শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন
শুরুটা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে। শেষটা কোথায় বলা যাচ্ছে না। বিশ্বরাজনীতির বিরোধপূর্ণ বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে হঠাৎ সমঝোতার সুর। করোনা মহামারির মধ্যে জিসিসি সম্মেলনে কাতারের আমিরকে বরণ করে সৌদি যুবরাজ সাড়ে তিন বছরের বুমেরাং কাতার অবরোধের অবসান ঘটান। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। গাজা অভিমুখে তুরস্কের জাহাজে ইসরায়েলি হামলা, লিবিয়াসহ ভূমধ্যসাগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-তুরস্ক মারমুখী অবস্থান দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বর্তমানে ইউটার্ন করে তুরস্কের পক্ষ থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উফুক উলুতাস নামে একজন হিব্রু ভাষা জানা মধ্যপ্রাচ্য গবেষককে তেল আবিবে এরদোয়ান দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। লিবিয়া ও মুসলিম ব্রাদারহুড ইস্যুতে মিসরের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধের অবসান করে মিসরের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের পথে তুরস্ক। শুধু মিসর নয়, সৌদি আরবের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে চায় আংকারা। সম্প্রতি তুর্কি প্রেসিডেন্ট ও সৌদি বাদশাহর মধ্যে হওয়া ফোনালাপ তার ইঙ্গিতই বহন করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দুই বড় প্রতিবেশী ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কের টানাপোড়েন পুরো বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ। কিন্তু হঠাৎ করে সৌদি যুবরাজ ইরান ইস্যুতে সুর নরম করে সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরা বলছে, শুধু ইরান নয়, সিরিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে রিয়াদ। এই সমঝোতার ঢেউ এসেছে দক্ষিণ এশিয়ায়ও। দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরসহ সীমান্ত ইস্যুতে অন্তত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। দুই দেশের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাসসহ নানা দিকে মিল থাকায় বিপুল বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু উভয় দেশই একে অপরকে নিরাপত্তার হুমকিতে রেখে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই বৈরী দেশের সম্পর্কেও হঠাৎ করে সুসম্পর্কের সুবাতাস বইছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে দূতিয়ালি করেছে। কিন্তু এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা পারেনি, তা কীভাবে আরব আমিরাত পারল! ভারত-পাকিস্তান দূতিয়ালিতে রাজিই বা কেন হলো! এটা কি আরব আমিরাতের প্রভাবে, নাকি ভারত-পাকিস্তানের আগ্রহে! এ রকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্লেষক মহলে।
ভারতসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর বিরোধ প্রশমিত করার আপাতত চারটা কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, হোয়াইট হাউসে জো বাইডেনের অভিষেকই এই সমঝোতার ঢেউকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বের আলোচিত সাদা ভবনটিতে ক্ষমতার পালাবদল ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার অনেক সমীকরণকে বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, করোনা মহামারিতে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটাতে অযাচিত বিরোধ মেটাতে চায় রাষ্ট্রগুলো। তবে বিরোধ মেটানোর তৃতীয় আরেকটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিশ্বরাজনীতির নতুন মেরুকরণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন বিশ্বনেতারা। চতুর্থত, কিছু রাষ্ট্র উপলব্ধি করেছে, দীর্ঘ বিরোধ তাদের জনগণের জন্য কোনো প্রাপ্তি বয়ে আনেনি।
তুরস্ক সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে পরাশক্তি হওয়ার বাসনা যেমন দেখছে, তেমনি আঞ্চলিক নানা ফ্রন্টে নিজেকে জড়িয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারি তুরস্কের পর্যটন খাতসহ অর্থনীতিকে ভোগাচ্ছে। ভূমধ্যসাগরে যে তর্জন-গর্জন, তা নিয়ে পড়ে থাকলে তুরস্কের অর্থনীতি মার খাবে। তাই আপাতত ভূরাজনীতিতে সমঝোতা করে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চায় আংকারা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এরদোয়ানের একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। বাইডেন আমলে সে সম্পর্ক নানা ফিল্টারিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সৌদি আরব তেল বিক্রির টাকা গরিব মুসলিম দেশগুলোতে বিলি করে মুসলিম দেশগুলোর নেতা সেজেছে এত দিন। কিন্তু টাকাওয়ালা মুসলিম দেশ এখন শুধু সৌদি আরব নয়। সৌদির একচেটিয়া প্রভাবের দিন ফুরিয়ে এসেছে, সেই সঙ্গে ফুরাচ্ছে তেল বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্যও। সৌদি অনুভব করছে, ইরানকে মোকাবিলায় যে পরিমাণ সামরিক শক্তি ব্যয় করেছে, তার ১ শতাংশ কূটনৈতিক সক্ষমতায় ব্যবহার করলে ইরানের পক্ষ থেকে আসা নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করা যায়। সৌদি ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বাকি সব দেশ এমনকি আরব আমিরাতও ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে। তাহলে সৌদি কেন ইরানের মতো মাল্টি ডাইমেনশনে সামরিক পারদর্শী দেশের শত্রু থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে? এ ছাড়া ইরানকে সামরিকভাবে অগ্রাহ্য করার দিন ফুরিয়ে গেছে, তা রিয়াদ উপলব্ধি করতে পারছে। ইয়েমেন যুদ্ধের মতো ব্যর্থ একটি যুদ্ধে জড়িয়ে সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে একটি বাস্তবতা। শুধু সৌদি স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা ফেলবে না, তা-ও নিশ্চয়ই সৌদি রাজপরিবারের বোধোদয় হয়েছে। অন্যদিকে খাশোগি ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে যতটা একরোখা সমর্থন যুবরাজ বিন সালমান পেয়েছিলেন, ততটা সমর্থন বাইডেন প্রশাসন দিতে রাজি নয়। ফলে কোটি ডলারের অস্ত্র কিনে হোয়াইট হাউসের মন জুগিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিকল্প পথ খোলা রাখতে চায় সৌদিরা। ফলে তুর্কি ও ইরানের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সংঘাত কমানোর চেষ্টা করছে রিয়াদ।
ভারত-পাকিস্তান সমঝোতার খবরে অনেকে চোখ কপালে তুললেও বাস্তবতার নিরিখে এটা দরকার। করোনা মহামারিতে পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও টালমাটাল। বিশ্বব্যাংক বলছে, পাকিস্তান ২০১৯ সালে এর সামরিক বাজেট ১৮ ভাগ বাড়িয়েছে। এমনকি মহামারির এই বছরেও পাকিস্তান সামরিক বাজেট আরও প্রায় ১২ ভাগ বৃদ্ধি করে ৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নির্ধারণ করেছে। অথচ লজ্জাজনকভাবে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট মাত্র ১৫১ মিলিয়ন ডলার। দারিদ্র্যবিমোচন এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে ভারতকে গত তিন দশকে উত্তরের প্রতিবেশী চীনকে নিয়ে ভাবতে না হলেও এখন চীন জলে-স্থলে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করছে পাকিস্তান, ভারত, চীন ও ইরান। ভারতকে তার স্ট্র্যাটেজি আরও বৃহত্তর পরিসরে সাজাতে হবে। এ ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যয়বহুল আফগান যুদ্ধ সমাপ্ত করে গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নজর দিতে চায়। জো বাইডেনের সেই এশিয়া প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নয়াদিল্লির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের জায়গা হয়ে উঠছে।
চীনের নেতৃত্বে বিআরই অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে। নতুন এই মেরুকরণে শত্রু-মিত্রের ধারণা বদলে যাচ্ছে। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোয় শত্রু-মিত্র নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। শীতল যুদ্ধের সময় যেভাবে মিত্রদেশ দিয়ে যুদ্ধ চালিয়েছে দুই বিবদমান অক্ষ অথবা তৃতীয় একটি দেশ বা অঞ্চল হয়ে উঠেছে তাদের ব্যাটল ফিল্ড, সেদিকে এগোচ্ছে চীন আর কোয়াড রাষ্ট্রগুলো। দক্ষিণ এশিয়ায় মিয়ানমার একটি ব্যাটল ফিল্ড হয়ে উঠলেও সামনের দিনে আফ্রিকা হয়ে উঠবে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল। কারণ, আফ্রিকায় রয়েছে চীনের বিশাল বিনিয়োগ। এই মেরুকরণ গত দশকের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিচ্ছে। নতুন সমীকরণে প্রত্যেক রাষ্ট্রই নিজ স্বার্থ ও কৌশলকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে জানান দিতে প্রস্তুত হচ্ছে। নতুন মেরুকরণের জন্য তৈরি হতেই পুরোনো বিরোধ মেটানোর চেষ্টায় বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রকর্তারা।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সাউথ এশিয়ান (সার্ক) ইউনিভার্সিটি, নয়াদিল্লি
শুরুটা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে। শেষটা কোথায় বলা যাচ্ছে না। বিশ্বরাজনীতির বিরোধপূর্ণ বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে হঠাৎ সমঝোতার সুর। করোনা মহামারির মধ্যে জিসিসি সম্মেলনে কাতারের আমিরকে বরণ করে সৌদি যুবরাজ সাড়ে তিন বছরের বুমেরাং কাতার অবরোধের অবসান ঘটান। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। গাজা অভিমুখে তুরস্কের জাহাজে ইসরায়েলি হামলা, লিবিয়াসহ ভূমধ্যসাগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-তুরস্ক মারমুখী অবস্থান দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বর্তমানে ইউটার্ন করে তুরস্কের পক্ষ থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উফুক উলুতাস নামে একজন হিব্রু ভাষা জানা মধ্যপ্রাচ্য গবেষককে তেল আবিবে এরদোয়ান দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। লিবিয়া ও মুসলিম ব্রাদারহুড ইস্যুতে মিসরের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধের অবসান করে মিসরের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের পথে তুরস্ক। শুধু মিসর নয়, সৌদি আরবের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে চায় আংকারা। সম্প্রতি তুর্কি প্রেসিডেন্ট ও সৌদি বাদশাহর মধ্যে হওয়া ফোনালাপ তার ইঙ্গিতই বহন করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দুই বড় প্রতিবেশী ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কের টানাপোড়েন পুরো বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ। কিন্তু হঠাৎ করে সৌদি যুবরাজ ইরান ইস্যুতে সুর নরম করে সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরা বলছে, শুধু ইরান নয়, সিরিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে রিয়াদ। এই সমঝোতার ঢেউ এসেছে দক্ষিণ এশিয়ায়ও। দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরসহ সীমান্ত ইস্যুতে অন্তত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। দুই দেশের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাসসহ নানা দিকে মিল থাকায় বিপুল বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু উভয় দেশই একে অপরকে নিরাপত্তার হুমকিতে রেখে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই বৈরী দেশের সম্পর্কেও হঠাৎ করে সুসম্পর্কের সুবাতাস বইছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে দূতিয়ালি করেছে। কিন্তু এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা পারেনি, তা কীভাবে আরব আমিরাত পারল! ভারত-পাকিস্তান দূতিয়ালিতে রাজিই বা কেন হলো! এটা কি আরব আমিরাতের প্রভাবে, নাকি ভারত-পাকিস্তানের আগ্রহে! এ রকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্লেষক মহলে।
ভারতসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর বিরোধ প্রশমিত করার আপাতত চারটা কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, হোয়াইট হাউসে জো বাইডেনের অভিষেকই এই সমঝোতার ঢেউকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বের আলোচিত সাদা ভবনটিতে ক্ষমতার পালাবদল ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার অনেক সমীকরণকে বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, করোনা মহামারিতে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটাতে অযাচিত বিরোধ মেটাতে চায় রাষ্ট্রগুলো। তবে বিরোধ মেটানোর তৃতীয় আরেকটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিশ্বরাজনীতির নতুন মেরুকরণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন বিশ্বনেতারা। চতুর্থত, কিছু রাষ্ট্র উপলব্ধি করেছে, দীর্ঘ বিরোধ তাদের জনগণের জন্য কোনো প্রাপ্তি বয়ে আনেনি।
তুরস্ক সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে পরাশক্তি হওয়ার বাসনা যেমন দেখছে, তেমনি আঞ্চলিক নানা ফ্রন্টে নিজেকে জড়িয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারি তুরস্কের পর্যটন খাতসহ অর্থনীতিকে ভোগাচ্ছে। ভূমধ্যসাগরে যে তর্জন-গর্জন, তা নিয়ে পড়ে থাকলে তুরস্কের অর্থনীতি মার খাবে। তাই আপাতত ভূরাজনীতিতে সমঝোতা করে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চায় আংকারা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এরদোয়ানের একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। বাইডেন আমলে সে সম্পর্ক নানা ফিল্টারিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সৌদি আরব তেল বিক্রির টাকা গরিব মুসলিম দেশগুলোতে বিলি করে মুসলিম দেশগুলোর নেতা সেজেছে এত দিন। কিন্তু টাকাওয়ালা মুসলিম দেশ এখন শুধু সৌদি আরব নয়। সৌদির একচেটিয়া প্রভাবের দিন ফুরিয়ে এসেছে, সেই সঙ্গে ফুরাচ্ছে তেল বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্যও। সৌদি অনুভব করছে, ইরানকে মোকাবিলায় যে পরিমাণ সামরিক শক্তি ব্যয় করেছে, তার ১ শতাংশ কূটনৈতিক সক্ষমতায় ব্যবহার করলে ইরানের পক্ষ থেকে আসা নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করা যায়। সৌদি ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বাকি সব দেশ এমনকি আরব আমিরাতও ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে। তাহলে সৌদি কেন ইরানের মতো মাল্টি ডাইমেনশনে সামরিক পারদর্শী দেশের শত্রু থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে? এ ছাড়া ইরানকে সামরিকভাবে অগ্রাহ্য করার দিন ফুরিয়ে গেছে, তা রিয়াদ উপলব্ধি করতে পারছে। ইয়েমেন যুদ্ধের মতো ব্যর্থ একটি যুদ্ধে জড়িয়ে সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে একটি বাস্তবতা। শুধু সৌদি স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা ফেলবে না, তা-ও নিশ্চয়ই সৌদি রাজপরিবারের বোধোদয় হয়েছে। অন্যদিকে খাশোগি ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে যতটা একরোখা সমর্থন যুবরাজ বিন সালমান পেয়েছিলেন, ততটা সমর্থন বাইডেন প্রশাসন দিতে রাজি নয়। ফলে কোটি ডলারের অস্ত্র কিনে হোয়াইট হাউসের মন জুগিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিকল্প পথ খোলা রাখতে চায় সৌদিরা। ফলে তুর্কি ও ইরানের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সংঘাত কমানোর চেষ্টা করছে রিয়াদ।
ভারত-পাকিস্তান সমঝোতার খবরে অনেকে চোখ কপালে তুললেও বাস্তবতার নিরিখে এটা দরকার। করোনা মহামারিতে পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও টালমাটাল। বিশ্বব্যাংক বলছে, পাকিস্তান ২০১৯ সালে এর সামরিক বাজেট ১৮ ভাগ বাড়িয়েছে। এমনকি মহামারির এই বছরেও পাকিস্তান সামরিক বাজেট আরও প্রায় ১২ ভাগ বৃদ্ধি করে ৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নির্ধারণ করেছে। অথচ লজ্জাজনকভাবে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট মাত্র ১৫১ মিলিয়ন ডলার। দারিদ্র্যবিমোচন এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে ভারতকে গত তিন দশকে উত্তরের প্রতিবেশী চীনকে নিয়ে ভাবতে না হলেও এখন চীন জলে-স্থলে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করছে পাকিস্তান, ভারত, চীন ও ইরান। ভারতকে তার স্ট্র্যাটেজি আরও বৃহত্তর পরিসরে সাজাতে হবে। এ ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যয়বহুল আফগান যুদ্ধ সমাপ্ত করে গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নজর দিতে চায়। জো বাইডেনের সেই এশিয়া প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নয়াদিল্লির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের জায়গা হয়ে উঠছে।
চীনের নেতৃত্বে বিআরই অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে। নতুন এই মেরুকরণে শত্রু-মিত্রের ধারণা বদলে যাচ্ছে। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোয় শত্রু-মিত্র নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। শীতল যুদ্ধের সময় যেভাবে মিত্রদেশ দিয়ে যুদ্ধ চালিয়েছে দুই বিবদমান অক্ষ অথবা তৃতীয় একটি দেশ বা অঞ্চল হয়ে উঠেছে তাদের ব্যাটল ফিল্ড, সেদিকে এগোচ্ছে চীন আর কোয়াড রাষ্ট্রগুলো। দক্ষিণ এশিয়ায় মিয়ানমার একটি ব্যাটল ফিল্ড হয়ে উঠলেও সামনের দিনে আফ্রিকা হয়ে উঠবে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল। কারণ, আফ্রিকায় রয়েছে চীনের বিশাল বিনিয়োগ। এই মেরুকরণ গত দশকের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিচ্ছে। নতুন সমীকরণে প্রত্যেক রাষ্ট্রই নিজ স্বার্থ ও কৌশলকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে জানান দিতে প্রস্তুত হচ্ছে। নতুন মেরুকরণের জন্য তৈরি হতেই পুরোনো বিরোধ মেটানোর চেষ্টায় বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রকর্তারা।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সাউথ এশিয়ান (সার্ক) ইউনিভার্সিটি, নয়াদিল্লি
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৬ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৬ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৬ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে