাজিয়ে আমার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে কত-শত অ্যাম্বুলেন্স। এটা আমি জানি। কিছুই বলতে পারছি না। আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। চোখের সামনে প্রিয়জন চলে যাচ্ছে, এতে আপনার ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে আমি জানি। সরকার নিরুপায় হয়ে এবার কঠোর হয়েছে। আপনাদের জীবন বাঁচাতে কড়া লকডাউন দিয়েছে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছেন আপনারা। জীবন না জীবিকা? এই নিয়ে চলছে বিতর্ক। আমি বলব দুটোই। আপনারা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকুন–এটা যেমন আমি চাই, তেমনি কোনোভাবেই আপনাদের জীবিকাও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়–এটাও আমার চাওয়া। আমি দেখছি, অব্যাহত লকডাউনে আপনাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আমি নির্ঘুম সব দেখছি। তাই মনের ভেতরটা যেন কেমন করছে আপনাদের জন্য। আমার জন্য আপনাদের কোনো দুঃখবোধ নেই, আমি জানি। আমার মতো অস্পৃশ্য শহরের জন্য কারই-বা আপসোস! তবে আপনাদের জন্য আমার মন কাঁদে। আপনারা যে করোনার সংক্রমণে জীবন আর জীবিকা হারিয়ে মহাসংকটে পড়ছেন–এ আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
আপনারা ভাগ্যবদলে নিজ গ্রাম ছেড়ে আমার কাছে ছুটে আসেন। এখানে কাজ করেন। যা আয় করেন, তা পরিবারের কাছে পাঠান। এখন লকডাউনে আপনার কাজ নেই। পুরান ঢাকা, মতিঝিল, শান্তিনগর, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা, গাউছিয়া, ধানমন্ডি, শাহবাগ, নিউমার্কেট সব ফাঁকা, বিরান! যখন দেখি গুলশান, বনানী, যমুনা ফিউচার পার্ক, পুলিশ প্লাজা, মহাখালী, উত্তরার আধুনিক শপিং মলগুলো খাঁ খাঁ করছে, আপনাদের সারা জীবনের আয় দিয়ে গড়ে তোলা এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে–দেখে আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আপনাদের কতজনের কত টাকা ব্যাংকঋণ, কতজন থেকে ধারকর্জ করে আপনারা কেউ কেউ দোকান সাজিয়েছেন, মালামাল তুলেছেন–এখন সব পড়ে আছে অর্থহীন! ঋণের কিস্তি দিতেও পারছেন না। সামনে ঈদ; এ সময়ে আমার ওপর কত চাপ থাকে। আপনাদের ভিড়, যানজটে আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়! আমার কষ্ট হলেও আপনাদের ব্যস্ততা দেখে ভালো লাগত। বুঝতে পারতাম, আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশ ভালো আছেন। অথচ লকডাউনের কারণে ঈদের এই পিক সময়েও আপনারা দোকানপাট খুলতে পারছেন না। কোনো আয় নেই। কীভাবে ঈদ করবেন, প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাবেন–এই দুশ্চিন্তা আপনাদের মতো আমাকেও কুরে কুরে খাচ্ছে। কারণ, আমি যে আপনাদের মুখের ভাষা বুঝি!
আমি আপনাদের তিলোত্তমা শহর ঢাকা। সন্ধ্যা হলে আমার অস্তিত্বজুড়ে হাঁকডাক, ব্যস্ততায় জমজমাট থাকার কথা। অথচ এখন সন্ধ্যা হলেই যেন মরে যাই আমি! আমার পথে পথে কত সহস্র আপনাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আপনারা লাখো মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আমার বুকের ওপর দিয়ে কত সহস্র রাস্তাঘাট; সেখানে কত সহস্র বাস-মাইক্রো, কার, ট্রাক দিন-রাত দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে। এসব বাস-ট্রাক আপনাদের অনেকের রুটি-রুজি। এখন সব বন্ধ, আমারও পুরোটা জুড়ে ফাঁকা। আমার সত্যি খারাপ লাগে।
অনেকে আমাকে মেগা সিটি ঢাকা বলে। আপনাদের এই মেগা সিটির প্রতিটি সিগন্যালে এখন কিছু কিছু নতুন মুখ দেখি, যাঁরা করোনার আঘাতে গেল এক বছরে আগের চেয়ে গরিব হয়ে গেছেন। কোনো একটি ব্যক্তিগত কার বা ধনীর পাজেরো দাঁড়ালেই এই নতুন গরিবদের কাউকে গাড়ির কাছে ছুটে যেতে দেখি। বন্ধ কাচের গ্লাসে মুখ ঘষে শূন্য হাতটা সাহায্যের আশায় বাড়িয়ে দিতে দেখি। কারও বাসায় হয়তো ছোট শিশু খাবারের জন্য পাখির বাচ্চার মতো কাঁদছে! কাউকে আড়ালে চোখ মুছতেও দেখি। আমার ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে! বলতে পারি না, অথচ মনের ভেতরের দুঃখবোধটা ঠিকই মোচড় দিতে থাকে!
সরকার আপনাদের বাঁচানোর জন্যই নিরুপায় হয়ে কঠোর লকডাউন দিয়েছে। আপনাদের সচেতন ও সতর্ক হতে বললেও আপনারা তা হন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন না। এটা ঠিক, আপনাদের আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও আপনার নিজের ও প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে জেনেশুনেই এই ক্ষতি সবাইকে মানতে হচ্ছে। সবাই আরেকটু কষ্ট করুন। সবাই মিলে সচেতন হলে, করোনা কেটে গেলে, ঠিকই আপনারা আবার আমাকে ব্যস্ত করে তুলবেন, আমি জানি। আমি এ-ও জানি, আপনারা অনেক আত্মপ্রত্যয়ী এবং পরিশ্রমী। আমি যতই নোংরা আর অপরিচ্ছন্ন শহর হই না কেন; আমি নিশ্চিত যে, এ দফায় বেঁচে গেলে ঠিকই আপনারা আমাতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনবেন। তখন আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জাঁকজমক অবস্থায় আমিও আনন্দে আত্মহারা হব। ততক্ষণ পর্যন্ত একটু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন সবাই।
লেখক: সহকারী সম্পাদক
আজকের পত্রিকা
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে