সেলিম জাহান
স্মৃতি যদি আমার সঙ্গে প্রতারণা না করে, তাহলে চরণ দুটো বোধ হয় এ রকমের: ‘করিতে পারি না কাজ, সদা ভয় সদা লাজ, সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।’ কামিনী রায়ের এ কবিতা ছোটবেলায় পড়ে পড়ে হদ্দ হয়ে গেছি। মুখস্থ করতে হয়েছে এ কবিতা, এর সারাংশ করতে হয়েছে, ভাবার্থ লিখেছি এ কবিতার।
শৈশব-কৈশোরে আমাকে নানান যন্ত্রণা দেওয়া এ কবিতার আসল মর্মার্থ জীবনের এ প্রান্তে এসে বোধগম্য হলো। একেবারে সাদামাটা কথায় এর অর্থ হচ্ছে ‘মাইনষে কী কবে’। আমরা প্রতিনিয়ত শঙ্কিত আমাদের সম্পর্কে মাইনষে ‘কী ভাববে’ আর ‘কী বলবে’। এই ‘মাইনষে-ভীতি’ আমাদের এক অর্থে শৃঙ্খলিত করে রেখেছে, যার ফলে আমাদের মন যা চায় তা আমরা করি না, যা আমাদের বলার ইচ্ছে, তা আমরা বলি না, জীবনের বহু স্বাদ-আহ্লাদ আমরা অবদমিত করে রাখি।
কটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। কারা এই ‘মাইনষে’? কেন তারা আমাদের নিয়ে কথা কইবে বা ভাববে? এই যে ‘মাইনষে’ আমাদের নিয়ে নানান কথা বলবে—তা কি প্রকৃত শঙ্কা, না আমাদের মনের অমূলক ভীতি? আর ‘মাইনষে’ যদি আমাদের নিয়ে ভাবেই বা বলেই, তাহলে কীই–বা হবে আমাদের?
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এই ‘মাইনষে’ কিন্তু ‘আমজনতা’ নয়, রাস্তার পথচারী নন, এরা হচ্ছে যারা আমাদের চেনাশোনা, জানা-পরিচিত, স্বজন-বান্ধব। এই গোষ্ঠীর মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ আছে, যাঁরা আমাদের প্রিয়জন, শুভানুধ্যায়ী। তাঁরা আমাদের সম্পর্কে নানান কথা বলে বেড়াবে না। তাঁদের কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে তাঁরা আমাদেরই জিজ্ঞেস করবে। এ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বাইরে জানা-পরিচিতদের একটি অংশই আমাদের তথাকথিত ‘মাইনষে’।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এরা আমাদের সম্পর্কে নানান কথা বলবে, রটনা করবে, পরচর্চায় লিপ্ত হবে? এর নানান কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, যেহেতু এরা আমাদের শুভানুধ্যায়ী নয়, সুতরাং আমাদের নামে রটনা রটাতে তাদের বাধবে না। দ্বিতীয়ত, নিন্দা, পরচর্চা বা গুজব রটনা এদের অনেকেরই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে। অতএব, অন্যের নামে নানান কথা প্রচার তাদের অন্যতম চিত্তবিনোদন হতে পারে।
এখন ‘মাইনষে’ যদি আমাদের নিয়ে কিছু ভাবে বা বলে, তাহলে কী আমাদের কিছু হবে? ক্ষণকালের জন্য সেসব বলা-কওয়া সামান্য ঢেউ তুললেও, চূড়ান্ত বিচারে সেসব ঢেউ মিলিয়ে যায়। আমরা হয়তো ভাবি যে, আমাদের সুনাম ‘মাইনষের’ কথায় ক্ষুণ্ণ হয়, আসলে শেষ পর্যন্ত তাতে আমাদের কিছুই হয় না। কারণ, ‘মাইনষের’ সব কওয়া-বলার বেশির ভাগই রটনাভিত্তিক গুজব, যার কোনো ভিত্তি নেই। আর তাতে সত্যতা যদি কিছু থাকেও, যা ‘মাইনষের’ কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা তাকে অনায়াসেই উপেক্ষা করতে পারি।
‘মাইনষের’ এত কর্মকাণ্ডের মধ্যে আমাদের স্বস্তির জায়গাটুকু কোথায়? প্রথমত, ‘মাইনষেরা’ আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বান্ধব নয়, সুতরাং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণও নয়। আসলে আমাদের জীবনে সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রিয়জন কিন্তু মুষ্টিমেয়, যাঁরা আমাদের ভালোবেসে আমাদের হাত ধরে আছে। আমরা যেন এঁদের থেকে আলাদা করে ‘মাইনষেদের’ চিনতে পারি।
দ্বিতীয়ত, মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে ‘মাইনষেদের’ উৎসাহের সময়কাল মাত্র তিন মিনিট। সুতরাং তিন মিনিট পরেই তারা আমাদের ছেড়ে নতুন অন্য কাউকে ধরে। অতএব, আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিন মিনিটের খ্যাতির পরেই আমরা বিস্মৃতির অতল গর্ভে
চলে যাব।
তৃতীয়ত, আমরা যদি সর্ব অর্থেই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ‘মাইনষে’ আমাদের নিয়ে নানান কথা বলতে পারে, কিন্তু তাতে আমাদের সদা শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, মানসিক রোগগ্রস্ত হওয়ার তো নয়ই।
চূড়ান্ত বিচারে, আমাদের জীবন আমাদেরই। আমরা ঠিক করব আমরা কেমন করে জীবনকে যাপন করব। ‘মাইনষের কথার’ ভয়ে আমরা কেন সে যাপনার চাওয়া-পাওয়াকে টুঁটি চিপে হত্যা করব? কেন ‘মাইনষে’কে আমরা আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেব? কেন নিজের জীবনকে শৃঙ্খলিত করব? জীবন তো একটাই এবং আমারই।
স্মৃতি যদি আমার সঙ্গে প্রতারণা না করে, তাহলে চরণ দুটো বোধ হয় এ রকমের: ‘করিতে পারি না কাজ, সদা ভয় সদা লাজ, সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।’ কামিনী রায়ের এ কবিতা ছোটবেলায় পড়ে পড়ে হদ্দ হয়ে গেছি। মুখস্থ করতে হয়েছে এ কবিতা, এর সারাংশ করতে হয়েছে, ভাবার্থ লিখেছি এ কবিতার।
শৈশব-কৈশোরে আমাকে নানান যন্ত্রণা দেওয়া এ কবিতার আসল মর্মার্থ জীবনের এ প্রান্তে এসে বোধগম্য হলো। একেবারে সাদামাটা কথায় এর অর্থ হচ্ছে ‘মাইনষে কী কবে’। আমরা প্রতিনিয়ত শঙ্কিত আমাদের সম্পর্কে মাইনষে ‘কী ভাববে’ আর ‘কী বলবে’। এই ‘মাইনষে-ভীতি’ আমাদের এক অর্থে শৃঙ্খলিত করে রেখেছে, যার ফলে আমাদের মন যা চায় তা আমরা করি না, যা আমাদের বলার ইচ্ছে, তা আমরা বলি না, জীবনের বহু স্বাদ-আহ্লাদ আমরা অবদমিত করে রাখি।
কটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। কারা এই ‘মাইনষে’? কেন তারা আমাদের নিয়ে কথা কইবে বা ভাববে? এই যে ‘মাইনষে’ আমাদের নিয়ে নানান কথা বলবে—তা কি প্রকৃত শঙ্কা, না আমাদের মনের অমূলক ভীতি? আর ‘মাইনষে’ যদি আমাদের নিয়ে ভাবেই বা বলেই, তাহলে কীই–বা হবে আমাদের?
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এই ‘মাইনষে’ কিন্তু ‘আমজনতা’ নয়, রাস্তার পথচারী নন, এরা হচ্ছে যারা আমাদের চেনাশোনা, জানা-পরিচিত, স্বজন-বান্ধব। এই গোষ্ঠীর মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ আছে, যাঁরা আমাদের প্রিয়জন, শুভানুধ্যায়ী। তাঁরা আমাদের সম্পর্কে নানান কথা বলে বেড়াবে না। তাঁদের কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে তাঁরা আমাদেরই জিজ্ঞেস করবে। এ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বাইরে জানা-পরিচিতদের একটি অংশই আমাদের তথাকথিত ‘মাইনষে’।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এরা আমাদের সম্পর্কে নানান কথা বলবে, রটনা করবে, পরচর্চায় লিপ্ত হবে? এর নানান কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, যেহেতু এরা আমাদের শুভানুধ্যায়ী নয়, সুতরাং আমাদের নামে রটনা রটাতে তাদের বাধবে না। দ্বিতীয়ত, নিন্দা, পরচর্চা বা গুজব রটনা এদের অনেকেরই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে। অতএব, অন্যের নামে নানান কথা প্রচার তাদের অন্যতম চিত্তবিনোদন হতে পারে।
এখন ‘মাইনষে’ যদি আমাদের নিয়ে কিছু ভাবে বা বলে, তাহলে কী আমাদের কিছু হবে? ক্ষণকালের জন্য সেসব বলা-কওয়া সামান্য ঢেউ তুললেও, চূড়ান্ত বিচারে সেসব ঢেউ মিলিয়ে যায়। আমরা হয়তো ভাবি যে, আমাদের সুনাম ‘মাইনষের’ কথায় ক্ষুণ্ণ হয়, আসলে শেষ পর্যন্ত তাতে আমাদের কিছুই হয় না। কারণ, ‘মাইনষের’ সব কওয়া-বলার বেশির ভাগই রটনাভিত্তিক গুজব, যার কোনো ভিত্তি নেই। আর তাতে সত্যতা যদি কিছু থাকেও, যা ‘মাইনষের’ কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা তাকে অনায়াসেই উপেক্ষা করতে পারি।
‘মাইনষের’ এত কর্মকাণ্ডের মধ্যে আমাদের স্বস্তির জায়গাটুকু কোথায়? প্রথমত, ‘মাইনষেরা’ আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বান্ধব নয়, সুতরাং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণও নয়। আসলে আমাদের জীবনে সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রিয়জন কিন্তু মুষ্টিমেয়, যাঁরা আমাদের ভালোবেসে আমাদের হাত ধরে আছে। আমরা যেন এঁদের থেকে আলাদা করে ‘মাইনষেদের’ চিনতে পারি।
দ্বিতীয়ত, মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে ‘মাইনষেদের’ উৎসাহের সময়কাল মাত্র তিন মিনিট। সুতরাং তিন মিনিট পরেই তারা আমাদের ছেড়ে নতুন অন্য কাউকে ধরে। অতএব, আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিন মিনিটের খ্যাতির পরেই আমরা বিস্মৃতির অতল গর্ভে
চলে যাব।
তৃতীয়ত, আমরা যদি সর্ব অর্থেই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ‘মাইনষে’ আমাদের নিয়ে নানান কথা বলতে পারে, কিন্তু তাতে আমাদের সদা শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, মানসিক রোগগ্রস্ত হওয়ার তো নয়ই।
চূড়ান্ত বিচারে, আমাদের জীবন আমাদেরই। আমরা ঠিক করব আমরা কেমন করে জীবনকে যাপন করব। ‘মাইনষের কথার’ ভয়ে আমরা কেন সে যাপনার চাওয়া-পাওয়াকে টুঁটি চিপে হত্যা করব? কেন ‘মাইনষে’কে আমরা আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেব? কেন নিজের জীবনকে শৃঙ্খলিত করব? জীবন তো একটাই এবং আমারই।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে