বিভুরঞ্জন সরকার
আমার জ্ঞানবুদ্ধি একটু কম বলে কাজের ক্ষেত্রে ছোট-বড় অনেকেরই সহযোগিতা বা পরামর্শ নিয়ে থাকি। যায়যায়দিন প্রথম বের হয় এরশাদ আমলে। সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদ ছিলেন যায়যায়দিনের ওপর খড়গহস্ত। তাঁর সময়ে যায়যায়দিন একবার অল্প সময়ের জন্য, দ্বিতীয় দফায় লম্বা সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। এরশাদ সাহেবের চক্ষুশূল ছিল পত্রিকাটি। তখন দৈনিক পত্রিকা ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। সামরিক শাসনের কারণে তখন দৈনিকগুলো সেভাবে রাজনৈতিক খবরাখবর বা মতামত প্রকাশে বিরত থাকত। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন বের হয়েই রাজনৈতিক মতামত ছেপে সাহসের পরিচয় দিয়ে ঝড় তুলেছিল।
প্রথম দফা সাময়িক বন্ধের সময় একদিন আমার সঙ্গে বেইলি রোডের সাগর পাবলিশার্সে দেখা হলো এম আর আখতার মুকুলের সঙ্গে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অতি জনপ্রিয় ‘চরমপত্র’ খ্যাত মুকুল ভাই ছিলেন একজন মজার মানুষ। আমাকে তিনি পছন্দ করতেন। আমিও তাঁকে। তিনি ছিলেন দিলখোলা আড্ডাপ্রিয় মানুষ। কথা বলা ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। তাঁর উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি—সবই ছিল আকর্ষণীয়। যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমানের সঙ্গেও তাঁর ছিল বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। তিনি যায়যায়দিনে কিছুদিন লিখেছেনও।
মুকুল ভাই আমাকে দেখেই বললেন, ‘আরে মিয়া, আইয়ুব খান–ইয়াহিয়া খানের আমল পার কইরা আইলাম, লেখার জন্য ধরতে পারল না; আর আপনারা হাফ জেনারেলরে ফাঁকি দিতে পারেন না। মিয়া লেখবেন কায়দা কইরা। এরশাদের বাপেও ধরতে পারব না।’
আমি বললাম, ‘মুকুল ভাই একটু টিপস দেন। কীভাবে এরশাদের চোখে ধুলা দেওয়া যায়!’
মুকুল ভাইয়ের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গোঁফের ফাঁকে ঝিলিক দিয়ে উঠল কৌতুক। বললেন, ‘আরে মিয়া, বাংলা প্রবচন হোনেন নাই, ধরি মাছ না ছুঁই পানি! গোসল করবেন, কিন্তু চুল ভিজাইবেন না।’
আমি জানতে চাই, ‘উপায়টা কী?’ মুকুল ভাই বললেন, ‘এরশাদের কোনো খবর ছাপার আগে সাবধান হতে হবে। এমন লাইন লিখবেন, যার ব্যাখ্যায় একটু ফাঁক থাকে। আর ব্যক্তি এরশাদের দুর্নীতি বা কোনো কেলেঙ্কারির খবর থাকলে এড়িয়ে গিয়ে তাঁর চেলাচামুণ্ডাদের বিষয়ে লিখবেন। তবে শেষ করবেন, “বলে জানা যায়”, “বলে শোনা যায়” ইত্যাদি শব্দ দিয়ে। আপনাকে ধরলে বলবেন, “এটা তো আমার কথা না, এটা অমুকের কথা, অমুককে নিয়ে। ” এই ভাবে পরোক্ষে লিখলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।’
আমি পরবর্তী সময়ে মুকুল ভাইয়ের পরামর্শে ওই রকম লেখার অভ্যাস রপ্ত করেছিলাম। যেমন—‘জিনাত মোশাররফের সঙ্গে এরশাদের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে শোনা যায়।’
যায়যায়দিনে আমার লেখার কারণে কখনো বড় কোনো সমস্যা না হলেও একবার আমাকে তলব করে এরশাদ সাহেব নরম-গরম শাসানি দিয়ে তাঁর দেশি বলে উল্লেখ করে সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি রংপুরের ছাওয়াল আর আমি পঞ্চগড়ের, তাই তিনি আমার ‘দেশি’।
এরশাদকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য সাংবাদিকেরা তখন নানা বুদ্ধি বা উপায় বের করতেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ হরতাল বা ধর্মঘট শব্দ লেখার ওপর আপত্তি তোলায় তখন লেখা হতো বিরোধী দল ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই ‘কর্মসূচি’র অর্থ বুঝতে কারও অসুবিধা হতো না। এমনও হয়েছে, বোমা বা পটকা ফুটলেও লেখা হতো ‘কর্মসূচি’ বিস্ফোরিত হয়েছে।
সামরিক শাসনের ভয় উপেক্ষা করার টিপস কিন্তু গণতান্ত্রিক আমলে একভাবে কাজ দেয়নি। গণতান্ত্রিক আমলে শুনতে হয়, শোনা কথা লেখার দরকার কী? পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ হাতে থাকলেও খবর প্রকাশ করে নাজেহাল হওয়ার ঘটনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কয়েক মাস আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর দিয়ে কী একটা তুফানই না বয়ে গেল!
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা বলে একটি কথা বাংলায় চালু আছে। বন্ধুর অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গিয়ে স্কুল জীবনে কী ঘটেছিল তা লিখতে মন চাইছে। আমার মাথায় কবিতার ভূত সেই বালকবেলাতেই চেপে বসেছিল। ‘জল পরে, পাতা নড়ে’ লিখে যদি বিখ্যাত কবি হওয়া যায়, তাহলে আমি তেমন চেষ্টা করলে দোষের কী! আর আমার মাথায় এল একটি মেয়ের নাম—শেলি। লিখে ফেললাম—
‘শেলি,
আমায় ফেলি
কোথায় গেলি!’
ব্যস, বন্ধু মহলে আমার কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। অনেকেই আমাকে দিয়ে ‘প্রেমপত্র’ লিখিয়ে নিত। সে জন্য কিছু মজুরিও পেতাম। নগদ নয়। মিষ্টি অথবা বুন্দিয়া বা বোঁদে। ছোট্ট এই দানা মিষ্টিও আমার খুব প্রিয় ছিল।
আমার প্রেমপত্র নাকি অব্যর্থ ছিল। সুন্দরী-অসুন্দরী, আমাদের স্কুলের যেসব মেয়েরা তখন বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রেমপত্র পেয়েছে, তার রচনার একক কৃতিত্ব এই বান্দার। ভালোই চলছিল। কিন্তু একদিন ধরা খেয়ে গেলাম। এমন একজনের হাতে প্রেমপত্র পৌঁছাল, যে আমার অতি পরিচিত এবং আমার হাতের লেখা তার খুবই চেনা। তাই পত্র পেয়ে সে আর দেরি না করে হেড স্যারের হাতে পৌঁছে দিল। মুহূর্তে স্যারের রুমে তলব। হাতের লেখা মিলিয়ে প্রমাণে বিলম্ব হলো না যে, ওই পত্রের রচনাকার আমিই।
হেডস্যারের মার দেওয়ার একটি বিশেষ স্টাইল ছিল। চুল ধরে টেনে মাথাটা নিচু করতেন, তারপর ডাস্টার দিয়ে ঘাড়ের ওপর কয়েক ঘা। শাস্তি দিয়েই ছেড়ে দিলেন না। একটু জ্ঞানও দিলেন। বললেন, ‘পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রেমের পেছনে ছোটার দরকার নেই। উপযুক্ত হয়ে ওঠো। প্রেমই তোমার পেছনে ছুটবে।’
তেমন উপযুক্ত অবশ্য আমি হয়ে উঠতে পারিনি। কারণ, প্রেম জীবনে কখনো আমার পেছনে ছোটেনি। জীবনের প্রয়োজন মেটাতে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয় যে, স্ত্রীকেও কায়দা করে তেমন প্রেমের কথা বলা হয়ে ওঠেনি। জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের বাধভাঙা নৃত্য দেখার সুযোগ যেমন হয়নি, তেমনি সমুদ্রের বালুকাবেলায় পাশাপাশি হেঁটে শরীরের উত্তাপ নিয়ে দেখা হয়নি উত্তাল জলকেলি! মুগ্ধ হয়ে কাউকে বলা হয়নি—‘চল পালিয়ে যাই।’ এখন বয়সের ভার-জড়তা দেখায় ভয়!
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একজন রূপবতী গুণবতী কবি পেয়েছিলাম। কতজন যে তাঁর প্রেমে মজেছিলেন। এক কবি তো রীতিমতো পাগলই হয়ে গিয়েছিলেন। (সম্ভবত বাচ্চু ভাই! ভুল হলে মাফ করবেন)। একবার বাংলা একাডেমিতে কবিতা পাঠের আসরে সেই কবি সুরাইয়া খানম কবিতা পাঠ করলেন। পেছন থেকে এক দর্শক সজোরে আওয়াজ দিলেন—‘হালায়, কবিতা দেখবার ভি লাগসি, হুনবার ভি লাগসি।’
একবার একুশে উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোনো এক সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করছিলেন এক নারী শিল্পী। ভারী সুরেলা কণ্ঠ। তাঁর গাওয়া ‘আমার এই দেহ খানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো’ শুনে আমি তন্ময় হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ছন্দপতন হলো এক কর্কশ কণ্ঠে—‘ক্রেন লাগব।’ শ্রোতাদের মধ্যও তুমুল হাস্যরোল। তাকিয়ে দেখি শিল্পী বেজায় স্থূলকায়। এমন রসিকতা কাম্য ছিল না; আবার প্রতিরোধ্যও ছিল না।
প্রতিটি মানুষের জীবনেই অসংখ্য গল্প আছে। জীবন তো আসলে সুখ-দুঃখের গল্প সমগ্র। কেউ ভোলে, কেউ ভোলে না। কেউ বলে, কেউ বলে না।
আমার জ্ঞানবুদ্ধি একটু কম বলে কাজের ক্ষেত্রে ছোট-বড় অনেকেরই সহযোগিতা বা পরামর্শ নিয়ে থাকি। যায়যায়দিন প্রথম বের হয় এরশাদ আমলে। সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদ ছিলেন যায়যায়দিনের ওপর খড়গহস্ত। তাঁর সময়ে যায়যায়দিন একবার অল্প সময়ের জন্য, দ্বিতীয় দফায় লম্বা সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। এরশাদ সাহেবের চক্ষুশূল ছিল পত্রিকাটি। তখন দৈনিক পত্রিকা ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। সামরিক শাসনের কারণে তখন দৈনিকগুলো সেভাবে রাজনৈতিক খবরাখবর বা মতামত প্রকাশে বিরত থাকত। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন বের হয়েই রাজনৈতিক মতামত ছেপে সাহসের পরিচয় দিয়ে ঝড় তুলেছিল।
প্রথম দফা সাময়িক বন্ধের সময় একদিন আমার সঙ্গে বেইলি রোডের সাগর পাবলিশার্সে দেখা হলো এম আর আখতার মুকুলের সঙ্গে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অতি জনপ্রিয় ‘চরমপত্র’ খ্যাত মুকুল ভাই ছিলেন একজন মজার মানুষ। আমাকে তিনি পছন্দ করতেন। আমিও তাঁকে। তিনি ছিলেন দিলখোলা আড্ডাপ্রিয় মানুষ। কথা বলা ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। তাঁর উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি—সবই ছিল আকর্ষণীয়। যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমানের সঙ্গেও তাঁর ছিল বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। তিনি যায়যায়দিনে কিছুদিন লিখেছেনও।
মুকুল ভাই আমাকে দেখেই বললেন, ‘আরে মিয়া, আইয়ুব খান–ইয়াহিয়া খানের আমল পার কইরা আইলাম, লেখার জন্য ধরতে পারল না; আর আপনারা হাফ জেনারেলরে ফাঁকি দিতে পারেন না। মিয়া লেখবেন কায়দা কইরা। এরশাদের বাপেও ধরতে পারব না।’
আমি বললাম, ‘মুকুল ভাই একটু টিপস দেন। কীভাবে এরশাদের চোখে ধুলা দেওয়া যায়!’
মুকুল ভাইয়ের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গোঁফের ফাঁকে ঝিলিক দিয়ে উঠল কৌতুক। বললেন, ‘আরে মিয়া, বাংলা প্রবচন হোনেন নাই, ধরি মাছ না ছুঁই পানি! গোসল করবেন, কিন্তু চুল ভিজাইবেন না।’
আমি জানতে চাই, ‘উপায়টা কী?’ মুকুল ভাই বললেন, ‘এরশাদের কোনো খবর ছাপার আগে সাবধান হতে হবে। এমন লাইন লিখবেন, যার ব্যাখ্যায় একটু ফাঁক থাকে। আর ব্যক্তি এরশাদের দুর্নীতি বা কোনো কেলেঙ্কারির খবর থাকলে এড়িয়ে গিয়ে তাঁর চেলাচামুণ্ডাদের বিষয়ে লিখবেন। তবে শেষ করবেন, “বলে জানা যায়”, “বলে শোনা যায়” ইত্যাদি শব্দ দিয়ে। আপনাকে ধরলে বলবেন, “এটা তো আমার কথা না, এটা অমুকের কথা, অমুককে নিয়ে। ” এই ভাবে পরোক্ষে লিখলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।’
আমি পরবর্তী সময়ে মুকুল ভাইয়ের পরামর্শে ওই রকম লেখার অভ্যাস রপ্ত করেছিলাম। যেমন—‘জিনাত মোশাররফের সঙ্গে এরশাদের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে শোনা যায়।’
যায়যায়দিনে আমার লেখার কারণে কখনো বড় কোনো সমস্যা না হলেও একবার আমাকে তলব করে এরশাদ সাহেব নরম-গরম শাসানি দিয়ে তাঁর দেশি বলে উল্লেখ করে সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি রংপুরের ছাওয়াল আর আমি পঞ্চগড়ের, তাই তিনি আমার ‘দেশি’।
এরশাদকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য সাংবাদিকেরা তখন নানা বুদ্ধি বা উপায় বের করতেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ হরতাল বা ধর্মঘট শব্দ লেখার ওপর আপত্তি তোলায় তখন লেখা হতো বিরোধী দল ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই ‘কর্মসূচি’র অর্থ বুঝতে কারও অসুবিধা হতো না। এমনও হয়েছে, বোমা বা পটকা ফুটলেও লেখা হতো ‘কর্মসূচি’ বিস্ফোরিত হয়েছে।
সামরিক শাসনের ভয় উপেক্ষা করার টিপস কিন্তু গণতান্ত্রিক আমলে একভাবে কাজ দেয়নি। গণতান্ত্রিক আমলে শুনতে হয়, শোনা কথা লেখার দরকার কী? পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ হাতে থাকলেও খবর প্রকাশ করে নাজেহাল হওয়ার ঘটনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কয়েক মাস আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর দিয়ে কী একটা তুফানই না বয়ে গেল!
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা বলে একটি কথা বাংলায় চালু আছে। বন্ধুর অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গিয়ে স্কুল জীবনে কী ঘটেছিল তা লিখতে মন চাইছে। আমার মাথায় কবিতার ভূত সেই বালকবেলাতেই চেপে বসেছিল। ‘জল পরে, পাতা নড়ে’ লিখে যদি বিখ্যাত কবি হওয়া যায়, তাহলে আমি তেমন চেষ্টা করলে দোষের কী! আর আমার মাথায় এল একটি মেয়ের নাম—শেলি। লিখে ফেললাম—
‘শেলি,
আমায় ফেলি
কোথায় গেলি!’
ব্যস, বন্ধু মহলে আমার কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। অনেকেই আমাকে দিয়ে ‘প্রেমপত্র’ লিখিয়ে নিত। সে জন্য কিছু মজুরিও পেতাম। নগদ নয়। মিষ্টি অথবা বুন্দিয়া বা বোঁদে। ছোট্ট এই দানা মিষ্টিও আমার খুব প্রিয় ছিল।
আমার প্রেমপত্র নাকি অব্যর্থ ছিল। সুন্দরী-অসুন্দরী, আমাদের স্কুলের যেসব মেয়েরা তখন বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রেমপত্র পেয়েছে, তার রচনার একক কৃতিত্ব এই বান্দার। ভালোই চলছিল। কিন্তু একদিন ধরা খেয়ে গেলাম। এমন একজনের হাতে প্রেমপত্র পৌঁছাল, যে আমার অতি পরিচিত এবং আমার হাতের লেখা তার খুবই চেনা। তাই পত্র পেয়ে সে আর দেরি না করে হেড স্যারের হাতে পৌঁছে দিল। মুহূর্তে স্যারের রুমে তলব। হাতের লেখা মিলিয়ে প্রমাণে বিলম্ব হলো না যে, ওই পত্রের রচনাকার আমিই।
হেডস্যারের মার দেওয়ার একটি বিশেষ স্টাইল ছিল। চুল ধরে টেনে মাথাটা নিচু করতেন, তারপর ডাস্টার দিয়ে ঘাড়ের ওপর কয়েক ঘা। শাস্তি দিয়েই ছেড়ে দিলেন না। একটু জ্ঞানও দিলেন। বললেন, ‘পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রেমের পেছনে ছোটার দরকার নেই। উপযুক্ত হয়ে ওঠো। প্রেমই তোমার পেছনে ছুটবে।’
তেমন উপযুক্ত অবশ্য আমি হয়ে উঠতে পারিনি। কারণ, প্রেম জীবনে কখনো আমার পেছনে ছোটেনি। জীবনের প্রয়োজন মেটাতে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয় যে, স্ত্রীকেও কায়দা করে তেমন প্রেমের কথা বলা হয়ে ওঠেনি। জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের বাধভাঙা নৃত্য দেখার সুযোগ যেমন হয়নি, তেমনি সমুদ্রের বালুকাবেলায় পাশাপাশি হেঁটে শরীরের উত্তাপ নিয়ে দেখা হয়নি উত্তাল জলকেলি! মুগ্ধ হয়ে কাউকে বলা হয়নি—‘চল পালিয়ে যাই।’ এখন বয়সের ভার-জড়তা দেখায় ভয়!
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একজন রূপবতী গুণবতী কবি পেয়েছিলাম। কতজন যে তাঁর প্রেমে মজেছিলেন। এক কবি তো রীতিমতো পাগলই হয়ে গিয়েছিলেন। (সম্ভবত বাচ্চু ভাই! ভুল হলে মাফ করবেন)। একবার বাংলা একাডেমিতে কবিতা পাঠের আসরে সেই কবি সুরাইয়া খানম কবিতা পাঠ করলেন। পেছন থেকে এক দর্শক সজোরে আওয়াজ দিলেন—‘হালায়, কবিতা দেখবার ভি লাগসি, হুনবার ভি লাগসি।’
একবার একুশে উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোনো এক সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করছিলেন এক নারী শিল্পী। ভারী সুরেলা কণ্ঠ। তাঁর গাওয়া ‘আমার এই দেহ খানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো’ শুনে আমি তন্ময় হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ছন্দপতন হলো এক কর্কশ কণ্ঠে—‘ক্রেন লাগব।’ শ্রোতাদের মধ্যও তুমুল হাস্যরোল। তাকিয়ে দেখি শিল্পী বেজায় স্থূলকায়। এমন রসিকতা কাম্য ছিল না; আবার প্রতিরোধ্যও ছিল না।
প্রতিটি মানুষের জীবনেই অসংখ্য গল্প আছে। জীবন তো আসলে সুখ-দুঃখের গল্প সমগ্র। কেউ ভোলে, কেউ ভোলে না। কেউ বলে, কেউ বলে না।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৪ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে