মাসুদা ভাট্টি
এই মুহূর্তে বৈশ্বিক বাস্তবতা হলো, একটি চলমান টিকাযুদ্ধ (ভ্যাকসিন ওয়ার)। অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে যখন করোনা পরিস্থিতির ভয়ংকর অবনতি ঘটছে, তখন উন্নত ও ধনী দেশগুলো তাদের জনগণকে টিকা দিয়ে একের পর এক ‘লকডাউনমুক্ত’ হয়ে ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরে আসছে–এই দৃশ্য একই সঙ্গে নিষ্ঠুর ও চোখে আঙুল দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে বিরাজমান বিভক্তিকেই প্রমাণ করে। এশিয়া তো বটেই, আফ্রিকার মতো অনেক বেশি পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে যেখানে মানুষের খাদ্যের জোগান নেই, যুদ্ধপীড়িত হয়ে কোনো রকম জীবনধারণ ব্যবস্থায় সেখানে ‘মানুষ’ নাম নিয়ে টিকে আছে, সেখানে টিকা উৎপাদন তো দূরের কথা, মোট জনসংখ্যার ক্ষুদ্রতম অংশের জন্যও এখন পর্যন্ত করোনার টিকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।
ভাবা কি যায় যে, ১.৩ বিলিয়ন মানুষ, যা কিনা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ, সেখানে মাত্র ২ শতাংশ টিকাও জোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি। আফ্রিকার এমনও দেশ রয়েছে, যেখানে একটি ডোজ টিকাও পৌঁছায়নি এখন পর্যন্ত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনী দেশগুলোর সবাইকে যদি টিকা দেওয়া হয়, তাহলেও পৃথিবী সম্পূর্ণ করোনামুক্ত হবে না কোনোদিন, যদি না এই বিশাল জনসংখ্যাভারে ন্যুব্জ অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোর জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনা যায়। জিম্বাবুয়ে বা জাম্বিয়ার মতো দেশগুলোতে শুধু যে টিকাই যায়নি তা নয়, সেখানে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের তীব্র সংকট। অথচ এ রকম দেশগুলোতে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ থেকেও ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাফ বলে দিয়েছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি আফ্রিকান দেশে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০ ভাগ জনগণের জন্যও টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
আফগানিস্তানের কথা যদি চিন্তা করা যায়, তাহলে মনে হতে পারে, এই দেশটি আসলে শুধু করোনা নয়, আগামী দিনগুলোতে তালেবান হামলা থেকে দেশের সাধারণ নাগরিকদের বাঁচানোটাই হয়ে উঠবে মূল সমস্যা। এখনো দেশের ২ শতাংশ জনগণকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি অথচ সংক্রমণের হার এখন দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। দুঃখজনক হলো, হাইতি থেকে আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশেও যেখানে সাধারণ জনগণকে করোনা ঠেকানোর সবচেয়ে সহজ পথ মাস্ক পরিধান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ‘প্র্যাকটিস’-এর কোনোটাই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে টিকাই যে করোনা থেকে মুক্তির একমাত্র সমাধান, সে সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে যে আন্তর্জাতিক টিকাব্যাংক বা কোভ্যাক্স গঠন হয়েছে, তার কার্যক্রম, অর্থায়ন, ধনী ও টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর সদিচ্ছা–সবকিছু নিয়ে এরই মধ্যে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের হতাশা এসব টিকাবঞ্চিত দেশের মানুষের মধ্যে আরও হতাশা ছড়িয়েছে বলে মনে হয়। এখন অনেকেই ভাবছেন, এভাবেই যদি বেঁচে থাকতে হয়, তাহলে কেন আর ‘লকডাউন’? কেনই-বা নিজেকে ‘স্বাভাবিক জীবন’ থেকে বঞ্চিত করা?
বাংলাদেশের মতো উঠতি অর্থনীতির দেশ যেখানে স্বাস্থ্য খাত শুরু থেকেই চরম অব্যবস্থার শিকার, সেখানে জোড়াতালি দিয়ে হলেও করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা ক্ষমতাসীন সরকারকে করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। কখনো সফল, কখনো ব্যর্থতা–এ রকমভাবেই চলছে দেড় বছর ধরে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ামাত্রই বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে দেশের মধ্যে ও বাইরে সব পক্ষের প্রশংসা কুড়ায়। চুক্তি অনুযায়ী কয়েকটি চালান এলেও ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় সেখান থেকে টিকা আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে এই যে চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা এবং সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপন্ন করার ঘটনা ঘটল, সেটার একটা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিকভাবেই হওয়া উচিত।
যদিও এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা দৃশ্যমান এবং অল্প কিছু সফলতার চিত্রও লক্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য টিকার ব্যবস্থা সরকার নিশ্চিত করবে। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করার কথা হচ্ছে। এপ্রিল ২০২২ সালের মধ্যে মোট ৭ কোটি টিকা। যদি সত্যি সত্যিই এ রকম হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের জীবনে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরতে আর মাত্র সাত–আট মাস অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। প্রশ্ন হলো, টিকার জন্য বাংলাদেশের মতো দেশকে এখনো পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর ওপর।
এই নির্ভরতা কমে যেতে পারে যদি বাংলাদেশ টিকা উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় চলে আসে এবং এ ব্যাপারেও সরকারি উদ্যোগের কথা আলোচনা হচ্ছে। সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপনের কথা জানিয়েছে। এ রকমটি হলে সেটি হবে বৈশ্বিক সক্ষমতার নিরিখে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন। যতদূর জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড অনুমোদিত টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন বিষয়টি ফাইল চালাচালি কিংবা আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, বাংলাদেশের মতো দেশে যা স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত বদলে গিয়ে টিকা উৎপাদন শুরুর তোড়জোড় দেখা গেলেও বিস্মিত হব না।
এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত হতে চাওয়াটাই কাম্য। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় করোনা পরিস্থিতি এই মুহূর্তে খুব বেশি আশাব্যঞ্জক কোনো অবস্থায় নেই। এখনো আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্তান, এশিয়ার দেশে দেশে করোনা তার থাবা বিস্তার করেই চলেছে। ঠিক এ রকম পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে চলমান টিকার প্রতিযোগিতা বা টিকাযুদ্ধ পৃথিবীকে আরও অসুস্থ করে তুলছে–সন্দেহ নেই। এখানে-সেখানে এই সাগরে সেই সাগরে, মরুভূমিতে চলছে যুদ্ধের মহড়া। ধনী ও ক্ষমতাবান দেশগুলোর এই নির্লজ্জ মহড়া নিশ্চয়ই করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতাকেও হার মানায়। কিন্তু এখানে কারও করারও কিছু আছে বলে মনে হয় না।
পৃথিবী বিভক্ত আমরা জানি এবং দুঃখজনকভাবে সেটা ধনী এবং গরিব–এটাও মানতে হয় আমাদের এই একবিংশ শতকে এসেও। কিন্তু তাই বলে একটি মহামারিও যে পৃথিবীর এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে এভাবে উদগ্র করে তুলবে–সেটা এই কিছুদিন আগেও অনেক আশাবাদী মানুষের পক্ষে ভাবাটা সম্ভব ছিল না। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ও চীনকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সব ক্ষমতা দিয়েই পরাভূত করার জন্য এককাট্টা মার্কিন অক্ষশক্তি তাদের পুরো শক্তিই বিনিয়োগ করছে এই টিকাযুদ্ধে।
মধ্যপ্রাচ্যসহ একের পর এক চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে পরাজয় অথবা পশ্চাদপসরণ ঘটার পর এখন নতুন ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে টিকা-কূটনীতি নিয়ে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ভারতের সঙ্গে টিকা নিয়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটল, সেটা এই কদর্য টিকাযুদ্ধেরই অংশ বৈ কিছু নয়। হয়তো এই যুদ্ধেও মানবতারই জয় হবে; কিন্তু সেটা কবে, কত দিনে সম্ভব হবে–সে প্রশ্নের উত্তরও কারও জানা নেই। এই মুহূর্তে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও জীবন-জীবিকা ‘স্বাভাবিক’ করে তোলাই প্রথম ও প্রধান ‘প্রায়োরিটি’–সেটা বাংলাদেশ কিংবা অন্য যে কোনো দেশের জন্যই সত্য। এই সত্যের সঙ্গেই এখন যুঝছি আমরা, বাংলাদেশে এবং আফ্রিকার সবচেয়ে গরিব দেশটিতেও।
লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক
এই মুহূর্তে বৈশ্বিক বাস্তবতা হলো, একটি চলমান টিকাযুদ্ধ (ভ্যাকসিন ওয়ার)। অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে যখন করোনা পরিস্থিতির ভয়ংকর অবনতি ঘটছে, তখন উন্নত ও ধনী দেশগুলো তাদের জনগণকে টিকা দিয়ে একের পর এক ‘লকডাউনমুক্ত’ হয়ে ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরে আসছে–এই দৃশ্য একই সঙ্গে নিষ্ঠুর ও চোখে আঙুল দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে বিরাজমান বিভক্তিকেই প্রমাণ করে। এশিয়া তো বটেই, আফ্রিকার মতো অনেক বেশি পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে যেখানে মানুষের খাদ্যের জোগান নেই, যুদ্ধপীড়িত হয়ে কোনো রকম জীবনধারণ ব্যবস্থায় সেখানে ‘মানুষ’ নাম নিয়ে টিকে আছে, সেখানে টিকা উৎপাদন তো দূরের কথা, মোট জনসংখ্যার ক্ষুদ্রতম অংশের জন্যও এখন পর্যন্ত করোনার টিকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।
ভাবা কি যায় যে, ১.৩ বিলিয়ন মানুষ, যা কিনা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ, সেখানে মাত্র ২ শতাংশ টিকাও জোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি। আফ্রিকার এমনও দেশ রয়েছে, যেখানে একটি ডোজ টিকাও পৌঁছায়নি এখন পর্যন্ত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনী দেশগুলোর সবাইকে যদি টিকা দেওয়া হয়, তাহলেও পৃথিবী সম্পূর্ণ করোনামুক্ত হবে না কোনোদিন, যদি না এই বিশাল জনসংখ্যাভারে ন্যুব্জ অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোর জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনা যায়। জিম্বাবুয়ে বা জাম্বিয়ার মতো দেশগুলোতে শুধু যে টিকাই যায়নি তা নয়, সেখানে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের তীব্র সংকট। অথচ এ রকম দেশগুলোতে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ থেকেও ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাফ বলে দিয়েছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি আফ্রিকান দেশে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০ ভাগ জনগণের জন্যও টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
আফগানিস্তানের কথা যদি চিন্তা করা যায়, তাহলে মনে হতে পারে, এই দেশটি আসলে শুধু করোনা নয়, আগামী দিনগুলোতে তালেবান হামলা থেকে দেশের সাধারণ নাগরিকদের বাঁচানোটাই হয়ে উঠবে মূল সমস্যা। এখনো দেশের ২ শতাংশ জনগণকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি অথচ সংক্রমণের হার এখন দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। দুঃখজনক হলো, হাইতি থেকে আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশেও যেখানে সাধারণ জনগণকে করোনা ঠেকানোর সবচেয়ে সহজ পথ মাস্ক পরিধান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ‘প্র্যাকটিস’-এর কোনোটাই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে টিকাই যে করোনা থেকে মুক্তির একমাত্র সমাধান, সে সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে যে আন্তর্জাতিক টিকাব্যাংক বা কোভ্যাক্স গঠন হয়েছে, তার কার্যক্রম, অর্থায়ন, ধনী ও টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর সদিচ্ছা–সবকিছু নিয়ে এরই মধ্যে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের হতাশা এসব টিকাবঞ্চিত দেশের মানুষের মধ্যে আরও হতাশা ছড়িয়েছে বলে মনে হয়। এখন অনেকেই ভাবছেন, এভাবেই যদি বেঁচে থাকতে হয়, তাহলে কেন আর ‘লকডাউন’? কেনই-বা নিজেকে ‘স্বাভাবিক জীবন’ থেকে বঞ্চিত করা?
বাংলাদেশের মতো উঠতি অর্থনীতির দেশ যেখানে স্বাস্থ্য খাত শুরু থেকেই চরম অব্যবস্থার শিকার, সেখানে জোড়াতালি দিয়ে হলেও করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা ক্ষমতাসীন সরকারকে করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। কখনো সফল, কখনো ব্যর্থতা–এ রকমভাবেই চলছে দেড় বছর ধরে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ামাত্রই বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে দেশের মধ্যে ও বাইরে সব পক্ষের প্রশংসা কুড়ায়। চুক্তি অনুযায়ী কয়েকটি চালান এলেও ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় সেখান থেকে টিকা আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে এই যে চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা এবং সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপন্ন করার ঘটনা ঘটল, সেটার একটা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিকভাবেই হওয়া উচিত।
যদিও এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা দৃশ্যমান এবং অল্প কিছু সফলতার চিত্রও লক্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য টিকার ব্যবস্থা সরকার নিশ্চিত করবে। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করার কথা হচ্ছে। এপ্রিল ২০২২ সালের মধ্যে মোট ৭ কোটি টিকা। যদি সত্যি সত্যিই এ রকম হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের জীবনে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরতে আর মাত্র সাত–আট মাস অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। প্রশ্ন হলো, টিকার জন্য বাংলাদেশের মতো দেশকে এখনো পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর ওপর।
এই নির্ভরতা কমে যেতে পারে যদি বাংলাদেশ টিকা উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় চলে আসে এবং এ ব্যাপারেও সরকারি উদ্যোগের কথা আলোচনা হচ্ছে। সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপনের কথা জানিয়েছে। এ রকমটি হলে সেটি হবে বৈশ্বিক সক্ষমতার নিরিখে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন। যতদূর জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড অনুমোদিত টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন বিষয়টি ফাইল চালাচালি কিংবা আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, বাংলাদেশের মতো দেশে যা স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত বদলে গিয়ে টিকা উৎপাদন শুরুর তোড়জোড় দেখা গেলেও বিস্মিত হব না।
এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত হতে চাওয়াটাই কাম্য। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় করোনা পরিস্থিতি এই মুহূর্তে খুব বেশি আশাব্যঞ্জক কোনো অবস্থায় নেই। এখনো আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্তান, এশিয়ার দেশে দেশে করোনা তার থাবা বিস্তার করেই চলেছে। ঠিক এ রকম পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে চলমান টিকার প্রতিযোগিতা বা টিকাযুদ্ধ পৃথিবীকে আরও অসুস্থ করে তুলছে–সন্দেহ নেই। এখানে-সেখানে এই সাগরে সেই সাগরে, মরুভূমিতে চলছে যুদ্ধের মহড়া। ধনী ও ক্ষমতাবান দেশগুলোর এই নির্লজ্জ মহড়া নিশ্চয়ই করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতাকেও হার মানায়। কিন্তু এখানে কারও করারও কিছু আছে বলে মনে হয় না।
পৃথিবী বিভক্ত আমরা জানি এবং দুঃখজনকভাবে সেটা ধনী এবং গরিব–এটাও মানতে হয় আমাদের এই একবিংশ শতকে এসেও। কিন্তু তাই বলে একটি মহামারিও যে পৃথিবীর এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে এভাবে উদগ্র করে তুলবে–সেটা এই কিছুদিন আগেও অনেক আশাবাদী মানুষের পক্ষে ভাবাটা সম্ভব ছিল না। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ও চীনকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সব ক্ষমতা দিয়েই পরাভূত করার জন্য এককাট্টা মার্কিন অক্ষশক্তি তাদের পুরো শক্তিই বিনিয়োগ করছে এই টিকাযুদ্ধে।
মধ্যপ্রাচ্যসহ একের পর এক চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে পরাজয় অথবা পশ্চাদপসরণ ঘটার পর এখন নতুন ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে টিকা-কূটনীতি নিয়ে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ভারতের সঙ্গে টিকা নিয়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটল, সেটা এই কদর্য টিকাযুদ্ধেরই অংশ বৈ কিছু নয়। হয়তো এই যুদ্ধেও মানবতারই জয় হবে; কিন্তু সেটা কবে, কত দিনে সম্ভব হবে–সে প্রশ্নের উত্তরও কারও জানা নেই। এই মুহূর্তে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও জীবন-জীবিকা ‘স্বাভাবিক’ করে তোলাই প্রথম ও প্রধান ‘প্রায়োরিটি’–সেটা বাংলাদেশ কিংবা অন্য যে কোনো দেশের জন্যই সত্য। এই সত্যের সঙ্গেই এখন যুঝছি আমরা, বাংলাদেশে এবং আফ্রিকার সবচেয়ে গরিব দেশটিতেও।
লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৪ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে