ড. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং দ্বীনের একটি মহান নিদর্শন। বিশ্বের বহু দেশের মতো আমাদের দেশেও এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, সম্পূর্ণ এক বৈরী পরিবেশে। টানা দুই সপ্তাহের লকডাউন শেষে মানুষের জীবন-জীবিকার সুবিধার জন্য সরকার ৯ দিনের যে শিথিলতার ঘোষণা দিয়েছে, তাতেই উদ্যাপিত হচ্ছে এই ধর্মীয় উৎসব।
কাজেই বরাবরের মতো এবারের ঈদে আনন্দ–উচ্ছ্বাসের তেমন সুযোগ কম। বরং করোনা আক্রান্ত লোকজনের পরিবারে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে কান্নার আহাজারির কথা মাথায় রেখেই আমাদের করতে হচ্ছে কোরবানির আয়োজন। এবার অনেক আল্লাহর বান্দা কোরবানি তো দূরের কথা, পরিবারের জন্য দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতেও নির্মমভাবে অপারগ; যা তাঁদের অব্যক্ত কান্নার নীরব অশ্রু হয়ে ঝরছে নিরন্তর। কোরবানিতে তাই চিরায়ত পদ্ধতি পরিহার করে বিকল্প ব্যবস্থায়ও সম্ভব, যা কোনোভাবেই ইসলাম ধর্মীয় বিধিবিধানের পরিপন্থী হবে না।
কিছু প্রস্তাব:
১. সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় অথবা সরকার অনুমোদিত সংস্থার অধীনে নাম রেজিস্ট্রেশন করে কোরবানি করা যেতে পারে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ কাজ সম্পন্ন করবে। একই সঙ্গে কোরবানি সম্পন্ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা কিংবা সামাজিক দূরত্ব মানায় কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
২. আলাদা দিনে, আলাদাভাবে ইসলাম মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে ও কোরবানির বিধান পালনের সুবিধার্থে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিন (কোনো কোনো মত অনুযায়ী চার দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ পর্যন্ত) কোরবানি আদায় করার সুযোগ দিয়েছে। কাজেই সবাইকে এক দিনে অর্থাৎ ১০ জিলহজ একত্রে ভিড় না করে এলাকাভিত্তিক আলাদাভাবে কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে ১০-১২ তারিখের তিন দিনের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করা যেতে পারে।
৩. কোরবানির বাজেট সাশ্রয় করে বাড়তি অর্থ বিতরণ মাজহাবের মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো ১টি গরু/ছাগল কোরবানির মাধ্যমে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালন করা যায়। এ ক্ষেত্রে যেসব পরিবারে একাধিক কোরবানি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাঁরা তাঁদের কোরবানির জন্য বাজেটের বাকি টাকা গরিব-অসহায় ও কর্মহীন মানুষকে দিয়ে তাঁদের আহার ও মানবিক প্রয়োজন পূরণে সদকাহ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর যাঁরা ১ লাখ টাকার গরু কোরবানি করেছিলেন, তাঁরা এ বছর সীমিত পরিসরে একটি ছাগল কোরবানি করতে পারেন। ছাগলের মূল্য হয়তো ১০ হাজার টাকা। বাকি ৯০ হাজার টাকা তখন সদকাহ হিসেবে দান করতে পারবেন।
মনে রাখা দরকার, সাধারণ অবস্থায় কোরবানি না করে সে অর্থ দান করা যাবে না, বরং কোরবানিই করতে হবে। কেননা, কোরবানি ওয়াজিব, কারও কারও মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। পক্ষান্তরে দান-সদকাহ নফল। তথাপি হানাফি মাজহাবে জটিল পরিস্থিতির কারণে যদি কোরবানি আদায় করা সম্ভব না হয় এবং কোরবানির নির্দিষ্ট তিন দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তবে কোরবানির পশুর সমপরিমাণ অর্থ সদকাহ করার অভিমত বর্ণিত হয়েছে। যদিও অন্যান্য মাজহাবের ইমামরা এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন।
কাজেই বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার মানবিক আবেদন থাকবে এই দুঃসময়ে যাঁদের আল্লাহ তায়ালা তওফিক দিয়েছেন, কিংবা আগে যাঁরা বড় আকারে কোরবানি করতেন, তাঁরা যেন এবার ছোট আকারে গরু বা ছাগল দিয়ে কোরবানি করে বাকি টাকা নগদে অথবা ওই টাকা দিয়ে সাধ্যমতো ১০–২০টা ছাগল কিনে, বিভিন্ন পরিচিত-অপরিচিত গ্রামগঞ্জের গরিব, মিসকিন, সহকর্মী, আত্মীয়-পরিজনদের কোরবানির নিমিত্তে এক একটি করে দিয়ে দিতে পারেন।
এতে সীমিত আকারে হলেও করোনাকালে কষ্টে থাকা লোকজন প্রিয়জনকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার কিংবা অব্যক্ত অভাব মোচনের সুযোগ পেতে পারে। এতে অনেক অনেক সওয়াবের অধিকারী আপনি হবেন, ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহই সমধিক জ্ঞাত। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সব সৎকর্ম কবুল করুন, আমিন।
লেখক: অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং দ্বীনের একটি মহান নিদর্শন। বিশ্বের বহু দেশের মতো আমাদের দেশেও এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, সম্পূর্ণ এক বৈরী পরিবেশে। টানা দুই সপ্তাহের লকডাউন শেষে মানুষের জীবন-জীবিকার সুবিধার জন্য সরকার ৯ দিনের যে শিথিলতার ঘোষণা দিয়েছে, তাতেই উদ্যাপিত হচ্ছে এই ধর্মীয় উৎসব।
কাজেই বরাবরের মতো এবারের ঈদে আনন্দ–উচ্ছ্বাসের তেমন সুযোগ কম। বরং করোনা আক্রান্ত লোকজনের পরিবারে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে কান্নার আহাজারির কথা মাথায় রেখেই আমাদের করতে হচ্ছে কোরবানির আয়োজন। এবার অনেক আল্লাহর বান্দা কোরবানি তো দূরের কথা, পরিবারের জন্য দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতেও নির্মমভাবে অপারগ; যা তাঁদের অব্যক্ত কান্নার নীরব অশ্রু হয়ে ঝরছে নিরন্তর। কোরবানিতে তাই চিরায়ত পদ্ধতি পরিহার করে বিকল্প ব্যবস্থায়ও সম্ভব, যা কোনোভাবেই ইসলাম ধর্মীয় বিধিবিধানের পরিপন্থী হবে না।
কিছু প্রস্তাব:
১. সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় অথবা সরকার অনুমোদিত সংস্থার অধীনে নাম রেজিস্ট্রেশন করে কোরবানি করা যেতে পারে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ কাজ সম্পন্ন করবে। একই সঙ্গে কোরবানি সম্পন্ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা কিংবা সামাজিক দূরত্ব মানায় কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
২. আলাদা দিনে, আলাদাভাবে ইসলাম মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে ও কোরবানির বিধান পালনের সুবিধার্থে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিন (কোনো কোনো মত অনুযায়ী চার দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ পর্যন্ত) কোরবানি আদায় করার সুযোগ দিয়েছে। কাজেই সবাইকে এক দিনে অর্থাৎ ১০ জিলহজ একত্রে ভিড় না করে এলাকাভিত্তিক আলাদাভাবে কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে ১০-১২ তারিখের তিন দিনের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করা যেতে পারে।
৩. কোরবানির বাজেট সাশ্রয় করে বাড়তি অর্থ বিতরণ মাজহাবের মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো ১টি গরু/ছাগল কোরবানির মাধ্যমে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালন করা যায়। এ ক্ষেত্রে যেসব পরিবারে একাধিক কোরবানি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাঁরা তাঁদের কোরবানির জন্য বাজেটের বাকি টাকা গরিব-অসহায় ও কর্মহীন মানুষকে দিয়ে তাঁদের আহার ও মানবিক প্রয়োজন পূরণে সদকাহ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর যাঁরা ১ লাখ টাকার গরু কোরবানি করেছিলেন, তাঁরা এ বছর সীমিত পরিসরে একটি ছাগল কোরবানি করতে পারেন। ছাগলের মূল্য হয়তো ১০ হাজার টাকা। বাকি ৯০ হাজার টাকা তখন সদকাহ হিসেবে দান করতে পারবেন।
মনে রাখা দরকার, সাধারণ অবস্থায় কোরবানি না করে সে অর্থ দান করা যাবে না, বরং কোরবানিই করতে হবে। কেননা, কোরবানি ওয়াজিব, কারও কারও মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। পক্ষান্তরে দান-সদকাহ নফল। তথাপি হানাফি মাজহাবে জটিল পরিস্থিতির কারণে যদি কোরবানি আদায় করা সম্ভব না হয় এবং কোরবানির নির্দিষ্ট তিন দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তবে কোরবানির পশুর সমপরিমাণ অর্থ সদকাহ করার অভিমত বর্ণিত হয়েছে। যদিও অন্যান্য মাজহাবের ইমামরা এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন।
কাজেই বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার মানবিক আবেদন থাকবে এই দুঃসময়ে যাঁদের আল্লাহ তায়ালা তওফিক দিয়েছেন, কিংবা আগে যাঁরা বড় আকারে কোরবানি করতেন, তাঁরা যেন এবার ছোট আকারে গরু বা ছাগল দিয়ে কোরবানি করে বাকি টাকা নগদে অথবা ওই টাকা দিয়ে সাধ্যমতো ১০–২০টা ছাগল কিনে, বিভিন্ন পরিচিত-অপরিচিত গ্রামগঞ্জের গরিব, মিসকিন, সহকর্মী, আত্মীয়-পরিজনদের কোরবানির নিমিত্তে এক একটি করে দিয়ে দিতে পারেন।
এতে সীমিত আকারে হলেও করোনাকালে কষ্টে থাকা লোকজন প্রিয়জনকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার কিংবা অব্যক্ত অভাব মোচনের সুযোগ পেতে পারে। এতে অনেক অনেক সওয়াবের অধিকারী আপনি হবেন, ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহই সমধিক জ্ঞাত। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সব সৎকর্ম কবুল করুন, আমিন।
লেখক: অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৩ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে