জাহীদ রেজা নূর
ই–কমার্স নিয়ে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে আজ শনিবারের আজকের পত্রিকায়, তা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বেরিয়ে আসা রাশিয়ায়। সে সময় একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এমএমএম ভীষণভাবে জায়গা করে নিয়েছিল আলোচনায়। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে ফতুর করে হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছিল কিছুদিনের মধ্যেই। এখনো আমাদের মনে পড়ে, সের্গেই মাভরোদির কথা। টাকার চমকে তিনি সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। সে যে কী এক সময় পার করেছে রাশিয়া, সে কথা বলার মতো নয়।
সে সময় রাশিয়ায় পড়াশোনা করছিলাম আমরা। দ্রব্যমূল্য হয়ে গিয়েছিল লাগামছাড়া। তিল তিল করে যারা সঞ্চয় করেছেন ভবিষ্যতের জন্য, সেই বুড়োবুড়িরা হঠাৎ দেখলেন, তাঁদের জমানো টাকা পরিণত হয়েছে মূল্যহীন কাগজে। ঠিক সে সময় অসহায় মানুষকে একেবারে নিঃশেষিত করে দিতে হাজির হয়েছিল মাভরোদিরা। সের্গেই মাভরোদি, তার ভাই ভিয়েচেস্লাভ মাভরোদি, আর ওলগা মেলনিকোভা—এই তিনজনের নামের শেষ অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই এমএমএম।
১৯৮৯ সালে জন্ম হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানের। শুরুতে কম্পিউটার ও কম্পিউটারের খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানি করেই বেড়ে উঠছিল প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯২ সালে শুরু হলো এদের অন্য খেলা। পিরামিডের মতো একটি অর্থনৈতিক ছক তৈরি করল তারা। হয়ে উঠল ব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী। ছয় মাসের মধ্যে ওদের শেয়ারের দাম বাড়ল এক শ গুণ। একটা শেয়ার কেনার জন্য পাগল হয়ে গেল সাধারণ মানুষ। যার কাছে এমএমএম–এর একটা শেয়ার থাকবে, সেই তো বড় লোক। আমাদের কুবান বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের একটি ঘর ভাড়া নিয়েও বিক্রি করা হতো শেয়ার। লাইন পড়ে যেত মানুষের। সে সময় প্রাইভেটাইজেশন চলছে। মানুষের হাতে ভাউচার। মাভরোদি খেয়াল রাখতেন, ডলারের চেয়ে দ্রুত যেন বাড়ে তাঁর শেয়ারের দাম। গরিব মানুষ ভাবত, এমএমএম–এর একটা শেয়ার হাতে থাকা মানেই টাকাটা সুরক্ষিত। কিন্তু আসলে এই টাকা কোথাও খাটানো হতো না। সাধারণ মানুষের টাকাগুলো যেত এই জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মালিকদের পকেটে। এখনো মনে পড়ে, রাশিয়ার জাতীয় টেলিভিশনে একটু পরপরই এমএমএম–এর দৃষ্টিনন্দন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো।
একসময় ধরা পড়লেন মাভরোদি। জেলে গেলেন। কিন্তু কোথায় গেল সেই হাজার কোটি টাকা, তা কে জানবে? জেল খেটে বেরিয়ে আবারও এমএমএম–এর ব্যবসা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। ২০১৮ সালে ৬২ বছর বয়সে মারা গেছেন ভদ্রলোক।
জারের আমলের রাসপুতিনকে নিয়ে যেমন আলোচনা চলে রাশিয়ায়, তেমনি প্রতারক মাভরোদির এমএমএম নিয়েও চলে। রাশিয়ায় এক অভিশাপ বয়ে এনেছিল এই এমএমএম।
ই–কমার্স আরও পরের ব্যাপার। বিজ্ঞানের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির পথ ধরে নতুন অনেক কিছুই এখন আবিষ্কার হয়েছে। ই–কমার্সের সুযোগে প্রতারণার খেলাটা তাই মানুষ বুঝতে পারছে না। তবে রাশিয়ার শেয়ারবাজার আর ই–কমার্সের অর্ধেক দামে পণ্য সরবরাহের মূলগত দিকটা একই। মিথ্যে কথা বলে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এ রকম একটা অফার যে কোনোভাবেই ঠিক হতে পারে না, সে কথা কেন ভেবে দেখেন না ক্রেতারা? যে পণ্য নির্দিষ্ট কোম্পানিই অর্ধেক দামে দিতে পারে না, সে পণ্য কীভাবে অর্ধেক দামে অন্য কেউ দেবে—সে প্রশ্ন কেন ভুক্তভোগী কারও মাথায় আসে না?
প্রতারণাকে কেউ কেউ কখনো কখনো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। আর এ কাজে তারা সফল হয় সাধারণ মানুষের লোভের কারণে। প্রতারণার বেশ কিছু ঘটনা আমরা আগেও দেখেছি। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং–এর নামেও প্রতারণা চলেছে। রাশিয়ার মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছিলেন মাভরোদি, সস্তায় পণ্য কেনার অফার দিয়ে একই সুযোগ নিচ্ছে বাংলাদেশের ই–কমার্সের সঙ্গে যুক্ত কতিপয় কোম্পানি। মানুষের সচেতনতা ছাড়া এদের দমানো যাবে না। আর এটা কমার সুযোগ কম এই কারণে যে, ডেসটিনি গ্রুপের গ্রেপ্তারকৃত কর্ণধার রফিকুল আমীন এখনো মুঠোফোনে ব্যবসায়ী বৈঠক করে যাচ্ছেন। প্রতারণার দায়ে গ্রেপ্তারকৃত একজন মানুষ যদি এখনো তাঁর কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে জেলে কিংবা নিজ অফিসে বসে প্রতারণা ব্যবসা চালিয়ে যেতে সাহসী হয়ে উঠবে আরও অনেক এমএলএম বা ই–কমার্স কোম্পানি। কারণ, জেল কিংবা মুক্ত—দু জীবনেই তারা নিরাপদ।
ই–কমার্স নিয়ে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে আজ শনিবারের আজকের পত্রিকায়, তা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বেরিয়ে আসা রাশিয়ায়। সে সময় একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এমএমএম ভীষণভাবে জায়গা করে নিয়েছিল আলোচনায়। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে ফতুর করে হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছিল কিছুদিনের মধ্যেই। এখনো আমাদের মনে পড়ে, সের্গেই মাভরোদির কথা। টাকার চমকে তিনি সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। সে যে কী এক সময় পার করেছে রাশিয়া, সে কথা বলার মতো নয়।
সে সময় রাশিয়ায় পড়াশোনা করছিলাম আমরা। দ্রব্যমূল্য হয়ে গিয়েছিল লাগামছাড়া। তিল তিল করে যারা সঞ্চয় করেছেন ভবিষ্যতের জন্য, সেই বুড়োবুড়িরা হঠাৎ দেখলেন, তাঁদের জমানো টাকা পরিণত হয়েছে মূল্যহীন কাগজে। ঠিক সে সময় অসহায় মানুষকে একেবারে নিঃশেষিত করে দিতে হাজির হয়েছিল মাভরোদিরা। সের্গেই মাভরোদি, তার ভাই ভিয়েচেস্লাভ মাভরোদি, আর ওলগা মেলনিকোভা—এই তিনজনের নামের শেষ অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই এমএমএম।
১৯৮৯ সালে জন্ম হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানের। শুরুতে কম্পিউটার ও কম্পিউটারের খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানি করেই বেড়ে উঠছিল প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯২ সালে শুরু হলো এদের অন্য খেলা। পিরামিডের মতো একটি অর্থনৈতিক ছক তৈরি করল তারা। হয়ে উঠল ব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী। ছয় মাসের মধ্যে ওদের শেয়ারের দাম বাড়ল এক শ গুণ। একটা শেয়ার কেনার জন্য পাগল হয়ে গেল সাধারণ মানুষ। যার কাছে এমএমএম–এর একটা শেয়ার থাকবে, সেই তো বড় লোক। আমাদের কুবান বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের একটি ঘর ভাড়া নিয়েও বিক্রি করা হতো শেয়ার। লাইন পড়ে যেত মানুষের। সে সময় প্রাইভেটাইজেশন চলছে। মানুষের হাতে ভাউচার। মাভরোদি খেয়াল রাখতেন, ডলারের চেয়ে দ্রুত যেন বাড়ে তাঁর শেয়ারের দাম। গরিব মানুষ ভাবত, এমএমএম–এর একটা শেয়ার হাতে থাকা মানেই টাকাটা সুরক্ষিত। কিন্তু আসলে এই টাকা কোথাও খাটানো হতো না। সাধারণ মানুষের টাকাগুলো যেত এই জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মালিকদের পকেটে। এখনো মনে পড়ে, রাশিয়ার জাতীয় টেলিভিশনে একটু পরপরই এমএমএম–এর দৃষ্টিনন্দন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো।
একসময় ধরা পড়লেন মাভরোদি। জেলে গেলেন। কিন্তু কোথায় গেল সেই হাজার কোটি টাকা, তা কে জানবে? জেল খেটে বেরিয়ে আবারও এমএমএম–এর ব্যবসা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। ২০১৮ সালে ৬২ বছর বয়সে মারা গেছেন ভদ্রলোক।
জারের আমলের রাসপুতিনকে নিয়ে যেমন আলোচনা চলে রাশিয়ায়, তেমনি প্রতারক মাভরোদির এমএমএম নিয়েও চলে। রাশিয়ায় এক অভিশাপ বয়ে এনেছিল এই এমএমএম।
ই–কমার্স আরও পরের ব্যাপার। বিজ্ঞানের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির পথ ধরে নতুন অনেক কিছুই এখন আবিষ্কার হয়েছে। ই–কমার্সের সুযোগে প্রতারণার খেলাটা তাই মানুষ বুঝতে পারছে না। তবে রাশিয়ার শেয়ারবাজার আর ই–কমার্সের অর্ধেক দামে পণ্য সরবরাহের মূলগত দিকটা একই। মিথ্যে কথা বলে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এ রকম একটা অফার যে কোনোভাবেই ঠিক হতে পারে না, সে কথা কেন ভেবে দেখেন না ক্রেতারা? যে পণ্য নির্দিষ্ট কোম্পানিই অর্ধেক দামে দিতে পারে না, সে পণ্য কীভাবে অর্ধেক দামে অন্য কেউ দেবে—সে প্রশ্ন কেন ভুক্তভোগী কারও মাথায় আসে না?
প্রতারণাকে কেউ কেউ কখনো কখনো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। আর এ কাজে তারা সফল হয় সাধারণ মানুষের লোভের কারণে। প্রতারণার বেশ কিছু ঘটনা আমরা আগেও দেখেছি। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং–এর নামেও প্রতারণা চলেছে। রাশিয়ার মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছিলেন মাভরোদি, সস্তায় পণ্য কেনার অফার দিয়ে একই সুযোগ নিচ্ছে বাংলাদেশের ই–কমার্সের সঙ্গে যুক্ত কতিপয় কোম্পানি। মানুষের সচেতনতা ছাড়া এদের দমানো যাবে না। আর এটা কমার সুযোগ কম এই কারণে যে, ডেসটিনি গ্রুপের গ্রেপ্তারকৃত কর্ণধার রফিকুল আমীন এখনো মুঠোফোনে ব্যবসায়ী বৈঠক করে যাচ্ছেন। প্রতারণার দায়ে গ্রেপ্তারকৃত একজন মানুষ যদি এখনো তাঁর কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে জেলে কিংবা নিজ অফিসে বসে প্রতারণা ব্যবসা চালিয়ে যেতে সাহসী হয়ে উঠবে আরও অনেক এমএলএম বা ই–কমার্স কোম্পানি। কারণ, জেল কিংবা মুক্ত—দু জীবনেই তারা নিরাপদ।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
৪ ঘণ্টা আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
৪ ঘণ্টা আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ দিন আগে