বিজন সাহা
গত ৭ জুলাই ২০২১, এ বছরের মতো প্রথম সাইকেল বের করেছিলাম। সাইকেল অবশ্য রেডি করে রেখেছি অনেক আগেই। তবে, প্রতিদিন হাঁটার কোটা পূরণ করতে গিয়ে আজ না কাল করতে করতে এত দেরি।
সাইকেলের কথা মনে হলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। আমাদের বাড়িতে তখন তিনটে সাইকেল ছিল–হারকিউলিস, ফনিক্স আর একটা কি যেন। সেগুলো ছিল বাবা, কাকা আর জ্যাঠামশাইয়ের। বাবা আর কাকা বুধবার ঘিওর হাট, শনিবার ঝিটকা হাট আর রোববার জাবরা হাটে যেতেন সাইকেলে। জ্যাঠামশাই কখনোই কোথাও একটা যেতেন না, তাই সাইকেল তাঁর বেকার থাকত। সেদিক থেকে বলতে গেলে সাইকেলগুলো ছিল আমাদের দখলে। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা ছিল না। শুধু জ্যাঠামশাই বকাঝকা করতেন। ফলে আমাদের কাজ ছিল তাঁর অগোচরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া আর সেভাবেই তাঁর চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেটা জায়গামতো রাখা। তবে, আমি সাইকেল নিয়ে নিজে খুব দূরে একটা যেতাম না। এসএসসি পরীক্ষার সময় প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা দিতে সাইকেলে ঘিওর গেছি, দেবেন্দ্র কলেজে নির্বাচনোত্তর মারামারির পর কখনো কখনো ভেতর দিয়ে মানিকগঞ্জ গেছি। আর একবার সাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম আরিচা ছাত্র ইউনিয়নের কাজে। সন্ধ্যার পর ঢাকা-আরিচা সড়ক দিয়ে সাইকেল চালিয়ে একা একা বাড়ি ফেরা ছিল সত্যিকার অর্থেই এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
মস্কোয় আসার পর সাইকেলের তেমন একটা দরকার পড়েনি। তবে দুবনায় এসে দেখলাম এখানে প্রায় সবাই সাইকেল চালায়। ইতালিয়ান পদার্থবিদ ব্রুনো পন্টেকরভো, যিনি দুবনায় জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চে কাজ করতেন, দুবনায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে সাইকেল চালানোর রীতির প্রচলক বলে শুনি। আর সেটা অমর করে রাখতে দুবনায় একটা স্ট্যাচু তৈরি করা হয়েছে যেখানে ব্রুনো পন্টেকরভো আর ইলিয়া ফ্রাঙ্ক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। পন্টেকরভো দাঁড়িয়ে আছেন সাইকেল নিয়ে। তবে, আমি সাইকেল কিনি দুবনায় আসার বছর সাতেক পর, ২০০১ সালে। যেহেতু সে সময় বাচ্চারা ছোট ছিল, তাই সাইকেলে এক এক করে ওদের এখানে-সেখানে পৌঁছে দিতে সুবিধা হতো। তবে আমার প্রথম সাইকেলটি কয়েক দিনের মধ্যেই চুরি হয়ে যায়। এর ফলে অবশ্য আমার স্ত্রী গুলিয়া নিজের সাইকেলটা হারায়। ওটা আমার দখলে চলে আসে।
আমি যে এ নিয়ে খুব একটা মনঃকষ্টে ভুগেছি, তা নয়। কেউ যদি এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করত বলতাম: ‘এটা তো চোরের সমস্যা। সাইকেল চুরির ব্যাপারে পুলিশের কাছে জানিয়েছি। ওরা ওই ব্র্যান্ডের কিছু সাইকেল দেখেছেও। এর অর্থ, সেটা আর ব্যবহার করতে পারবে না। এখন তাকে ভাবতে হবে, কীভাবে সাইকেলটা হজম করা যায়।’
ওই সময় আমি সাইকেল চালাতাম বারো মাস। শীত নেই, গ্রীষ্ম নেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি। একবার মনে আছে, বাইরে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বেশ বাতাস। আমি অর্ধেক পথ যাওয়ার পর সাইকেল আর এগোচ্ছে না। টায়ার্ড আর কাকে বলে। কিন্তু কী করা। সাইকেল তো ফেলে রেখে যেতে পারি না। এরপর থেকে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ এর নিচে নামলে সাইকেল বাসায় রেখে যেতাম। শীতের সময় তখন খুব বেশি কেউ সাইকেল চালাত না। অনেকেই জিজ্ঞেস করত, যদি পড়ে যাই। বলতাম:
দ্যাখ, আমার পা মাত্র দুটো, আর সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে দুটো চাকার সঙ্গে আরও একটা পা যোগ হবে, মানে ত্রিমুখী সাপোর্ট আমি পাচ্ছি।
তবে সবচেয়ে মজা পেতাম বুড়িদের সঙ্গে দেখা হলে। বিশেষ করে শীতে সাইকেলের পেছনে যদি বাচ্চাদের কেউ বসে থাকত বা ওদের স্লেজ আমার সাইকেলের সঙ্গে বাঁধা থাকত, আমকে দেখেই বলে উঠত: হায় ঈশ্বর! হায় ঈশ্বর!
আমি তখন বাচ্চাদের বলতাম: দ্যাখ, এই লোকেরা জীবনেও ভগবানের নাম নেয় না। আজ আমার কল্যাণে তারা ঈশ্বরকে ডাকছে। ওদের ধর্মের পথে আনার জন্য আমার জমাখরচের খাতায় নিশ্চয়ই কিছু পুণ্য জমা পড়বে।
তবে, সাইকেল অনেক সময়ই রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সেটা শূন্যের দশকের প্রথম দিকে। তখনো নব্বইয়ের রেশ দিকে দিকে। স্কিনহেডদের দৌরাত্ম্য। কখনো কখনো এই কালো চামড়ার মানুষটাকে দেখে ওরা তাড়া করার চেষ্টা করেছে আর আমিও সাইকেল চালিয়ে চলে গেছি ওঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে বর্তমানে সেসব ঝামেলা নেই বললেই চলে। এখন রাতবিরাতে নিশ্চিন্ত মনেই ঘুরে বেড়াই। কিন্তু দুবনার মতো ছোট শহরে সাইকেলের গুরুত্ব অপরিসীম। সবকিছু নিমেষে হাতের মুঠোয় চলে আসে।
আবার সমস্যাও আছে। আমার মতো লোকজন, যাঁরা একবার সাইকেলে উঠলে পাশের বিল্ডিংয়ে পর্যন্ত সাইকেল ছাড়া যেতে পারেন না, এটা তাঁদের একেবারেই হাঁটতে দেয় না। ভাবছি, কীভাবে সাইকেলও চালানো যায় আবার হাঁটাটাও ধরে রাখা যায়।
গত ৭ জুলাই ২০২১, এ বছরের মতো প্রথম সাইকেল বের করেছিলাম। সাইকেল অবশ্য রেডি করে রেখেছি অনেক আগেই। তবে, প্রতিদিন হাঁটার কোটা পূরণ করতে গিয়ে আজ না কাল করতে করতে এত দেরি।
সাইকেলের কথা মনে হলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। আমাদের বাড়িতে তখন তিনটে সাইকেল ছিল–হারকিউলিস, ফনিক্স আর একটা কি যেন। সেগুলো ছিল বাবা, কাকা আর জ্যাঠামশাইয়ের। বাবা আর কাকা বুধবার ঘিওর হাট, শনিবার ঝিটকা হাট আর রোববার জাবরা হাটে যেতেন সাইকেলে। জ্যাঠামশাই কখনোই কোথাও একটা যেতেন না, তাই সাইকেল তাঁর বেকার থাকত। সেদিক থেকে বলতে গেলে সাইকেলগুলো ছিল আমাদের দখলে। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা ছিল না। শুধু জ্যাঠামশাই বকাঝকা করতেন। ফলে আমাদের কাজ ছিল তাঁর অগোচরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া আর সেভাবেই তাঁর চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেটা জায়গামতো রাখা। তবে, আমি সাইকেল নিয়ে নিজে খুব দূরে একটা যেতাম না। এসএসসি পরীক্ষার সময় প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা দিতে সাইকেলে ঘিওর গেছি, দেবেন্দ্র কলেজে নির্বাচনোত্তর মারামারির পর কখনো কখনো ভেতর দিয়ে মানিকগঞ্জ গেছি। আর একবার সাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম আরিচা ছাত্র ইউনিয়নের কাজে। সন্ধ্যার পর ঢাকা-আরিচা সড়ক দিয়ে সাইকেল চালিয়ে একা একা বাড়ি ফেরা ছিল সত্যিকার অর্থেই এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
মস্কোয় আসার পর সাইকেলের তেমন একটা দরকার পড়েনি। তবে দুবনায় এসে দেখলাম এখানে প্রায় সবাই সাইকেল চালায়। ইতালিয়ান পদার্থবিদ ব্রুনো পন্টেকরভো, যিনি দুবনায় জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চে কাজ করতেন, দুবনায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে সাইকেল চালানোর রীতির প্রচলক বলে শুনি। আর সেটা অমর করে রাখতে দুবনায় একটা স্ট্যাচু তৈরি করা হয়েছে যেখানে ব্রুনো পন্টেকরভো আর ইলিয়া ফ্রাঙ্ক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। পন্টেকরভো দাঁড়িয়ে আছেন সাইকেল নিয়ে। তবে, আমি সাইকেল কিনি দুবনায় আসার বছর সাতেক পর, ২০০১ সালে। যেহেতু সে সময় বাচ্চারা ছোট ছিল, তাই সাইকেলে এক এক করে ওদের এখানে-সেখানে পৌঁছে দিতে সুবিধা হতো। তবে আমার প্রথম সাইকেলটি কয়েক দিনের মধ্যেই চুরি হয়ে যায়। এর ফলে অবশ্য আমার স্ত্রী গুলিয়া নিজের সাইকেলটা হারায়। ওটা আমার দখলে চলে আসে।
আমি যে এ নিয়ে খুব একটা মনঃকষ্টে ভুগেছি, তা নয়। কেউ যদি এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করত বলতাম: ‘এটা তো চোরের সমস্যা। সাইকেল চুরির ব্যাপারে পুলিশের কাছে জানিয়েছি। ওরা ওই ব্র্যান্ডের কিছু সাইকেল দেখেছেও। এর অর্থ, সেটা আর ব্যবহার করতে পারবে না। এখন তাকে ভাবতে হবে, কীভাবে সাইকেলটা হজম করা যায়।’
ওই সময় আমি সাইকেল চালাতাম বারো মাস। শীত নেই, গ্রীষ্ম নেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি। একবার মনে আছে, বাইরে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বেশ বাতাস। আমি অর্ধেক পথ যাওয়ার পর সাইকেল আর এগোচ্ছে না। টায়ার্ড আর কাকে বলে। কিন্তু কী করা। সাইকেল তো ফেলে রেখে যেতে পারি না। এরপর থেকে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ এর নিচে নামলে সাইকেল বাসায় রেখে যেতাম। শীতের সময় তখন খুব বেশি কেউ সাইকেল চালাত না। অনেকেই জিজ্ঞেস করত, যদি পড়ে যাই। বলতাম:
দ্যাখ, আমার পা মাত্র দুটো, আর সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে দুটো চাকার সঙ্গে আরও একটা পা যোগ হবে, মানে ত্রিমুখী সাপোর্ট আমি পাচ্ছি।
তবে সবচেয়ে মজা পেতাম বুড়িদের সঙ্গে দেখা হলে। বিশেষ করে শীতে সাইকেলের পেছনে যদি বাচ্চাদের কেউ বসে থাকত বা ওদের স্লেজ আমার সাইকেলের সঙ্গে বাঁধা থাকত, আমকে দেখেই বলে উঠত: হায় ঈশ্বর! হায় ঈশ্বর!
আমি তখন বাচ্চাদের বলতাম: দ্যাখ, এই লোকেরা জীবনেও ভগবানের নাম নেয় না। আজ আমার কল্যাণে তারা ঈশ্বরকে ডাকছে। ওদের ধর্মের পথে আনার জন্য আমার জমাখরচের খাতায় নিশ্চয়ই কিছু পুণ্য জমা পড়বে।
তবে, সাইকেল অনেক সময়ই রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সেটা শূন্যের দশকের প্রথম দিকে। তখনো নব্বইয়ের রেশ দিকে দিকে। স্কিনহেডদের দৌরাত্ম্য। কখনো কখনো এই কালো চামড়ার মানুষটাকে দেখে ওরা তাড়া করার চেষ্টা করেছে আর আমিও সাইকেল চালিয়ে চলে গেছি ওঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে বর্তমানে সেসব ঝামেলা নেই বললেই চলে। এখন রাতবিরাতে নিশ্চিন্ত মনেই ঘুরে বেড়াই। কিন্তু দুবনার মতো ছোট শহরে সাইকেলের গুরুত্ব অপরিসীম। সবকিছু নিমেষে হাতের মুঠোয় চলে আসে।
আবার সমস্যাও আছে। আমার মতো লোকজন, যাঁরা একবার সাইকেলে উঠলে পাশের বিল্ডিংয়ে পর্যন্ত সাইকেল ছাড়া যেতে পারেন না, এটা তাঁদের একেবারেই হাঁটতে দেয় না। ভাবছি, কীভাবে সাইকেলও চালানো যায় আবার হাঁটাটাও ধরে রাখা যায়।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে