ড۔ সেলিম মাহমুদ
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী করার বিষয়টিকে অনেকেই নিছক মাইনাস-টু তত্ত্ব বলে প্রচার করে আসছে। এটি মাইনাস-টু তত্ত্ব ছিল না; বাংলাদেশের রাজনীতি ও এ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে নস্যাৎ করার জন্য এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বিপরীতে বাংলাদেশকে পরিচালনার লক্ষ্যে এটি ছিল একটি ধারাবাহিক গভীর ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন।
এটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি ব্যাকআপ ক্যু—‘ক্যু উইদিন দ্য ক্যু’। ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার জোট সরকার দীর্ঘ পাঁচ বছর যেভাবে দুর্নীতি, অপশাসন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছিল, তাতে দেশে–বিদেশে খালেদা জিয়া চূড়ান্ত অর্থে তাঁর রাজনৈতিক সত্তা হারিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর আর কোনো ‘ক্রেডিবিলিটি’ ছিল না। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার এই রাজনৈতিক অপমৃত্যুর (political and notional death) পর যখন এটি একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই পরবর্তী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন, ঠিক তখনই ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিগুলো নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠল। তারা ১৫ আগস্ট, তেসরা নভেম্বর, ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্রগুলোর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ দেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের আয়োজন করে। সেই ষড়যন্ত্রের প্রকৃত মোটিভ আড়ালের জন্যই এটিকে তারা নাম দিয়েছিল মাইনাস-টু থিওরি, যা প্রকৃত অর্থে ছিল মাইনাস শেখ হাসিনা থিওরি।
সেদিন এ দেশের ছাত্র–জনতা, আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা–কর্মীর প্রতিবাদ, আর শেখ হাসিনার প্রতি অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, এক-এগারোর ঘটনা ছিল একটি ব্যাক-আপ প্ল্যান। অর্থাৎ, একটি ঘটনা ঘটানোর পর সেটি ব্যর্থ হলে পরবর্তী ঘটনা হিসেবে এটি ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। পূর্ববর্তী ঘটনাটি ছিল—বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে পরবর্তী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত ছিল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরও তারা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কোনো ভরসা পাচ্ছিল না। তখন বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করানো হলো। তিনি একাধারে রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান হলেন। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এই ক্যু করানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারেন। হাওয়া ভবনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামাতের এই ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগবিরোধী গোষ্ঠী। এই ক্যু বাস্তবায়নে তারাই কাজ করেছিল। এই গোষ্ঠী যখন দেখল, শেখ হাসিনার প্রতি এ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে এবং তারাই তাঁকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে, ঠিক তখনই ২০০৭ সালের এগারো জানুয়ারি তারা তাদের ব্যাক-আপ প্ল্যান বাস্তবায়ন করল। অর্থাৎ ‘ক্যু উইদিন দ্য ক্যু’ ঘটাল।
২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে ক্যু ঘটিয়েছিল দৃশ্যত আওয়ামী লীগবিরোধী ও বিএনপি-জামায়াতের পক্ষের শক্তি। আর এক-এগারো অর্থাৎ, দ্বিতীয় ক্যু ঘটিয়েছিল সুশীলের আবরণে ঢাকা মূলত একই শক্তি। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাঁকে সাব-জেলে বন্দী রাখার ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য। তারা ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের নামে মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই টার্গেট করেছিল। এটি ছিল অনেকটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মতো। এ দেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ ও শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার সেদিন পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। তারা শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনার মুক্তির পর তদানীন্তন রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ পর্দার আড়ালে যেতে শুরু করে। জনগণের তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে এক-এগারো সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। শেখ হাসিনার প্রতি এ দেশের মানুষের তীব্র ভালোবাসা ও সমর্থনের কারণে ২৯ অক্টোবরের ইয়াজউদ্দিনের ক্যু এবং এক-এগারোর ব্যাকআপ ক্যু পরাস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা।
যদি সেদিন শেখ হাসিনাকে ওই অশুভ শক্তি সফল হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা কী হতো, তা চিন্তাও করতে পারি না। আল্লাহর অশেষ রহমতে এ দেশের জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বাতি প্রজ্বালিত রাখতে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। গত এক যুগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক কার্যকর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। শেখ হাসিনার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, মেধা, সাহস, দূরদর্শিতা ও অসীম দেশপ্রেমের কারণে তিনি ভূরাজনৈতিক ছককে আমাদের অনুকূলে আনতে সক্ষম হন। উন্নয়নশীল বিশ্বের খুব কম রাষ্ট্রনায়কই এই ধরনের সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ কোনো উন্নয়ন সহযোগী কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী নয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। তিনিই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এবং এই অপশক্তিকে পরাভূত করে জাতির পিতাকে এ দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কারণেই জাতির পিতার খুনিদের বিচার হয়েছে। কিছু খুনি পলাতক থাকায় বিচারের রায় এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে শেখ হাসিনাই কলঙ্কমুক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সব বিধান বাতিল করেছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ (constitutional entrenchment) তৈরি করেছেন, যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই এ দেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার, পরিবেশ, কৃষি, শিল্পায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনীত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র তাঁর। এ দেশের মানুষের জন্য তাঁর প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয়’ গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা। তিনি সারা বিশ্বে মহা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী করোনা মহামারি অসাধারণ দক্ষতা, পারদর্শিতা, সাহস ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবিলা করছেন। বৈশ্বিক এই মহামারিতে মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আজ ১৩ বছর পর প্রিয় নেত্রীর কারাবন্দী দিবসে তাঁর প্রতি জাতির পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। এক-এগারোর প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এখনো তারা হুংকার দিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নীতি, আদর্শ, দর্শন ও কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশকে পরাভূত করতে পারবে না।
ড۔ সেলিম মাহমুদ: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী করার বিষয়টিকে অনেকেই নিছক মাইনাস-টু তত্ত্ব বলে প্রচার করে আসছে। এটি মাইনাস-টু তত্ত্ব ছিল না; বাংলাদেশের রাজনীতি ও এ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে নস্যাৎ করার জন্য এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বিপরীতে বাংলাদেশকে পরিচালনার লক্ষ্যে এটি ছিল একটি ধারাবাহিক গভীর ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন।
এটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি ব্যাকআপ ক্যু—‘ক্যু উইদিন দ্য ক্যু’। ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার জোট সরকার দীর্ঘ পাঁচ বছর যেভাবে দুর্নীতি, অপশাসন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছিল, তাতে দেশে–বিদেশে খালেদা জিয়া চূড়ান্ত অর্থে তাঁর রাজনৈতিক সত্তা হারিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর আর কোনো ‘ক্রেডিবিলিটি’ ছিল না। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার এই রাজনৈতিক অপমৃত্যুর (political and notional death) পর যখন এটি একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই পরবর্তী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন, ঠিক তখনই ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিগুলো নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠল। তারা ১৫ আগস্ট, তেসরা নভেম্বর, ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্রগুলোর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ দেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের আয়োজন করে। সেই ষড়যন্ত্রের প্রকৃত মোটিভ আড়ালের জন্যই এটিকে তারা নাম দিয়েছিল মাইনাস-টু থিওরি, যা প্রকৃত অর্থে ছিল মাইনাস শেখ হাসিনা থিওরি।
সেদিন এ দেশের ছাত্র–জনতা, আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা–কর্মীর প্রতিবাদ, আর শেখ হাসিনার প্রতি অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, এক-এগারোর ঘটনা ছিল একটি ব্যাক-আপ প্ল্যান। অর্থাৎ, একটি ঘটনা ঘটানোর পর সেটি ব্যর্থ হলে পরবর্তী ঘটনা হিসেবে এটি ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। পূর্ববর্তী ঘটনাটি ছিল—বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে পরবর্তী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত ছিল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরও তারা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কোনো ভরসা পাচ্ছিল না। তখন বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করানো হলো। তিনি একাধারে রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান হলেন। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এই ক্যু করানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারেন। হাওয়া ভবনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামাতের এই ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগবিরোধী গোষ্ঠী। এই ক্যু বাস্তবায়নে তারাই কাজ করেছিল। এই গোষ্ঠী যখন দেখল, শেখ হাসিনার প্রতি এ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে এবং তারাই তাঁকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে, ঠিক তখনই ২০০৭ সালের এগারো জানুয়ারি তারা তাদের ব্যাক-আপ প্ল্যান বাস্তবায়ন করল। অর্থাৎ ‘ক্যু উইদিন দ্য ক্যু’ ঘটাল।
২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে ক্যু ঘটিয়েছিল দৃশ্যত আওয়ামী লীগবিরোধী ও বিএনপি-জামায়াতের পক্ষের শক্তি। আর এক-এগারো অর্থাৎ, দ্বিতীয় ক্যু ঘটিয়েছিল সুশীলের আবরণে ঢাকা মূলত একই শক্তি। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাঁকে সাব-জেলে বন্দী রাখার ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য। তারা ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের নামে মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই টার্গেট করেছিল। এটি ছিল অনেকটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মতো। এ দেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ ও শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার সেদিন পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। তারা শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনার মুক্তির পর তদানীন্তন রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ পর্দার আড়ালে যেতে শুরু করে। জনগণের তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে এক-এগারো সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। শেখ হাসিনার প্রতি এ দেশের মানুষের তীব্র ভালোবাসা ও সমর্থনের কারণে ২৯ অক্টোবরের ইয়াজউদ্দিনের ক্যু এবং এক-এগারোর ব্যাকআপ ক্যু পরাস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা।
যদি সেদিন শেখ হাসিনাকে ওই অশুভ শক্তি সফল হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা কী হতো, তা চিন্তাও করতে পারি না। আল্লাহর অশেষ রহমতে এ দেশের জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বাতি প্রজ্বালিত রাখতে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। গত এক যুগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক কার্যকর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। শেখ হাসিনার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, মেধা, সাহস, দূরদর্শিতা ও অসীম দেশপ্রেমের কারণে তিনি ভূরাজনৈতিক ছককে আমাদের অনুকূলে আনতে সক্ষম হন। উন্নয়নশীল বিশ্বের খুব কম রাষ্ট্রনায়কই এই ধরনের সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ কোনো উন্নয়ন সহযোগী কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী নয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। তিনিই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এবং এই অপশক্তিকে পরাভূত করে জাতির পিতাকে এ দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কারণেই জাতির পিতার খুনিদের বিচার হয়েছে। কিছু খুনি পলাতক থাকায় বিচারের রায় এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে শেখ হাসিনাই কলঙ্কমুক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সব বিধান বাতিল করেছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ (constitutional entrenchment) তৈরি করেছেন, যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই এ দেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার, পরিবেশ, কৃষি, শিল্পায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনীত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র তাঁর। এ দেশের মানুষের জন্য তাঁর প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয়’ গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা। তিনি সারা বিশ্বে মহা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী করোনা মহামারি অসাধারণ দক্ষতা, পারদর্শিতা, সাহস ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবিলা করছেন। বৈশ্বিক এই মহামারিতে মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আজ ১৩ বছর পর প্রিয় নেত্রীর কারাবন্দী দিবসে তাঁর প্রতি জাতির পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। এক-এগারোর প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এখনো তারা হুংকার দিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নীতি, আদর্শ, দর্শন ও কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশকে পরাভূত করতে পারবে না।
ড۔ সেলিম মাহমুদ: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৬ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৬ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৬ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে