রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য: সংলাপে বক্তারা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ৩৩
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতির প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য বিষয়ে জাতীয় সংলাপের বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চলমান সংকট ঝুলে রয়েছে বছরের পর বছর। সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢোকা থামানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

রাজধানীতে আজ শনিবার রোহিঙ্গা নীতির প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য বিষয়ে জাতীয় সংলাপে তাঁরা এ তাগিদ দেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) বিআইআইএসএস মিলনায়তনে এ সংলাপের আয়োজন করে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় রোহিঙ্গা সংকট জটিল হয়ে উঠেছে।

সীমান্তে যা ঘটছে, তা ভালো লক্ষণ নয়, এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংকটটি কাটিয়ে উঠতে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও সামরিক দিক থেকে জোরালো অবস্থান সৃষ্টি করা দরকার।

এ সংকটে মধ্যস্থতা করার কথা যেসব দেশ বলছে, তাদের সৎ থাকার ওপর জোর দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, অনেক দেশেরই মিয়ানমারের সঙ্গে স্বার্থের সম্পর্ক রয়েছে। আবার স্বার্থের গভীর দ্বন্দ্বও রয়েছে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে।

সরকারের হিসাবে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের মুখে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন।

সংলাপে রোহিঙ্গা সংকট মোচনে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও।

রোহিঙ্গাদের এর আগে দুইবার বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, আবার ২০১৭ সাল থেকে তাদের আসা প্রমাণ করে যে, আগের দুইবারের প্রত্যাবাসন টেকসই ছিল না।

নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আবদুল হাফিজ বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভক্তি, কার্যকর নেতৃত্বের অভাব ও নিবর্তনমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে না ওঠা, তাঁদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।

এসআইপিজির ঊর্ধ্বতন গবেষক ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশে যতটা তৎপর, মিয়ানমারের ভেতরে ততটা তৎপর নয়। রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি জাতীয় নীতি তৈরির তাগিদ দেন তিনিও।

রাখাইনে সংঘাতের পরিস্থিতিতে এখনো প্রতিদিন রোহিঙ্গারা আসছে, এমনটি উল্লেখ করে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী জানান, নতুন করে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকেছেন, তাঁদের নিবন্ধন বন্ধ আছে। এমন রোহিঙ্গা বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মিশনপ্রধান লেনস বানো বলেন, যে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে আছে, তাদের যাতে বাংলাদেশে আসতে না হয়, রাখাইনে তেমন পরিবেশ সৃষ্টি জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকাকে বহুদিন ধরে চলতে থাকা এই জটিল নৃতাত্ত্বিক সমস্যা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে মনে করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের নীতিনির্ধারক ও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব রয়েছে, এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহুমাত্রিক এ সমস্যা সমাধানে সরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কখনোই সমন্বিত প্রস্তুতি ছিল না।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থার ধারণা অবাস্তব বলে মনে করেন জাসদের একাংশের নেতা ডা. মুশতাক হোসেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ কক্সবাজারের বাসিন্দা। তিনি রোহিঙ্গা সংকটকে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মিয়ানমারের সেনারা আরসার মাধ্যমে ক্যাম্প থেকে, আর আরাকান আর্মির সদস্যরা বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তরুণদের রাখাইনে যুদ্ধের জন্য ভাড়া করছে। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি আরও বাড়বে।

এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে রোহিঙ্গার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।

বিএনপির শামা ওবায়েদ, সিপিবির আবদুল্লাহ কাফি রতন, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রাহীদ এজাজ, ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান, এনএসইউ উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীসহ অন্যরা আলোচনায় অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত