বিভুরঞ্জন সরকার
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরখানেক আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরে যেন আমরাই চোর হয়ে যাচ্ছি।’
ভালো কাজ করেও প্রশংসা না পাওয়ার জন্যই হয়তো তিনি আক্ষেপ করে এমন কথা বলেছিলেন। আসলে সমাজে প্রশংসা করার লোক কম, নিন্দা করার লোক বেশি। তবে সব সময় নিন্দুককে মন্দ ভাবার কারণ নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো নিন্দুকের প্রশস্তি গেয়েছেন:
‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো, যুগ জনমের বন্ধু আমার, আঁধার ঘরের আলো। সবাই মোরে ছাড়তে পারে, বন্ধু যারা আছে–নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।’
রাজনীতিবিদেরা অবশ্য চান, নিন্দুকদের ছায়া দূর মিলাক! নানা বাস্তব কারণে আমাদের সামাজিক অবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, হচ্ছে। দেশ, সমাজ, অর্থনীতি কোন পথে বা কোন ধারায় অগ্রসর হবে, তা নির্ধারিত হয় মূলত রাজনীতির হাত ধরে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিই হয়ে থাকে সবকিছুর নিয়ামকশক্তি। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি কি সঠিক ধারায় জনকল্যাণের লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে? সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে হচ্ছে? যাঁরা ক্ষমতায় আছেন তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ, সব ঠিকঠাক চলছে। যাঁরা ক্ষমতার বাইরে বা সরকারের নানা অনুগ্রহ পাওয়া থেকে বঞ্চিত তাঁরা বলবেন, না, কিছুই ঠিকঠাকমতো চলছে না।
আমাদের ব্যবস্থাপনা যে ত্রুটিপূর্ণ, অনিয়ম যে অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা অস্বীকার করা হলে আমরা ত্রুটি-দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব না। জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিণতি আমরা কিছুদিন পরপর একটি দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে বুঝতে পারি। বুঝতে পারি কোথায় গলদ। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, আমরা প্রতিকারের পথে হাঁটি না। একের পর এক পোশাক কারখানায় আগুন, হাশেম ফুডস কারখানায় আগুন, কেমিক্যালের গুদামে আগুন, মসজিদে গ্যাস লিক করে আগুন, দোকানে বা অন্য ভবনে আগুন লেগে মানুষ দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর দু-চার দিন এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি, বলাবলি হয়, তড়িঘড়ি একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়–ব্যস, তার আর পর নেই! আমরা সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে ফেলি। ধামাচাপা দিতে সিদ্ধহস্ত হয়ে পড়েছি।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না, তা কিন্তু নয়। এসব খবর আমলে না নেওয়ার একটি প্রবণতা দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠেছে। প্রশংসা না করলে তাকে শত্রু বা ষড়যন্ত্রকারী ভাবার মনোভাব পরিহার করতে না পারলে একসময় সবকিছু ভেঙে পড়বে। তখন আর কাউকে কাছে পাওয়া যাবে না। শুধু শত্রুপক্ষ যেটা নিয়ে সমালোচনা করে সেটা বাদ রেখে মিত্ররা কোন বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না, সেটাও যদি বিবেচনায় নেওয়ার সাহস ও দৃঢ়তা না থাকে, তাহলে বিপদ আমাদের সঙ্গী হয়েই থাকবে।
অনেকেই এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই দেশকে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার চেয়ে কোনো উত্তম বিকল্প এখন পর্যন্ত দেখা যায় না। তাঁকেই শেষ ভরসা হিসেবে বিশ্বাস করা মানুষের সংখ্যাই দেশে হয়তো বেশি। তবে টানা ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তায় টান পড়া সব দেশেরই সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে শেখ হাসিনা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিরলস কাজ করেও সব মহল থেকে সমানভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন না। এটা দুঃখজনক। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এটা ঘটছে?
কেউ কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনকালে মাঝেমধ্যে দু-একজন চোর-বাটপার ধরা পড়লেও কারোরই বিচার হওয়ার নজির নেই। তা ছাড়া, এমনও মনে করা হয় যে, চোরের সাক্ষী গাঁটকাটার দলও প্রধানমন্ত্রীর ছায়া পেয়ে থাকে। যাঁদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসা করার মতো তথ্য নেই, তাঁদের যখন প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে দেখা যায়, তখন মানুষ উদ্বুদ্ধ না হয়ে বিরক্ত হয়। এই বিষয়টি বোঝার জন্য কাউকে মহাজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।
তবে হ্যাঁ, একই সঙ্গে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশে জঙ্গি উত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। আবার ওই আমলেই বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে বিচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ জন্য কি আমরা বিএনপি বা খালেদা জিয়ার প্রশংসা করি?
করি না। কারণ, ওটা তারা আন্তরিকতা বা বিশ্বাস থেকে করেনি। ওটা ছিল তাদের রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক চাপ এবং ক্ষমতায় থাকার হিসাব-নিকাশ।
শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতিবাজ বা চোরদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে। কিন্তু একজনও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। দুদক কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে বলে খবর শোনা যায়; কিন্তু ওই তদন্ত শেষ হওয়ার খবর আর শোনা যায় না। কোনোটা শেষ হলেও অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।
যারা ফেঁসে যায় তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই ফাঁসে। তার মানে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। তো, এই তথ্য থাকার পরও চোরদের বছরের পর বছর চুরি করার সুযোগ দেওয়া হয় কেন?
এই যে গত বছর করোনার মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে নিয়ে এত কথা, তো তাঁকে এমন দানব তৈরি করল কারা? তাদের কাউকে কেন সামনে আনা হলো না? কাদের বদান্যতায় সাহেদ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টক শোতে অংশ নিয়ে একজন বিশেষ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন? টক শো ‘মাফিয়াদের’ কিছু হয়েছে বা হবে? পৃষ্ঠপোষকদের আড়ালে রেখে চুনকাম করে অনিয়মের মূলোৎপাটন করা যাবে না।
কুয়েত-কেলেঙ্কারির হোতা কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কত কথা, আলোচনা-সমালোচনা এবং শেষ পর্যন্ত কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পর তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হলো। প্রশ্ন হলো, পাপুলের উত্থান হলো কীভাবে, আওয়ামী লীগের কোন কোন প্রভাবশালী কিসের বিনিময়ে এমন দুর্বৃত্ত হতে সহায়তা করলেন, তাঁদের যদি আড়াল করা হয়, তাহলে এমন ভয়ংকর ব্যক্তিদের উত্থান আওয়ামী লীগে অব্যাহত থাকবে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, আওয়ামী লীগের অনেক সঞ্চয় আছে। কিন্তু সেই সঞ্চয়ের যেভাবে অপচয় হচ্ছে, তাতে দেউলিয়া হতেও বেশি সময় লাগবে না।
মানুষের কাছে অসংগতিগুলো যখন ধরা পড়ে, তখন তারা হতাশ হয়, প্রশংসার পরিবর্তে তখন নিন্দা করে অথবা যারা নিন্দা করে তাদের ‘সহমত’ ভাই-বোন হয়ে যায়!
কেউ যখন ‘ধরা খায়’ তখন তার গুষ্টি উদ্ধার করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা শুরু হয়। ধরা না-খাওয়া কারও বিরুদ্ধে খবর সাধারণত দেখা যায় না। কোনো গণমাধ্যমে তেমন খবর ছাপা হলেও তা আমলে নেওয়া হয় না। শত্রুপক্ষের রটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সরকার বা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব এখন অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হয়।
বিপদ হলো তাঁদের যাঁরা শেখ হাসিনাকে ‘শেষ ভরসা’ বলে মনে করেন–এমন সব ঘটনা ঘটে বা ঘটানো হয়, যার পক্ষে দাঁড়ানো তাঁদের পক্ষে নৈতিকভাবে সম্ভব হয় না। অনেকেই মনে করেন, সরকারি প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন শুদ্ধি অভিযান জরুরি। অবিলম্বে দরকার শল্যচিকিৎসা। টোটকা চিকিৎসায় কাজ হওয়ার সময় আর নেই। বলা হয় ‘সিস্টেম’ বদল করা সহজ নয়। তাই ‘সমঝোতা’ করেই চলতে হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সমঝোতার পথ আত্মঘাতী।
আলেন্দে বাঁচেননি, কাস্ত্রো বেঁচেছেন। মৌচাকে ঢিল দিয়ে মৌমাছির কামড় সহ্য করলেই না মধু পাওয়া যায়। যাঁরা দেশপ্রেম থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে কথা বলার চেষ্টা করেন, তাঁদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, অতি অনুগতরা বিপদের দিনে লাপাত্তা হলেও এঁরাই সঙ্গে থাকবেন।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরখানেক আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরে যেন আমরাই চোর হয়ে যাচ্ছি।’
ভালো কাজ করেও প্রশংসা না পাওয়ার জন্যই হয়তো তিনি আক্ষেপ করে এমন কথা বলেছিলেন। আসলে সমাজে প্রশংসা করার লোক কম, নিন্দা করার লোক বেশি। তবে সব সময় নিন্দুককে মন্দ ভাবার কারণ নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো নিন্দুকের প্রশস্তি গেয়েছেন:
‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো, যুগ জনমের বন্ধু আমার, আঁধার ঘরের আলো। সবাই মোরে ছাড়তে পারে, বন্ধু যারা আছে–নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।’
রাজনীতিবিদেরা অবশ্য চান, নিন্দুকদের ছায়া দূর মিলাক! নানা বাস্তব কারণে আমাদের সামাজিক অবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, হচ্ছে। দেশ, সমাজ, অর্থনীতি কোন পথে বা কোন ধারায় অগ্রসর হবে, তা নির্ধারিত হয় মূলত রাজনীতির হাত ধরে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিই হয়ে থাকে সবকিছুর নিয়ামকশক্তি। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি কি সঠিক ধারায় জনকল্যাণের লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে? সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে হচ্ছে? যাঁরা ক্ষমতায় আছেন তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ, সব ঠিকঠাক চলছে। যাঁরা ক্ষমতার বাইরে বা সরকারের নানা অনুগ্রহ পাওয়া থেকে বঞ্চিত তাঁরা বলবেন, না, কিছুই ঠিকঠাকমতো চলছে না।
আমাদের ব্যবস্থাপনা যে ত্রুটিপূর্ণ, অনিয়ম যে অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা অস্বীকার করা হলে আমরা ত্রুটি-দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব না। জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিণতি আমরা কিছুদিন পরপর একটি দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে বুঝতে পারি। বুঝতে পারি কোথায় গলদ। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, আমরা প্রতিকারের পথে হাঁটি না। একের পর এক পোশাক কারখানায় আগুন, হাশেম ফুডস কারখানায় আগুন, কেমিক্যালের গুদামে আগুন, মসজিদে গ্যাস লিক করে আগুন, দোকানে বা অন্য ভবনে আগুন লেগে মানুষ দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর দু-চার দিন এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি, বলাবলি হয়, তড়িঘড়ি একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়–ব্যস, তার আর পর নেই! আমরা সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে ফেলি। ধামাচাপা দিতে সিদ্ধহস্ত হয়ে পড়েছি।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না, তা কিন্তু নয়। এসব খবর আমলে না নেওয়ার একটি প্রবণতা দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠেছে। প্রশংসা না করলে তাকে শত্রু বা ষড়যন্ত্রকারী ভাবার মনোভাব পরিহার করতে না পারলে একসময় সবকিছু ভেঙে পড়বে। তখন আর কাউকে কাছে পাওয়া যাবে না। শুধু শত্রুপক্ষ যেটা নিয়ে সমালোচনা করে সেটা বাদ রেখে মিত্ররা কোন বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না, সেটাও যদি বিবেচনায় নেওয়ার সাহস ও দৃঢ়তা না থাকে, তাহলে বিপদ আমাদের সঙ্গী হয়েই থাকবে।
অনেকেই এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই দেশকে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার চেয়ে কোনো উত্তম বিকল্প এখন পর্যন্ত দেখা যায় না। তাঁকেই শেষ ভরসা হিসেবে বিশ্বাস করা মানুষের সংখ্যাই দেশে হয়তো বেশি। তবে টানা ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তায় টান পড়া সব দেশেরই সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে শেখ হাসিনা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিরলস কাজ করেও সব মহল থেকে সমানভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন না। এটা দুঃখজনক। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এটা ঘটছে?
কেউ কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনকালে মাঝেমধ্যে দু-একজন চোর-বাটপার ধরা পড়লেও কারোরই বিচার হওয়ার নজির নেই। তা ছাড়া, এমনও মনে করা হয় যে, চোরের সাক্ষী গাঁটকাটার দলও প্রধানমন্ত্রীর ছায়া পেয়ে থাকে। যাঁদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসা করার মতো তথ্য নেই, তাঁদের যখন প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে দেখা যায়, তখন মানুষ উদ্বুদ্ধ না হয়ে বিরক্ত হয়। এই বিষয়টি বোঝার জন্য কাউকে মহাজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।
তবে হ্যাঁ, একই সঙ্গে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশে জঙ্গি উত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। আবার ওই আমলেই বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে বিচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ জন্য কি আমরা বিএনপি বা খালেদা জিয়ার প্রশংসা করি?
করি না। কারণ, ওটা তারা আন্তরিকতা বা বিশ্বাস থেকে করেনি। ওটা ছিল তাদের রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক চাপ এবং ক্ষমতায় থাকার হিসাব-নিকাশ।
শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতিবাজ বা চোরদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে। কিন্তু একজনও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। দুদক কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে বলে খবর শোনা যায়; কিন্তু ওই তদন্ত শেষ হওয়ার খবর আর শোনা যায় না। কোনোটা শেষ হলেও অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।
যারা ফেঁসে যায় তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই ফাঁসে। তার মানে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। তো, এই তথ্য থাকার পরও চোরদের বছরের পর বছর চুরি করার সুযোগ দেওয়া হয় কেন?
এই যে গত বছর করোনার মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে নিয়ে এত কথা, তো তাঁকে এমন দানব তৈরি করল কারা? তাদের কাউকে কেন সামনে আনা হলো না? কাদের বদান্যতায় সাহেদ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টক শোতে অংশ নিয়ে একজন বিশেষ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন? টক শো ‘মাফিয়াদের’ কিছু হয়েছে বা হবে? পৃষ্ঠপোষকদের আড়ালে রেখে চুনকাম করে অনিয়মের মূলোৎপাটন করা যাবে না।
কুয়েত-কেলেঙ্কারির হোতা কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কত কথা, আলোচনা-সমালোচনা এবং শেষ পর্যন্ত কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পর তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হলো। প্রশ্ন হলো, পাপুলের উত্থান হলো কীভাবে, আওয়ামী লীগের কোন কোন প্রভাবশালী কিসের বিনিময়ে এমন দুর্বৃত্ত হতে সহায়তা করলেন, তাঁদের যদি আড়াল করা হয়, তাহলে এমন ভয়ংকর ব্যক্তিদের উত্থান আওয়ামী লীগে অব্যাহত থাকবে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, আওয়ামী লীগের অনেক সঞ্চয় আছে। কিন্তু সেই সঞ্চয়ের যেভাবে অপচয় হচ্ছে, তাতে দেউলিয়া হতেও বেশি সময় লাগবে না।
মানুষের কাছে অসংগতিগুলো যখন ধরা পড়ে, তখন তারা হতাশ হয়, প্রশংসার পরিবর্তে তখন নিন্দা করে অথবা যারা নিন্দা করে তাদের ‘সহমত’ ভাই-বোন হয়ে যায়!
কেউ যখন ‘ধরা খায়’ তখন তার গুষ্টি উদ্ধার করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা শুরু হয়। ধরা না-খাওয়া কারও বিরুদ্ধে খবর সাধারণত দেখা যায় না। কোনো গণমাধ্যমে তেমন খবর ছাপা হলেও তা আমলে নেওয়া হয় না। শত্রুপক্ষের রটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সরকার বা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব এখন অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হয়।
বিপদ হলো তাঁদের যাঁরা শেখ হাসিনাকে ‘শেষ ভরসা’ বলে মনে করেন–এমন সব ঘটনা ঘটে বা ঘটানো হয়, যার পক্ষে দাঁড়ানো তাঁদের পক্ষে নৈতিকভাবে সম্ভব হয় না। অনেকেই মনে করেন, সরকারি প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন শুদ্ধি অভিযান জরুরি। অবিলম্বে দরকার শল্যচিকিৎসা। টোটকা চিকিৎসায় কাজ হওয়ার সময় আর নেই। বলা হয় ‘সিস্টেম’ বদল করা সহজ নয়। তাই ‘সমঝোতা’ করেই চলতে হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সমঝোতার পথ আত্মঘাতী।
আলেন্দে বাঁচেননি, কাস্ত্রো বেঁচেছেন। মৌচাকে ঢিল দিয়ে মৌমাছির কামড় সহ্য করলেই না মধু পাওয়া যায়। যাঁরা দেশপ্রেম থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে কথা বলার চেষ্টা করেন, তাঁদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, অতি অনুগতরা বিপদের দিনে লাপাত্তা হলেও এঁরাই সঙ্গে থাকবেন।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
২ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
২ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে