শর্মিষ্ঠা চৌধুরী
গতকালের পর
পার্টির এই যে চিন্তার কথা কোটেশ্বরাম্মা উল্লেখ করেছেন, তা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতন লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক চিন্তাপ্রক্রিয়ার বিপরীতে যান্ত্রিক চিন্তাপ্রক্রিয়াই শুধু নয়, এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা। কোনো এক সুন্দর দিনে সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরি হয়ে গেল আর নারী-পুরুষ বৈষম্য অবলুপ্ত হয়ে গেল—এটা কোনো বৈজ্ঞানিক চিন্তা নয়। নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং সমতার লক্ষ্যে সচেতন লড়াই ছাড়া সমতাভিত্তিক সমাজটাই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর তৈরি হয়েছিল জেনোৎদেল—রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নারী বিভাগ। জেনোৎদেলের কাজের দুটো দিক ছিল—বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় নারীদের নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হওয়া এবং পার্টির মধ্যে নারীদের সমস্যাগুলোকে সামনে তুলে এনে সেই অনুযায়ী পার্টি ও সরকারের পলিসি ফ্রেম করানো।
আসলে নারী প্রশ্নটা যে একটা স্বতন্ত্র তত্ত্বগত প্রশ্ন, যার তত্ত্বগত এবং প্রায়োগিক সমাধানের কাজটা হাতে নেওয়া একটা অনিবার্য বিপ্লবী কাজ—এই সহজসরল সত্যটার উপলব্ধি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে অন্তত বড়ই কম। এঙ্গেলসের ‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি…’ তাই কখনোই মার্কসবাদ-লেনিনবাদের অন্যতম আকর গ্রন্থ হিসেবে গণ্য হলো না; বেবেলের ‘উইমেন ইন দ্য পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ তো কোথায় হারিয়ে গেল!
মার্কসবাদ সাম্যের দর্শন। তাই নারী-পুরুষ সাম্যের বিষয়টা কমিউনিস্ট পার্টিতে অস্বীকার করা হয় না বা করা যায় না। কিন্তু সাম্য মানে তো শুধু পুরুষের পাশে নারীকে জায়গা দেওয়া নয়—সেটা আবশ্যক, কিন্তু যথেষ্ট নয়। ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে রাখা অবস্থান থেকে, ঐতিহ্যগত বৈষম্য থেকে, অবহেলা-নিপীড়নের বিবিধ রূপ থেকে নারীকে মুক্ত করার দিশা যদি না থাকে, তাহলে নারী-পুরুষের সমানাধিকার সদিচ্ছার সীমানা টপকাতে পারে না।
স্ত্রী শক্তি সংগঠন দ্বারা প্রকাশিত ‘উই ওয়্যার মেকিং হিস্ট্রি’ বইটিতে তেলেঙ্গানার গণসংগ্রামে ঝাঁপিয়েপড়া নারীদের বয়ানে দুটো আপাত পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়: ১) পার্টি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিল,২) পার্টি আমাদের ব্যবহার করেছিল।
এস. সুগুনাম্মা। ৯ বছর বয়সে পার্টির কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিত হন এবং যোগ দেন। ১৪ বছর বয়সে তিনি রীতিমতো নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার। ঘরবাড়ি ছেড়েছেন আগেই। পার্টির নানা ‘ডেন’-এ থাকেন। মেম্বারশিপের জন্য আবেদন করলেন। তখন ১৬ বছরের আগে পার্টিতে সদস্যপদ দেওয়া হতো না।
কিন্তু তাঁর কর্মকাণ্ডের জেরে তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ‘উই ওয়ার মেকিং হিস্ট্রি’-তে সুগুনাম্মা বলছেন, ‘বাড়িতে তাদের যে দুর্দশায় দিন কাটাতে হতো, তা সহ্য না করতে পেরেই নারীরা প্রায়ই আন্দোলনে যোগ দেন। পার্টি বাকি দুনিয়াকে দেখাতে চাইত যে নারীরাও পার্টিতে আছে। তাই পার্টি ঘোষণা করত, বিয়েতে পণ নেওয়া চলবে না এবং সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার দিতে হবে। পার্টিতে নারীদের সমান চোখে দেখা হতো। কিন্তু পার্টি কখনোই নারীদের সমস্যাকে রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত প্রশ্ন—যার আলোচনা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন—সেই হিসেবে দেখত না। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার মতো।’
বহু বছর বহু কমিউনিস্ট কর্মীর আন্ডারগ্রাউন্ড জীবনযাপনের পর যখন তেলেঙ্গানার সংগ্রাম প্রত্যাহৃত হলো, পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠল, তখন বহু নারী কমরেডের মতোই সুগুনাম্মাকেও বাড়ি ফিরে যেতে বলা হলো। কিন্তু একজন পুরুষের কাছে বাড়ি ফেরা আর একজন নারীর কাছে বাড়ি ফেরা কি কখনো এক হতে পারে? বিশেষ করে যে নারী বিদ্রোহী, বহু বছর অজানা আস্তানায় কাটিয়েছেন, বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, বহু ধরনের কাজে লিপ্ত থেকেছেন, তার পক্ষে ‘বাড়ি ফিরে যাওয়া’ বিরাট বিপরীত যাত্রা ছাড়া আর কী?
সুগুনাম্মা বলছেন, “বাসবপুন্নিয়া আমাকে বললেন, ‘বোন, তুমি কী করতে চাও? আমাদেরই তো কোনো কাজ নেই! যাও, গিয়ে বাড়িতে থাকো।’ আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমাদের এত দিন ব্যবহার করে এখন বলছে ‘বাড়ি গিয়ে থাকো’! বাড়ির অবস্থাটা কী, সেটা ওরা কী করে বুঝবে? আমি ওদের বলবই বা কী করে? কী যন্ত্রণা! কী মানসিক নির্যাতন! সুগুনাম্মার মতো অভিজ্ঞতা আরও তেলেঙ্গানা সংগ্রামের, কমিউনিস্ট আন্দোলনের বহু বহু নারী যোদ্ধার।
রেগাল্লা আছামাম্বা। ১০ বছর বয়সে বিয়ে এবং স্বামীর মাধ্যমে পার্টির সংস্পর্শে আসা। এরপর অকস্মাৎ স্বামীর গ্রেপ্তারি। রেগাল্লা পার্টিকে আঁকড়ে থাকলেন। সামান্যই লেখাপড়া জানতেন। পার্টি কিশোরী মেয়েটিকে পাঠাল একজন ডাক্তার পরিচালিত মেডিক্যাল ট্রেনিং ক্যাম্পে। সেই শিক্ষা রেগাল্লাকে পার্টির কাছে এবং গেরিলা যোদ্ধাদের কাছে অপরিহার্য করে তুলল। এরপর রেগাল্লার লাগাতার স্কোয়াড জীবন। ইঞ্জেকশন দিতে, সাধারণ অসুখ-বিসুখে ওষুধ দিতে, ক্ষত সেলাই করতে তাঁর জুড়ি নেই। জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে জখম কমরেড থেকে গুলিবিদ্ধ যোদ্ধা, তাঁর চিকিৎসার অভিজ্ঞতা অনেক নামজাদা ডাক্তারকেও হার মানাবে। তিনি এতটাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন যে, যখন এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন, তখন সঙ্গে দুজনকে দেওয়া হতো তাঁর নিরাপত্তার জন্য।
এহেন রেগাল্লা আছামাম্বাকে ‘চরিত্রহীনতার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হলো। কপর্দকশূন্য অবস্থায় জঙ্গলের ভেতর দিয়ে তিনি মাইলের পর মাইল হেঁটে যাচ্ছেন, পরনের শাড়ি শতচ্ছিন্ন, না আছে যাওয়ার জায়গা, না আছে কিছু। এই অবস্থায় জঙ্গলের মধ্যেই পার্টির আরেকটা ক্যাম্পে তিনি পৌঁছান। সেখানকার নেতৃত্ব তাঁর কথা শুনে, অন্য নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, তাঁকে পার্টিতে ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। ঠিক হয়, তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের কারণে প্রথম কয়েক সপ্তাহ তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, তারপর তাঁর আচরণ সন্তোষজনক হলে তাঁকে সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যে নেতা তাঁর হয়ে সওয়াল করেন, তিনি বলেন, ‘ওকে তাড়ানো দুধেল গাইকে তাড়ানোর শামিল। ওর জায়গা কে নেবে? ওর কাজগুলো কে করবে?’ যাইহোক, এসব ‘সম্মানজনক’ চিন্তাভাবনা থেকে রেগাল্লাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং তেলেঙ্গানা সংগ্রাম প্রত্যাহার হওয়া অবধি তিনি স্কোয়াডে স্কোয়াডে, জঙ্গলে জঙ্গলে, গ্রামে গ্রামে, শুধু কমরেডদেরই নয়, সাধারণ মানুষেরও চিকিৎসা করে বেড়ান।
তাঁর স্মৃতিচারণায় তিনি বলছেন, লড়াকু কোয়া উপজাতির মানুষের মধ্যে একধরনের মারাত্মক ঘায়ের প্রকোপ দেখা দেয়। রেগাল্লা আবিষ্কার করেন যে, পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন আর একটা বিশেষ মলম ব্যবহার করলে সেই ঘা সেরে যাচ্ছে। এভাবে তিনি কোয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। সেই যে তাঁর স্বামী গ্রেপ্তার হয়েছিল, তারপর তার আর কোনো খবর নেই। পার্টি থেকে রেগাল্লাকে পরামর্শ দেওয়া হলো আবার বিয়ে করে নিতে—একা মেয়ের ‘চরিত্র’ রক্ষা করা যে দুঃসহ কাজ। রেগাল্লা তাঁর নেতৃস্থানীয় মোহন রাওকে বিয়ে করলেন। সেই বিয়ে তাঁর কাজে তখনো কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ, তখন তেলেঙ্গানার সংগ্রাম জোরকদমে চলছে, রেগাল্লা সেই সংগ্রামে একজন অতীব প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্ব। কিন্তু সংগ্রাম প্রত্যাহার হওয়ার পর? তাঁরা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে এলেন। তাঁর স্বামী রাজনীতিতে থাকলেন আর রেগাল্লা সংসার সাগরে ভেসে গেলেন। যে জ্ঞান, যে অভিজ্ঞতা তিনি আহরণ করেছিলেন, যা হতে পারত অন্ধ্রের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলজুড়ে পার্টি বিস্তারের কাজে অমূল্য সম্পদ, তা বৃথা গেল।
যে রেগাল্লার হাত ধরে গড়ে উঠতে পারত কমিউনিস্ট আদর্শে দীক্ষিত গ্রামীণ চিকিৎসাকর্মী বাহিনী, সেই রেগাল্লাকে (এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর মতো আরও বহু নারীকে) পার্টি সংসারের ঘেরাটোপে ফেরত পাঠিয়ে দিল। উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এ কথা অনস্বীকার্য যে, তেলেঙ্গানা সংগ্রাম প্রত্যাহারের পর, কমিউনিস্ট পার্টি আইনি হওয়ার পর, যোদ্ধা মেয়েদের ঘরে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে, পার্টির নির্দেশে ঘটেছে।
যোদ্ধা ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে; কিন্তু ওই যে আগেই বললাম, ছেলেদের বাড়ি ফেরা আর মেয়েদের বাড়ি ফেরার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এই সমস্যাটা শুরু থেকেই আছে। এমএন রায়ের এভলিন ট্রেন্ট-রায়কে ছেঁটে ফেলার ঘটনায়—বিনা সমালোচনায়, বিনা বিরোধিতায়—আমি যাচ্ছি না, সে নিয়ে পরে লেখা যাবে খন। কিন্তু বাস্তব হলো, পার্টিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা কায়িক শ্রম-বৌদ্ধিক শ্রম বিভাজন বরাবর দেখা গেছে। লড়াই-আন্দোলন, মিছিল-মিটিংয়ে মেয়েদের আনা হয়েছে, রাখা হয়েছে। বহু সামাজিক বাধা, কুসংস্কার চূর্ণ করে, মুক্তির আস্বাদ দিয়ে, এই কাজটা করা হয়েছে।
কিন্তু তারপর? যখন অবস্থাটা মুখোমুখি লড়াইয়ের নয়? যখন অবস্থাটা চিন্তাভাবনাগুলো সাজানোর, লড়াইটা গড়ে তোলার পৃষ্ঠভূমি রচনার? কাজটা যখন অনেকাংশে বৌদ্ধিক? কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় মাল্লু স্বরাজ্যমের কথায়। পি. সুন্দরাইয়ার ‘তেলেঙ্গানা গণসংগ্রাম ও তার শিক্ষা’ বইটিতে যে নারী কর্মীদের উল্লেখ আছে, স্বরাজ্যম তার অন্যতম। বইটি প্রকাশ হয় সম্ভবত ৭০-এর দশকের গোড়ায়। সুন্দরাইয়া তাতে গর্ব করে স্বরাজ্যমের কথা লিখেছেন, তিনি এখন পার্টির (সিপিএমের) নালগোন্ডা জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের মধ্যে একজন, তাঁর স্বামী অন্ধ্ররাজ্য কমিটির সদস্য। ৭০-এর শেষ ৮০-র শুরুতে স্বরাজ্যম দুবার এমএলএ নির্বাচিত হন। সুন্দরাইয়াই জানিয়েছেন যে, স্বরাজ্যম ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী এবং দক্ষ সংগঠক।
যেটা সুন্দরাইয়া বলেননি—বিষয়টি নিয়ে তিনি বা তাঁরা আদৌ চিন্তাভাবনা করেছেন কি না সন্দেহ—সেটা হলো, এই স্বরাজ্যমকেই তেলেঙ্গানা সংগ্রামের শেষে সংসারে ফিরে যেতে হয়। তিনি লড়েছিলেন, পার্টিকে বলেছিলেন যে, তিনি পার্টির হয়েই কাজ করতে চান। কিন্তু পার্টি সাফ জানায়, স্বামী-স্ত্রী দুজনকে পূর্ণ সময়ের কর্মী হিসেবে রাখাটা
সম্ভব নয়। এবং স্বাভাবিকভাবেই, স্বরাজ্যমকে স্বামীর জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। সংসার চালানোয় মনোনিবেশ করতে হয়।
চীন-ভারত যুদ্ধের সময়, যখন কমিউনিস্টদের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে, তখন পার্টি স্বরাজ্যমকে ডেকে নেয়, বলে: ‘এই কঠিন সময় তোমায় এগিয়ে আসতেই হবে।’ স্বরাজ্যমও বিনা বাক্যব্যয়ে ছেড়ে-আসা জীবনে ফিরে যান। তাঁর কথায়, ‘আমি রাজনীতিতে যদি এতদিন টিকে থাকতে পারি, সেটা কিন্তু অর্ধেক স্বরাজ্যম—গোটা স্বরাজ্যম নয়। আমার যতটুকু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, আমি কখনোই তার পুরোটা দিতে পারিনি। তার কারণ হচ্ছে, আমার পরিবার। পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে?’
(শেষ)
লেখক: অন্ধ্রের প্রয়াত কমিউনিস্ট নেত্রী
গতকালের পর
পার্টির এই যে চিন্তার কথা কোটেশ্বরাম্মা উল্লেখ করেছেন, তা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতন লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক চিন্তাপ্রক্রিয়ার বিপরীতে যান্ত্রিক চিন্তাপ্রক্রিয়াই শুধু নয়, এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা। কোনো এক সুন্দর দিনে সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরি হয়ে গেল আর নারী-পুরুষ বৈষম্য অবলুপ্ত হয়ে গেল—এটা কোনো বৈজ্ঞানিক চিন্তা নয়। নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং সমতার লক্ষ্যে সচেতন লড়াই ছাড়া সমতাভিত্তিক সমাজটাই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর তৈরি হয়েছিল জেনোৎদেল—রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নারী বিভাগ। জেনোৎদেলের কাজের দুটো দিক ছিল—বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় নারীদের নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হওয়া এবং পার্টির মধ্যে নারীদের সমস্যাগুলোকে সামনে তুলে এনে সেই অনুযায়ী পার্টি ও সরকারের পলিসি ফ্রেম করানো।
আসলে নারী প্রশ্নটা যে একটা স্বতন্ত্র তত্ত্বগত প্রশ্ন, যার তত্ত্বগত এবং প্রায়োগিক সমাধানের কাজটা হাতে নেওয়া একটা অনিবার্য বিপ্লবী কাজ—এই সহজসরল সত্যটার উপলব্ধি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে অন্তত বড়ই কম। এঙ্গেলসের ‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি…’ তাই কখনোই মার্কসবাদ-লেনিনবাদের অন্যতম আকর গ্রন্থ হিসেবে গণ্য হলো না; বেবেলের ‘উইমেন ইন দ্য পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ তো কোথায় হারিয়ে গেল!
মার্কসবাদ সাম্যের দর্শন। তাই নারী-পুরুষ সাম্যের বিষয়টা কমিউনিস্ট পার্টিতে অস্বীকার করা হয় না বা করা যায় না। কিন্তু সাম্য মানে তো শুধু পুরুষের পাশে নারীকে জায়গা দেওয়া নয়—সেটা আবশ্যক, কিন্তু যথেষ্ট নয়। ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে রাখা অবস্থান থেকে, ঐতিহ্যগত বৈষম্য থেকে, অবহেলা-নিপীড়নের বিবিধ রূপ থেকে নারীকে মুক্ত করার দিশা যদি না থাকে, তাহলে নারী-পুরুষের সমানাধিকার সদিচ্ছার সীমানা টপকাতে পারে না।
স্ত্রী শক্তি সংগঠন দ্বারা প্রকাশিত ‘উই ওয়্যার মেকিং হিস্ট্রি’ বইটিতে তেলেঙ্গানার গণসংগ্রামে ঝাঁপিয়েপড়া নারীদের বয়ানে দুটো আপাত পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়: ১) পার্টি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিল,২) পার্টি আমাদের ব্যবহার করেছিল।
এস. সুগুনাম্মা। ৯ বছর বয়সে পার্টির কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিত হন এবং যোগ দেন। ১৪ বছর বয়সে তিনি রীতিমতো নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার। ঘরবাড়ি ছেড়েছেন আগেই। পার্টির নানা ‘ডেন’-এ থাকেন। মেম্বারশিপের জন্য আবেদন করলেন। তখন ১৬ বছরের আগে পার্টিতে সদস্যপদ দেওয়া হতো না।
কিন্তু তাঁর কর্মকাণ্ডের জেরে তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ‘উই ওয়ার মেকিং হিস্ট্রি’-তে সুগুনাম্মা বলছেন, ‘বাড়িতে তাদের যে দুর্দশায় দিন কাটাতে হতো, তা সহ্য না করতে পেরেই নারীরা প্রায়ই আন্দোলনে যোগ দেন। পার্টি বাকি দুনিয়াকে দেখাতে চাইত যে নারীরাও পার্টিতে আছে। তাই পার্টি ঘোষণা করত, বিয়েতে পণ নেওয়া চলবে না এবং সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার দিতে হবে। পার্টিতে নারীদের সমান চোখে দেখা হতো। কিন্তু পার্টি কখনোই নারীদের সমস্যাকে রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত প্রশ্ন—যার আলোচনা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন—সেই হিসেবে দেখত না। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার মতো।’
বহু বছর বহু কমিউনিস্ট কর্মীর আন্ডারগ্রাউন্ড জীবনযাপনের পর যখন তেলেঙ্গানার সংগ্রাম প্রত্যাহৃত হলো, পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠল, তখন বহু নারী কমরেডের মতোই সুগুনাম্মাকেও বাড়ি ফিরে যেতে বলা হলো। কিন্তু একজন পুরুষের কাছে বাড়ি ফেরা আর একজন নারীর কাছে বাড়ি ফেরা কি কখনো এক হতে পারে? বিশেষ করে যে নারী বিদ্রোহী, বহু বছর অজানা আস্তানায় কাটিয়েছেন, বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, বহু ধরনের কাজে লিপ্ত থেকেছেন, তার পক্ষে ‘বাড়ি ফিরে যাওয়া’ বিরাট বিপরীত যাত্রা ছাড়া আর কী?
সুগুনাম্মা বলছেন, “বাসবপুন্নিয়া আমাকে বললেন, ‘বোন, তুমি কী করতে চাও? আমাদেরই তো কোনো কাজ নেই! যাও, গিয়ে বাড়িতে থাকো।’ আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমাদের এত দিন ব্যবহার করে এখন বলছে ‘বাড়ি গিয়ে থাকো’! বাড়ির অবস্থাটা কী, সেটা ওরা কী করে বুঝবে? আমি ওদের বলবই বা কী করে? কী যন্ত্রণা! কী মানসিক নির্যাতন! সুগুনাম্মার মতো অভিজ্ঞতা আরও তেলেঙ্গানা সংগ্রামের, কমিউনিস্ট আন্দোলনের বহু বহু নারী যোদ্ধার।
রেগাল্লা আছামাম্বা। ১০ বছর বয়সে বিয়ে এবং স্বামীর মাধ্যমে পার্টির সংস্পর্শে আসা। এরপর অকস্মাৎ স্বামীর গ্রেপ্তারি। রেগাল্লা পার্টিকে আঁকড়ে থাকলেন। সামান্যই লেখাপড়া জানতেন। পার্টি কিশোরী মেয়েটিকে পাঠাল একজন ডাক্তার পরিচালিত মেডিক্যাল ট্রেনিং ক্যাম্পে। সেই শিক্ষা রেগাল্লাকে পার্টির কাছে এবং গেরিলা যোদ্ধাদের কাছে অপরিহার্য করে তুলল। এরপর রেগাল্লার লাগাতার স্কোয়াড জীবন। ইঞ্জেকশন দিতে, সাধারণ অসুখ-বিসুখে ওষুধ দিতে, ক্ষত সেলাই করতে তাঁর জুড়ি নেই। জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে জখম কমরেড থেকে গুলিবিদ্ধ যোদ্ধা, তাঁর চিকিৎসার অভিজ্ঞতা অনেক নামজাদা ডাক্তারকেও হার মানাবে। তিনি এতটাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন যে, যখন এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন, তখন সঙ্গে দুজনকে দেওয়া হতো তাঁর নিরাপত্তার জন্য।
এহেন রেগাল্লা আছামাম্বাকে ‘চরিত্রহীনতার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হলো। কপর্দকশূন্য অবস্থায় জঙ্গলের ভেতর দিয়ে তিনি মাইলের পর মাইল হেঁটে যাচ্ছেন, পরনের শাড়ি শতচ্ছিন্ন, না আছে যাওয়ার জায়গা, না আছে কিছু। এই অবস্থায় জঙ্গলের মধ্যেই পার্টির আরেকটা ক্যাম্পে তিনি পৌঁছান। সেখানকার নেতৃত্ব তাঁর কথা শুনে, অন্য নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, তাঁকে পার্টিতে ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। ঠিক হয়, তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের কারণে প্রথম কয়েক সপ্তাহ তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, তারপর তাঁর আচরণ সন্তোষজনক হলে তাঁকে সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যে নেতা তাঁর হয়ে সওয়াল করেন, তিনি বলেন, ‘ওকে তাড়ানো দুধেল গাইকে তাড়ানোর শামিল। ওর জায়গা কে নেবে? ওর কাজগুলো কে করবে?’ যাইহোক, এসব ‘সম্মানজনক’ চিন্তাভাবনা থেকে রেগাল্লাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং তেলেঙ্গানা সংগ্রাম প্রত্যাহার হওয়া অবধি তিনি স্কোয়াডে স্কোয়াডে, জঙ্গলে জঙ্গলে, গ্রামে গ্রামে, শুধু কমরেডদেরই নয়, সাধারণ মানুষেরও চিকিৎসা করে বেড়ান।
তাঁর স্মৃতিচারণায় তিনি বলছেন, লড়াকু কোয়া উপজাতির মানুষের মধ্যে একধরনের মারাত্মক ঘায়ের প্রকোপ দেখা দেয়। রেগাল্লা আবিষ্কার করেন যে, পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন আর একটা বিশেষ মলম ব্যবহার করলে সেই ঘা সেরে যাচ্ছে। এভাবে তিনি কোয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। সেই যে তাঁর স্বামী গ্রেপ্তার হয়েছিল, তারপর তার আর কোনো খবর নেই। পার্টি থেকে রেগাল্লাকে পরামর্শ দেওয়া হলো আবার বিয়ে করে নিতে—একা মেয়ের ‘চরিত্র’ রক্ষা করা যে দুঃসহ কাজ। রেগাল্লা তাঁর নেতৃস্থানীয় মোহন রাওকে বিয়ে করলেন। সেই বিয়ে তাঁর কাজে তখনো কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ, তখন তেলেঙ্গানার সংগ্রাম জোরকদমে চলছে, রেগাল্লা সেই সংগ্রামে একজন অতীব প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্ব। কিন্তু সংগ্রাম প্রত্যাহার হওয়ার পর? তাঁরা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে এলেন। তাঁর স্বামী রাজনীতিতে থাকলেন আর রেগাল্লা সংসার সাগরে ভেসে গেলেন। যে জ্ঞান, যে অভিজ্ঞতা তিনি আহরণ করেছিলেন, যা হতে পারত অন্ধ্রের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলজুড়ে পার্টি বিস্তারের কাজে অমূল্য সম্পদ, তা বৃথা গেল।
যে রেগাল্লার হাত ধরে গড়ে উঠতে পারত কমিউনিস্ট আদর্শে দীক্ষিত গ্রামীণ চিকিৎসাকর্মী বাহিনী, সেই রেগাল্লাকে (এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর মতো আরও বহু নারীকে) পার্টি সংসারের ঘেরাটোপে ফেরত পাঠিয়ে দিল। উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এ কথা অনস্বীকার্য যে, তেলেঙ্গানা সংগ্রাম প্রত্যাহারের পর, কমিউনিস্ট পার্টি আইনি হওয়ার পর, যোদ্ধা মেয়েদের ঘরে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে, পার্টির নির্দেশে ঘটেছে।
যোদ্ধা ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে; কিন্তু ওই যে আগেই বললাম, ছেলেদের বাড়ি ফেরা আর মেয়েদের বাড়ি ফেরার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এই সমস্যাটা শুরু থেকেই আছে। এমএন রায়ের এভলিন ট্রেন্ট-রায়কে ছেঁটে ফেলার ঘটনায়—বিনা সমালোচনায়, বিনা বিরোধিতায়—আমি যাচ্ছি না, সে নিয়ে পরে লেখা যাবে খন। কিন্তু বাস্তব হলো, পার্টিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা কায়িক শ্রম-বৌদ্ধিক শ্রম বিভাজন বরাবর দেখা গেছে। লড়াই-আন্দোলন, মিছিল-মিটিংয়ে মেয়েদের আনা হয়েছে, রাখা হয়েছে। বহু সামাজিক বাধা, কুসংস্কার চূর্ণ করে, মুক্তির আস্বাদ দিয়ে, এই কাজটা করা হয়েছে।
কিন্তু তারপর? যখন অবস্থাটা মুখোমুখি লড়াইয়ের নয়? যখন অবস্থাটা চিন্তাভাবনাগুলো সাজানোর, লড়াইটা গড়ে তোলার পৃষ্ঠভূমি রচনার? কাজটা যখন অনেকাংশে বৌদ্ধিক? কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় মাল্লু স্বরাজ্যমের কথায়। পি. সুন্দরাইয়ার ‘তেলেঙ্গানা গণসংগ্রাম ও তার শিক্ষা’ বইটিতে যে নারী কর্মীদের উল্লেখ আছে, স্বরাজ্যম তার অন্যতম। বইটি প্রকাশ হয় সম্ভবত ৭০-এর দশকের গোড়ায়। সুন্দরাইয়া তাতে গর্ব করে স্বরাজ্যমের কথা লিখেছেন, তিনি এখন পার্টির (সিপিএমের) নালগোন্ডা জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের মধ্যে একজন, তাঁর স্বামী অন্ধ্ররাজ্য কমিটির সদস্য। ৭০-এর শেষ ৮০-র শুরুতে স্বরাজ্যম দুবার এমএলএ নির্বাচিত হন। সুন্দরাইয়াই জানিয়েছেন যে, স্বরাজ্যম ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী এবং দক্ষ সংগঠক।
যেটা সুন্দরাইয়া বলেননি—বিষয়টি নিয়ে তিনি বা তাঁরা আদৌ চিন্তাভাবনা করেছেন কি না সন্দেহ—সেটা হলো, এই স্বরাজ্যমকেই তেলেঙ্গানা সংগ্রামের শেষে সংসারে ফিরে যেতে হয়। তিনি লড়েছিলেন, পার্টিকে বলেছিলেন যে, তিনি পার্টির হয়েই কাজ করতে চান। কিন্তু পার্টি সাফ জানায়, স্বামী-স্ত্রী দুজনকে পূর্ণ সময়ের কর্মী হিসেবে রাখাটা
সম্ভব নয়। এবং স্বাভাবিকভাবেই, স্বরাজ্যমকে স্বামীর জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। সংসার চালানোয় মনোনিবেশ করতে হয়।
চীন-ভারত যুদ্ধের সময়, যখন কমিউনিস্টদের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে, তখন পার্টি স্বরাজ্যমকে ডেকে নেয়, বলে: ‘এই কঠিন সময় তোমায় এগিয়ে আসতেই হবে।’ স্বরাজ্যমও বিনা বাক্যব্যয়ে ছেড়ে-আসা জীবনে ফিরে যান। তাঁর কথায়, ‘আমি রাজনীতিতে যদি এতদিন টিকে থাকতে পারি, সেটা কিন্তু অর্ধেক স্বরাজ্যম—গোটা স্বরাজ্যম নয়। আমার যতটুকু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, আমি কখনোই তার পুরোটা দিতে পারিনি। তার কারণ হচ্ছে, আমার পরিবার। পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে?’
(শেষ)
লেখক: অন্ধ্রের প্রয়াত কমিউনিস্ট নেত্রী
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৪ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে