আব্দুর রাজ্জাক
অনেক দিন আগের একটি সোনা গল্প। এক লোক রাজার কাছ থেকে একটি ঘোড়া অনুদান পেয়েছিল তার সংসার নির্বাহের জন্য। দয়ালু রাজা ওই ব্যক্তিকে ঘোড়াটা দান করার সঙ্গে সঙ্গে, প্রতিদিন সাড়ে তিন কেজি করে ছোলাও মঞ্জুর করেছিলেন ঘোড়ার খাবার হিসেবে। রাজা ছিলেন খুবই দয়ালু।
কিছুদিন ওই লোকের ভালোই সংসার চলছিল। একদিন চিন্তা করল ঘোড়ার খাবার থেকে কিছু সাশ্রয় করা যায় কি না। পরদিন ঘোড়াটাকে সাড়ে তিন কেজি থেকে এক মুঠো ছোলা কম দিল, অনায়াসে ঘোড়াটির দিন চলে গেল। তার পরের দিন দুই মুঠো ছোলা কম দিল, দিন চলে গেল অনায়াসে। এ রকম পর্যায়ক্রমে কম দিতে দিতে একদিন আর কোনো ছোলা অবশিষ্ট থাকল না। যেদিন ঘোড়াটির খাওয়ার ছোলা অবশিষ্ট থাকল না, সেদিন ঘোড়াটি মারা গেল। লোকটি আক্ষেপ করে বলতে লাগল, ‘আমার ঘোড়াটি যেদিন থেকে না খেয়ে থাকা শিখল, সেই দিন ঘোড়াটি মারা গেল।’ নিজের কোনো দোষ দেখল না।
কোন এক দেশে খুবই জনপ্রিয় জনদরদি নেতা ছিলেন। সব সময় দেশের জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার চিন্তা করতেন। নেতা তাঁর পূর্বসূরি পিতার কথা চিন্তা করে, পিতার আদর্শ অনুসরণ করে, নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে, দেশের মানুষের মঙ্গলের কৃপায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন।
নেতার দেশটিতে প্রায় ৫০০ তল্লাট ছিল, প্রায় ৫০০ নির্বাহী ওই তল্লাটগুলোর দায়িত্বে ছিল। ওই তল্লাটের যারা দায়িত্বে ছিল, তাদের বলা হতো ততা, অর্থাৎ তল্লাটের তালুকদার। ততার সহকারী ছিল ভূমির তালুকদার, অর্থাৎ ভূতা।
দেশের নেতা একদিন চিন্তা করলেন, যারা আশ্রয়হীন ভূমিহীন, তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। যে চিন্তা সেই কাজ, প্রায় প্রতিটি তল্লাটে ততাদের ও ভূতাদের মাধ্যমে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ করলেন।
ততা জায়গা বরাদ্দ করে ভূতার কাছে বলল, জায়গা হবে ভালো, ইট হবে এক নম্বরের চেয়ে একটু নিচে, দুই নম্বরের গ্রেড-এ, সিমেন্ট হবে সাতটায় একটা। এখান থেকে ততা দশ ভাগ সাশ্রয় করল।
ভূতা তল্লাটের কারিগরকে বলল, জায়গা সামান্য নিচু হলে অসুবিধা নাই। ইট হবে খাঁটি দুই নম্বর, গ্রেড হবে বি, সিমেন্ট হবে আটটায় একটা। ভূতা দশ ভাগ সাশ্রয় করল।
কারিগর তাঁবেদারকে বলল, জমি যদি একটু নিচু ও ভেজা হয়, কোনো অসুবিধা নাই। ইট হবে খাঁটি দুই নম্বর, কোনো গ্রেডের বালাই না হলেও চলবে, সিমেন্ট হবে নয়টায় একটা। কারিগর সাশ্রয় করল দশ ভাগ।
তাঁবেদার মিস্ত্রিকে বলল, জমি যেমন হোক কোনো অসুবিধা নাই, ইট হবে তিন নম্বর, সিমেন্ট হবে দশটায় একটা। তাঁবেদার সাশ্রয় করল দশ ভাগ।
মিস্ত্রি জমি ঠিক করল নিচু এবং কিছুটা পানির তলে, বর্ষাকালে পানি থাকে, অন্য সময় কিছুটা শুকনা, ইট দিল তিন নম্বরের খানিকটা নিচে, চার নম্বরের কাছাকাছি। সিমেন্ট দিল এগারোটায় একটা।
নির্মিত হলো গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়স্থল, খাঁটি হলুদ রঙের বার্নিশ দেওয়া হলো, দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়, ওপরে বাহারি রঙের টিন, সারি সারি সুন্দর নয়নাভিরাম ঘর তৈরি হলো।
গৃহহীনদের যেদিন ওই ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হলো, সেই দিন বেশ কিছু ঘর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল।
তখন ততা ভূতা কারিগর তাঁবেদার সবাই বলে উঠল, ‘আহ্! জন্মজন্মান্তরের আশ্রয়হীন মানুষগুলো যেদিন নিজের ঘরে থাকা শিখল, সেদিনই তাদের ঘরগুলো ভেঙে পড়ল।’
সবাই নিজ নিজ চেয়ারে বসে ভাবতে লাগল, সে তো সামান্য শতভাগের দশ ভাগ মাত্র সাশ্রয় করেছে। আসলে ওদের কপালে কোনো স্থায়ী আশ্রয় নাই। আমরা তো অনেক কষ্টসাধ্য করে অভাগাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম, সবই ওদের ভাগ্যের লিখন। আশ্রয়হীনরা ওই কপাল নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছিল এই স্বাধীন দেশের মাটিতে।
ওই সব ততা-ভূতা নিজেদের কোনো দোষ দেখতে পেল না, তারা তো তল্লাটের নির্বাহী। হয়তো একদিন এই কর্মকাণ্ড সবাই ভুলে যাবে, যার যার অবস্থানে সে একইভাবে অবস্থান করবে, তালুকদারের বড় ভাই জমিদার হিসেবে।
লেখক: প্রকৌশলী
অনেক দিন আগের একটি সোনা গল্প। এক লোক রাজার কাছ থেকে একটি ঘোড়া অনুদান পেয়েছিল তার সংসার নির্বাহের জন্য। দয়ালু রাজা ওই ব্যক্তিকে ঘোড়াটা দান করার সঙ্গে সঙ্গে, প্রতিদিন সাড়ে তিন কেজি করে ছোলাও মঞ্জুর করেছিলেন ঘোড়ার খাবার হিসেবে। রাজা ছিলেন খুবই দয়ালু।
কিছুদিন ওই লোকের ভালোই সংসার চলছিল। একদিন চিন্তা করল ঘোড়ার খাবার থেকে কিছু সাশ্রয় করা যায় কি না। পরদিন ঘোড়াটাকে সাড়ে তিন কেজি থেকে এক মুঠো ছোলা কম দিল, অনায়াসে ঘোড়াটির দিন চলে গেল। তার পরের দিন দুই মুঠো ছোলা কম দিল, দিন চলে গেল অনায়াসে। এ রকম পর্যায়ক্রমে কম দিতে দিতে একদিন আর কোনো ছোলা অবশিষ্ট থাকল না। যেদিন ঘোড়াটির খাওয়ার ছোলা অবশিষ্ট থাকল না, সেদিন ঘোড়াটি মারা গেল। লোকটি আক্ষেপ করে বলতে লাগল, ‘আমার ঘোড়াটি যেদিন থেকে না খেয়ে থাকা শিখল, সেই দিন ঘোড়াটি মারা গেল।’ নিজের কোনো দোষ দেখল না।
কোন এক দেশে খুবই জনপ্রিয় জনদরদি নেতা ছিলেন। সব সময় দেশের জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার চিন্তা করতেন। নেতা তাঁর পূর্বসূরি পিতার কথা চিন্তা করে, পিতার আদর্শ অনুসরণ করে, নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে, দেশের মানুষের মঙ্গলের কৃপায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন।
নেতার দেশটিতে প্রায় ৫০০ তল্লাট ছিল, প্রায় ৫০০ নির্বাহী ওই তল্লাটগুলোর দায়িত্বে ছিল। ওই তল্লাটের যারা দায়িত্বে ছিল, তাদের বলা হতো ততা, অর্থাৎ তল্লাটের তালুকদার। ততার সহকারী ছিল ভূমির তালুকদার, অর্থাৎ ভূতা।
দেশের নেতা একদিন চিন্তা করলেন, যারা আশ্রয়হীন ভূমিহীন, তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। যে চিন্তা সেই কাজ, প্রায় প্রতিটি তল্লাটে ততাদের ও ভূতাদের মাধ্যমে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ করলেন।
ততা জায়গা বরাদ্দ করে ভূতার কাছে বলল, জায়গা হবে ভালো, ইট হবে এক নম্বরের চেয়ে একটু নিচে, দুই নম্বরের গ্রেড-এ, সিমেন্ট হবে সাতটায় একটা। এখান থেকে ততা দশ ভাগ সাশ্রয় করল।
ভূতা তল্লাটের কারিগরকে বলল, জায়গা সামান্য নিচু হলে অসুবিধা নাই। ইট হবে খাঁটি দুই নম্বর, গ্রেড হবে বি, সিমেন্ট হবে আটটায় একটা। ভূতা দশ ভাগ সাশ্রয় করল।
কারিগর তাঁবেদারকে বলল, জমি যদি একটু নিচু ও ভেজা হয়, কোনো অসুবিধা নাই। ইট হবে খাঁটি দুই নম্বর, কোনো গ্রেডের বালাই না হলেও চলবে, সিমেন্ট হবে নয়টায় একটা। কারিগর সাশ্রয় করল দশ ভাগ।
তাঁবেদার মিস্ত্রিকে বলল, জমি যেমন হোক কোনো অসুবিধা নাই, ইট হবে তিন নম্বর, সিমেন্ট হবে দশটায় একটা। তাঁবেদার সাশ্রয় করল দশ ভাগ।
মিস্ত্রি জমি ঠিক করল নিচু এবং কিছুটা পানির তলে, বর্ষাকালে পানি থাকে, অন্য সময় কিছুটা শুকনা, ইট দিল তিন নম্বরের খানিকটা নিচে, চার নম্বরের কাছাকাছি। সিমেন্ট দিল এগারোটায় একটা।
নির্মিত হলো গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়স্থল, খাঁটি হলুদ রঙের বার্নিশ দেওয়া হলো, দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়, ওপরে বাহারি রঙের টিন, সারি সারি সুন্দর নয়নাভিরাম ঘর তৈরি হলো।
গৃহহীনদের যেদিন ওই ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হলো, সেই দিন বেশ কিছু ঘর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল।
তখন ততা ভূতা কারিগর তাঁবেদার সবাই বলে উঠল, ‘আহ্! জন্মজন্মান্তরের আশ্রয়হীন মানুষগুলো যেদিন নিজের ঘরে থাকা শিখল, সেদিনই তাদের ঘরগুলো ভেঙে পড়ল।’
সবাই নিজ নিজ চেয়ারে বসে ভাবতে লাগল, সে তো সামান্য শতভাগের দশ ভাগ মাত্র সাশ্রয় করেছে। আসলে ওদের কপালে কোনো স্থায়ী আশ্রয় নাই। আমরা তো অনেক কষ্টসাধ্য করে অভাগাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম, সবই ওদের ভাগ্যের লিখন। আশ্রয়হীনরা ওই কপাল নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছিল এই স্বাধীন দেশের মাটিতে।
ওই সব ততা-ভূতা নিজেদের কোনো দোষ দেখতে পেল না, তারা তো তল্লাটের নির্বাহী। হয়তো একদিন এই কর্মকাণ্ড সবাই ভুলে যাবে, যার যার অবস্থানে সে একইভাবে অবস্থান করবে, তালুকদারের বড় ভাই জমিদার হিসেবে।
লেখক: প্রকৌশলী
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে