বঙ্গোপসাগর সংলাপ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি ইস্যুতে আটকে থাকবে না

# পারস্পরিক নির্ভরতার যে বাস্তবতা, তা বারবার সামনে চলে আসবে: প্রণয় ভার্মা

# সার্ক সক্রিয় করায় বাধা সরকারগুলো

# রাজনৈতিক উদ্দেশে সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ১২
রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনো একটি ইস্যুতে আটকে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। আজ রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে এক সংলাপে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক কোনো একটি অ্যাজেন্ডা বা এক ইস্যুতে আটকে থাকতে পারে না। আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতার যে বাস্তবতা, তা রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও বারবার সামনে চলে আসবে।’

‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন-২০২৪’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ সংলাপের আয়োজক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সংলাপের দ্বিতীয় দিনের এক অধিবেশনে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্কের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যেখানে উভয় দেশের জনগণই মূল অংশীজন।’

দুই দেশের সম্পর্কের পারস্পরিক নির্ভরতার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। ভারত বিশ্বাস করে যে দুই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত।

দুই দেশের মধ্যকার বহুমুখী সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাণিজ্য, পরিবহন ও জ্বালানি সংযোগ এবং মানুষে মানুষে সম্পৃক্ততার ক্রমাগত অগ্রগতির ওপর জোর দেন ভার্মা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন-নির্বিশেষে আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতা ও দ্বিপক্ষীয় মঙ্গলের বাস্তবতা নিজেকে পুনর্ব্যক্ত করতে থাকবে।’

হাইকমিশনার ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সম্প্রতি নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনাকে দ্বিপক্ষীয় বিনিময়ের ক্ষেত্রে অব্যাহত অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে, এমনটা মনে করেন তিনি।

আজ রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি:সংগৃহীত
আজ রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। ছবি:সংগৃহীত

সার্কের বাধা নীতিনির্ধারকেরা
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত অন্য এক অধিবেশনে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতার জন্য দেশগুলোর জনগণ নয়, বরং নীতিনির্ধারকেরা দায়ী। তাঁরা বলেন, এই অঞ্চলে শুধু ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-পাকিস্তান, নেপাল-ভারত ও আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মধ্যেও বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে। বহু বছর ধরেই রাজনৈতিক উদ্দেশে এসব সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে।

চীনের জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পাকিস্তানের নাগরিক আমনা খান বলেন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষেরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। খাওয়াদাওয়া করে। মানুষের মধ্যে, জনগণের মধ্যে সমস্যা নেই। সমস্যা নীতিনির্ধারকদের।

ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ বলেন, সার্ক গঠনের পর চার দশক হলো। কিন্তু সেই অর্থে এর কোনো অগ্রগতি নেই। কোনো দেশের মধ্যে সংকট বা ব্যর্থতা থাকলে একটা সংস্থা থমকে যাবে, এটা হতে পারে না।

খারাপ সম্পর্কে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে
ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শক্তিশালী ও মাঝারি শক্তির দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বক্তারা বলেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। চীনের সামরিক সক্ষমতার সম্প্রসারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতও এই অঞ্চলের প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব বজায় রাখতে উন্মুখ। এগুলো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ইস্যু।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি এ এন এম মুনিরুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই চীনের বিচরণ রয়েছে। এই অঞ্চলে শুধু ভারত বাদে সব দেশেরই চীনের সঙ্গে বিশাল ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা উচিত। নাহলে প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷

রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে আগত অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
রোববার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সংলাপে আগত অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

দলগুলো দুর্নীতির ভাগ পায়
দুর্নীতির ওপর অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে বক্তারা বলেন, দুর্নীতি দক্ষিণ এশিয়ায় সমাজের অন্তর্নিহিত একটি বিষয়। মানুষ আইন ভাঙলে সুবিধা পায়। সে জন্য একধরনের যোগসাজশ গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলও সেখান থেকে ভাগ পায়।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, দুর্নীতির চক্র জিইয়ে রাখা ও নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ রাখতে হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলা বা গুম করে ফেলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু দুর্নীতি রোধ করার ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ নেই। কারণ, তারা নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িত।

সমাজে দুর্নীতি প্রোথিত থাকার উদাহরণ দিয়ে নেপালের পলিসি এন্ট্রাপ্রেনিউয়রস ইনকরপোরেটেডের পরিচালক অনুরাগ আচারিয়া বলেন, নেপালে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের রাজনৈতিক ভাঙাগড়া হয়েছে। একের পর এক সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি রয়েই গেছে। দুর্নীতির ফসল রাজনীতিকেরাই ভোগ করছেন।

রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে যেটা হয়েছে সেটা হলো, দুর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণ, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাস্তবতা দেশটির তরুণদের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়।

বিশ্বের ৮০টি দেশের লেখক, গবেষক, রাজনীতিক, কূটনীতিক, আমলা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের রেকর্ড ভাঙল ১৪ বছর পর

৩ মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

যানজটে গুলি করে ফেঁসে গেলেন জাপার সাবেক এমপি, অস্ত্রসহ আটক

শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরীমনি, কী ঘটেছিল সেখানে

এয়ারক্র্যাফটে স্বর্ণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত