প্রশান্ত মৃধা
একটু খেতাবি বাংলায় লিখলে, গ্রামগুলো ক্রমেই শহর হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা একেবারে সরাসরি হয়তো তা নয় যে ইতিমধ্যে এ দেশের সব গ্রাম পাশের শহরের চেহারা নিয়েছে। তবে কিছু বদল নিশ্চয়ই হয়েছে।
যার অভিজ্ঞতায় এমন মনে হয়েছে, তাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বললাম। আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন আমি কম বুঝি! তা তিনি ভাবতেই পারেন। আজন্ম আমাকে চেনেন, ফলে তাঁর চাহনিতে অমন বারতা ঝরে পড়লে তা নিয়ে আর সন্দেহের কী! সঙ্গে ও চোখে আরও একটি কথা, এসব গ্রাম গাঁয়ে বাস না করলে ঠিকঠাক বোঝা যায় না। দু–এক দিনের জন্য বেড়ানোর ঢঙে এসব শুনলাম–এ তা নয়। এখানে থেকে উপলব্ধি করতে হয়। এ তো একেবারে দার্শনিকের বাণী। চাইলে ওই উপলব্ধির ধরনকে বাউল বা সুফিদের জগৎ পর্যন্ত টেনে নেওয়া যায়। যেখানে অন্তরের উপলব্ধিতেই সব দূরত্ব ঘুচে যায়। যদিও অত জটিল বিষয় কিছু নয়। তবু বাস করার আর শোনা থেকে বোঝার ব্যবধান তো থাকেই। বুঝিয়ে বলার আবেদন জানাতে হলো।
আগে মানুষ দরকারি সব কাজে জেলা সদরে যেত। সাধ্যে কুলোলে যেত থানা সদরে। থানা সদরও তখন প্রায় গ্রামই ছিল। নিত্যপ্রয়োজনের বাইরে পাওয়া যেত না কিছু। সপ্তাহে দুদিন বসত পাশের কোনো হাট। সেখানে কাঁচাবাজার। চাল-ডাল তো মানুষ হাট থেকে প্রায়ই কিনত না।
সে তার মতো করে বলে চলেছে। খুব যে গুছিয়ে বলছে তা নয়। তবে যেটা যেভাবে মনে হচ্ছে তার, সেভাবে জানাচ্ছে আর কি। আমি তার কথামতো এখানে বসবাস না করে যতটুকু পারি বোঝার চেষ্টা করি।
এখন গ্রামের মানুষ বড়সড় প্রয়োজন না হলে থানা সদরে যায় না। পাশের যেকোনো গঞ্জে বা হাটে গেলে চলে। হাটগুলো সব বাজার। সেখানে সবই পাওয়া যায়। যদি বিশেষ কিছু দরকার হয়, তাহলে আগে দোকানদারকে ফোন করে। এনে রাখে। তাতে থানা সদরে যাওয়ার চেয়ে ওখানে খরচ কম পড়ে।
এ কথা তো এ গাঁয়ের অনেকের কাছেই শুনেছি। দেখেছিও। যে কোনো প্রয়োজনে মোটরসাইকেলে একটান দিয়ে পাশের বাজার বা উপজেলা সদরে চলে যায়। যার মোটরসাইকেল নেই, সে যায় বাইসাইকেলে। বাকিরা ফেরে ভ্যানে বা হেঁটে। ভ্যান প্রায় সবই ইঞ্জিনচালিত। নাম নিয়েছে ভটভটি। আর আছে টমটম ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। টমটমও ব্যাটারিচালিত, তবে চেহারায় রিকশার চেয়ে সিএনজির ধরনটাই বেশি। কিন্তু এসব সুযোগ-সুবিধায় গ্রামগুলোর শহর হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক কোথায়?
ভাবলাম, তাকে বলি বিদ্যুৎ, ডিশ এন্টেনা, ফ্রিজ কিংবা পাকা রাস্তা আর দোকানে টিস্যু পেপার, মিনারেল ওয়াটার, ঠোঁটে গোল্ডলিফ-শেখ-পলমল সিগারেট–এসব কি ওই পরিবর্তনের কারণ? না, এ অত গূঢ় কথা নয় আর সেটুকু বোঝানোর জন্য এত কথার পেল্লাই অবতরণিকারও প্রয়োজন ছিল না।
আগে মানুষ প্রয়োজনে শহরে যেত, এখন কোর্ট-কাছারি ছাড়া কোনো কারণে জেলা শহরে যায় না। সদরের জিনিস তার কাছে আসে। ওই যে পাকা রাস্তা, ওই রাস্তাই সে সুযোগ করে দিয়েছে। ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে বাড়ির বউ-ঝিসহ সবাই যা দেখে, প্রায় সবই শহরের; কিন্তু সেসব পণ্য এসে যাচ্ছে তার হাতের মুঠোয়। অনেকেরই হাতে স্মার্টফোন। মানুষ তো এখন আর কারও মুখের দিকে তাকিয়ে কথা কয় না। কথা কয় ফোনের দিকে তাকিয়ে যেন ওখানে তার মাছ ধরার ফাতনা, কথা খোঁট দেবে!
এ কথাগুলো সে এমনভাবে বলল, যে আমার বেশ হাসিই পেল। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে হাসলে যদি তার বলা কথার গুরুত্ব কমে যায়, তাই তার সঙ্গে মিলিয়ে নিজেও ঠোঁটে হাসিটুকু ঝুলিয়ে রাখলাম।
ওই বাজারফেরত মানুষ এখন শহরের মানুষের মতন হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে ফেরে, নয়তো আরসি-কোকের বোতল। বাদাম বা চানাচুর তো গ্রামের দোকানেই পাওয়া যায়। ওসব আনতে কে আর বাজারে যায়। এই যে বদল, এখন মানুষ শহরে প্রায় যায়-ই না; কিন্তু ওসব কিনে আর খেয়ে শহরের মানুষের আচরণের চেষ্টা করে, তাহলে শহর ধীরে ধীরে গ্রামে এল না? গ্রামের শহর হওয়া কি আর দালানকোঠায়? মানুষই তো আসল। মানুষই রতন। সে মানুষই তো শহরের কায়দা রপ্ত করছে! যা তার জন্য দরকারের নয়, তা-ও! তাহলে শহর গ্রামের দিকে আসছে না?
লেখক: সাহিত্যিক
একটু খেতাবি বাংলায় লিখলে, গ্রামগুলো ক্রমেই শহর হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা একেবারে সরাসরি হয়তো তা নয় যে ইতিমধ্যে এ দেশের সব গ্রাম পাশের শহরের চেহারা নিয়েছে। তবে কিছু বদল নিশ্চয়ই হয়েছে।
যার অভিজ্ঞতায় এমন মনে হয়েছে, তাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বললাম। আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন আমি কম বুঝি! তা তিনি ভাবতেই পারেন। আজন্ম আমাকে চেনেন, ফলে তাঁর চাহনিতে অমন বারতা ঝরে পড়লে তা নিয়ে আর সন্দেহের কী! সঙ্গে ও চোখে আরও একটি কথা, এসব গ্রাম গাঁয়ে বাস না করলে ঠিকঠাক বোঝা যায় না। দু–এক দিনের জন্য বেড়ানোর ঢঙে এসব শুনলাম–এ তা নয়। এখানে থেকে উপলব্ধি করতে হয়। এ তো একেবারে দার্শনিকের বাণী। চাইলে ওই উপলব্ধির ধরনকে বাউল বা সুফিদের জগৎ পর্যন্ত টেনে নেওয়া যায়। যেখানে অন্তরের উপলব্ধিতেই সব দূরত্ব ঘুচে যায়। যদিও অত জটিল বিষয় কিছু নয়। তবু বাস করার আর শোনা থেকে বোঝার ব্যবধান তো থাকেই। বুঝিয়ে বলার আবেদন জানাতে হলো।
আগে মানুষ দরকারি সব কাজে জেলা সদরে যেত। সাধ্যে কুলোলে যেত থানা সদরে। থানা সদরও তখন প্রায় গ্রামই ছিল। নিত্যপ্রয়োজনের বাইরে পাওয়া যেত না কিছু। সপ্তাহে দুদিন বসত পাশের কোনো হাট। সেখানে কাঁচাবাজার। চাল-ডাল তো মানুষ হাট থেকে প্রায়ই কিনত না।
সে তার মতো করে বলে চলেছে। খুব যে গুছিয়ে বলছে তা নয়। তবে যেটা যেভাবে মনে হচ্ছে তার, সেভাবে জানাচ্ছে আর কি। আমি তার কথামতো এখানে বসবাস না করে যতটুকু পারি বোঝার চেষ্টা করি।
এখন গ্রামের মানুষ বড়সড় প্রয়োজন না হলে থানা সদরে যায় না। পাশের যেকোনো গঞ্জে বা হাটে গেলে চলে। হাটগুলো সব বাজার। সেখানে সবই পাওয়া যায়। যদি বিশেষ কিছু দরকার হয়, তাহলে আগে দোকানদারকে ফোন করে। এনে রাখে। তাতে থানা সদরে যাওয়ার চেয়ে ওখানে খরচ কম পড়ে।
এ কথা তো এ গাঁয়ের অনেকের কাছেই শুনেছি। দেখেছিও। যে কোনো প্রয়োজনে মোটরসাইকেলে একটান দিয়ে পাশের বাজার বা উপজেলা সদরে চলে যায়। যার মোটরসাইকেল নেই, সে যায় বাইসাইকেলে। বাকিরা ফেরে ভ্যানে বা হেঁটে। ভ্যান প্রায় সবই ইঞ্জিনচালিত। নাম নিয়েছে ভটভটি। আর আছে টমটম ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। টমটমও ব্যাটারিচালিত, তবে চেহারায় রিকশার চেয়ে সিএনজির ধরনটাই বেশি। কিন্তু এসব সুযোগ-সুবিধায় গ্রামগুলোর শহর হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক কোথায়?
ভাবলাম, তাকে বলি বিদ্যুৎ, ডিশ এন্টেনা, ফ্রিজ কিংবা পাকা রাস্তা আর দোকানে টিস্যু পেপার, মিনারেল ওয়াটার, ঠোঁটে গোল্ডলিফ-শেখ-পলমল সিগারেট–এসব কি ওই পরিবর্তনের কারণ? না, এ অত গূঢ় কথা নয় আর সেটুকু বোঝানোর জন্য এত কথার পেল্লাই অবতরণিকারও প্রয়োজন ছিল না।
আগে মানুষ প্রয়োজনে শহরে যেত, এখন কোর্ট-কাছারি ছাড়া কোনো কারণে জেলা শহরে যায় না। সদরের জিনিস তার কাছে আসে। ওই যে পাকা রাস্তা, ওই রাস্তাই সে সুযোগ করে দিয়েছে। ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে বাড়ির বউ-ঝিসহ সবাই যা দেখে, প্রায় সবই শহরের; কিন্তু সেসব পণ্য এসে যাচ্ছে তার হাতের মুঠোয়। অনেকেরই হাতে স্মার্টফোন। মানুষ তো এখন আর কারও মুখের দিকে তাকিয়ে কথা কয় না। কথা কয় ফোনের দিকে তাকিয়ে যেন ওখানে তার মাছ ধরার ফাতনা, কথা খোঁট দেবে!
এ কথাগুলো সে এমনভাবে বলল, যে আমার বেশ হাসিই পেল। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে হাসলে যদি তার বলা কথার গুরুত্ব কমে যায়, তাই তার সঙ্গে মিলিয়ে নিজেও ঠোঁটে হাসিটুকু ঝুলিয়ে রাখলাম।
ওই বাজারফেরত মানুষ এখন শহরের মানুষের মতন হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে ফেরে, নয়তো আরসি-কোকের বোতল। বাদাম বা চানাচুর তো গ্রামের দোকানেই পাওয়া যায়। ওসব আনতে কে আর বাজারে যায়। এই যে বদল, এখন মানুষ শহরে প্রায় যায়-ই না; কিন্তু ওসব কিনে আর খেয়ে শহরের মানুষের আচরণের চেষ্টা করে, তাহলে শহর ধীরে ধীরে গ্রামে এল না? গ্রামের শহর হওয়া কি আর দালানকোঠায়? মানুষই তো আসল। মানুষই রতন। সে মানুষই তো শহরের কায়দা রপ্ত করছে! যা তার জন্য দরকারের নয়, তা-ও! তাহলে শহর গ্রামের দিকে আসছে না?
লেখক: সাহিত্যিক
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১০ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে