জয়ন্তী রায়
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়ে গেল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। গণ্যমান্য অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতী সাহা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশের মানুষকে স্বল্পখরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান ও উচ্চতর চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা এবং দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারের ওপর গবেষণার সুযোগ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই নতুন এই প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। উল্লেখ করা প্রয়োজন, রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহার স্বপ্নের ফসল কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বেসরকারি জনকল্যাণকর সংস্থা। রণদা প্রসাদ নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছিলেন এবং শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি দানবীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু খুব কম বয়সে তিনি চিকিৎসার অভাবে তাঁর মাকে হারিয়েছিলেন। তাই পরবর্তী সময়ে মায়ের স্মরণে জীবনে অর্জিত সমস্ত পুঁজি বিনিয়োগ করে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্ট দেশের মানুষের, বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে—কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমুদিনী ফার্মা লিমিটেড, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফটস, কুমুদিনী পোর্টস লিমিটেড এবং কুমুদিনী মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। এর সঙ্গে নতুন সংযোজন কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ সংক্ষেপে কেআইআইএমএস কেয়ার।
১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন রণদা প্রসাদ সাহা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নেননি। শৈশবেই বাড়ি ছেড়ে কলকাতা গিয়ে জীবনসংগ্রাম শুরু করেন। তাঁর জীবনটা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। স্বদেশী আন্দোলনে জেল খেটেছেন। আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট যোগ দিয়ে যোদ্ধার জীবনও বেছে নিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে কয়লা, পাট ও নৌ–পরিবহনসহ নানা ব্যবসায়ে অভূতপূর্ব সফলতা লাভ করলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ধনবান হয়ে তিনি ভোগের জীবন বেছে না নিয়ে ব্রতী হন জনকল্যাণে। ১৯৩৮ সালে ঠাকুরমার নামে শেভাসুন্দরী ডিসপেনসারি এবং মায়ের নামে কুমুদিনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর মানবসেবার অধ্যায় শুরু হয়। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস, টাঙ্গাইলে কুমুদিনী মহিলা কলেজ এবং মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষানুরাগী হিসেবে রণদা প্রসাদ সাহা পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি তাঁর জীবনকালে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গেই রণদা প্রসাদ সাহার ব্যক্তিগত পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি মানবসেবার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়টিকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো একটি উপলক্ষে মির্জাপুরে কুমুদিনীতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আলাপচারিতায় উল্লেখ করেছিলেন, রণদা প্রসাদ সাহার কর্মকাণ্ড এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এতটাই অনুরক্ত ছিলেন যে তিনি তাঁর বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতেশ্বরী হোমসে ভর্তি করার কথাও ভেবেছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় সহচরদের সহযোগিতায় রণদা প্রসাদ সাহা এবং তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর তাঁরা আর ফিরে আসেননি। রণদা প্রসাদ সাহার পরবর্তী প্রজন্মও তাঁর আদর্শ ও দীক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ করে চলেছে। কুমুদিনী যতটা না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তার চেয়ে বেশি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একটি আদর্শের নাম।
ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও কুমুদিনীর কীর্তির কথা উঠে এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শ্রীমতী সাহার নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রীমতী সাহা বুকে পাথর চেপে এই প্রতিষ্ঠানকে আগলে রেখেছেন। খুব কম বয়সে স্বামী (ভবানী সাহা) ও শ্বশুরকে (আর পি সাহা) হারিয়ে শিশুপুত্র রাজীবকে নিয়ে দিশেহারা না হয়ে শক্ত মনের পরিচয় দিয়ে কুমুদিনীকে শুধু রক্ষাই নয়, একে বিস্তৃত করছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন এ কথা বলছিলেন, তখন তাঁর চোখ যেমন জলে ছলছল হয়েছে, তেমনি শ্রীমতী সাহাও চোখের জল সামলাতে পারেননি। শেখ হাসিনা পঁচাত্তরে পিতামাতা, ভাই–ভ্রাতিবধূসহ স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করছেন। শ্রীমতী সাহাও মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরকে হারিয়ে মানবসেবার কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি, নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল হতে দেননি বরং মান ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন। দুই দুঃখী অথচ আত্মপ্রত্যয়ী নারীর চোখের জল উপস্থিত অতিথিদেরও আবেগাপ্লুত করেছিল।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী ও কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় শ্রীমতী সাহা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের প্রাক্কালে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ বহুমুখী ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক দর্শন হবে— মানবকল্যাণমূলক নানা ধরনের কার্যক্রম, বিস্তৃত উদ্যোগ, সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করে শিক্ষা খাত, চিকিৎসা খাত এবং গবেষণা ও জাতীয় অর্থনীতিতে উন্নয়নমূলক ভূমিকা রাখা।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা তাঁর বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ২৪৭ বর্গফুট নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেআইআইএমএস কেয়ার। চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও গবেষণার লক্ষ্যে নির্মিতব্য এই টারশিয়ারি এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে নানা ধরনের সুবিধা থাকবে। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট সাধারণ হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগসহ থাকবে ল্যাবরেটরি, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবে। ক্যানসার রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসা এবং উপশমের জন্য থাকবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত বিভাগ এবং উন্নতমানের প্রযুক্তিসংবলিত যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি। এ ছাড়া থাকবে চিকিৎসাবিদ্যার বিভিন্ন বিভাগে গবেষণার জন্য উন্নত প্রযুক্তির গবেষণাসামগ্রীর একটি গবেষণাকেন্দ্র।
একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে রোগীপ্রতি একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসার গড় ব্যয় বার্ষিক ১৪ হাজার ৬১৮ টাকা। অথচ কুমুদিনী হাসপাতালে একই চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু বার্ষিক গড় খরচ ৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। অর্থাৎ কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে জনপ্রতি রোগীর ৭ হাজার ৯৩৩ টাকা সাশ্রয় হয়। কেআইআইএমএস কেয়ারের চিকিৎসার খরচ একই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হবে। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনের প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এভাবেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়বে। মানবতার কল্যাণে কুমুদিনীর এই স্বপ্নযাত্রার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়ে গেল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। গণ্যমান্য অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতী সাহা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশের মানুষকে স্বল্পখরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান ও উচ্চতর চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা এবং দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারের ওপর গবেষণার সুযোগ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই নতুন এই প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। উল্লেখ করা প্রয়োজন, রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহার স্বপ্নের ফসল কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বেসরকারি জনকল্যাণকর সংস্থা। রণদা প্রসাদ নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছিলেন এবং শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি দানবীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু খুব কম বয়সে তিনি চিকিৎসার অভাবে তাঁর মাকে হারিয়েছিলেন। তাই পরবর্তী সময়ে মায়ের স্মরণে জীবনে অর্জিত সমস্ত পুঁজি বিনিয়োগ করে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্ট দেশের মানুষের, বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে—কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমুদিনী ফার্মা লিমিটেড, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফটস, কুমুদিনী পোর্টস লিমিটেড এবং কুমুদিনী মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। এর সঙ্গে নতুন সংযোজন কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ সংক্ষেপে কেআইআইএমএস কেয়ার।
১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন রণদা প্রসাদ সাহা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নেননি। শৈশবেই বাড়ি ছেড়ে কলকাতা গিয়ে জীবনসংগ্রাম শুরু করেন। তাঁর জীবনটা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। স্বদেশী আন্দোলনে জেল খেটেছেন। আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট যোগ দিয়ে যোদ্ধার জীবনও বেছে নিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে কয়লা, পাট ও নৌ–পরিবহনসহ নানা ব্যবসায়ে অভূতপূর্ব সফলতা লাভ করলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ধনবান হয়ে তিনি ভোগের জীবন বেছে না নিয়ে ব্রতী হন জনকল্যাণে। ১৯৩৮ সালে ঠাকুরমার নামে শেভাসুন্দরী ডিসপেনসারি এবং মায়ের নামে কুমুদিনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর মানবসেবার অধ্যায় শুরু হয়। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস, টাঙ্গাইলে কুমুদিনী মহিলা কলেজ এবং মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষানুরাগী হিসেবে রণদা প্রসাদ সাহা পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি তাঁর জীবনকালে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গেই রণদা প্রসাদ সাহার ব্যক্তিগত পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি মানবসেবার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়টিকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো একটি উপলক্ষে মির্জাপুরে কুমুদিনীতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আলাপচারিতায় উল্লেখ করেছিলেন, রণদা প্রসাদ সাহার কর্মকাণ্ড এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এতটাই অনুরক্ত ছিলেন যে তিনি তাঁর বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতেশ্বরী হোমসে ভর্তি করার কথাও ভেবেছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় সহচরদের সহযোগিতায় রণদা প্রসাদ সাহা এবং তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর তাঁরা আর ফিরে আসেননি। রণদা প্রসাদ সাহার পরবর্তী প্রজন্মও তাঁর আদর্শ ও দীক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ করে চলেছে। কুমুদিনী যতটা না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তার চেয়ে বেশি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একটি আদর্শের নাম।
ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও কুমুদিনীর কীর্তির কথা উঠে এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শ্রীমতী সাহার নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রীমতী সাহা বুকে পাথর চেপে এই প্রতিষ্ঠানকে আগলে রেখেছেন। খুব কম বয়সে স্বামী (ভবানী সাহা) ও শ্বশুরকে (আর পি সাহা) হারিয়ে শিশুপুত্র রাজীবকে নিয়ে দিশেহারা না হয়ে শক্ত মনের পরিচয় দিয়ে কুমুদিনীকে শুধু রক্ষাই নয়, একে বিস্তৃত করছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন এ কথা বলছিলেন, তখন তাঁর চোখ যেমন জলে ছলছল হয়েছে, তেমনি শ্রীমতী সাহাও চোখের জল সামলাতে পারেননি। শেখ হাসিনা পঁচাত্তরে পিতামাতা, ভাই–ভ্রাতিবধূসহ স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করছেন। শ্রীমতী সাহাও মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরকে হারিয়ে মানবসেবার কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি, নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল হতে দেননি বরং মান ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন। দুই দুঃখী অথচ আত্মপ্রত্যয়ী নারীর চোখের জল উপস্থিত অতিথিদেরও আবেগাপ্লুত করেছিল।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী ও কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় শ্রীমতী সাহা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের প্রাক্কালে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ বহুমুখী ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক দর্শন হবে— মানবকল্যাণমূলক নানা ধরনের কার্যক্রম, বিস্তৃত উদ্যোগ, সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করে শিক্ষা খাত, চিকিৎসা খাত এবং গবেষণা ও জাতীয় অর্থনীতিতে উন্নয়নমূলক ভূমিকা রাখা।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা তাঁর বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ২৪৭ বর্গফুট নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেআইআইএমএস কেয়ার। চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও গবেষণার লক্ষ্যে নির্মিতব্য এই টারশিয়ারি এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে নানা ধরনের সুবিধা থাকবে। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট সাধারণ হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগসহ থাকবে ল্যাবরেটরি, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবে। ক্যানসার রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসা এবং উপশমের জন্য থাকবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত বিভাগ এবং উন্নতমানের প্রযুক্তিসংবলিত যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি। এ ছাড়া থাকবে চিকিৎসাবিদ্যার বিভিন্ন বিভাগে গবেষণার জন্য উন্নত প্রযুক্তির গবেষণাসামগ্রীর একটি গবেষণাকেন্দ্র।
একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে রোগীপ্রতি একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসার গড় ব্যয় বার্ষিক ১৪ হাজার ৬১৮ টাকা। অথচ কুমুদিনী হাসপাতালে একই চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু বার্ষিক গড় খরচ ৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। অর্থাৎ কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে জনপ্রতি রোগীর ৭ হাজার ৯৩৩ টাকা সাশ্রয় হয়। কেআইআইএমএস কেয়ারের চিকিৎসার খরচ একই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হবে। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনের প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এভাবেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়বে। মানবতার কল্যাণে কুমুদিনীর এই স্বপ্নযাত্রার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১ দিন আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে