শামীমা জামান
থামুন, শিরোনাম পড়েই লেখককে গালি দিতে আসবেন না। আগে পুরোটা পড়ুন। সম্প্রতি বিল গেটস ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টেনেছেন। আমির খান তাঁর ১৫ বছরের বিবাহিত সুখী দাম্পত্যের ইতি ঘটিয়েছেন বিচ্ছেদের মাধ্যমে। স্ত্রী কিরন রাওয়ের সঙ্গে এক যৌথ স্টেটমেন্টে এ ঘোষণা দিয়ে বলেন: ডিভোর্স মানে সমাপ্তি নয়; বরং নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সম্পর্ক শেষ নয়; বরং নতুন শুরু। তাঁরা বন্ধু, অভিভাবক—একই পরিবার হয়ে থাকবেন। ব্যবসা, সামাজিক কার্যক্রম, পানি ফাউন্ডেশন—সবকিছুর কাজ তাঁরা আগের মতোই করবেন। সন্তান আজাদের দেখভাল করবেন একসঙ্গেই।
আমির খানের ক্ষেত্রে এ কথাগুলো অবশ্য শুধু কথার কথা নয়, তিনি এর আগেও তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। প্রথম স্ত্রী রীনা দত্তের সঙ্গেও আমিরের ১৬ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটে। তখনো আমির এমন করেই বলেছিলেন, রীনা তাঁর পরিবারের অংশ হয়েই থাকবেন। সত্যি বলতে, থেকেছেনও। আমির-কিরনের যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে রীনাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় সাবলীলভাবেই।
আমাদের সমাজে বিচ্ছেদ মানেই কাদা ছোড়াছুড়ি। পাশ্চাত্যে বিচ্ছেদ খুব কমন একটি বিষয়। দম্পতিরা এক ছাদের নিচে থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারেন না; কিন্তু আলাদা হওয়ার পর খুব সুন্দর একটি বন্ধুত্ব তাঁরা মেইনটেন করেন। এমনকি দুজন দুজনের বর্তমান সঙ্গীর সঙ্গেও সুন্দর সম্পর্ক রাখেন, সন্তানের বাবা-মায়ের জন্য যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শিরোনাম প্রসঙ্গে আসি। না, বিচ্ছেদ কখনো কাম্য নয়। বিয়ের মতো একটি সুস্থ-সুন্দর প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেওয়া যায়, সেটিই কাম্য। বিশেষ করে সন্তান জন্মের পর বিচ্ছেদ কষ্টকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাই মেনে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যেতেই পারে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা শাবানা অভিনীত চরিত্রগুলোর মতো। বস্তুত সংসারে মেনে নিতে হয়। মানিয়ে নেওয়ার নামই সংসার। কিন্তু ঠিক কতখানি মেনে নেবেন? কতখানি না পাওয়া থাকলে আপনি শাবানা হতেই পারেন? হাজারটা সমস্যা আপনি মেনে নিয়ে শাবানা হয়ে জীবন কাটাতে পারেন। খুব কষ্টের কিছু হলে এক দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় এসে লুটিয়ে পড়বেন। ওপরওয়ালাকে বলবেন: ‘হে খোদা, আমার মরণ কেন হয় না?’ তবু ডিভোর্সের কথা ভাববেন না। ডিভোর্সের কথা শুধু তখনই ভাববেন, আপনার জীবনসঙ্গীটি যদি টক্সিক পারসন হয়। খতরনাক হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি শাবানা হলে যেকোনো অঘটনে পত্রিকার শিরোনাম হবেন।
চলচ্চিত্রকার ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন একটি সুন্দর কথা বলেছিলেন: ‘লোকে কী ভাববে তা ভেবো না, তারা তোমার জীবনটা তোমার হয়ে কাটিয়ে দিতে আসবে না।’ আসলেই কেউ কারও জীবন কাটিয়ে দেয় না। কিন্তু বিচ্ছেদ হলে ফোড়নটা সবাই কাটে। আর সেই সামাজিক ফোড়ন বিস্ফোরণের ভয়ে আপনি সারা জীবন কষ্টে কাটাচ্ছেন।
কথাগুলো মেয়েদেরই বলছি। কারণ নির্যাতনের শিকার মেয়েরাই হয়। বিপরীত ঘটনাও আছে। নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনও হয়। সেটা মানসিক, শারীরিক নয়। সৃষ্টিগতভাবেই মেয়েরা পুরুষের চেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল। তাই সিনেমার ঢিসুম ঢিসুম করা সুচরিতা, পপিও বাস্তবে নিজেদের জীবনে ঢিসুম ঢিসুম করতে পারেন না। উল্টো নির্যাতিত হয়ে বিচ্ছেদ বেছে নেন। আর আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁদেরই গালি দিতে। সংসার টেকানোর দায় যেন শুধু মেয়েদের ঘাড়েই বর্তায়। অথচ পৃথিবীর প্রতিটি মেয়েই সংসার চায়। কেউ তার নিজের হাতে সাজানো সংসার ভাঙতে চায় না।
শুরু করেছিলাম আমির খানকে দিয়ে। বলিউডের এই মিস্টার পারফেক্টশনিস্টের পছন্দ একটু পুরুষালি কেয়ারলেস গেটআপের মেয়েরা। প্রথম স্ত্রী রীনা দত্ত থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী কিরন রাও কিংবা হালের প্রেম ফাতিমা সানা—এঁদের সবার মাঝে একটিই মিল—পুরুষালি টমবয় লুক। খেয়াল করে দেখুন, মেয়েগুলো কিন্তু সংসারই করতে চেয়েছিল। তবে মিস্টার পারফেক্টশনিস্ট বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সুন্দরভাবেই হ্যান্ডেল করেন এবং সম্পর্কগুলো অশ্রদ্ধা বা কাদা ছোড়াছুড়ির ময়দানে ফেলেন না। এটি অনুকরণীয় হতে পারে। আমাদের দেশেও সুস্থ বিচ্ছেদের উদাহরণ আছে: তাহসান-মিথিলা বা সুবর্ণা-ফরীদি। তাঁরা আজও সাবেক জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে একটি খারাপ কথাও বলেননি। বরং পরিপূর্ণ শ্রদ্ধায় তাঁদের কর্মময় জীবনের ইমেজ অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তাঁরা সম্পর্কগুলো থেকে তিক্ততার সময় পার করে যদি একে অপরকে শ্রদ্ধায় রাখতে পারেন, আপনারা আমজনতা কেন কমেন্ট বক্সে এসে অযথা মলমূত্র ফেলেন? আপনাদের ভাইবোন বা পরিবারে কি বিচ্ছেদ হয় না? হয় কিন্তু। তাই অন্যের বেলায়ও সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন।
লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাহিত্যিক
থামুন, শিরোনাম পড়েই লেখককে গালি দিতে আসবেন না। আগে পুরোটা পড়ুন। সম্প্রতি বিল গেটস ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টেনেছেন। আমির খান তাঁর ১৫ বছরের বিবাহিত সুখী দাম্পত্যের ইতি ঘটিয়েছেন বিচ্ছেদের মাধ্যমে। স্ত্রী কিরন রাওয়ের সঙ্গে এক যৌথ স্টেটমেন্টে এ ঘোষণা দিয়ে বলেন: ডিভোর্স মানে সমাপ্তি নয়; বরং নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সম্পর্ক শেষ নয়; বরং নতুন শুরু। তাঁরা বন্ধু, অভিভাবক—একই পরিবার হয়ে থাকবেন। ব্যবসা, সামাজিক কার্যক্রম, পানি ফাউন্ডেশন—সবকিছুর কাজ তাঁরা আগের মতোই করবেন। সন্তান আজাদের দেখভাল করবেন একসঙ্গেই।
আমির খানের ক্ষেত্রে এ কথাগুলো অবশ্য শুধু কথার কথা নয়, তিনি এর আগেও তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। প্রথম স্ত্রী রীনা দত্তের সঙ্গেও আমিরের ১৬ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটে। তখনো আমির এমন করেই বলেছিলেন, রীনা তাঁর পরিবারের অংশ হয়েই থাকবেন। সত্যি বলতে, থেকেছেনও। আমির-কিরনের যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে রীনাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় সাবলীলভাবেই।
আমাদের সমাজে বিচ্ছেদ মানেই কাদা ছোড়াছুড়ি। পাশ্চাত্যে বিচ্ছেদ খুব কমন একটি বিষয়। দম্পতিরা এক ছাদের নিচে থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারেন না; কিন্তু আলাদা হওয়ার পর খুব সুন্দর একটি বন্ধুত্ব তাঁরা মেইনটেন করেন। এমনকি দুজন দুজনের বর্তমান সঙ্গীর সঙ্গেও সুন্দর সম্পর্ক রাখেন, সন্তানের বাবা-মায়ের জন্য যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শিরোনাম প্রসঙ্গে আসি। না, বিচ্ছেদ কখনো কাম্য নয়। বিয়ের মতো একটি সুস্থ-সুন্দর প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেওয়া যায়, সেটিই কাম্য। বিশেষ করে সন্তান জন্মের পর বিচ্ছেদ কষ্টকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাই মেনে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যেতেই পারে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা শাবানা অভিনীত চরিত্রগুলোর মতো। বস্তুত সংসারে মেনে নিতে হয়। মানিয়ে নেওয়ার নামই সংসার। কিন্তু ঠিক কতখানি মেনে নেবেন? কতখানি না পাওয়া থাকলে আপনি শাবানা হতেই পারেন? হাজারটা সমস্যা আপনি মেনে নিয়ে শাবানা হয়ে জীবন কাটাতে পারেন। খুব কষ্টের কিছু হলে এক দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় এসে লুটিয়ে পড়বেন। ওপরওয়ালাকে বলবেন: ‘হে খোদা, আমার মরণ কেন হয় না?’ তবু ডিভোর্সের কথা ভাববেন না। ডিভোর্সের কথা শুধু তখনই ভাববেন, আপনার জীবনসঙ্গীটি যদি টক্সিক পারসন হয়। খতরনাক হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি শাবানা হলে যেকোনো অঘটনে পত্রিকার শিরোনাম হবেন।
চলচ্চিত্রকার ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন একটি সুন্দর কথা বলেছিলেন: ‘লোকে কী ভাববে তা ভেবো না, তারা তোমার জীবনটা তোমার হয়ে কাটিয়ে দিতে আসবে না।’ আসলেই কেউ কারও জীবন কাটিয়ে দেয় না। কিন্তু বিচ্ছেদ হলে ফোড়নটা সবাই কাটে। আর সেই সামাজিক ফোড়ন বিস্ফোরণের ভয়ে আপনি সারা জীবন কষ্টে কাটাচ্ছেন।
কথাগুলো মেয়েদেরই বলছি। কারণ নির্যাতনের শিকার মেয়েরাই হয়। বিপরীত ঘটনাও আছে। নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনও হয়। সেটা মানসিক, শারীরিক নয়। সৃষ্টিগতভাবেই মেয়েরা পুরুষের চেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল। তাই সিনেমার ঢিসুম ঢিসুম করা সুচরিতা, পপিও বাস্তবে নিজেদের জীবনে ঢিসুম ঢিসুম করতে পারেন না। উল্টো নির্যাতিত হয়ে বিচ্ছেদ বেছে নেন। আর আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁদেরই গালি দিতে। সংসার টেকানোর দায় যেন শুধু মেয়েদের ঘাড়েই বর্তায়। অথচ পৃথিবীর প্রতিটি মেয়েই সংসার চায়। কেউ তার নিজের হাতে সাজানো সংসার ভাঙতে চায় না।
শুরু করেছিলাম আমির খানকে দিয়ে। বলিউডের এই মিস্টার পারফেক্টশনিস্টের পছন্দ একটু পুরুষালি কেয়ারলেস গেটআপের মেয়েরা। প্রথম স্ত্রী রীনা দত্ত থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী কিরন রাও কিংবা হালের প্রেম ফাতিমা সানা—এঁদের সবার মাঝে একটিই মিল—পুরুষালি টমবয় লুক। খেয়াল করে দেখুন, মেয়েগুলো কিন্তু সংসারই করতে চেয়েছিল। তবে মিস্টার পারফেক্টশনিস্ট বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সুন্দরভাবেই হ্যান্ডেল করেন এবং সম্পর্কগুলো অশ্রদ্ধা বা কাদা ছোড়াছুড়ির ময়দানে ফেলেন না। এটি অনুকরণীয় হতে পারে। আমাদের দেশেও সুস্থ বিচ্ছেদের উদাহরণ আছে: তাহসান-মিথিলা বা সুবর্ণা-ফরীদি। তাঁরা আজও সাবেক জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে একটি খারাপ কথাও বলেননি। বরং পরিপূর্ণ শ্রদ্ধায় তাঁদের কর্মময় জীবনের ইমেজ অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তাঁরা সম্পর্কগুলো থেকে তিক্ততার সময় পার করে যদি একে অপরকে শ্রদ্ধায় রাখতে পারেন, আপনারা আমজনতা কেন কমেন্ট বক্সে এসে অযথা মলমূত্র ফেলেন? আপনাদের ভাইবোন বা পরিবারে কি বিচ্ছেদ হয় না? হয় কিন্তু। তাই অন্যের বেলায়ও সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন।
লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাহিত্যিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১০ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে