রফী হক
যে কুষ্টিয়াতে আমি জন্মেছিলাম, তা খুব ছিমছাম শুনসান ছিল। বলতে গেলে গ্রামের মতোই ছিল। আমাদের বাড়িতে কুয়োতলা ঘেঁষে একটি বড় নিমগাছ ছিল। সেখানে সারাদিন পাখিরা ডেকে যেত। নির্জন দুপুরে ঘু ঘু ডাকে ঘুঘু পাখিও ডাকত! একবার মিয়াভাই আমার জন্য নিমগাছে উঠে কয়েক থোকা নিমফল পেড়ে দিয়ে আমাকে ভালোবেসেছিল। সেই ভালোবাসাটার কথা মনে আছে। আমি চোখ বন্ধ করে মিয়াভাইয়ের আরও ভালোবাসার কথা মনে করতে চাই, মনে পড়ে না। তিনি আমার স্মৃতিতে খুব বেশি নেই।
বাড়ির সামনে দিয়ে লাল ইট-সুড়কির রাস্তাটা কসাইখানার দিকে চলে গেছে। ওখানেই ভাগাড়। ওখানেই কসাইখানা । ওখানে টিবি হাসপাতাল। ওদিকে যাওয়া বারণ ছিল। যেতাম না। বাড়ির সামনে ডজ গাড়ি যেত দুনিয়ার ধুলো উড়িয়ে। ট্রাককে আমরা ডজ গাড়ি বলতাম । ওগুলোর ইঞ্জিন বোধহয় ডজ কোম্পানির ছিল। এ কি মুক্তিযুদ্ধের আগের কথা, না-কি পরের—তা মনে করতে পারি না। একদম ছোটবেলাকার কথা এসব। ৫০ বছর আগের কথা।
তখনকার বন্ধুবান্ধবদের কথাও মনে আসে না। শুধু জেসমিনের কথা মনে আছে। পাশের বাড়ির তোফাজ্জল ভাইয়ের বড় মেয়ে জেসমিন। আমরা সমবয়সী। আমরা একসঙ্গে খেলতাম। জেসমিনের সঙ্গে ডজ গাড়ির পেছনের রড ধরে ঝুলতে ঝুলতে অনেকটা যেতাম। গায়ে রাস্তার সব ধুলো-কালি মেখে ভূত হয়ে বাড়িতে ফিরতাম। আর বাড়ি ফিরলেই প্রথমে মার দিত আম্মা । তারপর কুয়াতলায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে সাবান মেখে ঠান্ডা পানির চান। কুয়াতলাটি ভীষণ নিরিবিলি আর নির্জন ছিল । আমার ওই বয়সী আরও বন্ধু ও খেলার সাথি ছিল, এখন মনে করতে পারি না ।
যখন ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ি, তখন আমার বন্ধু হলো কামরুল, আনিস। স্কুলে ভর্তি হয়ে পেয়েছিলাম মাসুম রেজা, কর্নেল আর ফেরদৌসকে। ফেরদৌসকে ক্লাস ফাইভের পর আর পাইনি। ওর আব্বার বদলির চাকরি ছিল। তখন কুষ্টিয়াতে গাড়ি ছিল না তত। পুরো শহরে প্রাইভেট গাড়ি তিন-চারটি ছিল। রিকশা ছিল, ওটাই একমাত্র বাহন । আম্মা কোথাও বেড়াতে গেলে রিকশায় যেতেন । রিকশা শাড়ি দিয়ে পেঁচানো হতো। আমরা বড় বাড়ি (লাল মোহাম্মদ নানার বাড়ি) যেতাম । ওটাই কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় বাড়ি ছিল তখন। আম্মার চাচাদের বাড়ি। ওদের বড় তেলকল ছিল। আম্মার চাচাদের ব্যবসা ছিল মূলত নারায়ণগঞ্জে । তাঁরা খুব বিত্তবান ছিলেন । আমাদের বাড়ি থেকে বড় বাড়ি পাঁচ-সাত মিনিটের পথ । সোনালী ব্যাংক হাতের ডানে রেখে বাবুর আলি রেলগেট পার হয়ে আরও উত্তরে যেতে হতো। আর রিকশায় চড়ে আম্মার সঙ্গে যেতাম কখনো উদিবাড়ি, কখনো জগতি, কখনো বা মঙ্গলবাড়ি বাজার পার হয়ে বারখাদা। উদিবাড়ি-জগতি বারখাদা দূরের রাস্তা ছিল। আম্মা সঙ্গে করে নাড়ু, মোয়া, তিলেরখাজা নিতেন। লম্বা পথে আমি খেতে খেতে যেতাম। উদিবাড়ির পীর সাহেব ছিলেন আম্মার দাদা । সেখানে বিরাট ওরস ও মিলাদ মাহফিল হতো। শত শত মুরিদ আসতেন দেশের নানান জায়গা থেকে। উদিবাড়িতে আম্মার অনেক নিকটজন থাকতেন। উদিবাড়ি জায়গাটা আমার ভালো লাগত।
বন্ধুত্ব ব্যাপারটা অনুভব করলাম ক্লাস নাইনে উঠে। সরওয়ার মুর্শেদ রতন আমার সেই রকমের বন্ধু! এরপর কলেজে ভর্তি হয়ে মামুন, বেলাল, বাবু, বাচ্চু, মোকাদ্দেস, সাদী, শংকর—এভাবে সমবয়সী সহপাঠী অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনা থেকেই হয়ে গেল। কিছু কিছু বন্ধুত্বের বেলায় আলাদা টান তৈরি হয়। সেও এক রহস্য। কলেজে আমি আমার মেয়ে সহপাঠীদের দিকে তাকাতে সাহস পেতাম না । কিন্তু তাঁরা খুব সুন্দর ছিল, রূপবতী ছিল। অত্যন্ত সভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিল তারা।
মেয়ে বন্ধুরা খুব মায়াবতী হয় । সুন্দর করে নিচু স্বরে কথা বলে। এটা আমি বহু পরে বুঝেছিলাম। আর্ট কলেজে যখন পড়ছি, থার্ড ইয়ারে। একবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। ওখানে আমার এক কলেজ সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হলো । ও-ই এগিয়ে এসে কথা বলল । একটা অপরূপ ভঙ্গীতে তাকিয়ে নিচু স্বরে আমার সঙ্গে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে এত সুন্দর করে হাসছিল। ওর প্রতিটি মুদ্রাভঙ্গিমাগুলো এত অপূর্ব? আমি অভিভূত হয়ে ভাবছিলাম, এই মেয়ে আমার সহপাঠী ছিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে! তখনও কি অমন করে মিষ্টি করে কথা বলত? হাসত? বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অন্য এক পরিশীলিত জীবন। মন, মনন, সাহস, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়। একটা ভদ্র, নম্র, পরিমিতি, পরিশীলিত জায়গা তৈরি করে দেয়। তবে, সবার বেলায় তা হয় না। যার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন নেই, হলের আবাসিক জীবন নেই—সে সত্যি অভাগা!
যেভাবে কথা বলতে শুরু করেছি। তা শেষ হওয়ার নয়। এত কথা মনে মনে ভাবছি তা মূলত মনকে অনেক খারাপ অনুভব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যে। কাল বাচ্চুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললাম । বাচ্চু কোভিড-১৯ আাক্রান্ত। অথচ ওর ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই নেওয়া ছিল। ওর সঙ্গে কথা বলে মন আরও খারাপ হলো। আমি কোভিডের পেশেন্ট। আমি এর মর্মযন্ত্রণা হাড়ে-মজ্জায় বুঝি। বাচ্চু আমার বন্ধু। কলেজ সময়ের বন্ধু। ওকে আমরা সবাই আপন ভাবি, ভালোবাসি। দুর্দান্ত ফুটবল খেলত। কী যে সুদর্শন! ও রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে মেয়েরা ওকে দেখার জন্য বাড়ির ছাদে ছোটাছুটি লেগে যেত।
বাচ্চু একসময় ঢাকায় থাকত। পুরানা পল্টনে আমার ‘দৈনিক সংবাদ’ অফিসের পাশেই ছিল ওর অফিস। এমন অনেক দিন হয়েছে যে আমরা একই সঙ্গে বিকেলে অফিস শেষ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়াতাম ঢাকা শহরে । হ্যাং আউট করতাম। রমনা পার্ক, শাহবাগ, চারুকলা, শিল্পকলা, সাইন্সল্যাব হয়ে রাত ১০-১১টায় যে যার বাড়ি ফিরতাম।
আমি জাপান সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে প্রথম যাকে খবরটা জানিয়েছিলাম, সে হলো বাচ্চু। বাচ্চু সেই সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির ডিরেক্টরের রুমে ছিল। বাচ্চু খুব খুশি হয়েছিল।
যেদিন ফ্লাই করব। আমাকে এয়ারপোর্ট সি অফ করেছিল অ্যাঞ্জেলা ও বাচ্চু। খুব মনে পড়ে, বাচ্চু আমার জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে গিয়েছিল এয়ারপোর্টে । সে দৃশ্য খুব ভাসে । আমি যখনই কুষ্টিয়া যাব, বাচ্চু আমাকে আলাদা করে সময় দেবেই । সারাক্ষণ নজরে রাখবে । আগলে রাখবে । আমাকে রিসিভ করতে যাবে । আবার বিদায় দিতেও আসবে । বাচ্চু তুই তাড়াতাড়ি সেরে উঠবি ইনশাল্লাহ। বেলাল, ওয়াসে, টিপু, আরজু, মোকাদ্দেস, বুল্লাহ, ঠান্ডু সবাই তোকে ঘিরে আছে । তোর রোগমুক্তির অপেক্ষায় আছি।
আমি চোখ বন্ধ করে আমার নিম গাছটির কথা ভাবছি। ঘু ঘু ডাকের ঘুঘুরা এখনও কি আসে গাছটিতে? দুপুরে সেই নির্জনতায় কুয়াতলা কি আগের মতোই শীতল থাকে? আমি জানি কিছুই আর আগের মতো নেই। এসব শৈশব স্মৃতি এখন সুদৃশ্য রাংতা মোড়া যেন।
যে কুষ্টিয়াতে আমি জন্মেছিলাম, তা খুব ছিমছাম শুনসান ছিল। বলতে গেলে গ্রামের মতোই ছিল। আমাদের বাড়িতে কুয়োতলা ঘেঁষে একটি বড় নিমগাছ ছিল। সেখানে সারাদিন পাখিরা ডেকে যেত। নির্জন দুপুরে ঘু ঘু ডাকে ঘুঘু পাখিও ডাকত! একবার মিয়াভাই আমার জন্য নিমগাছে উঠে কয়েক থোকা নিমফল পেড়ে দিয়ে আমাকে ভালোবেসেছিল। সেই ভালোবাসাটার কথা মনে আছে। আমি চোখ বন্ধ করে মিয়াভাইয়ের আরও ভালোবাসার কথা মনে করতে চাই, মনে পড়ে না। তিনি আমার স্মৃতিতে খুব বেশি নেই।
বাড়ির সামনে দিয়ে লাল ইট-সুড়কির রাস্তাটা কসাইখানার দিকে চলে গেছে। ওখানেই ভাগাড়। ওখানেই কসাইখানা । ওখানে টিবি হাসপাতাল। ওদিকে যাওয়া বারণ ছিল। যেতাম না। বাড়ির সামনে ডজ গাড়ি যেত দুনিয়ার ধুলো উড়িয়ে। ট্রাককে আমরা ডজ গাড়ি বলতাম । ওগুলোর ইঞ্জিন বোধহয় ডজ কোম্পানির ছিল। এ কি মুক্তিযুদ্ধের আগের কথা, না-কি পরের—তা মনে করতে পারি না। একদম ছোটবেলাকার কথা এসব। ৫০ বছর আগের কথা।
তখনকার বন্ধুবান্ধবদের কথাও মনে আসে না। শুধু জেসমিনের কথা মনে আছে। পাশের বাড়ির তোফাজ্জল ভাইয়ের বড় মেয়ে জেসমিন। আমরা সমবয়সী। আমরা একসঙ্গে খেলতাম। জেসমিনের সঙ্গে ডজ গাড়ির পেছনের রড ধরে ঝুলতে ঝুলতে অনেকটা যেতাম। গায়ে রাস্তার সব ধুলো-কালি মেখে ভূত হয়ে বাড়িতে ফিরতাম। আর বাড়ি ফিরলেই প্রথমে মার দিত আম্মা । তারপর কুয়াতলায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে সাবান মেখে ঠান্ডা পানির চান। কুয়াতলাটি ভীষণ নিরিবিলি আর নির্জন ছিল । আমার ওই বয়সী আরও বন্ধু ও খেলার সাথি ছিল, এখন মনে করতে পারি না ।
যখন ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ি, তখন আমার বন্ধু হলো কামরুল, আনিস। স্কুলে ভর্তি হয়ে পেয়েছিলাম মাসুম রেজা, কর্নেল আর ফেরদৌসকে। ফেরদৌসকে ক্লাস ফাইভের পর আর পাইনি। ওর আব্বার বদলির চাকরি ছিল। তখন কুষ্টিয়াতে গাড়ি ছিল না তত। পুরো শহরে প্রাইভেট গাড়ি তিন-চারটি ছিল। রিকশা ছিল, ওটাই একমাত্র বাহন । আম্মা কোথাও বেড়াতে গেলে রিকশায় যেতেন । রিকশা শাড়ি দিয়ে পেঁচানো হতো। আমরা বড় বাড়ি (লাল মোহাম্মদ নানার বাড়ি) যেতাম । ওটাই কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় বাড়ি ছিল তখন। আম্মার চাচাদের বাড়ি। ওদের বড় তেলকল ছিল। আম্মার চাচাদের ব্যবসা ছিল মূলত নারায়ণগঞ্জে । তাঁরা খুব বিত্তবান ছিলেন । আমাদের বাড়ি থেকে বড় বাড়ি পাঁচ-সাত মিনিটের পথ । সোনালী ব্যাংক হাতের ডানে রেখে বাবুর আলি রেলগেট পার হয়ে আরও উত্তরে যেতে হতো। আর রিকশায় চড়ে আম্মার সঙ্গে যেতাম কখনো উদিবাড়ি, কখনো জগতি, কখনো বা মঙ্গলবাড়ি বাজার পার হয়ে বারখাদা। উদিবাড়ি-জগতি বারখাদা দূরের রাস্তা ছিল। আম্মা সঙ্গে করে নাড়ু, মোয়া, তিলেরখাজা নিতেন। লম্বা পথে আমি খেতে খেতে যেতাম। উদিবাড়ির পীর সাহেব ছিলেন আম্মার দাদা । সেখানে বিরাট ওরস ও মিলাদ মাহফিল হতো। শত শত মুরিদ আসতেন দেশের নানান জায়গা থেকে। উদিবাড়িতে আম্মার অনেক নিকটজন থাকতেন। উদিবাড়ি জায়গাটা আমার ভালো লাগত।
বন্ধুত্ব ব্যাপারটা অনুভব করলাম ক্লাস নাইনে উঠে। সরওয়ার মুর্শেদ রতন আমার সেই রকমের বন্ধু! এরপর কলেজে ভর্তি হয়ে মামুন, বেলাল, বাবু, বাচ্চু, মোকাদ্দেস, সাদী, শংকর—এভাবে সমবয়সী সহপাঠী অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনা থেকেই হয়ে গেল। কিছু কিছু বন্ধুত্বের বেলায় আলাদা টান তৈরি হয়। সেও এক রহস্য। কলেজে আমি আমার মেয়ে সহপাঠীদের দিকে তাকাতে সাহস পেতাম না । কিন্তু তাঁরা খুব সুন্দর ছিল, রূপবতী ছিল। অত্যন্ত সভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিল তারা।
মেয়ে বন্ধুরা খুব মায়াবতী হয় । সুন্দর করে নিচু স্বরে কথা বলে। এটা আমি বহু পরে বুঝেছিলাম। আর্ট কলেজে যখন পড়ছি, থার্ড ইয়ারে। একবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। ওখানে আমার এক কলেজ সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হলো । ও-ই এগিয়ে এসে কথা বলল । একটা অপরূপ ভঙ্গীতে তাকিয়ে নিচু স্বরে আমার সঙ্গে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে এত সুন্দর করে হাসছিল। ওর প্রতিটি মুদ্রাভঙ্গিমাগুলো এত অপূর্ব? আমি অভিভূত হয়ে ভাবছিলাম, এই মেয়ে আমার সহপাঠী ছিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে! তখনও কি অমন করে মিষ্টি করে কথা বলত? হাসত? বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অন্য এক পরিশীলিত জীবন। মন, মনন, সাহস, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়। একটা ভদ্র, নম্র, পরিমিতি, পরিশীলিত জায়গা তৈরি করে দেয়। তবে, সবার বেলায় তা হয় না। যার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন নেই, হলের আবাসিক জীবন নেই—সে সত্যি অভাগা!
যেভাবে কথা বলতে শুরু করেছি। তা শেষ হওয়ার নয়। এত কথা মনে মনে ভাবছি তা মূলত মনকে অনেক খারাপ অনুভব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যে। কাল বাচ্চুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললাম । বাচ্চু কোভিড-১৯ আাক্রান্ত। অথচ ওর ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই নেওয়া ছিল। ওর সঙ্গে কথা বলে মন আরও খারাপ হলো। আমি কোভিডের পেশেন্ট। আমি এর মর্মযন্ত্রণা হাড়ে-মজ্জায় বুঝি। বাচ্চু আমার বন্ধু। কলেজ সময়ের বন্ধু। ওকে আমরা সবাই আপন ভাবি, ভালোবাসি। দুর্দান্ত ফুটবল খেলত। কী যে সুদর্শন! ও রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে মেয়েরা ওকে দেখার জন্য বাড়ির ছাদে ছোটাছুটি লেগে যেত।
বাচ্চু একসময় ঢাকায় থাকত। পুরানা পল্টনে আমার ‘দৈনিক সংবাদ’ অফিসের পাশেই ছিল ওর অফিস। এমন অনেক দিন হয়েছে যে আমরা একই সঙ্গে বিকেলে অফিস শেষ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়াতাম ঢাকা শহরে । হ্যাং আউট করতাম। রমনা পার্ক, শাহবাগ, চারুকলা, শিল্পকলা, সাইন্সল্যাব হয়ে রাত ১০-১১টায় যে যার বাড়ি ফিরতাম।
আমি জাপান সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে প্রথম যাকে খবরটা জানিয়েছিলাম, সে হলো বাচ্চু। বাচ্চু সেই সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির ডিরেক্টরের রুমে ছিল। বাচ্চু খুব খুশি হয়েছিল।
যেদিন ফ্লাই করব। আমাকে এয়ারপোর্ট সি অফ করেছিল অ্যাঞ্জেলা ও বাচ্চু। খুব মনে পড়ে, বাচ্চু আমার জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে গিয়েছিল এয়ারপোর্টে । সে দৃশ্য খুব ভাসে । আমি যখনই কুষ্টিয়া যাব, বাচ্চু আমাকে আলাদা করে সময় দেবেই । সারাক্ষণ নজরে রাখবে । আগলে রাখবে । আমাকে রিসিভ করতে যাবে । আবার বিদায় দিতেও আসবে । বাচ্চু তুই তাড়াতাড়ি সেরে উঠবি ইনশাল্লাহ। বেলাল, ওয়াসে, টিপু, আরজু, মোকাদ্দেস, বুল্লাহ, ঠান্ডু সবাই তোকে ঘিরে আছে । তোর রোগমুক্তির অপেক্ষায় আছি।
আমি চোখ বন্ধ করে আমার নিম গাছটির কথা ভাবছি। ঘু ঘু ডাকের ঘুঘুরা এখনও কি আসে গাছটিতে? দুপুরে সেই নির্জনতায় কুয়াতলা কি আগের মতোই শীতল থাকে? আমি জানি কিছুই আর আগের মতো নেই। এসব শৈশব স্মৃতি এখন সুদৃশ্য রাংতা মোড়া যেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
৫ মিনিট আগেএখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১ দিন আগে