মাসুদ–উর রহমান
‘ঘুম’ শব্দটির সবচেয়ে পরিচিত সমার্থক শব্দ হচ্ছে নিদ্রা। বিশ্রাম, নিদ, সুপ্তি, তন্দ্রা, নিষুপ্তি, সুষুপ্তি—এসবও ঘুমের সমার্থক শব্দ। মজার ব্যাপার হচ্ছে ঘুম নামে দার্জিলিংয়ে একটি রেলস্টেশন আছে, যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৪০৭ ফুট উচ্চতায় এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।
উল্লিখিত নিদ শব্দটি নজরুলের বিখ্যাত ঈদের গানে পাই। সেখানে একটি লাইন এমন—
রজনীকান্তের গানে পাই—
‘জাগাও পথিকে, ও যে ঘুমে অচেতন।
বেলা যায়, বহু দূরে পান নিকেতন।’
শিল্প বিপ্লবের যুগে ঘুমে অচেতন ব্রিটিশ ও আইরিশ শ্রমিকদের ঘুম থেকে জাগাতে কিছু লোককে নাকি চাকরিতে রাখা হতো। তখন অ্যালার্ম ঘড়ির প্রচলন ছিল না। তাই তাঁদের কাজই ছিল মানুষকে ঘুম থেকে তোলা।
‘তন্দ্রা’, ‘সুপ্তি’ শব্দগুলো আমরা বিভিন্ন লেখায় প্রায়ই দেখে থাকি। ‘সুষুপ্ত’ শব্দটি পাই রজনীকান্তের আরেক গানে—
‘যবে, কনক প্রভাতে নব রবি সাথে জাগে সুষুপ্ত ধরা’।
এমনি করে বিভিন্ন কবি–সাহিত্যিক ঘুমের সমার্থক অনেক শব্দ যেমন ব্যবহার করেছেন, তেমনি বিভিন্ন মনীষী ঘুমের সংজ্ঞাও দিয়েছেন বিভিন্ন অনুভূতিতে। থমাস ডেক্কারের মতে, ‘ঘুমই সেই স্বর্ণের শেকল, যা আমাদের দেহ ও স্বাস্থ্যকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে।’ ক্রিস্টিনা রসেটি বলেছেন, ‘সব ধরনের যন্ত্রণার মহৌষধ হচ্ছে আনন্দঘন ঘুম।’ উইকিপিডিয়ার মতে, ‘ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে।’
তবে আমি জানি সবার ক্ষেত্রে ঘুমের সময় সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে না। উদাহরণ আরব আলী। আরব আলী আমার বাল্যকালের বন্ধু। বলতে গেলে আমার সবকিছুই ওর জানা। তারপরও আমার একটা গোপনীয় বিষয় ছিল, যা ওর কাছ থেকে আড়াল করেছিলাম।
একবার রাঙামাটি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সারা রাত জার্নি শেষে হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় যেতেই আরব আলী ঘুমিয়ে পড়ল। ঠিক সে সময় আমার কাঙ্ক্ষিত একটি ফোন এল। সে ঘুমিয়ে আছে ভেবে রুমে বসেই কথা চালাতে লাগলাম। ফল এই দাঁড়িয়েছিল—আমার একমাত্র গোপন তথ্যটিও আর তাঁর অজানা রইল না। কাজেই বিল কসবির ভাষায়, ‘সব খোলা চোখই যেমন দেখতে পায় না, সব বন্ধ চোখও তেমন ঘুমায় না।’ এমন সংজ্ঞায়ন আরব আলীর কথা ভেবেই কি–না কে জানে?
তাঁর এই ঘুমহীনতার জন্য কোথাও গিয়েও শান্তি নেই। সন্ধ্যার পর চা পান করা যাবে না, ভারী খাবার খাওয়া যাবে না, জোরে হাসি দেওয়া যাবে না এমনকি রাত ১০টার পর গল্পও করা যাবে না।
বিছানায় শুয়ে উল্টো গুনতে হবে, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে কিংবা শহীদ আল বোখারি মহাজাতকের মতো ধ্যানমগ্ন হয়ে বলতে হবে—শরীর বলতে আপনার আর কিছুই নেই, আছে শুধু মন! আপনি শিথিলায়নের গভীর স্তরে পৌঁছে গেছেন... ইত্যাদি ইত্যাদি করতে হয় কিংবা কে জানে আরও কত কী!
আমি বলি, আরে বাবা তুই তো ঘুমাসই না, তাহলে অত নিয়ম মানার দরকার কী? এই আমারে দেখ, ঘুম তাড়ানোর দরকার হলে চা পান করি। আবার গরম চায়ে চুমুক না দিলে ঘুমটাও ভালো জমে না! আর কী খাই না আমি? পান, বিড়ি ছাড়া আর কোনো কিছুতেই কি আমার অরুচি আছে? বল? সব খাবি। যখন দরকার ঘুমাবি, প্রয়োজনে জেগে থাকবি—এই না হলে কিসের জীবন? কিসের কি!
আসলে যতই বলি আরব আলীর কপাল খারাপ। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় প্রধানত দুই ধরনের ঘুম রেম আর নন–রেমের মধ্যে সে র্যাম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) ভাগে পড়ে গেছে। রেম ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক সজাগ থাকে, আমাদের মাংসপেশি শিথিল থাকে, আমাদের চোখ এদিক থেকে ওদিকে ঘুরতে থাকে। পক্ষান্তরে নন-রেম ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে শরীর নড়াচড়া করতে পারে। এই সময় হরমোন নিঃসৃত হয় এবং দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর আবার সতেজ হয়ে ওঠে।
নজরুলের ভাষায়—
‘শিয়রে বসি চুপি চুপি চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু
নীপ-সম, নিরুপম, মনোরম!’
অবশ্য আরও কত ধরনের ঘুম যে আমরা প্রত্যহ অবলোকন করে থাকি। একেকজন একেক তরিকায় ঘুমায়। কেউ ঘুমের মাঝে বালিশসহ বৃত্তাকারে বিছানায় চক্কর মারে। কেউ কাৎ হয়ে, কেউ চিৎ হয়ে, কেউ হাঁ করে, কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউ ঘুমায় মরার মতো। কেউ ঘুমানোর সময় নাক ডাকে, কেউ বা আবার আবোলতাবোল বকে! ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আছে কায়া ঘুম, আছে মায়া ঘুম। আছে শোকের ঘুম, আছে টেনশনের ঘুম। আছে গরমের দিনের ঘুম, আছে বৃষ্টির দিনের ঘুম। তা ছাড়া দুপুরের খাবার খেয়ে টানা ঘুম দেওয়া বাঙালির যে চিরায়ত রীতি, তার নাম ভাতঘুম। যাঁরা লোকাল বাসে চড়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন, তাঁদের মধ্যেও একধরনের ঘুম প্রচলিত, যাকে বলা যায় বাসঘুম! মাথা একটু একটু করে ঝুঁকতে ঝুঁকতে হঠাৎ দুম করে বাসের সিটে ধাক্কা খাওয়া কিংবা হেলতে হেলতে অন্যের কাঁধে দড়াম করে ঢলে পড়া।
সিটে ধাক্কা খাওয়া কিংবা অন্যের কাঁধে ঢলে পড়ার বিষয়টি না থাকলেও বাসে ঘুমানোর অভ্যাসটি আমারও আছে। কতবার যে কলেজে যাওয়ার সময় কলেজের গেটে নামতে না পেরে মাধবপুর চলে গেছি, তার হিসেব নেই। সাধারণত আড়াইটা-তিনটার মধ্যে কলেজ শেষে বাসায় ফিরি। এর ব্যতিক্রম হলেই বাসা থেকে আম্মা ফোন করেন। একবার এ রকমই আম্মার ফোনে আমার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে কোথায় আছি, কিছুই ঠাহর করতে পারছি না। চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে কেবল বাস আর বাস। খানিকপর সম্বিৎ ফিরতেই আবিষ্কার করলাম, আমি ভাদুঘর বাস টার্মিনালে। ততক্ষণে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর বাসে তালা মেরে চলে গেছেন।
আরেকটি ঘটনা না বলে পারছি না। আমি আর আমাদের ক্যামেস্ট্রি স্যার। বাসে ঘুমানোর ক্ষেত্রে তাঁকে বলা যায় সবার ওস্তাদ। জীবনে একবারই উনি কলেজে ছাতা নিয়ে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়িয়ে রাধিকা গিয়ে হুঁশ হলে হুড়মুড় করে নিজে নেমে আসতে পারলেও ছাতাটিকে নামাতে পারেননি। হা! হা! তো সেদিন আমরা দুজনে দিগন্ত বাসের পেছনের দিকে পাশাপাশি বসে যথারীতি ঘুম। সুহিলপুর-ঘাটুরার মাঝামাঝি কোনো এক জায়গায় হইচই শুনে প্রথমে আমি জেগে উঠি। স্যার তখনো গভীর ঘুমে। আমি বললাম, নামবেন না? তিনি চোখ বন্ধ করেই বললেন, ‘কোথায় আসছে?’ আমি বললাম, ধানখেতে! বুঝলেন কি বুঝলেন না, সম্বিৎ ফিরতেই হুড়মুড় করে নামতে নামতে বললেন, ‘এক্সিডেন্ট হইছে!’
‘ঘুম’ শব্দটির সবচেয়ে পরিচিত সমার্থক শব্দ হচ্ছে নিদ্রা। বিশ্রাম, নিদ, সুপ্তি, তন্দ্রা, নিষুপ্তি, সুষুপ্তি—এসবও ঘুমের সমার্থক শব্দ। মজার ব্যাপার হচ্ছে ঘুম নামে দার্জিলিংয়ে একটি রেলস্টেশন আছে, যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৪০৭ ফুট উচ্চতায় এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।
উল্লিখিত নিদ শব্দটি নজরুলের বিখ্যাত ঈদের গানে পাই। সেখানে একটি লাইন এমন—
রজনীকান্তের গানে পাই—
‘জাগাও পথিকে, ও যে ঘুমে অচেতন।
বেলা যায়, বহু দূরে পান নিকেতন।’
শিল্প বিপ্লবের যুগে ঘুমে অচেতন ব্রিটিশ ও আইরিশ শ্রমিকদের ঘুম থেকে জাগাতে কিছু লোককে নাকি চাকরিতে রাখা হতো। তখন অ্যালার্ম ঘড়ির প্রচলন ছিল না। তাই তাঁদের কাজই ছিল মানুষকে ঘুম থেকে তোলা।
‘তন্দ্রা’, ‘সুপ্তি’ শব্দগুলো আমরা বিভিন্ন লেখায় প্রায়ই দেখে থাকি। ‘সুষুপ্ত’ শব্দটি পাই রজনীকান্তের আরেক গানে—
‘যবে, কনক প্রভাতে নব রবি সাথে জাগে সুষুপ্ত ধরা’।
এমনি করে বিভিন্ন কবি–সাহিত্যিক ঘুমের সমার্থক অনেক শব্দ যেমন ব্যবহার করেছেন, তেমনি বিভিন্ন মনীষী ঘুমের সংজ্ঞাও দিয়েছেন বিভিন্ন অনুভূতিতে। থমাস ডেক্কারের মতে, ‘ঘুমই সেই স্বর্ণের শেকল, যা আমাদের দেহ ও স্বাস্থ্যকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে।’ ক্রিস্টিনা রসেটি বলেছেন, ‘সব ধরনের যন্ত্রণার মহৌষধ হচ্ছে আনন্দঘন ঘুম।’ উইকিপিডিয়ার মতে, ‘ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে।’
তবে আমি জানি সবার ক্ষেত্রে ঘুমের সময় সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে না। উদাহরণ আরব আলী। আরব আলী আমার বাল্যকালের বন্ধু। বলতে গেলে আমার সবকিছুই ওর জানা। তারপরও আমার একটা গোপনীয় বিষয় ছিল, যা ওর কাছ থেকে আড়াল করেছিলাম।
একবার রাঙামাটি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সারা রাত জার্নি শেষে হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় যেতেই আরব আলী ঘুমিয়ে পড়ল। ঠিক সে সময় আমার কাঙ্ক্ষিত একটি ফোন এল। সে ঘুমিয়ে আছে ভেবে রুমে বসেই কথা চালাতে লাগলাম। ফল এই দাঁড়িয়েছিল—আমার একমাত্র গোপন তথ্যটিও আর তাঁর অজানা রইল না। কাজেই বিল কসবির ভাষায়, ‘সব খোলা চোখই যেমন দেখতে পায় না, সব বন্ধ চোখও তেমন ঘুমায় না।’ এমন সংজ্ঞায়ন আরব আলীর কথা ভেবেই কি–না কে জানে?
তাঁর এই ঘুমহীনতার জন্য কোথাও গিয়েও শান্তি নেই। সন্ধ্যার পর চা পান করা যাবে না, ভারী খাবার খাওয়া যাবে না, জোরে হাসি দেওয়া যাবে না এমনকি রাত ১০টার পর গল্পও করা যাবে না।
বিছানায় শুয়ে উল্টো গুনতে হবে, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে কিংবা শহীদ আল বোখারি মহাজাতকের মতো ধ্যানমগ্ন হয়ে বলতে হবে—শরীর বলতে আপনার আর কিছুই নেই, আছে শুধু মন! আপনি শিথিলায়নের গভীর স্তরে পৌঁছে গেছেন... ইত্যাদি ইত্যাদি করতে হয় কিংবা কে জানে আরও কত কী!
আমি বলি, আরে বাবা তুই তো ঘুমাসই না, তাহলে অত নিয়ম মানার দরকার কী? এই আমারে দেখ, ঘুম তাড়ানোর দরকার হলে চা পান করি। আবার গরম চায়ে চুমুক না দিলে ঘুমটাও ভালো জমে না! আর কী খাই না আমি? পান, বিড়ি ছাড়া আর কোনো কিছুতেই কি আমার অরুচি আছে? বল? সব খাবি। যখন দরকার ঘুমাবি, প্রয়োজনে জেগে থাকবি—এই না হলে কিসের জীবন? কিসের কি!
আসলে যতই বলি আরব আলীর কপাল খারাপ। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় প্রধানত দুই ধরনের ঘুম রেম আর নন–রেমের মধ্যে সে র্যাম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) ভাগে পড়ে গেছে। রেম ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক সজাগ থাকে, আমাদের মাংসপেশি শিথিল থাকে, আমাদের চোখ এদিক থেকে ওদিকে ঘুরতে থাকে। পক্ষান্তরে নন-রেম ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে শরীর নড়াচড়া করতে পারে। এই সময় হরমোন নিঃসৃত হয় এবং দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর আবার সতেজ হয়ে ওঠে।
নজরুলের ভাষায়—
‘শিয়রে বসি চুপি চুপি চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু
নীপ-সম, নিরুপম, মনোরম!’
অবশ্য আরও কত ধরনের ঘুম যে আমরা প্রত্যহ অবলোকন করে থাকি। একেকজন একেক তরিকায় ঘুমায়। কেউ ঘুমের মাঝে বালিশসহ বৃত্তাকারে বিছানায় চক্কর মারে। কেউ কাৎ হয়ে, কেউ চিৎ হয়ে, কেউ হাঁ করে, কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউ ঘুমায় মরার মতো। কেউ ঘুমানোর সময় নাক ডাকে, কেউ বা আবার আবোলতাবোল বকে! ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আছে কায়া ঘুম, আছে মায়া ঘুম। আছে শোকের ঘুম, আছে টেনশনের ঘুম। আছে গরমের দিনের ঘুম, আছে বৃষ্টির দিনের ঘুম। তা ছাড়া দুপুরের খাবার খেয়ে টানা ঘুম দেওয়া বাঙালির যে চিরায়ত রীতি, তার নাম ভাতঘুম। যাঁরা লোকাল বাসে চড়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন, তাঁদের মধ্যেও একধরনের ঘুম প্রচলিত, যাকে বলা যায় বাসঘুম! মাথা একটু একটু করে ঝুঁকতে ঝুঁকতে হঠাৎ দুম করে বাসের সিটে ধাক্কা খাওয়া কিংবা হেলতে হেলতে অন্যের কাঁধে দড়াম করে ঢলে পড়া।
সিটে ধাক্কা খাওয়া কিংবা অন্যের কাঁধে ঢলে পড়ার বিষয়টি না থাকলেও বাসে ঘুমানোর অভ্যাসটি আমারও আছে। কতবার যে কলেজে যাওয়ার সময় কলেজের গেটে নামতে না পেরে মাধবপুর চলে গেছি, তার হিসেব নেই। সাধারণত আড়াইটা-তিনটার মধ্যে কলেজ শেষে বাসায় ফিরি। এর ব্যতিক্রম হলেই বাসা থেকে আম্মা ফোন করেন। একবার এ রকমই আম্মার ফোনে আমার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে কোথায় আছি, কিছুই ঠাহর করতে পারছি না। চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে কেবল বাস আর বাস। খানিকপর সম্বিৎ ফিরতেই আবিষ্কার করলাম, আমি ভাদুঘর বাস টার্মিনালে। ততক্ষণে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর বাসে তালা মেরে চলে গেছেন।
আরেকটি ঘটনা না বলে পারছি না। আমি আর আমাদের ক্যামেস্ট্রি স্যার। বাসে ঘুমানোর ক্ষেত্রে তাঁকে বলা যায় সবার ওস্তাদ। জীবনে একবারই উনি কলেজে ছাতা নিয়ে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়িয়ে রাধিকা গিয়ে হুঁশ হলে হুড়মুড় করে নিজে নেমে আসতে পারলেও ছাতাটিকে নামাতে পারেননি। হা! হা! তো সেদিন আমরা দুজনে দিগন্ত বাসের পেছনের দিকে পাশাপাশি বসে যথারীতি ঘুম। সুহিলপুর-ঘাটুরার মাঝামাঝি কোনো এক জায়গায় হইচই শুনে প্রথমে আমি জেগে উঠি। স্যার তখনো গভীর ঘুমে। আমি বললাম, নামবেন না? তিনি চোখ বন্ধ করেই বললেন, ‘কোথায় আসছে?’ আমি বললাম, ধানখেতে! বুঝলেন কি বুঝলেন না, সম্বিৎ ফিরতেই হুড়মুড় করে নামতে নামতে বললেন, ‘এক্সিডেন্ট হইছে!’
এখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগেতিন বছরের শিশু মুসা মোল্লা ও সাত বছরের রোহান মোল্লা নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাবার চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে তাদের। আহাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি দুই ছেলেসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করার পর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়েছেন।
১ দিন আগেদলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
২ দিন আগে