ড. তাসনিম সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর মূল গবেষণা আন্তর্জাতিক অভিবাসন নিয়ে। ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট’-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। অন্তর্বর্তী সরকারের ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য তিনি। রাষ্ট্র সংস্কার ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের কিছু লক্ষ্য ছিল, সেগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পথে অন্তরায়গুলো কী?
জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের। সরকার পতনের পর অন্তত তিন দিন বাংলাদেশ ছিল সরকারবিহীন। অথচ তেমন কোনো বিশাল অঘটন কিন্তু ঘটেনি। বরং ছাত্র-জনতা চেষ্টা করেছে বিভিন্ন শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এবং ট্রাফিক সিস্টেম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। সবাই চাইছিল সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারের ছিল না কোনো পূর্ব প্রস্তুতি। ফলে তাকে গঠন করতে হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার কমিটি। এই কমিটিগুলো তাদের কাজ শেষ করলে সরকার দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবে তা বাস্তবায়নে। কয়েক মাসে এই সরকারকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিচার বিভাগের অ্যাপিলেট ডিভিশন, আনসার বাহিনী ও আমলাতন্ত্র থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নমত। সবশেষ বিপত্তিটি এসেছে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে ঘিরে। সে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর দ্রুত মোকাবিলা কোনো অবস্থায়ই সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের কথা উঠেছে। একটা সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার আর একটা নিজ নিজ দলের সংস্কারের বিষয়। সেটা কীভাবে সম্ভব?
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার জন্য চাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন গঠনতন্ত্র। বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেভাবে সন্নিবেশিত হয়নি। তাদের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সদস্যদের অধিকার নিয়ে কোনো অংশ নেই। বার্ষিক সম্মেলন, তার পরিচালনা পদ্ধতি এবং মাঠপর্যায় থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার নিয়মনীতি কিছুই সেখানে সেভাবে বিধৃত নেই। এই দলগুলোতে ইলেকশনের মাধ্যমে দলীয় নেতা নির্বাচন, কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন কখনোই দেখা যায় না। ক্ষমতার বিভাজন নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান এবং সংসদপ্রধান আলাদা আলাদা ব্যক্তি হয়ে থাকেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এ ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যে কারণে একই ব্যক্তি দলে এবং সংসদে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিতে থাকেন। দলের ভেতরে এবং ইলেকশনে প্রার্থী মনোনয়নের কোনো বিধান নেই। ইলেকশন ম্যানিফেস্টো তৈরিতে ও সাধারণ সদস্যদের মতামত প্রতিফলনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় সংস্কার প্রয়োজন দল ব্যবস্থাপনায়।
বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয় না। আমলাতন্ত্রের সংস্কারের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
গত তিনবার আওয়ামী সরকার ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকেনি। সে নির্ভর করেছে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং তার পেটোয়া ছাত্র-ক্যাডার বাহিনীর ওপরে। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ওপরের ধাপগুলোতে দলীয় রাজনীতি, নিপীড়ন এবং দুর্নীতি এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে তাদের সম্পূর্ণ সংস্কার ব্যতিরেকে একটি বৈষম্যহীন ইনক্লুসিভ, বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আগের স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বাদ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে স্থান করে দিয়েছে যারা আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। জনগণের চাহিদা কিন্তু ভিন্ন। জনগণ চায় নতুন প্রজন্মের দলনিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র, যারা কোনো দলের প্রতি অনুগত নয়।
দেশে ছয়টি সেক্টরের সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে আপনার কোনো ভাবনা আছে কি?
এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের পরে নারীবিষয়ক আরও একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি তো রয়েছেই। এই কমিশনগুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, সবাই অত্যন্ত যোগ্য। আন্তর্জাতিক শ্রম-অভিবাসন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আমি দুঃখিত যে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো কমিশন গঠন করেনি। আমরা জাতি হিসেবে খুব আবেগপ্রবণ। যেকোনো বিষয়ে দ্রুত সমর্থন ব্যক্ত করি। আবার দ্রুতই তা প্রত্যাহার করি। এই আচরণবিধি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের এই সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। বিভিন্ন রকম দাবি-দাওয়া তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা থেকেও বিরত হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশে কয়েকবার ঘটে গেছে ভয়াবহ বন্যা।
আমার মনে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু নিয়োগ খুব দ্রুততার সঙ্গে দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলোতে সার্চ কমিটি করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভিসি-প্রোভিসি ইত্যাদি পদে নিয়োগ দিলে আমরা দলীয় রঙের বাইরে গবেষণা এবং শিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক রেটিং বাড়াতে পারতাম।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলছেন বলে অভিযোগ আছে। আপনি কী বলবেন?
আমাদের ছাত্র-জনতা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তারা দেখেছে ব্যাপক নৃশংসতা। তাদের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তাদের ভাই-বন্ধুরা। ঘটনার বীভৎসতা তাদের এখনো গ্রাস করে রেখেছে। তাদের মধ্যে এখনো ট্রমা কাজ করছে। এই ট্রমার কারণে যে তারা সব সময় বাস্তববাদী কথা বলবে, এটা আমরা আশা করতে পারি না। বরং আমি মনে করি, এদের ট্রমা কাটানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। যেসব পরিবার তাদের সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে, তাদেরও ট্রমা ম্যানেজমেন্টের মধ্যে আনা দরকার। এ ধরনের কাজ হলে ছাত্র এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অস্থিরতা কমে আসবে।
কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, এখন ইসলামি শক্তির আধিপত্য বিরাজ করছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এই সরকারের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কেউই তো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক নন। কিন্তু গত সরকার দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি দমনের নামে স্বাধীনতার চেতনাসংক্রান্ত বয়ানকে এবং রাজাকার ট্যাগকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণকে সীমিত রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী দলটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে এবং শেষ পর্যায়ে এসে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন এই দলটি সহানুভূতি পাচ্ছে। তবে আমি এখনো মনে করি যে পপুলার ভোটে ৫ শতাংশের বেশি ভোট জামায়াতে ইসলামী দলটির সঙ্গে নেই।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে নানা মতও আছে। কীভাবে সেটা সম্ভব?
সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে আমি যে বিষয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইলেকশনের জন্য কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ফিরিয়ে আনা। প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণে দলের নেতৃত্ব, সংসদের নেতৃত্ব অন্যের হাতে প্রদান করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা। একটি কক্ষে পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল করে ৩৩ শতাংশ সিটে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা। পার্লামেন্টে গণশুনানির ব্যবস্থা রাখা, শ্যাডো-ক্যাবিনেট প্রতিষ্ঠা করা। সর্বোপরি এক ব্যক্তি যাতে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এসবই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্ভব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের কিছু লক্ষ্য ছিল, সেগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পথে অন্তরায়গুলো কী?
জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের। সরকার পতনের পর অন্তত তিন দিন বাংলাদেশ ছিল সরকারবিহীন। অথচ তেমন কোনো বিশাল অঘটন কিন্তু ঘটেনি। বরং ছাত্র-জনতা চেষ্টা করেছে বিভিন্ন শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এবং ট্রাফিক সিস্টেম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। সবাই চাইছিল সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারের ছিল না কোনো পূর্ব প্রস্তুতি। ফলে তাকে গঠন করতে হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার কমিটি। এই কমিটিগুলো তাদের কাজ শেষ করলে সরকার দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবে তা বাস্তবায়নে। কয়েক মাসে এই সরকারকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিচার বিভাগের অ্যাপিলেট ডিভিশন, আনসার বাহিনী ও আমলাতন্ত্র থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নমত। সবশেষ বিপত্তিটি এসেছে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে ঘিরে। সে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর দ্রুত মোকাবিলা কোনো অবস্থায়ই সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের কথা উঠেছে। একটা সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার আর একটা নিজ নিজ দলের সংস্কারের বিষয়। সেটা কীভাবে সম্ভব?
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার জন্য চাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন গঠনতন্ত্র। বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেভাবে সন্নিবেশিত হয়নি। তাদের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সদস্যদের অধিকার নিয়ে কোনো অংশ নেই। বার্ষিক সম্মেলন, তার পরিচালনা পদ্ধতি এবং মাঠপর্যায় থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার নিয়মনীতি কিছুই সেখানে সেভাবে বিধৃত নেই। এই দলগুলোতে ইলেকশনের মাধ্যমে দলীয় নেতা নির্বাচন, কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন কখনোই দেখা যায় না। ক্ষমতার বিভাজন নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান এবং সংসদপ্রধান আলাদা আলাদা ব্যক্তি হয়ে থাকেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এ ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যে কারণে একই ব্যক্তি দলে এবং সংসদে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিতে থাকেন। দলের ভেতরে এবং ইলেকশনে প্রার্থী মনোনয়নের কোনো বিধান নেই। ইলেকশন ম্যানিফেস্টো তৈরিতে ও সাধারণ সদস্যদের মতামত প্রতিফলনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় সংস্কার প্রয়োজন দল ব্যবস্থাপনায়।
বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয় না। আমলাতন্ত্রের সংস্কারের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
গত তিনবার আওয়ামী সরকার ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকেনি। সে নির্ভর করেছে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং তার পেটোয়া ছাত্র-ক্যাডার বাহিনীর ওপরে। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ওপরের ধাপগুলোতে দলীয় রাজনীতি, নিপীড়ন এবং দুর্নীতি এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে তাদের সম্পূর্ণ সংস্কার ব্যতিরেকে একটি বৈষম্যহীন ইনক্লুসিভ, বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আগের স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বাদ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে স্থান করে দিয়েছে যারা আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। জনগণের চাহিদা কিন্তু ভিন্ন। জনগণ চায় নতুন প্রজন্মের দলনিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র, যারা কোনো দলের প্রতি অনুগত নয়।
দেশে ছয়টি সেক্টরের সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে আপনার কোনো ভাবনা আছে কি?
এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের পরে নারীবিষয়ক আরও একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি তো রয়েছেই। এই কমিশনগুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, সবাই অত্যন্ত যোগ্য। আন্তর্জাতিক শ্রম-অভিবাসন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আমি দুঃখিত যে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো কমিশন গঠন করেনি। আমরা জাতি হিসেবে খুব আবেগপ্রবণ। যেকোনো বিষয়ে দ্রুত সমর্থন ব্যক্ত করি। আবার দ্রুতই তা প্রত্যাহার করি। এই আচরণবিধি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের এই সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। বিভিন্ন রকম দাবি-দাওয়া তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা থেকেও বিরত হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশে কয়েকবার ঘটে গেছে ভয়াবহ বন্যা।
আমার মনে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু নিয়োগ খুব দ্রুততার সঙ্গে দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলোতে সার্চ কমিটি করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভিসি-প্রোভিসি ইত্যাদি পদে নিয়োগ দিলে আমরা দলীয় রঙের বাইরে গবেষণা এবং শিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক রেটিং বাড়াতে পারতাম।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলছেন বলে অভিযোগ আছে। আপনি কী বলবেন?
আমাদের ছাত্র-জনতা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তারা দেখেছে ব্যাপক নৃশংসতা। তাদের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তাদের ভাই-বন্ধুরা। ঘটনার বীভৎসতা তাদের এখনো গ্রাস করে রেখেছে। তাদের মধ্যে এখনো ট্রমা কাজ করছে। এই ট্রমার কারণে যে তারা সব সময় বাস্তববাদী কথা বলবে, এটা আমরা আশা করতে পারি না। বরং আমি মনে করি, এদের ট্রমা কাটানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। যেসব পরিবার তাদের সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে, তাদেরও ট্রমা ম্যানেজমেন্টের মধ্যে আনা দরকার। এ ধরনের কাজ হলে ছাত্র এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অস্থিরতা কমে আসবে।
কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, এখন ইসলামি শক্তির আধিপত্য বিরাজ করছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এই সরকারের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কেউই তো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক নন। কিন্তু গত সরকার দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি দমনের নামে স্বাধীনতার চেতনাসংক্রান্ত বয়ানকে এবং রাজাকার ট্যাগকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণকে সীমিত রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী দলটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে এবং শেষ পর্যায়ে এসে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন এই দলটি সহানুভূতি পাচ্ছে। তবে আমি এখনো মনে করি যে পপুলার ভোটে ৫ শতাংশের বেশি ভোট জামায়াতে ইসলামী দলটির সঙ্গে নেই।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে নানা মতও আছে। কীভাবে সেটা সম্ভব?
সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে আমি যে বিষয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইলেকশনের জন্য কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ফিরিয়ে আনা। প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণে দলের নেতৃত্ব, সংসদের নেতৃত্ব অন্যের হাতে প্রদান করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা। একটি কক্ষে পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল করে ৩৩ শতাংশ সিটে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা। পার্লামেন্টে গণশুনানির ব্যবস্থা রাখা, শ্যাডো-ক্যাবিনেট প্রতিষ্ঠা করা। সর্বোপরি এক ব্যক্তি যাতে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এসবই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্ভব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১২ মিনিট আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১৩ মিনিট আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
২৫ মিনিট আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
২৬ মিনিট আগে