জাহীদ রেজা নূর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ বছর! কী তুমুল আনন্দেই না উদ্যাপন করা যেত দিনটি। কিন্তু বৃহস্পতিবার শতবর্ষপূর্তি দিবসে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, তখন সেখানে নেই প্রাণস্পন্দন। করোনা কেড়ে নিয়েছে আনন্দ–উদ্যাপনের মন।
টিএসসির কাছে দেখি একটি চায়ের দোকানও খোলা নেই। নেই কোনো ভিড়। বহুদিন হলো, ছাত্র–শিক্ষকের স্পর্শ থেকে দূরে টিএসসি। স্বপন মামার চায়ের দোকানটার দিকে তাকালাম শুধু। পরিত্যক্ত ছাউনি যেন তা। রাজু ভাস্কর্য দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গীহীন। কলা ভবনে ঢোকার রাস্তা বন্ধ। `ডাস’ও নিজেকে আড়াল করেছে তালা–চাবিতে। `সড়ক দুর্ঘটনা স্থাপনা’র সাদা সাদা চেয়ারগুলো আর দুমড়ে–মুচড়ে থাকা মাইক্রোবাসটি বৃষ্টিতে ভিজছে।
শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর পার হওয়ার পর হাতের ডানে কার্জন হল। পুরো দেয়ালটাই ঢেকে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে বলে। পলিথিনের বন্দিশালা থেকে কেবল মুক্ত হয়ে আছে একটি বদ্ধ দরজা, আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে লাল কার্জন হল ভবনটি।
কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর সেখানে একজন ছাত্রকে আসতে দেখা গেল। সাইকেলে করে এসেছেন। শিক দেওয়া দরজার ভেতরে হাত গলিয়ে কার্জন হলের ছবি তুললেন তিনি। একটু পর এলেন একজন নারী। অ্যাপ্রোন গায়ে। তিনিও ছবি তুলে নিলেন কার্জন হলের। হয়তো কোনো একদিন এই ভবনের করিডরে ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি!
বৃষ্টির জল জমে থাকা রাস্তায় হাঁটতে অসুবিধা হলে আমরা ইতিহাসের রাস্তা দিয়ে এগোই। আমাদের মাথায় স্থির হয় ৮৪৭ সংখ্যাটি। ১৯২১ সালের ১ জুলাই বিজ্ঞান, কলা ও আইন অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগ নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল। ৮৪৭ সংখ্যাটি হলো শিক্ষার্থী সংখ্যা।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ বাতিল ইত্যাদির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্পর্ক নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। নিছক পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।
আমরা শুধু দেখতে পাচ্ছি, পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া মানুষ পোক্ত স্কুল–কলেজের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগেই পেয়ে গেল একটা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই পথ ধরেই পরে গড়ে উঠতে লাগল কলেজ।
ইতিহাসের রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে তিনটি বড় ঘটনার সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে যোগাযোগ। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান আর এরশাদবিরোধী আন্দোলন।
ভাষা নিয়ে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, তার রূপকার ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে যান। ১১ দফার মাধ্যমে সেই আন্দোলন নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ছাত্রসমাজই। বঙ্গবন্ধু উপাধিটি দেওয়া হয় ছাত্রদের তরফ থেকেই। আর এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় ভূমিকা।
একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তিমান শিক্ষকদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর বাহিনী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র।
কিন্তু এ কথা তো অনেকেই মেনে নিয়েছেন যে অবনতি ঘটেছে আমাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, পড়াশোনার মান নিয়ে কথা হয়। তাতে হতাশাও থাকে। কিন্তু এর মধ্য থেকেই কখনো কখনো পাওয়া যায় আলোর সন্ধান। নাটক, গান, আন্দোলন, আবৃত্তি নিয়ে এখনো ছন্দায়িত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখাকে এখনো অর্জন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
নাটমণ্ডলের গেট দিয়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু সে গেটও বন্ধ। শুধু মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হচ্ছে। সারি সারি বলিষ্ঠ নাম মনে পড়ছে, যাঁদের পাঠদানের সময় ক্লাসরুম উপচে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী আর শিক্ষক মিলেমিশে যেন তৈরি করেছেন এক অনির্বচনীয় নান্দনিক যুগলবন্দী। এই সুর যেন সমাপ্তিহীনভাবে বেজেই চলে মনজুড়ে…
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ বছর! কী তুমুল আনন্দেই না উদ্যাপন করা যেত দিনটি। কিন্তু বৃহস্পতিবার শতবর্ষপূর্তি দিবসে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, তখন সেখানে নেই প্রাণস্পন্দন। করোনা কেড়ে নিয়েছে আনন্দ–উদ্যাপনের মন।
টিএসসির কাছে দেখি একটি চায়ের দোকানও খোলা নেই। নেই কোনো ভিড়। বহুদিন হলো, ছাত্র–শিক্ষকের স্পর্শ থেকে দূরে টিএসসি। স্বপন মামার চায়ের দোকানটার দিকে তাকালাম শুধু। পরিত্যক্ত ছাউনি যেন তা। রাজু ভাস্কর্য দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গীহীন। কলা ভবনে ঢোকার রাস্তা বন্ধ। `ডাস’ও নিজেকে আড়াল করেছে তালা–চাবিতে। `সড়ক দুর্ঘটনা স্থাপনা’র সাদা সাদা চেয়ারগুলো আর দুমড়ে–মুচড়ে থাকা মাইক্রোবাসটি বৃষ্টিতে ভিজছে।
শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর পার হওয়ার পর হাতের ডানে কার্জন হল। পুরো দেয়ালটাই ঢেকে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে বলে। পলিথিনের বন্দিশালা থেকে কেবল মুক্ত হয়ে আছে একটি বদ্ধ দরজা, আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে লাল কার্জন হল ভবনটি।
কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর সেখানে একজন ছাত্রকে আসতে দেখা গেল। সাইকেলে করে এসেছেন। শিক দেওয়া দরজার ভেতরে হাত গলিয়ে কার্জন হলের ছবি তুললেন তিনি। একটু পর এলেন একজন নারী। অ্যাপ্রোন গায়ে। তিনিও ছবি তুলে নিলেন কার্জন হলের। হয়তো কোনো একদিন এই ভবনের করিডরে ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি!
বৃষ্টির জল জমে থাকা রাস্তায় হাঁটতে অসুবিধা হলে আমরা ইতিহাসের রাস্তা দিয়ে এগোই। আমাদের মাথায় স্থির হয় ৮৪৭ সংখ্যাটি। ১৯২১ সালের ১ জুলাই বিজ্ঞান, কলা ও আইন অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগ নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল। ৮৪৭ সংখ্যাটি হলো শিক্ষার্থী সংখ্যা।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ বাতিল ইত্যাদির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্পর্ক নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। নিছক পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।
আমরা শুধু দেখতে পাচ্ছি, পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া মানুষ পোক্ত স্কুল–কলেজের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগেই পেয়ে গেল একটা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই পথ ধরেই পরে গড়ে উঠতে লাগল কলেজ।
ইতিহাসের রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে তিনটি বড় ঘটনার সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে যোগাযোগ। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান আর এরশাদবিরোধী আন্দোলন।
ভাষা নিয়ে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, তার রূপকার ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে যান। ১১ দফার মাধ্যমে সেই আন্দোলন নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ছাত্রসমাজই। বঙ্গবন্ধু উপাধিটি দেওয়া হয় ছাত্রদের তরফ থেকেই। আর এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় ভূমিকা।
একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তিমান শিক্ষকদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর বাহিনী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র।
কিন্তু এ কথা তো অনেকেই মেনে নিয়েছেন যে অবনতি ঘটেছে আমাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, পড়াশোনার মান নিয়ে কথা হয়। তাতে হতাশাও থাকে। কিন্তু এর মধ্য থেকেই কখনো কখনো পাওয়া যায় আলোর সন্ধান। নাটক, গান, আন্দোলন, আবৃত্তি নিয়ে এখনো ছন্দায়িত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখাকে এখনো অর্জন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
নাটমণ্ডলের গেট দিয়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু সে গেটও বন্ধ। শুধু মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হচ্ছে। সারি সারি বলিষ্ঠ নাম মনে পড়ছে, যাঁদের পাঠদানের সময় ক্লাসরুম উপচে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী আর শিক্ষক মিলেমিশে যেন তৈরি করেছেন এক অনির্বচনীয় নান্দনিক যুগলবন্দী। এই সুর যেন সমাপ্তিহীনভাবে বেজেই চলে মনজুড়ে…
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে