ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছোট্ট একটা ভূখণ্ডে বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে এই সময়কালের অর্জনকে বড়ই বলতে হবে। তবে বাংলাদেশ এখন একটি বিশেষ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যেটাকে আমরা বলতে পারি ‘ক্রিটিক্যাল ক্রসরোড’। আমাদের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবেই হচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের বিষয়টি বিশ্বের সব জায়গায় স্বীকৃতি পাচ্ছে। এখন এখানে দরকারি কাজটি হচ্ছে এই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করা। উন্নয়নের এই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার সমতাভিত্তিক উন্নয়ন, জনগণের উপকারে উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য রক্ষা করা। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতাও জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ, প্রবৃদ্ধি কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি টেকসই করার জন্য নীতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব মিলিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করেই ক্রান্তিকালের প্রসঙ্গটি আসছে। এই সময়ে এসে যদি আমরা বিষয়গুলোর প্রতি সঠিকভাবে নজর দিই এবং সমাধান করার চেষ্টা করি, তাহলে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা ধরে রাখা সহজ হবে। ক্রান্তিকালে ভুল হলে মাশুল দিতে হবে প্রচুর, দেশ আবার পেছনের অন্ধকার দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং এই পথটুকু আসতে আমাদের ৫০ বছর লেগে গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই সময়ের মধ্যে আমাদের তুলনায় অনেকটা বেশি এগিয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এখন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, কীভাবে আরও দ্রুত এগোনো যায়। ৫০ বছর সময়টা কিন্তু কম নয়। এই সময়ে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশ নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিভিন্ন রকম চড়াই-উতরাই থাকবে একটা দেশে। আমাদের দেশটা তুলনামূলকভাবে নতুন। নতুন দেশে গণতন্ত্র সুসংহত করতে অনেক সময় লাগে।
মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা, গণতন্ত্র বিষয়ে সচেতনতা এবং তা প্রতিষ্ঠিত হতেও সময় দরকার। তার মানে এটা নয় যে, সুশাসনকে বিসর্জন দিয়ে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাদ দিয়ে আমরা শুধু উন্নয়নের দিকে যাব। যে দেশগুলোর কথা বলেছি, তারা কিন্তু তা করেনি। বিভিন্ন সরকারের সময়ে বিভিন্ন দেশে সুশাসনে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে; কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি জোর দেওয়া হয়। এ কারণে ওই দেশগুলো এতদূর এগিয়েছে। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সরকার কিন্তু দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তবু সেখানে জনগণের কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় কাজে আমরা যখন নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত হয় এবং সে অনুযায়ী কাজ হয়ে থাকে। কিন্তু যে কথাটি বলার: বিশ্বের কাতারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মসম্পাদনে প্রাতিষ্ঠানিক যে দুর্বলতা ও ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। আমাদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আছে: বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, বিইআরসি, সিকিউরিটি কমিশন–এসব প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও কর্মতৎপর লোকজনকে আনতে হবে এবং সেখানে কাউকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়ে আসা যাবে না। অর্থনীতি পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সুষ্ঠু ও কার্যকরী প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দুর্বল হয়, তাহলে কোনো নীতি, পরিকল্পনা কাজে লাগবে না। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না।
এটার সঙ্গে আরও কিছু ক্ষেত্রে নজর দেওয়া উচিত–সরকারি সেক্টর বা খাত। এগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এই দুটি বিভাগে যদি আমরা বিশেষভাবে নজর দিতে না পারি, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। আমরা বলছি, শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে; কিন্তু এখানে গুণগত মানের ব্যাপার আছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হওয়ার পরও অনেকে কাজ পাচ্ছে না, সেটি নিয়েও ভাবতে হবে। কারগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার মানটা বাড়াতে হবে। কারণ, সূচকের দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শতবর্ষে পা দেওয়া দেশের ঐতিহ্যবাহী বড় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়ে থাকে, অথচ আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে এটা দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত শিক্ষায় ভালো করছে, এমনকি সিঙ্গাপুর ও চীন এ বিষয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তারা পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
আমরা সেই কাতারে নেই; বরং পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশের অনেক সেক্টরে উন্নয়ন হচ্ছে সত্য; কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মনোযোগটা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের যে প্রাথমিক বা স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। অর্থের বরাদ্দ যে পরিমাণ বেড়েছে, তার তুলনায় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হয়নি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামো বেড়েছে, সেবার মানটা বাড়েনি। এখন স্বাস্থ্যের অনেক সেবা বেসরকারি খাতে চলে যাওয়ায় মানুষ বেসরকারি হাসপাতালনির্ভর হয়ে পড়ছে। সেখানেও আছে অনেক বিড়ম্বনা। কোনো মানুষের যদি চিকিৎসার জন্য এক শ টাকা ব্যয় হয়, সেখানে কমপক্ষে ৬০ টাকা রোগীর পকেট থেকে দিতে হয়। এই ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এই জিনিসগুলোর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারির ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সর্বোপরি সমন্বয়হীন পদক্ষেপ প্রকট হয়ে সামনে আসছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর দক্ষতা, জবাবদিহি বাড়াতে হবে। সারা বছর দায়সারা গোছের কাজ চলছে; দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি না থাকায় সাধারণ জনগণ বঞ্চনা ও অবিচারের শিকার হচ্ছ। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। দেশকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে হলে উন্নয়ন ও উদ্যোগের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সমতাভিত্তিক, টেকসই এবং কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কালক্ষেপণ, অজুহাত আর অবহেলা নয়, দেশটিই জনগণের এবং সেটিই হবে মূলমন্ত্র।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করা হবে তাতে সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক বৈষম্য কমানোয় গুরুত্ব দিতে হবে। এ পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে অপেক্ষাকৃত কম পৌঁছেছে। অল্প কিছু মানুষের কাছে আয়ের উৎস এবং সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। এমনকি ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রবাহের দিকে তাকালেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখব, ব্যাংকের ঋণগুলো অল্প কিছু মানুষের কাছে–সোজা কথায় অল্প কিছু ব্যবসায়ী এবং বিশেষ অঞ্চলের বিশেষ ব্যক্তির কাছে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। কারণ, যারা সৎ ও উদ্যমী, ক্ষমতার উৎস থেকে দূর–এমন বড় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং যাঁরা নতুন উদ্যোক্তা তাঁরা ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে দিন দিন ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা অসম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল মূলত রাজনৈতিক স্বাধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনৈতিক স্বাধিকার দরকার। এই দুটি বিষয় পাশাপাশি রেখে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের জন্যই সব উদ্যোগ নিতে হবে; কিন্তু উন্নয়নের চালিকাশক্তি কারা, কাদের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে–সেটা যদি বিবেচনা ও কার্যক্রমে প্রতিফলিত না হয়, তবে তা টেকসই এবং জনকল্যাণমুখী হবে না। সে জন্য গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং উন্নয়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সমানতালে চলতে হবে। এক পায়ে ভর করে চললে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যাবে না। দুই পায়েই ভর করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
আমাদের সামনে এখন যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো আছে, তা শুধু প্রবৃদ্ধি দিয়ে সমাধান হবে না। আবার মূল্যস্ফীতি, যেটার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটা রোধ করেও কাজ হবে না। কারণ, মানুষের যদি আয় না থাকে, আয়ের সংস্থান না থাকলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে লাভ হবে না। এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছানো। একজন ধনী লোক কন্ট্রিবিউট করছেন, তিনি যেমন সুবিধা পাবেন, তেমনি একজন গরিব লোক, যিনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন, তিনিও যেন বঞ্চিত না হন। লক্ষ করলে দেখা যায়, পৃথিবীর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশের সামাজিক, মানবিক ও নাগরিক অধিকারের যে সূচকগুলো আছে, সে তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি। এখানে ধনী-গরিবের বৈষম্যও বেশি। সুইডেন, নরওয়ে, আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের মতো দেশেও বৈষম্য আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এত প্রকট নয়। বিশেষ করে উত্তর ইউরোপের দেশগুলো কল্যাণমুখী দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও সেটা লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আমরা বস্তুবাদী বিষয়গুলো খেয়াল করি। কিন্তু কোন খাতে কীভাবে উন্নতি হচ্ছে, সেটার প্রভাব কীভাবে পড়ছে, তা খেয়াল করি না। কয়েকটা সূচক এবং এগুলোর উল্লম্ফনের চেয়ে সামাজিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের মাত্রা ও গুণগত মান বাড়াতে হবে। জনসংখ্যা বাড়ছে, এটা একটা সমস্যা। প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূমিসম্পদের অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের কথা ভাবতে হবে। পরমুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের সামর্থ্য ও সম্পদের সুষ্ঠু ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দ্রুত সমতাভিত্তিক সমাজ ও কল্যাণমুখী শাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক। অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছোট্ট একটা ভূখণ্ডে বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে এই সময়কালের অর্জনকে বড়ই বলতে হবে। তবে বাংলাদেশ এখন একটি বিশেষ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যেটাকে আমরা বলতে পারি ‘ক্রিটিক্যাল ক্রসরোড’। আমাদের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবেই হচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের বিষয়টি বিশ্বের সব জায়গায় স্বীকৃতি পাচ্ছে। এখন এখানে দরকারি কাজটি হচ্ছে এই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করা। উন্নয়নের এই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার সমতাভিত্তিক উন্নয়ন, জনগণের উপকারে উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য রক্ষা করা। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতাও জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ, প্রবৃদ্ধি কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি টেকসই করার জন্য নীতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব মিলিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করেই ক্রান্তিকালের প্রসঙ্গটি আসছে। এই সময়ে এসে যদি আমরা বিষয়গুলোর প্রতি সঠিকভাবে নজর দিই এবং সমাধান করার চেষ্টা করি, তাহলে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা ধরে রাখা সহজ হবে। ক্রান্তিকালে ভুল হলে মাশুল দিতে হবে প্রচুর, দেশ আবার পেছনের অন্ধকার দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং এই পথটুকু আসতে আমাদের ৫০ বছর লেগে গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই সময়ের মধ্যে আমাদের তুলনায় অনেকটা বেশি এগিয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এখন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, কীভাবে আরও দ্রুত এগোনো যায়। ৫০ বছর সময়টা কিন্তু কম নয়। এই সময়ে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশ নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিভিন্ন রকম চড়াই-উতরাই থাকবে একটা দেশে। আমাদের দেশটা তুলনামূলকভাবে নতুন। নতুন দেশে গণতন্ত্র সুসংহত করতে অনেক সময় লাগে।
মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা, গণতন্ত্র বিষয়ে সচেতনতা এবং তা প্রতিষ্ঠিত হতেও সময় দরকার। তার মানে এটা নয় যে, সুশাসনকে বিসর্জন দিয়ে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাদ দিয়ে আমরা শুধু উন্নয়নের দিকে যাব। যে দেশগুলোর কথা বলেছি, তারা কিন্তু তা করেনি। বিভিন্ন সরকারের সময়ে বিভিন্ন দেশে সুশাসনে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে; কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি জোর দেওয়া হয়। এ কারণে ওই দেশগুলো এতদূর এগিয়েছে। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সরকার কিন্তু দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তবু সেখানে জনগণের কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় কাজে আমরা যখন নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত হয় এবং সে অনুযায়ী কাজ হয়ে থাকে। কিন্তু যে কথাটি বলার: বিশ্বের কাতারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মসম্পাদনে প্রাতিষ্ঠানিক যে দুর্বলতা ও ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। আমাদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আছে: বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, বিইআরসি, সিকিউরিটি কমিশন–এসব প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও কর্মতৎপর লোকজনকে আনতে হবে এবং সেখানে কাউকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়ে আসা যাবে না। অর্থনীতি পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সুষ্ঠু ও কার্যকরী প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দুর্বল হয়, তাহলে কোনো নীতি, পরিকল্পনা কাজে লাগবে না। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না।
এটার সঙ্গে আরও কিছু ক্ষেত্রে নজর দেওয়া উচিত–সরকারি সেক্টর বা খাত। এগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এই দুটি বিভাগে যদি আমরা বিশেষভাবে নজর দিতে না পারি, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। আমরা বলছি, শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে; কিন্তু এখানে গুণগত মানের ব্যাপার আছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হওয়ার পরও অনেকে কাজ পাচ্ছে না, সেটি নিয়েও ভাবতে হবে। কারগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার মানটা বাড়াতে হবে। কারণ, সূচকের দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শতবর্ষে পা দেওয়া দেশের ঐতিহ্যবাহী বড় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়ে থাকে, অথচ আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে এটা দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত শিক্ষায় ভালো করছে, এমনকি সিঙ্গাপুর ও চীন এ বিষয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তারা পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
আমরা সেই কাতারে নেই; বরং পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশের অনেক সেক্টরে উন্নয়ন হচ্ছে সত্য; কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মনোযোগটা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের যে প্রাথমিক বা স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। অর্থের বরাদ্দ যে পরিমাণ বেড়েছে, তার তুলনায় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হয়নি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামো বেড়েছে, সেবার মানটা বাড়েনি। এখন স্বাস্থ্যের অনেক সেবা বেসরকারি খাতে চলে যাওয়ায় মানুষ বেসরকারি হাসপাতালনির্ভর হয়ে পড়ছে। সেখানেও আছে অনেক বিড়ম্বনা। কোনো মানুষের যদি চিকিৎসার জন্য এক শ টাকা ব্যয় হয়, সেখানে কমপক্ষে ৬০ টাকা রোগীর পকেট থেকে দিতে হয়। এই ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এই জিনিসগুলোর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারির ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সর্বোপরি সমন্বয়হীন পদক্ষেপ প্রকট হয়ে সামনে আসছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর দক্ষতা, জবাবদিহি বাড়াতে হবে। সারা বছর দায়সারা গোছের কাজ চলছে; দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি না থাকায় সাধারণ জনগণ বঞ্চনা ও অবিচারের শিকার হচ্ছ। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। দেশকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে হলে উন্নয়ন ও উদ্যোগের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সমতাভিত্তিক, টেকসই এবং কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কালক্ষেপণ, অজুহাত আর অবহেলা নয়, দেশটিই জনগণের এবং সেটিই হবে মূলমন্ত্র।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করা হবে তাতে সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক বৈষম্য কমানোয় গুরুত্ব দিতে হবে। এ পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে অপেক্ষাকৃত কম পৌঁছেছে। অল্প কিছু মানুষের কাছে আয়ের উৎস এবং সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। এমনকি ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রবাহের দিকে তাকালেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখব, ব্যাংকের ঋণগুলো অল্প কিছু মানুষের কাছে–সোজা কথায় অল্প কিছু ব্যবসায়ী এবং বিশেষ অঞ্চলের বিশেষ ব্যক্তির কাছে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। কারণ, যারা সৎ ও উদ্যমী, ক্ষমতার উৎস থেকে দূর–এমন বড় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং যাঁরা নতুন উদ্যোক্তা তাঁরা ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে দিন দিন ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা অসম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল মূলত রাজনৈতিক স্বাধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনৈতিক স্বাধিকার দরকার। এই দুটি বিষয় পাশাপাশি রেখে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের জন্যই সব উদ্যোগ নিতে হবে; কিন্তু উন্নয়নের চালিকাশক্তি কারা, কাদের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে–সেটা যদি বিবেচনা ও কার্যক্রমে প্রতিফলিত না হয়, তবে তা টেকসই এবং জনকল্যাণমুখী হবে না। সে জন্য গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং উন্নয়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সমানতালে চলতে হবে। এক পায়ে ভর করে চললে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যাবে না। দুই পায়েই ভর করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
আমাদের সামনে এখন যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো আছে, তা শুধু প্রবৃদ্ধি দিয়ে সমাধান হবে না। আবার মূল্যস্ফীতি, যেটার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটা রোধ করেও কাজ হবে না। কারণ, মানুষের যদি আয় না থাকে, আয়ের সংস্থান না থাকলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে লাভ হবে না। এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছানো। একজন ধনী লোক কন্ট্রিবিউট করছেন, তিনি যেমন সুবিধা পাবেন, তেমনি একজন গরিব লোক, যিনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন, তিনিও যেন বঞ্চিত না হন। লক্ষ করলে দেখা যায়, পৃথিবীর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশের সামাজিক, মানবিক ও নাগরিক অধিকারের যে সূচকগুলো আছে, সে তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি। এখানে ধনী-গরিবের বৈষম্যও বেশি। সুইডেন, নরওয়ে, আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের মতো দেশেও বৈষম্য আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এত প্রকট নয়। বিশেষ করে উত্তর ইউরোপের দেশগুলো কল্যাণমুখী দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও সেটা লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আমরা বস্তুবাদী বিষয়গুলো খেয়াল করি। কিন্তু কোন খাতে কীভাবে উন্নতি হচ্ছে, সেটার প্রভাব কীভাবে পড়ছে, তা খেয়াল করি না। কয়েকটা সূচক এবং এগুলোর উল্লম্ফনের চেয়ে সামাজিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের মাত্রা ও গুণগত মান বাড়াতে হবে। জনসংখ্যা বাড়ছে, এটা একটা সমস্যা। প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূমিসম্পদের অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের কথা ভাবতে হবে। পরমুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের সামর্থ্য ও সম্পদের সুষ্ঠু ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দ্রুত সমতাভিত্তিক সমাজ ও কল্যাণমুখী শাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক। অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৮ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৮ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে