মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
পঁচাত্তরের নৃশংস, ঘৃণ্য এবং জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে ১৮ জন পরিবার-পরিজনসহ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদতবরণ করেন। দৈবশুভে তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। ৩০ জুলাই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বুকফাটা কান্নার রোলের মাঝে পশ্চিম জার্মানি চলে যান বলে তাঁরা দুই বোন প্রাণে বেঁচে যান।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিচক্ষণ ও দূরদর্শিতার সৌভাগ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা পঁচাত্তর-পরবর্তী কয়েক বছরের নির্বাসন শেষে যেদিন ঢাকায় অবতরণ করেন, তখন তিনি সদ্য নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মা, বাবা, ভাই, স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত। সেসব কথা স্মরণ করে বিশাল জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনারাই (জনগণ) আমার সবকিছু।’ বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে সেই জনগণের কল্যাণেই দেশকে অগ্রগতির শীর্ষ শিখরে নিয়ে জাতির পিতার ‘দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’ই হয়ে ওঠে তাঁর একমাত্র ধ্যান-ধারণা-সাধনা। অসম সাহসে সামনে থেকে বিচক্ষণ নেতৃত্বে উদ্ভাবনী দক্ষতায় জাতির পিতার সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ সন্তান জনবন্ধু শেখ হাসিনা অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আজ মানবতার মাতা, বিশ্বের অন্যতম প্রধান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। ১৯৭২ সালের ৮৫ মার্কিন ডলারের মাথাপিছু আয় (জিএনআই) এখন ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ৮০০ মার্কিন ডলারের বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ৩৪ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত। ইতিমধ্যে বাজেটের সাইজ ৬৮৭ কোটি থেকে ৮৭৯ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,০৩, ৬৮১ কোটি টাকায়। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার প্রচেষ্টায় অসম্মানজনক অনুন্নত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে প্রমোশন দেয় জাতিসংঘ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাপূর্ণ আসনে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছি। ১৯৭২ সালের শতকরা ৮০ ভাগ, অর্থাৎ ৬ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে থেকে কোভিড-১৯-পূর্ব সময়ে শতকরা ২০ দশমিক ৩ ভাগ, অর্থাৎ ৩ কোটির কিছু বেশি। নারীর ক্ষমতা ও সমতায়নে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ স্থানে চিহ্নিত করে। বিশ্ব শান্তি সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়—ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর (১৯৭২ সালে ৪৩ মতান্তরে ৪৭), শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২০০ থেকে ২৯-এ। বিদ্যুৎ এখন শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষের ঘরে। সুপেয় পানি এখন জুটছে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষের ভাগ্যে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা সুবিধা এখন শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের আয়ত্তে।
সাড়ে ১২ বছর ধরে একাদিক্রমে সামষ্টিক আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সুদানকে সম্প্রতি ৮৫ লাখ ডলারের বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনে মঞ্জুরি সাহায্য দেওয়া হয়েছে আর শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলারের ঋণ সহযোগিতা। বস্টন কনসালটিং গ্রুপের ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ৪ হাজার মার্কিন ডলার আছে ২.৫ কোটি লোকের হাতে (অথচ কর দিচ্ছেন মাত্র ২৫ লাখ)। একই বছর মাস্টার কার্ড একটি সমীক্ষায় বলেছে, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতার একটি বৃহৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাংলাদেশকে স্থায়ী ভোগ্যপণ্য (কনজ্যুমার ডিউরেবলস) উৎপাদনের একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগযোগ্য দেশ বলে মনে করছে সবাই।
১৯৭৫ সালের পর অবাধ বাজার অর্থনীতি চালু করার ফলে একশ্রেণির ব্যবসায়ী শিল্পপতি তাঁদের মুনাফার লক্ষ্য হাসিলের জন্য দেশকে একটি আমদানিনির্ভর অবস্থানে চিরায়ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ, করোনার টিকা উৎপাদনে দেশজ সক্ষমতার (অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে প্রমাণিত) সুযোগ না দিয়ে শুধুই আমদানি করতে চেয়ে সরকার ও দেশকে এখন বিরাট অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে। অনুরূপভাবে তৈরি পোশাকে পশ্চাৎ-সংযোগ বস্ত্রসহ প্রায় সব উপকরণ, ডিজাইন, উচ্চমাপের পণ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে সিংহভাগ রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানের সর্ববৃহৎ খাতটি বিশালতর সম্প্রসারণকে বিলম্বিত করছেন তাঁরা। বৃহত্তর শিল্পপতি-ব্যবসায়ী গোষ্ঠী অবশ্য ব্যাপক সংস্কারে বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে বিকশিত করার পক্ষে। কিন্তু এই সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীটি তথ্য গোপন করে অথবা কারচুপি করে ব্যাংকে খেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়ে ঋণের টাকা বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখছে। ব্যাপক করখেলাপ উৎসাহদানে পারঙ্গম অপ্রদর্শিত কালোটাকাকে নিয়মিত করদাতাদের তুলনায় কম হারে কর দিয়ে সাদা করার সুযোগে সম্পদ দেশান্তরে সহায়তা করছে। দেশের সামষ্টিক আয়ের বাইরে আরও শতকরা ৮০ ভাগ লুকানো আছে বলে অনুমানে আছে, অর্থাৎ ২৮ লাখ কোটি সামষ্টিক আয়ের ২১ লাখ কোটি কালোটাকা। এর একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এই অর্থবছরে সাদা করা হয়েছে। যদি এ প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়, তাহলে স্ট্যান্ডার্ড রেটে কর দেওয়া এবং বছরান্তে সাদা না করা টাকাকে বাজেয়াপ্ত করার বিধান রাখা জরুরি। সম্প্রতি রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ না দিয়ে (রাজস্ব : জিডিপির অনুপাত শতকরা ১০ ভাগের নিচে) ভবিষ্যতের টেকসই সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদায় বসিয়েছেন। তাঁর যত অর্জন, সেগুলো মজবুত করার জন্য কয়েকটি সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। সমতাপ্রবণ বিতরণ ছাড়া উৎপাদন প্রকৃত টেকসই হয় না। তাই আয়, সম্পদ ও সুযোগে এখন যে দৃষ্টিকটু ও যন্ত্রণাদায়ক বৈষম্য বিরাজমান, তা কমিয়ে আনার জন্য জাতির পিতার ভাষায়, ‘বিত্তবানদের ওপর বেশি বেশি ট্যাক্স বসিয়ে কম ভাগ্যবানদের কল্যাণে বিনিয়োগ করতে হবে (প্রথম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৭৩-৭৮)।’ বেশি ট্যাক্স নয়, ধার্য করা কর আদায়ের লক্ষ্যে:
১. একক হারে ১৫ শতাংশ মূসক আদায়ে কোনো গড়িমসি করা যাবে না।
২. মূসক আদায় করে শতকরা ৮০ ভাগ আদায়কারী তা কোষাগারে জমা দেন
না—কড়াকড়ি করা দরকার এবং শতকরা ২ ভাগ জরিমানা সুদে মাফ করা উচিত হবে না।
২০১৭ থেকে প্রতিশ্রুত ইএফটি/এমডিসি
মেশিনগুলোর সিংহভাগ ২০২১-২২ অর্থবছরেই বসানো প্রয়োজন।
৩. রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন সম্পন্ন করা, কর্মকর্তাদের ডিসক্রিশন কমানো এবং রাজস্ব প্রশাসনে দক্ষ ও দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো খুবই জরুরি ভিত্তিতে করা দরকার।
৪. নীতি, কৌশল ও বাস্তবায়নে আলাদা করে কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. করজাল বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই–এ বিষয়ে সব কটি শিল্প ও বণিক সমিতির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। ২০২৫ সাল নাগাদ শতকরা ১৫ ভাগ এবং ২০৩০ সালে রাজস্ব:
জিডিপি অনুপাতকে শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করা জরুরি। বিটুমিন, গুঁড়ো দুধ, সিরামিকস, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, সিএনজি, দেশি ফল প্রক্রিয়াজাত শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে
শুল্ক ছাড়ে যৌক্তিকতা এনে দেশজ শিল্পের ব্যাপক প্রসার তথা কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার বৃদ্ধি ও আয়-সম্পদ-সুযোগ-বৈষম্য কমানোর সংকল্পবদ্ধ পদক্ষেপ জরুরি। অতি ক্ষুদ্র, কুটির ও ক্ষুদ্রশিল্পে প্রদত্ত সরকারপ্রধানের ঘোষিত প্রণোদনা চলছে না। বিকল্প সাংগঠনিক সংস্কার প্রয়োজন। করোনায় ছিন্নমূলদের জন্য ১৯৯৮-এর ভিজিডি/ভিজিএফ ব্যবস্থায় বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
বাংলাদেশের কিষান-কিষানিরা ১৯৭২ সালের তুলনায় চার গুণ ফসল ফলিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর শ্রমজীবীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সামষ্টিক আয়ে শতকরা ১৭ ভাগের বদলে এখন ৩২ ভাগ অবদান রাখছেন। করছেন কর্মসংস্থান দেশে-বিদেশে এবং বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। তাঁদের নত শির শ্রদ্ধা জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দেশে যেমন চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন ঘটছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতিও লক্ষ করা যায়।
বৈষম্য কমানোর জন্যই বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি। রক্তের নদী সাঁতরিয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশকে সমতার ভিত্তিতে পরিচালনা করার কোনো বিকল্প নেই। কাজটি কঠিন। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই এই কঠিন পথে হেঁটে সফল হওয়া সম্ভব। তিনি যে এটা পারেন, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
পঁচাত্তরের নৃশংস, ঘৃণ্য এবং জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে ১৮ জন পরিবার-পরিজনসহ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদতবরণ করেন। দৈবশুভে তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। ৩০ জুলাই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বুকফাটা কান্নার রোলের মাঝে পশ্চিম জার্মানি চলে যান বলে তাঁরা দুই বোন প্রাণে বেঁচে যান।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিচক্ষণ ও দূরদর্শিতার সৌভাগ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা পঁচাত্তর-পরবর্তী কয়েক বছরের নির্বাসন শেষে যেদিন ঢাকায় অবতরণ করেন, তখন তিনি সদ্য নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মা, বাবা, ভাই, স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত। সেসব কথা স্মরণ করে বিশাল জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনারাই (জনগণ) আমার সবকিছু।’ বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে সেই জনগণের কল্যাণেই দেশকে অগ্রগতির শীর্ষ শিখরে নিয়ে জাতির পিতার ‘দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’ই হয়ে ওঠে তাঁর একমাত্র ধ্যান-ধারণা-সাধনা। অসম সাহসে সামনে থেকে বিচক্ষণ নেতৃত্বে উদ্ভাবনী দক্ষতায় জাতির পিতার সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ সন্তান জনবন্ধু শেখ হাসিনা অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আজ মানবতার মাতা, বিশ্বের অন্যতম প্রধান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। ১৯৭২ সালের ৮৫ মার্কিন ডলারের মাথাপিছু আয় (জিএনআই) এখন ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ৮০০ মার্কিন ডলারের বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ৩৪ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত। ইতিমধ্যে বাজেটের সাইজ ৬৮৭ কোটি থেকে ৮৭৯ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,০৩, ৬৮১ কোটি টাকায়। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার প্রচেষ্টায় অসম্মানজনক অনুন্নত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে প্রমোশন দেয় জাতিসংঘ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাপূর্ণ আসনে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছি। ১৯৭২ সালের শতকরা ৮০ ভাগ, অর্থাৎ ৬ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে থেকে কোভিড-১৯-পূর্ব সময়ে শতকরা ২০ দশমিক ৩ ভাগ, অর্থাৎ ৩ কোটির কিছু বেশি। নারীর ক্ষমতা ও সমতায়নে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ স্থানে চিহ্নিত করে। বিশ্ব শান্তি সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়—ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর (১৯৭২ সালে ৪৩ মতান্তরে ৪৭), শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২০০ থেকে ২৯-এ। বিদ্যুৎ এখন শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষের ঘরে। সুপেয় পানি এখন জুটছে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষের ভাগ্যে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা সুবিধা এখন শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের আয়ত্তে।
সাড়ে ১২ বছর ধরে একাদিক্রমে সামষ্টিক আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সুদানকে সম্প্রতি ৮৫ লাখ ডলারের বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনে মঞ্জুরি সাহায্য দেওয়া হয়েছে আর শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলারের ঋণ সহযোগিতা। বস্টন কনসালটিং গ্রুপের ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ৪ হাজার মার্কিন ডলার আছে ২.৫ কোটি লোকের হাতে (অথচ কর দিচ্ছেন মাত্র ২৫ লাখ)। একই বছর মাস্টার কার্ড একটি সমীক্ষায় বলেছে, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতার একটি বৃহৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাংলাদেশকে স্থায়ী ভোগ্যপণ্য (কনজ্যুমার ডিউরেবলস) উৎপাদনের একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগযোগ্য দেশ বলে মনে করছে সবাই।
১৯৭৫ সালের পর অবাধ বাজার অর্থনীতি চালু করার ফলে একশ্রেণির ব্যবসায়ী শিল্পপতি তাঁদের মুনাফার লক্ষ্য হাসিলের জন্য দেশকে একটি আমদানিনির্ভর অবস্থানে চিরায়ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ, করোনার টিকা উৎপাদনে দেশজ সক্ষমতার (অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে প্রমাণিত) সুযোগ না দিয়ে শুধুই আমদানি করতে চেয়ে সরকার ও দেশকে এখন বিরাট অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে। অনুরূপভাবে তৈরি পোশাকে পশ্চাৎ-সংযোগ বস্ত্রসহ প্রায় সব উপকরণ, ডিজাইন, উচ্চমাপের পণ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে সিংহভাগ রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানের সর্ববৃহৎ খাতটি বিশালতর সম্প্রসারণকে বিলম্বিত করছেন তাঁরা। বৃহত্তর শিল্পপতি-ব্যবসায়ী গোষ্ঠী অবশ্য ব্যাপক সংস্কারে বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে বিকশিত করার পক্ষে। কিন্তু এই সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীটি তথ্য গোপন করে অথবা কারচুপি করে ব্যাংকে খেলাপিদের আরও সুবিধা দিয়ে ঋণের টাকা বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখছে। ব্যাপক করখেলাপ উৎসাহদানে পারঙ্গম অপ্রদর্শিত কালোটাকাকে নিয়মিত করদাতাদের তুলনায় কম হারে কর দিয়ে সাদা করার সুযোগে সম্পদ দেশান্তরে সহায়তা করছে। দেশের সামষ্টিক আয়ের বাইরে আরও শতকরা ৮০ ভাগ লুকানো আছে বলে অনুমানে আছে, অর্থাৎ ২৮ লাখ কোটি সামষ্টিক আয়ের ২১ লাখ কোটি কালোটাকা। এর একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এই অর্থবছরে সাদা করা হয়েছে। যদি এ প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়, তাহলে স্ট্যান্ডার্ড রেটে কর দেওয়া এবং বছরান্তে সাদা না করা টাকাকে বাজেয়াপ্ত করার বিধান রাখা জরুরি। সম্প্রতি রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ না দিয়ে (রাজস্ব : জিডিপির অনুপাত শতকরা ১০ ভাগের নিচে) ভবিষ্যতের টেকসই সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদায় বসিয়েছেন। তাঁর যত অর্জন, সেগুলো মজবুত করার জন্য কয়েকটি সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। সমতাপ্রবণ বিতরণ ছাড়া উৎপাদন প্রকৃত টেকসই হয় না। তাই আয়, সম্পদ ও সুযোগে এখন যে দৃষ্টিকটু ও যন্ত্রণাদায়ক বৈষম্য বিরাজমান, তা কমিয়ে আনার জন্য জাতির পিতার ভাষায়, ‘বিত্তবানদের ওপর বেশি বেশি ট্যাক্স বসিয়ে কম ভাগ্যবানদের কল্যাণে বিনিয়োগ করতে হবে (প্রথম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৭৩-৭৮)।’ বেশি ট্যাক্স নয়, ধার্য করা কর আদায়ের লক্ষ্যে:
১. একক হারে ১৫ শতাংশ মূসক আদায়ে কোনো গড়িমসি করা যাবে না।
২. মূসক আদায় করে শতকরা ৮০ ভাগ আদায়কারী তা কোষাগারে জমা দেন
না—কড়াকড়ি করা দরকার এবং শতকরা ২ ভাগ জরিমানা সুদে মাফ করা উচিত হবে না।
২০১৭ থেকে প্রতিশ্রুত ইএফটি/এমডিসি
মেশিনগুলোর সিংহভাগ ২০২১-২২ অর্থবছরেই বসানো প্রয়োজন।
৩. রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন সম্পন্ন করা, কর্মকর্তাদের ডিসক্রিশন কমানো এবং রাজস্ব প্রশাসনে দক্ষ ও দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো খুবই জরুরি ভিত্তিতে করা দরকার।
৪. নীতি, কৌশল ও বাস্তবায়নে আলাদা করে কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. করজাল বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই–এ বিষয়ে সব কটি শিল্প ও বণিক সমিতির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। ২০২৫ সাল নাগাদ শতকরা ১৫ ভাগ এবং ২০৩০ সালে রাজস্ব:
জিডিপি অনুপাতকে শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করা জরুরি। বিটুমিন, গুঁড়ো দুধ, সিরামিকস, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, সিএনজি, দেশি ফল প্রক্রিয়াজাত শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে
শুল্ক ছাড়ে যৌক্তিকতা এনে দেশজ শিল্পের ব্যাপক প্রসার তথা কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার বৃদ্ধি ও আয়-সম্পদ-সুযোগ-বৈষম্য কমানোর সংকল্পবদ্ধ পদক্ষেপ জরুরি। অতি ক্ষুদ্র, কুটির ও ক্ষুদ্রশিল্পে প্রদত্ত সরকারপ্রধানের ঘোষিত প্রণোদনা চলছে না। বিকল্প সাংগঠনিক সংস্কার প্রয়োজন। করোনায় ছিন্নমূলদের জন্য ১৯৯৮-এর ভিজিডি/ভিজিএফ ব্যবস্থায় বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
বাংলাদেশের কিষান-কিষানিরা ১৯৭২ সালের তুলনায় চার গুণ ফসল ফলিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর শ্রমজীবীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সামষ্টিক আয়ে শতকরা ১৭ ভাগের বদলে এখন ৩২ ভাগ অবদান রাখছেন। করছেন কর্মসংস্থান দেশে-বিদেশে এবং বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। তাঁদের নত শির শ্রদ্ধা জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দেশে যেমন চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন ঘটছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতিও লক্ষ করা যায়।
বৈষম্য কমানোর জন্যই বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি। রক্তের নদী সাঁতরিয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশকে সমতার ভিত্তিতে পরিচালনা করার কোনো বিকল্প নেই। কাজটি কঠিন। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই এই কঠিন পথে হেঁটে সফল হওয়া সম্ভব। তিনি যে এটা পারেন, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে