রুমা মোদক
এই যে ভাবনাগুলো এসেই হারিয়ে যায়। পরীমণি, ক্লাব সংস্কৃতি, নোয়াম চমস্কি, আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখা বিশ্বভুবন। দেখছি আর দ্রুতই হারিয়ে ফেলছি। স্তরের ওপর স্তর, আস্তরণ পড়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি কী মনে রাখা দরকার কী নয়। আমরা বিস্মৃত হচ্ছি দ্রুত। ফলে আমাদের মানবিক আবেগগুলো শর্তাধীন, কখনোবা গুরুত্বহীন হয়ে আমাদের জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে নেহাতই দিনযাপনে।
বাবুল মিয়া আমার কলেজের এমএলএসএস। বারবার কল দিচ্ছে। কাল রাতে বাসায় ফিরেছি রাত আড়াইটায়। মহামারিকালে অনেক দিন পর থিয়েটার-আড্ডা, সুযোগটা ছাড়িনি তাই। বাবুল মিয়া কল দিয়েই যাচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকার লোন তুলছে সে ব্যাংক থেকে, আমি গ্যারান্টার। ব্যাংকে গিয়ে কয়েকটা সিগনেচার দিলে আজই পেয়ে যাবে সে টাকাটা। কিন্তু আমি যে আজ খুব ক্লান্ত, বাবুল মিয়া ঠিক ভরসা করতে পারছে না।
ম্যাডাম, পাঁচ মিনিট!
কয়টার মধ্যে এলে চলবে, বাবুল মিয়া?
পাঁচটার মধ্যে আসেন ম্যাডাম, প্লিজ।
ওর গলার আকুতি আর আমার ক্লান্তি পরস্পর লড়াই করে।
বিনু ভিডিও কল দিয়েছে মুম্বাই থেকে। বিনু দেশ ছেড়েছে ৩৩ বছর। অথচ আমাদের বালিকাবেলার বন্ধুত্ব অমলিন। ওর ছেলে বাবান, মেডিকেল তৃতীয় বর্ষে পড়ে। গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেয়ে মাকে নিয়ে বেরিয়েছে লং ড্রাইভে। মনে কর, যেন বিদেশ ঘুরে, মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে...আনন্দ উপচে পড়ছে ওর কণ্ঠে। আমি ওর ভিডিওতে মুম্বাই শহর দেখছি। মোবাইল ঘুরিয়ে বিনু দেখাচ্ছে আমাকে বিচ। না, এটা জুহু বিচ নয়। অন্য বিচ। মুম্বাই শহরেই। পাশেই ঘন গাছপালা, হাইরাইজ বিল্ডিং, নতুন গড়ে ওঠা মুম্বাই ইউরোপের মতো। পাওবই এলাকায় চান্দিভ্যালি স্টুডিও। বিনু বলছিল, শুটিংয়ের সময় রাস্তাটায় জ্যাম লেগে থাকে, এখন সুনসান।
বাবুল মিয়া আবার ফোন দিচ্ছে। তৈরি হয়ে অগত্যা ব্যাংকে দৌড়ালাম। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি। অম্বুবাচি শুরু হয়েছে, ধরণির ঋতুমতী হওয়ার কাল। মিথগুলোর সঙ্গে প্রকৃতির কী বিজ্ঞানসম্মত যোগাযোগ। এমন ধারা বৃষ্টিস্নাত শীতলতায় ম্যানেজারের রুমের এসির ঠান্ডা বাতাস শীত লাগিয়ে দিচ্ছে। কয়েকটা সিগনেচার দিয়ে বেরিয়ে এলাম দ্রুত।
এত টাকা দিয়ে কী করবে, বাবুল মিয়া?
জায়গা কিনেছি, ম্যাডাম। বাড়ি করব।
কত বেতন পাও?
সব মিলিয়ে প্রায় বিশ হাজার।
ব্যাংকে প্রতি মাসে সাড়ে বারো হাজার জমা দিলে খাবে কী?
কষ্ট করে চলব, ম্যাডাম। তবু টাউনে নিজের একটা বাড়ি...।
বৃষ্টি ধরছে না। স্মার্টফোনে ফেসবুক ব্রাউজ করে দেখছি, পরীমণির নতুন ভিডিও ভাইরাল। মাতাল হয়ে ব্যবসায়ী নাসিরকে সে বের হয়ে যেতে বলছে। হতে পারে। প্রথম দিন অভিযোগটা আমলে নিলেই তদন্তে সব বেরিয়ে আসত। দোষী, নির্দোষ সবার তো আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে। আমরা মুনিয়াকে ভুলে গেছি, পরীমণিকেও ভুলে যাব। যেমন নোয়াম চমস্কি ভুলে যাবে রিপনকে। একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের প্রতিক্রিয়ার আয়ু বড়জোর চব্বিশ ঘণ্টার টাইমলাইন।রিকশা ভাড়াটা দিয়ে দিল বাবুল মিয়া—বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও। ওর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতায় কোনো খাদ নেই।
ম্যাডাম, এক বছর ধরে অনেকের কাছে ঘুরছি, কেউ গ্যারান্টার হয়নি।
যন্ত্রচালিত রিকশা। ড্রাইভার টিপ্পনী কাটে: ম্যাডাম দিলে ভাড়া আরও বেশি দিত। ওর ভাষায় চমকে গেলাম আমি। একদম আঞ্চলিকতা নেই। জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম: বাড়ি কই তোমার?
হবিগঞ্জেই ম্যাডাম।
এত সুন্দর কথা বল!
আমি ঢাকা স্কলাসটিকায় নাইট গার্ডের চাকরি করতাম। মহামারিতে চাকরি হারিয়ে লোন করে এই রিকশাটা কিনেছি মাস ছয়েক আগে।
জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম জানেন, আমাদের এই রিকশাগুলো আর চালাতে দেবে না।
তাই নাকি? আমি জানি না তো।
ম্যাডাম, কী করব এখন বলতে পারেন?
আমি জানি না কী বলব। বাসায় ফিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লিপস দেখলাম, বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে যন্ত্রচালিত রিকশা। চালক ছেলেটির নাম নান্টু। ওর রিকশাটাও এভাবে গুঁড়ো হয়ে যাবে? রাস্তায় এগুলো নামার আগে কেউ দেখার ছিল না? নান্টুর জন্য খারাপ লাগতে থাকে। বাবুল মিয়ার চেহারাটাও মনে পড়ে, শহরে ওর নিজের বাড়ি হবে। এই ইস্যুর ওপর ইস্যু এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ার যুগে আমরা ভুলে যাই, কোনটা মনে রাখা দরকার আমাদের, কোনটা নয়।
লেখক: সাহিত্যিক
এই যে ভাবনাগুলো এসেই হারিয়ে যায়। পরীমণি, ক্লাব সংস্কৃতি, নোয়াম চমস্কি, আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখা বিশ্বভুবন। দেখছি আর দ্রুতই হারিয়ে ফেলছি। স্তরের ওপর স্তর, আস্তরণ পড়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি কী মনে রাখা দরকার কী নয়। আমরা বিস্মৃত হচ্ছি দ্রুত। ফলে আমাদের মানবিক আবেগগুলো শর্তাধীন, কখনোবা গুরুত্বহীন হয়ে আমাদের জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে নেহাতই দিনযাপনে।
বাবুল মিয়া আমার কলেজের এমএলএসএস। বারবার কল দিচ্ছে। কাল রাতে বাসায় ফিরেছি রাত আড়াইটায়। মহামারিকালে অনেক দিন পর থিয়েটার-আড্ডা, সুযোগটা ছাড়িনি তাই। বাবুল মিয়া কল দিয়েই যাচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকার লোন তুলছে সে ব্যাংক থেকে, আমি গ্যারান্টার। ব্যাংকে গিয়ে কয়েকটা সিগনেচার দিলে আজই পেয়ে যাবে সে টাকাটা। কিন্তু আমি যে আজ খুব ক্লান্ত, বাবুল মিয়া ঠিক ভরসা করতে পারছে না।
ম্যাডাম, পাঁচ মিনিট!
কয়টার মধ্যে এলে চলবে, বাবুল মিয়া?
পাঁচটার মধ্যে আসেন ম্যাডাম, প্লিজ।
ওর গলার আকুতি আর আমার ক্লান্তি পরস্পর লড়াই করে।
বিনু ভিডিও কল দিয়েছে মুম্বাই থেকে। বিনু দেশ ছেড়েছে ৩৩ বছর। অথচ আমাদের বালিকাবেলার বন্ধুত্ব অমলিন। ওর ছেলে বাবান, মেডিকেল তৃতীয় বর্ষে পড়ে। গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেয়ে মাকে নিয়ে বেরিয়েছে লং ড্রাইভে। মনে কর, যেন বিদেশ ঘুরে, মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে...আনন্দ উপচে পড়ছে ওর কণ্ঠে। আমি ওর ভিডিওতে মুম্বাই শহর দেখছি। মোবাইল ঘুরিয়ে বিনু দেখাচ্ছে আমাকে বিচ। না, এটা জুহু বিচ নয়। অন্য বিচ। মুম্বাই শহরেই। পাশেই ঘন গাছপালা, হাইরাইজ বিল্ডিং, নতুন গড়ে ওঠা মুম্বাই ইউরোপের মতো। পাওবই এলাকায় চান্দিভ্যালি স্টুডিও। বিনু বলছিল, শুটিংয়ের সময় রাস্তাটায় জ্যাম লেগে থাকে, এখন সুনসান।
বাবুল মিয়া আবার ফোন দিচ্ছে। তৈরি হয়ে অগত্যা ব্যাংকে দৌড়ালাম। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি। অম্বুবাচি শুরু হয়েছে, ধরণির ঋতুমতী হওয়ার কাল। মিথগুলোর সঙ্গে প্রকৃতির কী বিজ্ঞানসম্মত যোগাযোগ। এমন ধারা বৃষ্টিস্নাত শীতলতায় ম্যানেজারের রুমের এসির ঠান্ডা বাতাস শীত লাগিয়ে দিচ্ছে। কয়েকটা সিগনেচার দিয়ে বেরিয়ে এলাম দ্রুত।
এত টাকা দিয়ে কী করবে, বাবুল মিয়া?
জায়গা কিনেছি, ম্যাডাম। বাড়ি করব।
কত বেতন পাও?
সব মিলিয়ে প্রায় বিশ হাজার।
ব্যাংকে প্রতি মাসে সাড়ে বারো হাজার জমা দিলে খাবে কী?
কষ্ট করে চলব, ম্যাডাম। তবু টাউনে নিজের একটা বাড়ি...।
বৃষ্টি ধরছে না। স্মার্টফোনে ফেসবুক ব্রাউজ করে দেখছি, পরীমণির নতুন ভিডিও ভাইরাল। মাতাল হয়ে ব্যবসায়ী নাসিরকে সে বের হয়ে যেতে বলছে। হতে পারে। প্রথম দিন অভিযোগটা আমলে নিলেই তদন্তে সব বেরিয়ে আসত। দোষী, নির্দোষ সবার তো আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে। আমরা মুনিয়াকে ভুলে গেছি, পরীমণিকেও ভুলে যাব। যেমন নোয়াম চমস্কি ভুলে যাবে রিপনকে। একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের প্রতিক্রিয়ার আয়ু বড়জোর চব্বিশ ঘণ্টার টাইমলাইন।রিকশা ভাড়াটা দিয়ে দিল বাবুল মিয়া—বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও। ওর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতায় কোনো খাদ নেই।
ম্যাডাম, এক বছর ধরে অনেকের কাছে ঘুরছি, কেউ গ্যারান্টার হয়নি।
যন্ত্রচালিত রিকশা। ড্রাইভার টিপ্পনী কাটে: ম্যাডাম দিলে ভাড়া আরও বেশি দিত। ওর ভাষায় চমকে গেলাম আমি। একদম আঞ্চলিকতা নেই। জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম: বাড়ি কই তোমার?
হবিগঞ্জেই ম্যাডাম।
এত সুন্দর কথা বল!
আমি ঢাকা স্কলাসটিকায় নাইট গার্ডের চাকরি করতাম। মহামারিতে চাকরি হারিয়ে লোন করে এই রিকশাটা কিনেছি মাস ছয়েক আগে।
জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম জানেন, আমাদের এই রিকশাগুলো আর চালাতে দেবে না।
তাই নাকি? আমি জানি না তো।
ম্যাডাম, কী করব এখন বলতে পারেন?
আমি জানি না কী বলব। বাসায় ফিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লিপস দেখলাম, বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে যন্ত্রচালিত রিকশা। চালক ছেলেটির নাম নান্টু। ওর রিকশাটাও এভাবে গুঁড়ো হয়ে যাবে? রাস্তায় এগুলো নামার আগে কেউ দেখার ছিল না? নান্টুর জন্য খারাপ লাগতে থাকে। বাবুল মিয়ার চেহারাটাও মনে পড়ে, শহরে ওর নিজের বাড়ি হবে। এই ইস্যুর ওপর ইস্যু এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ার যুগে আমরা ভুলে যাই, কোনটা মনে রাখা দরকার আমাদের, কোনটা নয়।
লেখক: সাহিত্যিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১৪ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে