সেলিম জাহান
আগেও ব্যাপক দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছিল, কিন্তু এত তীব্রভাবে দুর্নীতির নগ্নতা হয়তো দৃশ্যমান ছিল না। সাহসী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সেই সৎ কাজটি করেছেন। তাঁর নানান রকম হেনস্তা এবং নানাজনের বিভিন্ন সাফাইমূলক বক্তব্য প্রমাণ করে—তিনি যা বলেছেন, তা সত্যি। তাঁর প্রতি নানান নির্যাতনমূলক ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাই।
দুর্নীতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি মাত্র সমস্যা। আসলে এ খাতের সংকটের ব্যাপ্তি ও গভীরতা আরও বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস অতিমারি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুরতা ও নাজুকতা আরও তীব্রভাবে তুলে ধরেছে। এ ভঙ্গুরতা ও নাজুকতার তিনটি মাত্রিকতা খুব সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান—কাঠামোগত নাজুকতা, আর্থিক নাজুকতা এবং মানসিক সংকট। এসব সংকট, ভঙ্গুরতা, নাজুকতার কিছু কিছু উপাদান আগে থেকেই ছিল, কিন্তু কিছু কিছু নতুনভাবে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের কাঠামোগত ভঙ্গুরতা দিয়েই শুরু করা যাক। এ ভঙ্গুরতার নানান মাত্রিকতা আছে।
প্রথমত, বাংলাদেশে ত্রিধারা স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যমান—সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ। সেবার এই অসমতা বিত্ত ও ক্ষমতাবান্ধব একটি ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যে সরকারি ব্যবস্থায় যাচ্ছেন, তার সার্বিকভাবে ভেঙে পড়া অবস্থার কথা সবারই জানা।
দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাত মানেই উন্নত চিকিৎসা, তা নয়; এর মানে উচ্চতর মুনাফা। বাংলাদেশে সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা সর্বজনবিদিত।
তৃতীয়ত, বেসরকারি খাতের বর্ধিষ্ণু অবস্থার কারণে সরকারি স্ব্যস্থ্যসেবা কাঠামো দিনের পর দিন উপেক্ষিত হয়েছে। সরকারি চিকিৎসকেরা প্রচুর সময় কাটাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে, নতুন চিকিৎসকেরা গ্রামের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে চান না। বিষয়গুলো জটিল নিঃসন্দেহে। তবে এর সমাধান প্রয়োজন।
চতুর্থত, স্বাস্থ্য খাতে সুন্দর সুন্দর ভৌত অবকাঠামোর যত বিস্তার ঘটেছে, মানবসম্পদের তত উন্নতি হয়নি। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থা ছাড়া জেলায় জেলায় চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। ফলে আমরা সুদক্ষ চিকিৎসক গোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারিনি। উপেক্ষা করেছি নার্সদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। বহু সুচিকিৎসক উন্নত জীবনের আশায় এবং দেশের কাঠামোর ওপরে বিরক্ত হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। এতে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোগত ভঙ্গুরতা আরও বেড়েছে।
পঞ্চমত, অন্য পেশাজীবী খাতের মতো চিকিৎসা খাতেরও চরম রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে আমাদের দেশে। ফলে পেশাজীবী দক্ষতা, মেধাভিত্তিক পদোন্নতি বিঘ্নিত হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দ্বিতীয় সংকট হচ্ছে আর্থিক ভঙ্গুরতা। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হচ্ছে জাতীয় আয়ের ০.৯ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৫ শতাংশ। উন্নত বিশ্বের কথা বাদই দিলাম, যদি কাছাকাছি দেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখা যায় ভিয়েতনামে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে জাতীয় আয়ের প্রায় ৮ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৭ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা এ খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে ২০১৮ সালে প্রতি ২ হাজার মানুষের জন্য ১ জন চিকিৎসক ছিলেন, প্রতি ২ হাজার ৫০০ জনের জন্য একজন নার্স এবং প্রতি ১ হাজার ২৫০ জনের জন্যে একটি হাসপাতাল শয্যা ছিল। এই কাঠামো দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের প্রথাগত প্রয়োজনই মেটানো যায় না, একটি মহামারির সংকট মোকাবিলা তো পরের কথা।
শুনতে পাই, ২০৩২ সাল নাগাদ আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের ১৫ শতাংশ হবে। ২০৩২ সাল তো বহু দূর। করোনা আমাদের সতর্ক করেছে, সময় আমাদের পক্ষে নয়। ২০২১ সালের আসন্ন বাজেট স্বাস্থ্য খাতের এই অপ্রতুলতা মেটানোর একটি তাৎক্ষণিক সুযোগ। মধ্য মেয়াদে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও এটা সুনিশ্চিত করা যায়। বিশেষ বিশেষ মর্যাদা প্রকল্প, অনুৎপাদনমূলক খাতের ব্যয় হ্রাস, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাস করার মাধ্যমে বাড়তি অর্থায়ন সম্ভব।
মানসিক ভঙ্গুরতা বিষয়ে আসা যাক। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, কর্ম-প্রকৃতির কারণেই চিকিৎসক-নার্সদের একটি বিশেষ সংবেদনশীলতা প্রত্যাশিত। কারণ, মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে তাঁদের কর্মকাণ্ড। তা ছাড়া ‘হিপোক্রেটিক’ প্রতিজ্ঞা তো তাঁদের রয়েছেই। মানুষকে সেবাদান তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য বলে মনে করেন। ছোটবেলায় সেটাই আমরা দেখেছি আমাদের সমাজে।
পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা কর্মকাণ্ডে বাণিজ্যিকীকরণ, মুনাফা সর্বোচ্চকরণ, ত্রিধারা স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি কারণে সেই ঐতিহ্যগত সংবেদনশীলতা ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করে। ফলে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে একটি দূরত্বের সৃষ্টি হয়, সম্পর্কটি বাণিজ্যিক হতে শুরু করে এবং রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের অবহেলা এবং উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এটা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলা প্রয়োজন, এ প্রবণতার বিপরীতে বহু ব্যতিক্রমও রয়েছে, যাঁদের প্রতি আমরা নমিত হই। একই কারণে রোগী বা তাঁদের আত্মীয়রাও সেবা প্রতিষ্ঠানের ও চিকিৎসকদের প্রতি অসহনশীল ও অন্যায্য ব্যবহার করেছেন। চিকিৎসকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা সত্ত্বেও রোগীর মৃত্যু হয়েছে; তবু তাঁদেরই দায়ী করা হয়েছে।
এই মানসিক নাজুকতার চরম প্রকাশ ঘটেছে করোনাকালে উভয় পক্ষেই। এবং এর মূলে রয়েছে করোনার ব্যাপারে অবৈজ্ঞানিক আতঙ্ক, অগ্রহণযোগ্য আত্মকেন্দ্রিকতা এবং অমানবিক মানসিকতা। এ কারণেই অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী যখন হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখন করোনা সন্দেহে তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। অন্যদিকে চিকিৎসক বা নার্স বলে এমন বহু পেশাজীবীই ‘সামাজিক অস্পৃশ্য’তে পরিণত হয়েছেন।
তাঁদের বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে, কোনো আক্রান্ত স্থানে সেবা দিতে গেলে তাঁদের ধাওয়া করা হয়েছে। এ মানসিকতার তুলনা নেই।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত ও ভঙ্গুরতার একটি বড় মাত্রিকতা হচ্ছে এ খাতের দীর্ঘদিনের দুর্নীতি। সে দুর্নীতির আংশিক চিত্র প্রতিবিম্বিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে নির্ভীক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদনে। বিচারের মানদণ্ডে তাঁকে বসানো উচিত নয়, বিচারের মানদণ্ডে বসাতে হবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে। সে কাজটি করা একান্ত প্রয়োজন এবং সেটা করার এখনই সময়। এই দায়ভাগে আমরা সবাই সমান অংশীদার। মনে রাখতে হবে, অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না।
আগেও ব্যাপক দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছিল, কিন্তু এত তীব্রভাবে দুর্নীতির নগ্নতা হয়তো দৃশ্যমান ছিল না। সাহসী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সেই সৎ কাজটি করেছেন। তাঁর নানান রকম হেনস্তা এবং নানাজনের বিভিন্ন সাফাইমূলক বক্তব্য প্রমাণ করে—তিনি যা বলেছেন, তা সত্যি। তাঁর প্রতি নানান নির্যাতনমূলক ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাই।
দুর্নীতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি মাত্র সমস্যা। আসলে এ খাতের সংকটের ব্যাপ্তি ও গভীরতা আরও বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস অতিমারি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুরতা ও নাজুকতা আরও তীব্রভাবে তুলে ধরেছে। এ ভঙ্গুরতা ও নাজুকতার তিনটি মাত্রিকতা খুব সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান—কাঠামোগত নাজুকতা, আর্থিক নাজুকতা এবং মানসিক সংকট। এসব সংকট, ভঙ্গুরতা, নাজুকতার কিছু কিছু উপাদান আগে থেকেই ছিল, কিন্তু কিছু কিছু নতুনভাবে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের কাঠামোগত ভঙ্গুরতা দিয়েই শুরু করা যাক। এ ভঙ্গুরতার নানান মাত্রিকতা আছে।
প্রথমত, বাংলাদেশে ত্রিধারা স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যমান—সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ। সেবার এই অসমতা বিত্ত ও ক্ষমতাবান্ধব একটি ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যে সরকারি ব্যবস্থায় যাচ্ছেন, তার সার্বিকভাবে ভেঙে পড়া অবস্থার কথা সবারই জানা।
দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাত মানেই উন্নত চিকিৎসা, তা নয়; এর মানে উচ্চতর মুনাফা। বাংলাদেশে সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা সর্বজনবিদিত।
তৃতীয়ত, বেসরকারি খাতের বর্ধিষ্ণু অবস্থার কারণে সরকারি স্ব্যস্থ্যসেবা কাঠামো দিনের পর দিন উপেক্ষিত হয়েছে। সরকারি চিকিৎসকেরা প্রচুর সময় কাটাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে, নতুন চিকিৎসকেরা গ্রামের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে চান না। বিষয়গুলো জটিল নিঃসন্দেহে। তবে এর সমাধান প্রয়োজন।
চতুর্থত, স্বাস্থ্য খাতে সুন্দর সুন্দর ভৌত অবকাঠামোর যত বিস্তার ঘটেছে, মানবসম্পদের তত উন্নতি হয়নি। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থা ছাড়া জেলায় জেলায় চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। ফলে আমরা সুদক্ষ চিকিৎসক গোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারিনি। উপেক্ষা করেছি নার্সদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। বহু সুচিকিৎসক উন্নত জীবনের আশায় এবং দেশের কাঠামোর ওপরে বিরক্ত হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। এতে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোগত ভঙ্গুরতা আরও বেড়েছে।
পঞ্চমত, অন্য পেশাজীবী খাতের মতো চিকিৎসা খাতেরও চরম রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে আমাদের দেশে। ফলে পেশাজীবী দক্ষতা, মেধাভিত্তিক পদোন্নতি বিঘ্নিত হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দ্বিতীয় সংকট হচ্ছে আর্থিক ভঙ্গুরতা। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হচ্ছে জাতীয় আয়ের ০.৯ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৫ শতাংশ। উন্নত বিশ্বের কথা বাদই দিলাম, যদি কাছাকাছি দেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখা যায় ভিয়েতনামে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে জাতীয় আয়ের প্রায় ৮ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৭ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা এ খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে ২০১৮ সালে প্রতি ২ হাজার মানুষের জন্য ১ জন চিকিৎসক ছিলেন, প্রতি ২ হাজার ৫০০ জনের জন্য একজন নার্স এবং প্রতি ১ হাজার ২৫০ জনের জন্যে একটি হাসপাতাল শয্যা ছিল। এই কাঠামো দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের প্রথাগত প্রয়োজনই মেটানো যায় না, একটি মহামারির সংকট মোকাবিলা তো পরের কথা।
শুনতে পাই, ২০৩২ সাল নাগাদ আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের ১৫ শতাংশ হবে। ২০৩২ সাল তো বহু দূর। করোনা আমাদের সতর্ক করেছে, সময় আমাদের পক্ষে নয়। ২০২১ সালের আসন্ন বাজেট স্বাস্থ্য খাতের এই অপ্রতুলতা মেটানোর একটি তাৎক্ষণিক সুযোগ। মধ্য মেয়াদে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও এটা সুনিশ্চিত করা যায়। বিশেষ বিশেষ মর্যাদা প্রকল্প, অনুৎপাদনমূলক খাতের ব্যয় হ্রাস, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাস করার মাধ্যমে বাড়তি অর্থায়ন সম্ভব।
মানসিক ভঙ্গুরতা বিষয়ে আসা যাক। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, কর্ম-প্রকৃতির কারণেই চিকিৎসক-নার্সদের একটি বিশেষ সংবেদনশীলতা প্রত্যাশিত। কারণ, মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে তাঁদের কর্মকাণ্ড। তা ছাড়া ‘হিপোক্রেটিক’ প্রতিজ্ঞা তো তাঁদের রয়েছেই। মানুষকে সেবাদান তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য বলে মনে করেন। ছোটবেলায় সেটাই আমরা দেখেছি আমাদের সমাজে।
পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা কর্মকাণ্ডে বাণিজ্যিকীকরণ, মুনাফা সর্বোচ্চকরণ, ত্রিধারা স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি কারণে সেই ঐতিহ্যগত সংবেদনশীলতা ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করে। ফলে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে একটি দূরত্বের সৃষ্টি হয়, সম্পর্কটি বাণিজ্যিক হতে শুরু করে এবং রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের অবহেলা এবং উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এটা অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলা প্রয়োজন, এ প্রবণতার বিপরীতে বহু ব্যতিক্রমও রয়েছে, যাঁদের প্রতি আমরা নমিত হই। একই কারণে রোগী বা তাঁদের আত্মীয়রাও সেবা প্রতিষ্ঠানের ও চিকিৎসকদের প্রতি অসহনশীল ও অন্যায্য ব্যবহার করেছেন। চিকিৎসকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা সত্ত্বেও রোগীর মৃত্যু হয়েছে; তবু তাঁদেরই দায়ী করা হয়েছে।
এই মানসিক নাজুকতার চরম প্রকাশ ঘটেছে করোনাকালে উভয় পক্ষেই। এবং এর মূলে রয়েছে করোনার ব্যাপারে অবৈজ্ঞানিক আতঙ্ক, অগ্রহণযোগ্য আত্মকেন্দ্রিকতা এবং অমানবিক মানসিকতা। এ কারণেই অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী যখন হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখন করোনা সন্দেহে তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। অন্যদিকে চিকিৎসক বা নার্স বলে এমন বহু পেশাজীবীই ‘সামাজিক অস্পৃশ্য’তে পরিণত হয়েছেন।
তাঁদের বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে, কোনো আক্রান্ত স্থানে সেবা দিতে গেলে তাঁদের ধাওয়া করা হয়েছে। এ মানসিকতার তুলনা নেই।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত ও ভঙ্গুরতার একটি বড় মাত্রিকতা হচ্ছে এ খাতের দীর্ঘদিনের দুর্নীতি। সে দুর্নীতির আংশিক চিত্র প্রতিবিম্বিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে নির্ভীক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদনে। বিচারের মানদণ্ডে তাঁকে বসানো উচিত নয়, বিচারের মানদণ্ডে বসাতে হবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে। সে কাজটি করা একান্ত প্রয়োজন এবং সেটা করার এখনই সময়। এই দায়ভাগে আমরা সবাই সমান অংশীদার। মনে রাখতে হবে, অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১ দিন আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে