নাসির কমিশনের শপথ

আমরা একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাস করি না: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ৩৪
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও চার নির্বাচন কমিশনারকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি: পিআইডির সৌজন্যে

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও চার নির্বাচন কমিশনারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আজ রোববার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান।

শপথ নেওয়া অপর চার নির্বাচন কমিশনার হলেন—মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

শপথ নেওয়ার পর সিইসি নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘সব ভোটার নিজের ইচ্ছায় পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে যাতে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। এটার জন্য যা করণীয়, তা করা হবে। আমরা একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাস করি না।’ আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে শপথ অনুষ্ঠান শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শপথ নিয়েছি, শপথের সম্মান রাখতে চাই। শপথ সমুন্নত রাখতে চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আশ্বস্ত থাকুন, আমাদের নিয়ত সহিহ। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, ভালো নির্বাচন হবে।’ ১৫-১৬ বছর ধরে যেসব রাজনৈতিক দল ভোটাধিকার চেয়ে আসছে, তাদের সহযোগিতা পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পরে বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সিইসি বলেন, ‘মানুষ এখন ভোটের নাম শুনলে নাক সিটকায়। প্রশ্ন তোলে, ভোট দিলে কী হবে? কেউ কেউ বলেন, ভোট রাতে হয়ে গেছে। সরি টু সে, কেউ কেউ বলবেন কুত্তা মার্কা নির্বাচন।’

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মানুষকে আগ্রহী করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা, নষ্ট আগ্রহ নতুন করে পুনর্জীবিত করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান সিইসি। সাংবাদিকেরা জানতে চান, এই মুহূর্তে ইসির বড় চ্যালেঞ্জ কী? এ প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ একটা। তা হলো জাতিকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। এটাকেই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এটাই আমরা মোকাবিলা করতে চাই।’

নাসির উদ্দীন বলেন, ‘বুঝতেই তো পারছেন, একতরফা নির্বাচনের কারণে দেশের ১২টা বেজে গেছে। গায়ের জোরে ইলেকশন করতে গেলে যা হওয়ার, সেটাই তো হয়েছে। আমরা কোনো গায়ের জোরের নির্বাচন দেখতে চাই না। কোনো একতরফা নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। আমরা প্রতিযোগিতামূলক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেব; যাতে নিয়মের মধ্যে সকলেই খেলতে পারে।’

সরকারের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করতে পারবেন কি—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এই সরকার সেই সরকার নয়, যে সরকার চাপ দেয়। আগের সরকার চাপ দিয়েছে, কারণ, তার দলীয় অ্যাজেন্ডা ছিল। অন্তর্বর্তী এই সরকারের কোনো দলীয় অ্যাজেন্ডা নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই। ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে উনি মুক্তি পেতে চান।’

সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করে দিয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকে যেসব সুপারিশ আসবে, সেখান থেকে সবার কাছে যেসব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে, সেগুলো আমরা নেব।’

এ সময় নির্বাচন কমিশনার সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নিতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে যান নাসির উদ্দীন কমিশনের সব সদস্য। সেখানে তাঁরা আহতদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এরপর ৭৯ দিন শূন্য থাকার পর পুরো কমিশন পেল নির্বাচন ভবন। নির্বাচন ভবনে প্রবেশের সময় নতুন সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ইসি কর্মকর্তারা।

নতুন কমিশন সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে সম্মেলনকক্ষে টাঙানো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। কর্মকর্তারা জানান, সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের কক্ষ পরিষ্কার করার সময় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানো হয়েছে। তারপর আর তা টাঙানো হয়নি বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত