জাকারিয়া জাহাঙ্গীর
আমাদের দেশে অনলাইনে শিশুদের উপস্থিতি যতটা সহজ পৃথিবীর অন্য দেশগুলোয় ততটা নয়। সেই সব দেশে ইন্টারনেট যতটা ব্যবহার করা হয়, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরের মধ্যে এবং তা তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে যোগ্য করে গড়ে তুলতে। কিন্তু আমরা এর বিপরীত। ফলে শিশুরা কার্টুন ও গেমে আসক্ত, এমনকি ফেসবুক-ইউটিউব ব্যবহার করারও সুযোগ পায়। অধিকাংশ কার্টুন নগ্ন-অর্ধনগ্নভাবে তৈরি করা, কার্টুনের একজন যুবতীর মুখের বয়স আট আর বুকের বয়স দেখা যায় আঠারো, যা কোমলপ্রাণে নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম হওয়াটা স্বাভাবিক। অপরদিকে ইউটিউবে অটো-প্লে অপশন চালু থাকায় নির্ধারিত একটি ভিডিও দেখার পর অন্য বিষয়ের ভিডিও চলে আসে। একজন শিশু হয়তো কার্টুন দেখছে, এ সময় মোবাইলের স্কিনের অন্য পাশে টাচ লেগে অশ্লীল হিন্দি গান চলে এল। এ সময় শিশুমনে নেতিবাচক প্রশ্ন ও অভিভাবকদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই ইউটিউবকে আরও যুগোপযোগী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে হবে। এ ছাড়া ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত একটা বয়সের বাধ্যবাধকতা রাখা জরুরি। এসবের অ্যাকাউন্ট খুলতে এনআইডি কার্ড বা আঠারো-বিশ বছর প্রমাণ করার উপযুক্ত কোনো কাগজ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হোক।
শিশুরা অনলাইনে গেম ও কার্টুনের দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকে। একেবারে ছোট শিশুরা কার্টুনের প্রতি আগ্রহী আর কিশোর বয়সীরা মোবাইলে ইন্টারনেট-ডেটা ব্যবহার করে গেম খেলতে ভালোবাসে। বর্তমানে দেশে ‘ফ্রি-ফায়ার’ ও ‘পাবজি’ নামে দুটি অনলাইন গেম ব্যাপক প্রচলন হয়েছে। এক সময় মোবাইলে তরুণ বয়সী ও নিঃসঙ্গ ব্যক্তিরা দাবা বা লুডুজাতীয় কিছু খেলতেন শখের বসে। এসব খেলা জনপ্রিয় হওয়ায় এবং করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন গেমের দিকে সুকৌশলে ধাবিত করছে সংঘবদ্ধ অনলাইনভিত্তিক করপোরেট চক্র। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। প্রশ্ন হলো, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি অন্ধ? নাকি দেখেও তারা চুপ করে আছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো হইচই না হলে যে এ দেশে সহজে কোনোকিছুর প্রতিকার মেলে না—এটা অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগে অনলাইনভিত্তিক জীবনাচার আমাদের চলার পথকে সহজ করেছে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে অনলাইন নির্ভরতা ও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য অনলাইন ব্যবহার পুরোপুরি নিরাপদ তো নয়ই; উপরন্তু মারাত্মক ক্ষতির কারণ। মোবাইল, লেপটপ-ডেক্সটপ সহজলভ্য ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পৌঁছে যাওয়ায় যে কেউ চাইলেই অনলাইন ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার অনলাইনের নির্ভরতা বাড়ালেও অনলাইনের নিরাপদ ব্যবহার ও শিশুদের জন্য নিরাপদ অনলাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। আর এই অবাধ ও অপব্যবহার শিগগির নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জাতিকে নিশ্চিত চরম বিপর্যয়ে পড়তে হবে।
২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ‘বস্তু হোয়েল’ নামে অনলাইন ভিডিও গেম আবিষ্কার করে। এটি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও রীতিমতো হইচই ফেলে দেয়। এ গেমের আসক্তি অগণিত কিশোরের মস্তিষ্ক বিকৃতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে। অনেকটা ‘বস্তু হোয়েল’-এর মতোই রোমাঞ্চকর আসক্তি গেম ‘ফ্রি ফায়ার’ চীনের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে তৈরি করে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোডকৃত মোবাইল গেম বলে জানা গেছে। গেমটি অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুট থেকে নেমে ৫০ জন বা তার বেশি খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে ‘ফ্রি ফায়ার’কে আরও উন্নত সংস্করণে ‘ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স’ নামে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এটি আমাদের কাছে দুঃসংবাদ।
২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল দক্ষিণপন্থী এক সন্ত্রাসী। বন্দুক নিয়ে মসজিদে ঢুকে ব্রাশফায়ার করে ৫১ জন সাধারণ মুসলিমকে হত্যা করে। গোটা ঘটনা ক্যামেরায় রেকর্ড ও হত্যার দৃশ্য ফেসবুক লাইভ প্রচার করে হামলাকারী। ওই হামলার আদলে তৈরি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন গেম ‘পাবজি’। এ ধরনের গেম দেশে শিশুদের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে যাচ্ছে। ভার্চুয়ালি অর্থ লেনদেন হচ্ছে এমএমএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
অনলাইন গেম দুটি ফেসবুক লাইভে শেয়ার করে অন্যদের ইনভাইট করা হয় আকর্ষণীয়ভাবে। ফেসবুকে পোস্ট বা লাইভে ইনভাইটকৃত গেমগুলোর ভিডিও-কভার নারী-পুরুষের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও নগ্ন-অর্ধনগ্ন যুবতী দিয়ে সাজানো থাকে। এসব অনলাইন গেম কোমলমতি শিশুকিশোর তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলছে। নিঃসঙ্গতা বা সময় কাটানোর মাধ্যম পরিণত হচ্ছে নেশায়, যা মাদকদ্রব্য গ্রহণের চেয়েও ভয়াবহ। ঝোঁকের বশে তরুণদের আগ্রাসী করে তুলছে এগুলো। ইন্টারনেট-ডেটার খরচ জোগাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। গত ২১ মে চাঁদপুরে মামুন (১৪) নামে এক কিশোর মোবাইলের ডেটা কেনার টাকা না পেয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করে, যা গণমাধ্যমে এসেছে। এমন চলতে থাকলে আমাদের জন্য অশনিসংকেত। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, অপরদিকে গেম দুটিতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি বেড়ে যাওয়ায় তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্কের বিকৃতি, কোমল মনে চিন্তাভাবনায় কুপ্রভাব, খাবার গ্রহণে গড়িমসি, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মাথাব্যথাসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। সুযোগ পেলেই মোবাইল নিয়ে নিরিবিলি স্থানে বসে খেলা, কখনো বা দলবদ্ধভাবে গোপন স্থানগুলোয় বসে খেলতে গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ঝগড়া, রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনা, রাত জেগে দীর্ঘসময় খেলে স্বাস্থ্যহানি হওয়া আমাদের সন্তানদের জন্য গভীর চিন্তার বিষয়। কেননা, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র।
যেভাবে বিদেশি অনলাইন-করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দেশে সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ সহজলভ্য করে পাঠায়, তা শিগগির বন্ধ করতে হবে। প্রজন্মকে ধ্বংস করে—এমন সব অনলাইন গেম খুব দ্রুত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হোক। সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করেছে সেই দেশের আদালত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গুজরাটেও এ গেমটি নিষিদ্ধ ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশেও পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল; কিন্তু কী কারণে ও কার স্বার্থে ফের চালু হয়েছে, তা জানে না দেশের মানুষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘পাবজি’ ও ‘ফ্রি-ফায়ার’ গেম নিষিদ্ধের জন্য বিটিআরসিকে সুপারিশ করেছে, অথচ তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বোপরি সরকারকে বলার কথা এটাই যে, অনলাইনের অপব্যবহার তথা আসক্তি থেকে বাঁচাতে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা ও সুস্থ সংস্কৃতিতে ফেরানো দরকার। সীমিত আকারে হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। দেশের জেলা-উপজেলায় যেসব শিল্পকলা একাডেমি রয়েছে, যেগুলোয় প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়; সেগুলোকে যুগোপযোগী ও গতিশীল করুন, সেখানে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ান। যেসব ক্রীড়া সংগঠন রয়েছে, সেসব সক্রিয় করুন। দেশের সব খেলার মাঠ পরিচর্যা ও বেদখল মাঠ উদ্ধার করে গ্রামীণ খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনের আন্তরিকতা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিবারিক সচেতনতাই পারে জাতিকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে।
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
আমাদের দেশে অনলাইনে শিশুদের উপস্থিতি যতটা সহজ পৃথিবীর অন্য দেশগুলোয় ততটা নয়। সেই সব দেশে ইন্টারনেট যতটা ব্যবহার করা হয়, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরের মধ্যে এবং তা তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে যোগ্য করে গড়ে তুলতে। কিন্তু আমরা এর বিপরীত। ফলে শিশুরা কার্টুন ও গেমে আসক্ত, এমনকি ফেসবুক-ইউটিউব ব্যবহার করারও সুযোগ পায়। অধিকাংশ কার্টুন নগ্ন-অর্ধনগ্নভাবে তৈরি করা, কার্টুনের একজন যুবতীর মুখের বয়স আট আর বুকের বয়স দেখা যায় আঠারো, যা কোমলপ্রাণে নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম হওয়াটা স্বাভাবিক। অপরদিকে ইউটিউবে অটো-প্লে অপশন চালু থাকায় নির্ধারিত একটি ভিডিও দেখার পর অন্য বিষয়ের ভিডিও চলে আসে। একজন শিশু হয়তো কার্টুন দেখছে, এ সময় মোবাইলের স্কিনের অন্য পাশে টাচ লেগে অশ্লীল হিন্দি গান চলে এল। এ সময় শিশুমনে নেতিবাচক প্রশ্ন ও অভিভাবকদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই ইউটিউবকে আরও যুগোপযোগী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে হবে। এ ছাড়া ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত একটা বয়সের বাধ্যবাধকতা রাখা জরুরি। এসবের অ্যাকাউন্ট খুলতে এনআইডি কার্ড বা আঠারো-বিশ বছর প্রমাণ করার উপযুক্ত কোনো কাগজ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হোক।
শিশুরা অনলাইনে গেম ও কার্টুনের দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকে। একেবারে ছোট শিশুরা কার্টুনের প্রতি আগ্রহী আর কিশোর বয়সীরা মোবাইলে ইন্টারনেট-ডেটা ব্যবহার করে গেম খেলতে ভালোবাসে। বর্তমানে দেশে ‘ফ্রি-ফায়ার’ ও ‘পাবজি’ নামে দুটি অনলাইন গেম ব্যাপক প্রচলন হয়েছে। এক সময় মোবাইলে তরুণ বয়সী ও নিঃসঙ্গ ব্যক্তিরা দাবা বা লুডুজাতীয় কিছু খেলতেন শখের বসে। এসব খেলা জনপ্রিয় হওয়ায় এবং করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন গেমের দিকে সুকৌশলে ধাবিত করছে সংঘবদ্ধ অনলাইনভিত্তিক করপোরেট চক্র। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। প্রশ্ন হলো, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি অন্ধ? নাকি দেখেও তারা চুপ করে আছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো হইচই না হলে যে এ দেশে সহজে কোনোকিছুর প্রতিকার মেলে না—এটা অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগে অনলাইনভিত্তিক জীবনাচার আমাদের চলার পথকে সহজ করেছে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে অনলাইন নির্ভরতা ও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য অনলাইন ব্যবহার পুরোপুরি নিরাপদ তো নয়ই; উপরন্তু মারাত্মক ক্ষতির কারণ। মোবাইল, লেপটপ-ডেক্সটপ সহজলভ্য ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পৌঁছে যাওয়ায় যে কেউ চাইলেই অনলাইন ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার অনলাইনের নির্ভরতা বাড়ালেও অনলাইনের নিরাপদ ব্যবহার ও শিশুদের জন্য নিরাপদ অনলাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। আর এই অবাধ ও অপব্যবহার শিগগির নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জাতিকে নিশ্চিত চরম বিপর্যয়ে পড়তে হবে।
২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ‘বস্তু হোয়েল’ নামে অনলাইন ভিডিও গেম আবিষ্কার করে। এটি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও রীতিমতো হইচই ফেলে দেয়। এ গেমের আসক্তি অগণিত কিশোরের মস্তিষ্ক বিকৃতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে। অনেকটা ‘বস্তু হোয়েল’-এর মতোই রোমাঞ্চকর আসক্তি গেম ‘ফ্রি ফায়ার’ চীনের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে তৈরি করে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোডকৃত মোবাইল গেম বলে জানা গেছে। গেমটি অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুট থেকে নেমে ৫০ জন বা তার বেশি খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে ‘ফ্রি ফায়ার’কে আরও উন্নত সংস্করণে ‘ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স’ নামে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এটি আমাদের কাছে দুঃসংবাদ।
২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল দক্ষিণপন্থী এক সন্ত্রাসী। বন্দুক নিয়ে মসজিদে ঢুকে ব্রাশফায়ার করে ৫১ জন সাধারণ মুসলিমকে হত্যা করে। গোটা ঘটনা ক্যামেরায় রেকর্ড ও হত্যার দৃশ্য ফেসবুক লাইভ প্রচার করে হামলাকারী। ওই হামলার আদলে তৈরি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন গেম ‘পাবজি’। এ ধরনের গেম দেশে শিশুদের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে যাচ্ছে। ভার্চুয়ালি অর্থ লেনদেন হচ্ছে এমএমএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
অনলাইন গেম দুটি ফেসবুক লাইভে শেয়ার করে অন্যদের ইনভাইট করা হয় আকর্ষণীয়ভাবে। ফেসবুকে পোস্ট বা লাইভে ইনভাইটকৃত গেমগুলোর ভিডিও-কভার নারী-পুরুষের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও নগ্ন-অর্ধনগ্ন যুবতী দিয়ে সাজানো থাকে। এসব অনলাইন গেম কোমলমতি শিশুকিশোর তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলছে। নিঃসঙ্গতা বা সময় কাটানোর মাধ্যম পরিণত হচ্ছে নেশায়, যা মাদকদ্রব্য গ্রহণের চেয়েও ভয়াবহ। ঝোঁকের বশে তরুণদের আগ্রাসী করে তুলছে এগুলো। ইন্টারনেট-ডেটার খরচ জোগাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। গত ২১ মে চাঁদপুরে মামুন (১৪) নামে এক কিশোর মোবাইলের ডেটা কেনার টাকা না পেয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করে, যা গণমাধ্যমে এসেছে। এমন চলতে থাকলে আমাদের জন্য অশনিসংকেত। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, অপরদিকে গেম দুটিতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি বেড়ে যাওয়ায় তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্কের বিকৃতি, কোমল মনে চিন্তাভাবনায় কুপ্রভাব, খাবার গ্রহণে গড়িমসি, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মাথাব্যথাসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। সুযোগ পেলেই মোবাইল নিয়ে নিরিবিলি স্থানে বসে খেলা, কখনো বা দলবদ্ধভাবে গোপন স্থানগুলোয় বসে খেলতে গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ঝগড়া, রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনা, রাত জেগে দীর্ঘসময় খেলে স্বাস্থ্যহানি হওয়া আমাদের সন্তানদের জন্য গভীর চিন্তার বিষয়। কেননা, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র।
যেভাবে বিদেশি অনলাইন-করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দেশে সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ সহজলভ্য করে পাঠায়, তা শিগগির বন্ধ করতে হবে। প্রজন্মকে ধ্বংস করে—এমন সব অনলাইন গেম খুব দ্রুত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হোক। সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করেছে সেই দেশের আদালত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গুজরাটেও এ গেমটি নিষিদ্ধ ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশেও পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল; কিন্তু কী কারণে ও কার স্বার্থে ফের চালু হয়েছে, তা জানে না দেশের মানুষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘পাবজি’ ও ‘ফ্রি-ফায়ার’ গেম নিষিদ্ধের জন্য বিটিআরসিকে সুপারিশ করেছে, অথচ তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বোপরি সরকারকে বলার কথা এটাই যে, অনলাইনের অপব্যবহার তথা আসক্তি থেকে বাঁচাতে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা ও সুস্থ সংস্কৃতিতে ফেরানো দরকার। সীমিত আকারে হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। দেশের জেলা-উপজেলায় যেসব শিল্পকলা একাডেমি রয়েছে, যেগুলোয় প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়; সেগুলোকে যুগোপযোগী ও গতিশীল করুন, সেখানে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ান। যেসব ক্রীড়া সংগঠন রয়েছে, সেসব সক্রিয় করুন। দেশের সব খেলার মাঠ পরিচর্যা ও বেদখল মাঠ উদ্ধার করে গ্রামীণ খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনের আন্তরিকতা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিবারিক সচেতনতাই পারে জাতিকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে।
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৬ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৬ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৬ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে