বিভুরঞ্জন সরকার
কেমন আছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ? কেউ এখন তাঁর খোঁজ-খবর রাখেন না। তিনি বেঁচে আছেন কিনা—এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে অনেকেই হয়তো চট করে বলতেও পারবেন না। অথচ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নাম লাইমলাইটে চলে এসেছিল। এরশাদ পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তিন জোটের নেতাদের অনুরোধে রাজনীতিবিমুখ সাহাবুদ্দীন আহমদকেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুভার বইতে হয়েছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন অনেকটাই বিতর্কমুক্ত হয়েছিল।
তারপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর সরকার গঠনের পর তাঁকে আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। না, তিনি চেষ্টা-তদবির করে ওই পদ নেননি। তাঁকেই শেখ হাসিনাসহ অন্য সব বিশিষ্টজনেরা অনুরোধ করে ওই পদ গ্রহণে রাজি করিয়েছিলেন। দলনিরপেক্ষ একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে তিনি অনেকেরই পছন্দের তালিকায় ছিলেন।
তবে তাঁর মেয়াদের শেষ দিকে এসে আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকায় তিনি আর ছিলেন না। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের যোগসাজশে বিশেষ মেকানিজম করেছিলেন। আওয়ামী লীগের পছন্দের মানুষ কেন, কী কারণে বিগড়ে গিয়েছিলেন (আসলে কী হয়েছিল), তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো বয়ান আর হয়তো পাওয়া যাবে না। কারণ, তিনি নিজে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষে তিনি কার্যত একেবারে লোকচোখের আড়ালে চলে যান। যে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসতে তিনি কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ, সেই বিএনপিও কিন্তু তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির একটি রহস্যময় অধ্যায় উন্মোচনের জন্য বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের মুখ খোলা খুবই জরুরি ছিল। আমাদের দেশের রাজনীতির সত্যিকার ইতিহাসের অনেক কিছু কালো হয়ে আছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষজনেরা তাতে প্রয়োজনীয় আলো না ফেলার জন্য। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন এখন স্বেচ্ছাবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। ৯১ বছরের এই পরিণত মানুষটি যদি কিছু স্মৃতিকথা লিখে যেতেন, কিংবা ঘনিষ্ঠ কাউকে বলে যেতেন তাহলেও হয়তো জাতির উপকার হতো।
এই ব্যতিক্রমী চরিত্রের মানুষটির সঙ্গে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের শেষের দিক অথবা ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর। তখন তিনি অতি সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর জনপ্রিয়তা যেকোনো রাজনৈতিক নেতার তুলনায় অনেক বেশি। আমি সাপ্তাহিক চলতিপত্রে তাঁকে নিয়ে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখলাম। বেশিটাই প্রশংসা, আবার একটু সমালোচনার ছিটেও ছিল। একদিন চলতিপত্রের ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। মোবাইল সাহেব তখনো দেশে তসরিফ আনেননি। আমিই ফোন তুললাম। ওপাশ থেকে একটি গম্ভীর কণ্ঠ, ‘বিভু সাহেব বলছেন?’
–জি, বলছি।
–আমি বঙ্গভবন থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলছি।
আমার কণ্ঠ রুদ্ধ। খাইছে আমারে। এইবার বুঝি আমার লেখার শখ মিটে যাবে। সাহাবুদ্দীন সাহেবের মতো মানুষকে নিয়ে আমি ঠাট্টা–মশকরা করেছি। নিশ্চয়ই সে জন্য বড় কাফফারা দিতে হবে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওপাশ থেকে প্রায় ধমকের স্বরে কণ্ঠ ভেসে এল—‘আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’ আমি মিনমিনে গলায় বলি, ‘জি শুনছি, বলুন।’
–আগামী কাল সকাল এগারোটায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। আশা করি আপনার সময়ের সমস্যা হবে না।
কী বলে যে ফোন রেখেছিলাম, সেটা আর মনে নেই। তবে ভয়ে যে আমার বুক শুকিয়ে কাঠ হয়েছিল, সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এটা যে আমার জন্য কত বড় সম্মানের ব্যাপার ছিল, সেটা আমার মাথায় না এসে মাথায় ঘুরছে, নিশ্চয়ই ডেকে নিয়ে লেখার জন্য বকুনিপ্যাদানি দেবেন! তাড়াতাড়ি ফোন করলাম এক শ্রদ্ধেয় বড় ভাইকে, যিনি সাংবাদিকতায় আমার শিক্ষাগুরুর মতো। সব শুনে তিনি বললেন, ‘আরে এত ঘাবড়ানোর কী আছে? রাষ্ট্রপতি তোমাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন; এটা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। অনেকে তো চেষ্টা করেও তাঁর সাক্ষাৎকার পাচ্ছেন না।’ আমি লেখার প্রসঙ্গ তুললে তিনি বললেন, ‘আরে বোকা, ছোটপাত্র গরম হয় তাড়াতাড়ি। সাহাবুদ্দীন সাহেব অনেক বড়পাত্র।’
পরদিন যথাসময়ে একটি রিকশা নিয়ে বঙ্গভবনের কোনায় গিয়ে নামলাম। সঙ্গে নিলাম এক তোড়া গোলাপ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর কক্ষে ঢুকে করমর্দনের আগে হাতে দিলাম ফুলের তোড়া। কী সুন্দর নিষ্পাপ শিশুর মতো একটি হাসি দিয়ে বললেন, ‘আবার পয়সা খরচ করছেন ক্যান।’
বঙ্গভবনের অফিশিয়াল নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ছবি তোলা হলো। তারপর কক্ষে শুধু তিনি আর আমি। আমার জন্য সময় বরাদ্দ ছিল ২৫ মিনিট, প্রেস সচিব সেটা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। টোস্ট বিস্কুট এবং লাল চা দিয়ে আপ্যায়ন হলো। তারপর এ কথা, সে কথা দিয়ে শুরু। সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সমাজ, বিচারব্যবস্থা, আইন ও আইনের ফাঁকফোকর—কত প্রসঙ্গ যে আলোচনায় এল! এমনকি শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, এরশাদ প্রসঙ্গও বাদ গেল না। কয়েকজন সম্পাদক সম্পর্কেও তিনি আমার মতামত জানতে চাইলেন।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময় অনেক আগেই শেষ। তাঁর মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়েছে। সামরিক সচিব একবার উঁকি দিলে তিনি ইশারায় চলে যেতে বললেন। তাঁকে নিয়ে আমার লেখার প্রসঙ্গ একবারও তুললেন না। তবে শেষ দিকে বললেন, ‘আপনি ভালো লেখেন। সহজ সরল লেখা আপনার। আমি পড়ি। আমার ভালো লাগে। সচিবকে বলেছি, আপনার লেখার কাটিং নিয়মিত দিতে।’ বিদায় দেওয়ার আগে বললেন, ‘আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। আসবেন মাঝে মাঝে। আমার জীবন শৃঙ্খলিত। শুধু একটি অনুরোধ, আপনার সঙ্গে আমার যেসব কথা হবে, তা কোথাও লিখবেন না। এগুলো একেবারেই ইনফরমাল কথা। একজন সিনিয়র সাংবাদিক এর মধ্যেই ওয়াদাভঙ্গ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে যে কথা বলেছি, তিনি তা “পাবলিক” করেছেন!’
বঙ্গভবনে সাহাবুদ্দীন সাহেব যত দিন ছিলেন, তত দিন সব সরকারি অনুষ্ঠানের দাওয়াত আমি পেয়েছি। তবে সাহাবুদ্দীন আহমদ আমার জীবন থেকে একটি বড় ভয় তাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশের প্রধান ব্যক্তির সঙ্গে যে অমনভাবে কথা বলা যায়, সেটা সাহাবুদ্দীন সাহেবই বুঝিয়েছেন। গিয়েছিলাম তিরস্কৃত হতে, ফিরেছিলাম প্রশংসিত হয়ে। তারপর একাধিকবার দেখা হয়েছে, কিছু কথাও হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত সততার বেশ কিছু গল্পও তাঁর কর্মকর্তাদের কারও কারও কাছে শুনেছি। অবসরকালে একদিন বলেছিলাম, বঙ্গভবনের দিনগুলো নিয়ে লিখতে। কিছুটা উদাস ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘তিক্ততা বাড়াতে চাই না। যত দিন বাঁচি নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকব। ভালো থাকুন আপনারা, ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।’
কেমন আছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ? কেউ এখন তাঁর খোঁজ-খবর রাখেন না। তিনি বেঁচে আছেন কিনা—এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে অনেকেই হয়তো চট করে বলতেও পারবেন না। অথচ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নাম লাইমলাইটে চলে এসেছিল। এরশাদ পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তিন জোটের নেতাদের অনুরোধে রাজনীতিবিমুখ সাহাবুদ্দীন আহমদকেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুভার বইতে হয়েছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন অনেকটাই বিতর্কমুক্ত হয়েছিল।
তারপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর সরকার গঠনের পর তাঁকে আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। না, তিনি চেষ্টা-তদবির করে ওই পদ নেননি। তাঁকেই শেখ হাসিনাসহ অন্য সব বিশিষ্টজনেরা অনুরোধ করে ওই পদ গ্রহণে রাজি করিয়েছিলেন। দলনিরপেক্ষ একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে তিনি অনেকেরই পছন্দের তালিকায় ছিলেন।
তবে তাঁর মেয়াদের শেষ দিকে এসে আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকায় তিনি আর ছিলেন না। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের যোগসাজশে বিশেষ মেকানিজম করেছিলেন। আওয়ামী লীগের পছন্দের মানুষ কেন, কী কারণে বিগড়ে গিয়েছিলেন (আসলে কী হয়েছিল), তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো বয়ান আর হয়তো পাওয়া যাবে না। কারণ, তিনি নিজে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষে তিনি কার্যত একেবারে লোকচোখের আড়ালে চলে যান। যে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসতে তিনি কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ, সেই বিএনপিও কিন্তু তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির একটি রহস্যময় অধ্যায় উন্মোচনের জন্য বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের মুখ খোলা খুবই জরুরি ছিল। আমাদের দেশের রাজনীতির সত্যিকার ইতিহাসের অনেক কিছু কালো হয়ে আছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষজনেরা তাতে প্রয়োজনীয় আলো না ফেলার জন্য। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন এখন স্বেচ্ছাবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। ৯১ বছরের এই পরিণত মানুষটি যদি কিছু স্মৃতিকথা লিখে যেতেন, কিংবা ঘনিষ্ঠ কাউকে বলে যেতেন তাহলেও হয়তো জাতির উপকার হতো।
এই ব্যতিক্রমী চরিত্রের মানুষটির সঙ্গে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের শেষের দিক অথবা ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর। তখন তিনি অতি সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর জনপ্রিয়তা যেকোনো রাজনৈতিক নেতার তুলনায় অনেক বেশি। আমি সাপ্তাহিক চলতিপত্রে তাঁকে নিয়ে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখলাম। বেশিটাই প্রশংসা, আবার একটু সমালোচনার ছিটেও ছিল। একদিন চলতিপত্রের ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। মোবাইল সাহেব তখনো দেশে তসরিফ আনেননি। আমিই ফোন তুললাম। ওপাশ থেকে একটি গম্ভীর কণ্ঠ, ‘বিভু সাহেব বলছেন?’
–জি, বলছি।
–আমি বঙ্গভবন থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলছি।
আমার কণ্ঠ রুদ্ধ। খাইছে আমারে। এইবার বুঝি আমার লেখার শখ মিটে যাবে। সাহাবুদ্দীন সাহেবের মতো মানুষকে নিয়ে আমি ঠাট্টা–মশকরা করেছি। নিশ্চয়ই সে জন্য বড় কাফফারা দিতে হবে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওপাশ থেকে প্রায় ধমকের স্বরে কণ্ঠ ভেসে এল—‘আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’ আমি মিনমিনে গলায় বলি, ‘জি শুনছি, বলুন।’
–আগামী কাল সকাল এগারোটায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। আশা করি আপনার সময়ের সমস্যা হবে না।
কী বলে যে ফোন রেখেছিলাম, সেটা আর মনে নেই। তবে ভয়ে যে আমার বুক শুকিয়ে কাঠ হয়েছিল, সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। এটা যে আমার জন্য কত বড় সম্মানের ব্যাপার ছিল, সেটা আমার মাথায় না এসে মাথায় ঘুরছে, নিশ্চয়ই ডেকে নিয়ে লেখার জন্য বকুনিপ্যাদানি দেবেন! তাড়াতাড়ি ফোন করলাম এক শ্রদ্ধেয় বড় ভাইকে, যিনি সাংবাদিকতায় আমার শিক্ষাগুরুর মতো। সব শুনে তিনি বললেন, ‘আরে এত ঘাবড়ানোর কী আছে? রাষ্ট্রপতি তোমাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন; এটা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। অনেকে তো চেষ্টা করেও তাঁর সাক্ষাৎকার পাচ্ছেন না।’ আমি লেখার প্রসঙ্গ তুললে তিনি বললেন, ‘আরে বোকা, ছোটপাত্র গরম হয় তাড়াতাড়ি। সাহাবুদ্দীন সাহেব অনেক বড়পাত্র।’
পরদিন যথাসময়ে একটি রিকশা নিয়ে বঙ্গভবনের কোনায় গিয়ে নামলাম। সঙ্গে নিলাম এক তোড়া গোলাপ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর কক্ষে ঢুকে করমর্দনের আগে হাতে দিলাম ফুলের তোড়া। কী সুন্দর নিষ্পাপ শিশুর মতো একটি হাসি দিয়ে বললেন, ‘আবার পয়সা খরচ করছেন ক্যান।’
বঙ্গভবনের অফিশিয়াল নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ছবি তোলা হলো। তারপর কক্ষে শুধু তিনি আর আমি। আমার জন্য সময় বরাদ্দ ছিল ২৫ মিনিট, প্রেস সচিব সেটা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। টোস্ট বিস্কুট এবং লাল চা দিয়ে আপ্যায়ন হলো। তারপর এ কথা, সে কথা দিয়ে শুরু। সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সমাজ, বিচারব্যবস্থা, আইন ও আইনের ফাঁকফোকর—কত প্রসঙ্গ যে আলোচনায় এল! এমনকি শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, এরশাদ প্রসঙ্গও বাদ গেল না। কয়েকজন সম্পাদক সম্পর্কেও তিনি আমার মতামত জানতে চাইলেন।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময় অনেক আগেই শেষ। তাঁর মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়েছে। সামরিক সচিব একবার উঁকি দিলে তিনি ইশারায় চলে যেতে বললেন। তাঁকে নিয়ে আমার লেখার প্রসঙ্গ একবারও তুললেন না। তবে শেষ দিকে বললেন, ‘আপনি ভালো লেখেন। সহজ সরল লেখা আপনার। আমি পড়ি। আমার ভালো লাগে। সচিবকে বলেছি, আপনার লেখার কাটিং নিয়মিত দিতে।’ বিদায় দেওয়ার আগে বললেন, ‘আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। আসবেন মাঝে মাঝে। আমার জীবন শৃঙ্খলিত। শুধু একটি অনুরোধ, আপনার সঙ্গে আমার যেসব কথা হবে, তা কোথাও লিখবেন না। এগুলো একেবারেই ইনফরমাল কথা। একজন সিনিয়র সাংবাদিক এর মধ্যেই ওয়াদাভঙ্গ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে যে কথা বলেছি, তিনি তা “পাবলিক” করেছেন!’
বঙ্গভবনে সাহাবুদ্দীন সাহেব যত দিন ছিলেন, তত দিন সব সরকারি অনুষ্ঠানের দাওয়াত আমি পেয়েছি। তবে সাহাবুদ্দীন আহমদ আমার জীবন থেকে একটি বড় ভয় তাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশের প্রধান ব্যক্তির সঙ্গে যে অমনভাবে কথা বলা যায়, সেটা সাহাবুদ্দীন সাহেবই বুঝিয়েছেন। গিয়েছিলাম তিরস্কৃত হতে, ফিরেছিলাম প্রশংসিত হয়ে। তারপর একাধিকবার দেখা হয়েছে, কিছু কথাও হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত সততার বেশ কিছু গল্পও তাঁর কর্মকর্তাদের কারও কারও কাছে শুনেছি। অবসরকালে একদিন বলেছিলাম, বঙ্গভবনের দিনগুলো নিয়ে লিখতে। কিছুটা উদাস ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘তিক্ততা বাড়াতে চাই না। যত দিন বাঁচি নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকব। ভালো থাকুন আপনারা, ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।’
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে