সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
ঝরনার রূপ খোলে বর্ষায়। খাগড়াছড়ির গহিন বনে অনাবিষ্কৃত অসংখ্য ঝরনা আছে এখনো। সিজুক ঝরনা তেমনই একটি। এর সন্ধান দেন পাহাড়ি বন্ধু ক্লিনটন চাকমা। তিনি ঝরনাটির কাছের গ্রাম নন্দরামের বাসিন্দা। অবশ্য একে নন্দরাম ঝরনা নামে চিনতাম। ক্লিনটনের মুখে ঝরনা অভিমুখের দুর্গম পথ আর বিশালতার কথা শুনে ট্রেকিংয়ের নেশায় পড়ে যাই। স্থানীয় সহযোগিতা ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না; যেন নিষিদ্ধ কোনো এক রূপকথার রাজ্য। যাতায়াতের তেমন রাস্তাও নেই। সিজুক ঝরনায় পৌঁছাতে বেশ কিছুটা পথ হাঁটতে হয়।
বর্ষাকাল। আগের রাতে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে পরদিন ভোরের আলোয় রওনা দিলাম সিজুক ঝরনার পথে। সকালে হালকা বৃষ্টি ছিল। কিছু সময় যেতেই আকাশ উজ্জ্বল হতে শুরু করল। দীঘিনালা থেকে চান্দের গাড়িতে রওনা হয়ে বাঘাইহাটে সকাল সকাল পৌঁছে যাওয়া যায়। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে ক্লিনটনদার মোটরবাইকে চললাম নন্দরামপাড়ার দিকে। দ্রুতগতির মোটরবাইকে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। পথে পেলাম কাশফুলের বন, সবুজ আঁকাবাঁকা পথ, হঠাৎ বাঁক নেওয়া খরস্রোতা নদী।
সবুজ বনানী পেরিয়ে এগিয়ে চলছি ঝরনার খোঁজে। নন্দরাম গ্রামে নেমে উদয়নের বাড়িতে কিছুক্ষণের বিরতি। তাঁর স্ত্রীকে আমাদের রান্নার দায়িত্ব দিয়ে যাত্রা করলাম ঝরনার পথে। পিচঢালা রাস্তা পেরিয়ে পা বাড়ালাম বুনো পথে। সবুজে ঘেরা পথ বেয়ে পাহাড়ে, সময় বাঁচাতে পা চালাচ্ছি দ্রুতগতিতে। জুমের ট্রেইল ধরে পা ফেলছি। সরু রাস্তা ঘন জঙ্গলে ঢাকা, জোঁকের খুব উৎপাত জুম ট্রেইলে।
ট্রেইলে দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যায়, দেখা মেলে কেবল বনানী ঢাকা সবুজ উপত্যকা। বনের মাথার ওপর সাদা মেঘের আনাগোনা। বর্ষায় পাহাড়ের যে রূপ, তার সবটুকু ছিল সিজুক ট্রেইলে। প্রথম বিরতি দিলাম জুমঘরে। বন্য প্রাণী থেকে জুমখেত রক্ষা করতে পাহাড়ের মাঝখানে জুমঘর বানান চাষিরা। জুমঘরে বসে মন জুড়ানো হাওয়া আর পাকা কলার স্বাদ নিলাম। কিছুক্ষণের বিরতি শেষে আবার রওনা হলাম ঝরনার পথে।
উঁচু-নিচু রাস্তা আর বাঁশ বনে ঘেরা ট্রেইলে পা চালানো বেশ কঠিন। খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে অনেকে। ট্রেইল ছেড়ে নিচে নামতেই শুরু হয় পাহাড়ি ঝিরি, প্রায় গলাসমান পানি। সে পথেই বেশ খানিক এগিয়ে যেতে হলো। সুনসান নীরবতা পুরো ট্রেইলে। পাথুরে পাহাড় বেয়ে নিচে নামতেই ঝরনার শব্দ। অনেক দূর থেকেই তা শোনা যাচ্ছিল। কাছে যেতেই এর বিশালতায় মুগ্ধ সবাই।
প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ পানির স্রোতে পাহাড় থেকে পাথর নেমে আসছে। ভরা বর্ষায় ঝরনার কাছে যাওয়া কঠিন। তীব্র গতির স্রোত গড়িয়ে পড়ে ক্রমাগত। এর বিশালতা আর পানির স্রোত আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে!
চারপাশের সবুজ বনে ঘেরা লুকোনো ঝরনার অপূর্ব রূপ—যেন সবুজ বনে সাদা বুনো ফুল। দেখেশুনে, ছবি তুলে দুর্গম আর সবুজে ঘেরা সিজুক ঝরনা ছেড়ে যখন চেনা পথে ফিরছি, অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিতে পথ চলা কঠিন হয়ে উঠল। জোঁক, বন্ধুর ট্রেইল, গলাসমান ঝিরির পানি পেরিয়ে দেখা সিজুক ঝরনা বেঁচে আছে প্রকৃতির বিশালতায়। দুর্গম বুনো পথে এমন অসংখ্য ঝরনা, ঝিরি, চেনা-অচেনা বৃক্ষ প্রাণ জোগায় প্রকৃতিতে।
যেভাবে যাবেন
সিজুক ঝরনা দেখতে যেতে হবে ঢাকা-খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা পর্যন্ত বাসে। সেখান থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি নিয়ে সরাসরি নন্দরাম গ্রাম পর্যন্ত যাওয়া যায়। নন্দরাম থেকে হেঁটে যেতে হবে সিজুক ঝরনা। পুরো ট্রেইলে সময় লাগবে প্রায় ৬ ঘণ্টা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সিজুক ঝরনায় কোনো ক্যাম্পিং করা যায় না। তা ছাড়া ঝরনার আশপাশে রাতে থাকার মতো গ্রাম নেই। তাই থাকতে হবে দীঘিনালা বা খাগড়াছড়িতে। ঝরনার আশপাশটা পরিষ্কার রাখতে হবে। তাই সেখানে কোনো পলিথিন বা সে রকম কিছু ফেলে আসা যাবে না।
ঝরনার রূপ খোলে বর্ষায়। খাগড়াছড়ির গহিন বনে অনাবিষ্কৃত অসংখ্য ঝরনা আছে এখনো। সিজুক ঝরনা তেমনই একটি। এর সন্ধান দেন পাহাড়ি বন্ধু ক্লিনটন চাকমা। তিনি ঝরনাটির কাছের গ্রাম নন্দরামের বাসিন্দা। অবশ্য একে নন্দরাম ঝরনা নামে চিনতাম। ক্লিনটনের মুখে ঝরনা অভিমুখের দুর্গম পথ আর বিশালতার কথা শুনে ট্রেকিংয়ের নেশায় পড়ে যাই। স্থানীয় সহযোগিতা ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না; যেন নিষিদ্ধ কোনো এক রূপকথার রাজ্য। যাতায়াতের তেমন রাস্তাও নেই। সিজুক ঝরনায় পৌঁছাতে বেশ কিছুটা পথ হাঁটতে হয়।
বর্ষাকাল। আগের রাতে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে পরদিন ভোরের আলোয় রওনা দিলাম সিজুক ঝরনার পথে। সকালে হালকা বৃষ্টি ছিল। কিছু সময় যেতেই আকাশ উজ্জ্বল হতে শুরু করল। দীঘিনালা থেকে চান্দের গাড়িতে রওনা হয়ে বাঘাইহাটে সকাল সকাল পৌঁছে যাওয়া যায়। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে ক্লিনটনদার মোটরবাইকে চললাম নন্দরামপাড়ার দিকে। দ্রুতগতির মোটরবাইকে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। পথে পেলাম কাশফুলের বন, সবুজ আঁকাবাঁকা পথ, হঠাৎ বাঁক নেওয়া খরস্রোতা নদী।
সবুজ বনানী পেরিয়ে এগিয়ে চলছি ঝরনার খোঁজে। নন্দরাম গ্রামে নেমে উদয়নের বাড়িতে কিছুক্ষণের বিরতি। তাঁর স্ত্রীকে আমাদের রান্নার দায়িত্ব দিয়ে যাত্রা করলাম ঝরনার পথে। পিচঢালা রাস্তা পেরিয়ে পা বাড়ালাম বুনো পথে। সবুজে ঘেরা পথ বেয়ে পাহাড়ে, সময় বাঁচাতে পা চালাচ্ছি দ্রুতগতিতে। জুমের ট্রেইল ধরে পা ফেলছি। সরু রাস্তা ঘন জঙ্গলে ঢাকা, জোঁকের খুব উৎপাত জুম ট্রেইলে।
ট্রেইলে দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যায়, দেখা মেলে কেবল বনানী ঢাকা সবুজ উপত্যকা। বনের মাথার ওপর সাদা মেঘের আনাগোনা। বর্ষায় পাহাড়ের যে রূপ, তার সবটুকু ছিল সিজুক ট্রেইলে। প্রথম বিরতি দিলাম জুমঘরে। বন্য প্রাণী থেকে জুমখেত রক্ষা করতে পাহাড়ের মাঝখানে জুমঘর বানান চাষিরা। জুমঘরে বসে মন জুড়ানো হাওয়া আর পাকা কলার স্বাদ নিলাম। কিছুক্ষণের বিরতি শেষে আবার রওনা হলাম ঝরনার পথে।
উঁচু-নিচু রাস্তা আর বাঁশ বনে ঘেরা ট্রেইলে পা চালানো বেশ কঠিন। খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে অনেকে। ট্রেইল ছেড়ে নিচে নামতেই শুরু হয় পাহাড়ি ঝিরি, প্রায় গলাসমান পানি। সে পথেই বেশ খানিক এগিয়ে যেতে হলো। সুনসান নীরবতা পুরো ট্রেইলে। পাথুরে পাহাড় বেয়ে নিচে নামতেই ঝরনার শব্দ। অনেক দূর থেকেই তা শোনা যাচ্ছিল। কাছে যেতেই এর বিশালতায় মুগ্ধ সবাই।
প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ পানির স্রোতে পাহাড় থেকে পাথর নেমে আসছে। ভরা বর্ষায় ঝরনার কাছে যাওয়া কঠিন। তীব্র গতির স্রোত গড়িয়ে পড়ে ক্রমাগত। এর বিশালতা আর পানির স্রোত আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে!
চারপাশের সবুজ বনে ঘেরা লুকোনো ঝরনার অপূর্ব রূপ—যেন সবুজ বনে সাদা বুনো ফুল। দেখেশুনে, ছবি তুলে দুর্গম আর সবুজে ঘেরা সিজুক ঝরনা ছেড়ে যখন চেনা পথে ফিরছি, অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিতে পথ চলা কঠিন হয়ে উঠল। জোঁক, বন্ধুর ট্রেইল, গলাসমান ঝিরির পানি পেরিয়ে দেখা সিজুক ঝরনা বেঁচে আছে প্রকৃতির বিশালতায়। দুর্গম বুনো পথে এমন অসংখ্য ঝরনা, ঝিরি, চেনা-অচেনা বৃক্ষ প্রাণ জোগায় প্রকৃতিতে।
যেভাবে যাবেন
সিজুক ঝরনা দেখতে যেতে হবে ঢাকা-খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা পর্যন্ত বাসে। সেখান থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি নিয়ে সরাসরি নন্দরাম গ্রাম পর্যন্ত যাওয়া যায়। নন্দরাম থেকে হেঁটে যেতে হবে সিজুক ঝরনা। পুরো ট্রেইলে সময় লাগবে প্রায় ৬ ঘণ্টা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সিজুক ঝরনায় কোনো ক্যাম্পিং করা যায় না। তা ছাড়া ঝরনার আশপাশে রাতে থাকার মতো গ্রাম নেই। তাই থাকতে হবে দীঘিনালা বা খাগড়াছড়িতে। ঝরনার আশপাশটা পরিষ্কার রাখতে হবে। তাই সেখানে কোনো পলিথিন বা সে রকম কিছু ফেলে আসা যাবে না।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে