মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
হরিণমারা দেখে, হাঁটুভাঙ্গা পেরিয়ে অজস্রধারা যাওয়ার পথেরও যে একটা গল্প তৈরি হতে পারে, সেটা জানা ছিল না।
আগের দিন রাতে রওনা দিয়ে পরদিন খুব ভোরে পৌঁছেছিলাম মিরসরাই। ফজরের নামাজের পরই ছোট কমলদহ হয়ে চলে যাই একেবারে রেললাইন পার হয়ে বাউয়াছড়া উদ্যান। অতঃপর গাড়ি রেখে হাঁটা। কিছু দূর হাঁটতেই সবুজ ঘন অরণ্য। আগের রাতে বৃষ্টি ঝরায় বন্ধুর পথ বেশ পিচ্ছিল। তবু যেতে হবে প্রাণের স্পন্দন শুরু হওয়া ঝরনার কাছে। আর ঝরনা দেখতে যাওয়া মানে রোমাঞ্চের সন্ধান পাওয়া। এ পথেও তার কমতি হলো না। বাউয়াছড়ার উঁচু-নিচু পাহাড়ে হাইকিং-ট্রেকিং চলল ঘণ্টাখানেক। এরপর দৃষ্টিনন্দন ঝিরির শীতল পানি মাড়িয়ে প্রথমেই দেখা পাওয়া গেল হরিণমারা ঝরনার।
অপূর্ব এর সৌন্দর্য। সবুজ অরণ্যের মাঝে কলকল শব্দ তুলে অবিরাম ধারায় বয়ে যাচ্ছে হরিণমারা ঝরনার জল। পানির প্রচণ্ড চাপে এর সামনে বেশ বড়সড় বেসিন তৈরি হয়েছে। সেই বেসিনে হিম হিম ঠান্ডা স্বচ্ছ টলটলে পানি। তাতে ডুব দেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে নেমে যাই পানিতে। ডুবসাঁতার আর জলকেলি চলল কিছুক্ষণ। আনন্দে বিভোর হয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে চলে গেলাম একেবারে ঝরনার নিচে, যেন তার জল পড়ে সরাসরি আমাদের শরীরে। বহুক্ষণ ভিজে এবার ছুটলাম হাঁটুভাঙ্গার পথে।
সীতাকুণ্ড রেঞ্জের ঝরনার নামগুলো বেশ অদ্ভুত। অল্প সময় হেঁটেই দেখা পাই হাঁটুভাঙ্গা ঝরনার। প্রথম দেখাতেই বুঝে গেলাম, এখানে একটু বেখেয়াল হলে নিশ্চিত যে কারও হাঁটু ভাঙবে। তাই বেশ সতর্কতার সঙ্গে এর কাছাকাছি গেলাম।
বেশ উঁচু থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। হাঁটুভাঙ্গার পানিতে শরীর ভেজানোর চেষ্টা করি। জায়গাটা বেশ পিচ্ছিল। ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু রেপ্লিং রশি ভুলে গাড়িতে রেখে যাওয়ায় সেটা আর হলো না। মন কিছুটা খারাপ হলেও এগিয়ে গেলাম আমবাড়িয়া ঝরনার দিকে। কেউ কেউ একে জিম ঝরনা নামেও ডাকে। ঝিরিপথ মাড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ঝরনার কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। যাওয়ার পথে নাম না জানা বুনো ফুল আর কাঁচা-পাকা ডুমুরের ঘ্রাণ ভ্রমণ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে থাকল। আমবাড়িয়া ঝরনায় পৌঁছেই বেশ পুলকিত হলাম। পুরো ঝরনার গায়ে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ধাপে ধাপে পাথুরে মাটি কেটে। পানিও বেশ। এর দেহে হেলান দিয়ে কান পেতে শুনতে থাকলাম জল পতনের শব্দ। সেই অপার্থিব শিহরণের অনুভূতি ঝরনার কোলে মাথা রেখে শুনলেই বোঝা যায়।
শত আনন্দের মাঝেও পেটে টান পড়লে তা উপেক্ষা করার জো নেই। তাই আবারও ফিরলাম হরিণমারার প্রান্তরে। খড়কুটো জুগিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হলো আগুন। সেই আগুনে রান্না হলো মজাদার নুডলস। খেয়েদেয়ে ছুটলাম অজস্রধারার দিকে। এবার কিছুটা পথ ট্রেকিং করে, বোটে করে ফিরছি। বাউয়াছড়া লেকের দুই পাড়ে সবুজ বন। আর নিঝুম চারপাশ। মাথার ওপর ঝকঝকে নীল আসমান। গাছ থেকে পানিতে জংলি গোটা পড়ার টুপটাপ শব্দ। পাতা ঝরার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে। কানে ভেসে আসছে নাম না জানা নানা পাখির সুরেলা ডাক। টলটলে পানিতে সাঁতার কাটছে রংধনুর মতো সুন্দরী সুতানলি সাপ। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতেই বোট ভেড়ে ঘাটে। এরপর কিছু দূর হেঁটে গাড়িতে চড়ে সীতাকুণ্ড।
ছোট দরগার হাট হয়ে কলাবাড়িয়ায় গাড়ি পার্ক করেই আবার হাঁটা। চলতি পথে মানুষ আর মানুষ। লেকের ধারে যেতেই সিঁড়ির গোড়ায় চোখে পড়ে ময়লার ভাগাড়। সিরিয়াল ধরে বোটে চড়তে হলো। অধিকাংশ পর্যটকের গন্তব্য সহস্রধারা-২। অনেক মানুষের কোলাহল ওয়াটার ড্যামের নির্জনতা গিলে ফেলেছে। তবে এর সৌন্দর্য অসাধারণ। প্রথম দেখাতেই যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। বোট থেকে নেমেই অনেক উঁচু থেকে ঝরে পড়া সহস্রধারা-২ ঝরনাটি দেখে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের টার্গেট পাহাড়ের ওপরে থাকা অজস্রধারা। সময় কম, তাই গাইডকে এগোতে বলি। গাইড আর এগোয় না। শেষে আবিষ্কার করা গেল সে নিজেও অজস্রধারার পথে নতুন। কী আর করা। এদিকে বেলা তিনটা ছুঁই ছুঁই। পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে আগে। স্থানীয় দু-একজন জানাল, ট্রেকিং করে অজস্রধারা পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। তাই আর দুঃসাহস না করে সহস্রধারা-২ থেকে ভ্রমণের ইতি টানতে হলো।
যাতায়াত
ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাসে যেতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই বাজার। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ছোট কমলদহ হয়ে বাউয়াছড়া উদ্যান। এক দিনের ট্রিপে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। এ পথে গেলে শুকনো খাবার এবং অবশ্যই স্থানীয় গাইড নিতে হবে।
হরিণমারা দেখে, হাঁটুভাঙ্গা পেরিয়ে অজস্রধারা যাওয়ার পথেরও যে একটা গল্প তৈরি হতে পারে, সেটা জানা ছিল না।
আগের দিন রাতে রওনা দিয়ে পরদিন খুব ভোরে পৌঁছেছিলাম মিরসরাই। ফজরের নামাজের পরই ছোট কমলদহ হয়ে চলে যাই একেবারে রেললাইন পার হয়ে বাউয়াছড়া উদ্যান। অতঃপর গাড়ি রেখে হাঁটা। কিছু দূর হাঁটতেই সবুজ ঘন অরণ্য। আগের রাতে বৃষ্টি ঝরায় বন্ধুর পথ বেশ পিচ্ছিল। তবু যেতে হবে প্রাণের স্পন্দন শুরু হওয়া ঝরনার কাছে। আর ঝরনা দেখতে যাওয়া মানে রোমাঞ্চের সন্ধান পাওয়া। এ পথেও তার কমতি হলো না। বাউয়াছড়ার উঁচু-নিচু পাহাড়ে হাইকিং-ট্রেকিং চলল ঘণ্টাখানেক। এরপর দৃষ্টিনন্দন ঝিরির শীতল পানি মাড়িয়ে প্রথমেই দেখা পাওয়া গেল হরিণমারা ঝরনার।
অপূর্ব এর সৌন্দর্য। সবুজ অরণ্যের মাঝে কলকল শব্দ তুলে অবিরাম ধারায় বয়ে যাচ্ছে হরিণমারা ঝরনার জল। পানির প্রচণ্ড চাপে এর সামনে বেশ বড়সড় বেসিন তৈরি হয়েছে। সেই বেসিনে হিম হিম ঠান্ডা স্বচ্ছ টলটলে পানি। তাতে ডুব দেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে নেমে যাই পানিতে। ডুবসাঁতার আর জলকেলি চলল কিছুক্ষণ। আনন্দে বিভোর হয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে চলে গেলাম একেবারে ঝরনার নিচে, যেন তার জল পড়ে সরাসরি আমাদের শরীরে। বহুক্ষণ ভিজে এবার ছুটলাম হাঁটুভাঙ্গার পথে।
সীতাকুণ্ড রেঞ্জের ঝরনার নামগুলো বেশ অদ্ভুত। অল্প সময় হেঁটেই দেখা পাই হাঁটুভাঙ্গা ঝরনার। প্রথম দেখাতেই বুঝে গেলাম, এখানে একটু বেখেয়াল হলে নিশ্চিত যে কারও হাঁটু ভাঙবে। তাই বেশ সতর্কতার সঙ্গে এর কাছাকাছি গেলাম।
বেশ উঁচু থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। হাঁটুভাঙ্গার পানিতে শরীর ভেজানোর চেষ্টা করি। জায়গাটা বেশ পিচ্ছিল। ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু রেপ্লিং রশি ভুলে গাড়িতে রেখে যাওয়ায় সেটা আর হলো না। মন কিছুটা খারাপ হলেও এগিয়ে গেলাম আমবাড়িয়া ঝরনার দিকে। কেউ কেউ একে জিম ঝরনা নামেও ডাকে। ঝিরিপথ মাড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ঝরনার কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। যাওয়ার পথে নাম না জানা বুনো ফুল আর কাঁচা-পাকা ডুমুরের ঘ্রাণ ভ্রমণ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে থাকল। আমবাড়িয়া ঝরনায় পৌঁছেই বেশ পুলকিত হলাম। পুরো ঝরনার গায়ে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ধাপে ধাপে পাথুরে মাটি কেটে। পানিও বেশ। এর দেহে হেলান দিয়ে কান পেতে শুনতে থাকলাম জল পতনের শব্দ। সেই অপার্থিব শিহরণের অনুভূতি ঝরনার কোলে মাথা রেখে শুনলেই বোঝা যায়।
শত আনন্দের মাঝেও পেটে টান পড়লে তা উপেক্ষা করার জো নেই। তাই আবারও ফিরলাম হরিণমারার প্রান্তরে। খড়কুটো জুগিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হলো আগুন। সেই আগুনে রান্না হলো মজাদার নুডলস। খেয়েদেয়ে ছুটলাম অজস্রধারার দিকে। এবার কিছুটা পথ ট্রেকিং করে, বোটে করে ফিরছি। বাউয়াছড়া লেকের দুই পাড়ে সবুজ বন। আর নিঝুম চারপাশ। মাথার ওপর ঝকঝকে নীল আসমান। গাছ থেকে পানিতে জংলি গোটা পড়ার টুপটাপ শব্দ। পাতা ঝরার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে। কানে ভেসে আসছে নাম না জানা নানা পাখির সুরেলা ডাক। টলটলে পানিতে সাঁতার কাটছে রংধনুর মতো সুন্দরী সুতানলি সাপ। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতেই বোট ভেড়ে ঘাটে। এরপর কিছু দূর হেঁটে গাড়িতে চড়ে সীতাকুণ্ড।
ছোট দরগার হাট হয়ে কলাবাড়িয়ায় গাড়ি পার্ক করেই আবার হাঁটা। চলতি পথে মানুষ আর মানুষ। লেকের ধারে যেতেই সিঁড়ির গোড়ায় চোখে পড়ে ময়লার ভাগাড়। সিরিয়াল ধরে বোটে চড়তে হলো। অধিকাংশ পর্যটকের গন্তব্য সহস্রধারা-২। অনেক মানুষের কোলাহল ওয়াটার ড্যামের নির্জনতা গিলে ফেলেছে। তবে এর সৌন্দর্য অসাধারণ। প্রথম দেখাতেই যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। বোট থেকে নেমেই অনেক উঁচু থেকে ঝরে পড়া সহস্রধারা-২ ঝরনাটি দেখে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের টার্গেট পাহাড়ের ওপরে থাকা অজস্রধারা। সময় কম, তাই গাইডকে এগোতে বলি। গাইড আর এগোয় না। শেষে আবিষ্কার করা গেল সে নিজেও অজস্রধারার পথে নতুন। কী আর করা। এদিকে বেলা তিনটা ছুঁই ছুঁই। পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে আগে। স্থানীয় দু-একজন জানাল, ট্রেকিং করে অজস্রধারা পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। তাই আর দুঃসাহস না করে সহস্রধারা-২ থেকে ভ্রমণের ইতি টানতে হলো।
যাতায়াত
ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাসে যেতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই বাজার। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ছোট কমলদহ হয়ে বাউয়াছড়া উদ্যান। এক দিনের ট্রিপে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। এ পথে গেলে শুকনো খাবার এবং অবশ্যই স্থানীয় গাইড নিতে হবে।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে