ইশতিয়াক হাসান
রাঙামাটি থেকে বান্দরবান যাওয়ার রাস্তাটা আগাগোড়া পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গিয়েছে। ভারি সুন্দর ওই পথ দিয়ে যেতে পারবেন কাপ্তাই। তবে কাপ্তাই হ্রদের পাশ দিয়ে যাওয়া রাঙামাটি আর কাপ্তাইয়ের যে সংক্ষিপ্ত পথ আছে এর কোনো তুলনা নেই সৌন্দর্যে, সময়ও লাগে একেবারে কম। রাঙামাটি, কাপ্তাই যেখানেই গিয়েছি এই পথে ভ্রমণ করে মনকে রাঙিয়ে নিতে ভুল করিনি। নানা ধরনের স্মৃতিও জমা হয়েছে একে ঘিরে। আজ শোনাতে চাই ওই পথের গল্প।
সালটা সম্ভবত ২০০৫-০৬। চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। একদিন সেখান থেকে চলে যাই কাপ্তাই। প্রিয় নদী হালদার ওপরের সেতু পেরিয়ে চলে যাওয়া ওই রাস্তাটাও আমাকে টানে। কাপ্তাইয়ে বন বিভাগে ডরমিটরিতে গেলাম মাহফুজ মামার খোঁজে। রক্তের সম্পর্কের মামা না হলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক গভীর। মামা দেখালেন ডরমিটরির পেছনে ঢালু পাহাড়ে, গাছপালার জঙ্গলে মায়া হরিণের নাদি।
বিকেলে, ভোরের ডাক শোনেন মায়া হরিণদের। কখনো একেবারে ডরমিটরির কাছে চলে আসে গাছ থেকে নিচে ঝরে পড়া নানান জাতের ফল খাবার লোভে। তখন লুকিয়ে দেখেছেনও ওদের। তন্ময় হয়ে কাকরের (মায়া হরিণের আরেক নাম) গল্প শুনছিলাম।
মামা হঠাৎ বললেন, ‘চলো, কাপ্তাই থেকে রাঙামাটির দিকে যে নতুন রাস্তাটা হচ্ছে, ওটা দেখিয়ে আনি তোমাকে।’
কিছুক্ষণ হাঁটতেই ওই পথটার সামনে চলে এলাম। তৈরি হচ্ছিল কেবল। হাঁটতে লাগলাম মাটির অসমতল পথটা ধরে। শীতের বিকেলে, এই পথে চলার স্মৃতিটা এতটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল, এখনো খুঁটিনাটি অনেক কিছুই মনে আছে। পাশে একটু পরপর উঁচু উঁচু গাছ। পাহাড়ি একটা ময়না উড়াল দিয়ে গেল। ওই মাটির পথ ধরে মাইলখানেক যাওয়ার পর আবার একটা শুড়ি পথ চলে গেছে বাঁয়ে। ওটা ধরে যেতেই এক গাছে মেলা দেখেছিলাম টিয়াদের! তারপর মূল পথ ধরে দেড়-দুই মাইল হাঁটি।
এর বছর দুই-তিন পরের ঘটনা। রাঙামাটি গিয়ে পরিচয় আরস নামের এক ছেলের সঙ্গে। অদ্ভুত এক ছেলে। ওর গল্পটা হয়তো পরে কখনো বলব। ওকে নিয়ে রাঙামাটির দিক থেকে সদ্য তৈরি সেই কাপ্তাই-রাঙামাটির সড়ক ধরে হেঁটেছিলাম কিলোমিটার দুই-তিন। তখন এক চাকমা দোকানির সঙ্গে পরিচয়। পথের ধরেই দোকান-বাসা। অনেক গল্প করেন। বানরের দল কীভাবে তাঁর গাছের কলা শেষ করে দিল, জুমের খেতে শূকরের পালের হানা—এমন আরও নানান কিছু! অর্থাৎ দুই দিক মিলিয়ে হিসাব করলে সড়কের মোটামুটি চার ভাগের এক ভাগ ঘোরা হয়ে যায় আমার।
তবে এই পথের আগাগোড়া পুরোটাই প্রথম পেরোনোর সৌভাগ্য হয় ২০১১ সালে। বহু দিন পর দেখা হয়েছিল কলেজজীবনের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিশুক-মেহেদীর সঙ্গে। ওদের নিয়ে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্য হাজির হই রাঙামাটিতে। ঠিক করি মারমাদের পানি উৎসব দেখতে যাব কাপ্তাইয়ের চিৎমরম বা চিংম্রমে। সেই সূত্রেই সিদ্ধান্ত নতুন শর্টকাট পথটা ধরার। শুনেছিলাম সে ভারি সুন্দর, আর একটু পাড়ি দেওয়ার সুবাদে একে আবিষ্কারের কৌতূহলটা চূড়ায় গিয়ে ঠেকেছিল।
রাঙামাটির আসাম বস্তি থেকে একটা অটোরিকশা রিজার্ভ করে রওনা হলাম। পথের শুরুতেই একটা সেতু পড়ে। ওটাও আমার ভারি পছন্দ। তবে চমকালাম, চেনা অংশটি পেরোনোর পথ। এত সুন্দর কোনো পথ হতে পারে! দুই পাশেই লেক। বাঁয়ে লেকে পাহাড়ের সারি চোখে পড়ে দূরে, আর ডানে পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে জায়গা করে চলেছে কাপ্তাই লেক।
বাঁয়ের লেকের জল আশ্চর্য নীল, ডানে পাহাড়ের রঙে সবুজ। একটু পর পরই চাকমা-মারমাদের পাড়া পড়ছে, কখনো বাজার পেরোচ্ছি। বাজারময় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষজনের আনাগোনা। গোটা রাস্তাটা গেছে চাকমা-মারমা অধ্যুষিত পাড়া-গ্রামগুলোর মাঝখান দিয়ে বুঝে, ভারি আনন্দ হলো।
হঠাৎ হঠাৎ অনেকই উঁচুতে উঠে গেছে পথ। গাড়ির ইঞ্জিন সে পথে উঠতে গিয়ে কোকাচ্ছে, গোঙাচ্ছে, আরও কতভাবে প্রতিবাদ করছে। তবে চালক নাছোড়বান্দা। একটু পরপরই লেক পেরোতে হচ্ছে সেতু ধরে। সেতু থেকে দুই পাশে তাকালে কী যে সুন্দর লাগে কাপ্তাইকে, ওর মাঝখানের এবং পরের পাহাড়রাজ্যকে। আমরা ওই সব সেতুতে নেমে পড়ছি। একটা সেতুর ঠিক আগে এক চাকমা পরিবারের বাড়ি ও দোকান পেয়েছিলাম। ওই দোকানে ঢুকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে লেকটার দিকে চেয়ে ছিলাম অপলক!
পথ হঠাৎ হঠাৎ চলে গেছে একটু জঙ্গুলে এলাকার ভেতর দিয়ে। এ রকম জায়গায় হাতের বাঁয়ে একটা ঢালের পাশে দেখেছিলাম গেট দেওয়া পুরোনো এক বাড়ি। ওই বাড়িটা পরেও আরও দেখেছি। প্রতিবারই ইচ্ছা হয়েছে গাড়ি থেকে ভেতরে ঢোকার। তবে অস্বস্তি কাটিয়ে লোহার গেটে ঢং ঢং শব্দ করা হয়ে ওঠা হয়নি।
এই পথ শেষ না হলেই যেন ভালো হতো। তারপরও ওটা পেরিয়ে আমরা পৌঁছে যাই কাপ্তাই, তারপর চিংম্রংয়ে। ওই পথ ধরেই বিকেলে ফিরি রাঙামাটি।
আশ্চর্য সুন্দর এই পথে তারপর বারবার ভ্রমণ করেছি। ২০১৮ সালে আত্মীয়স্বজনের বড় একটি দল নিয়ে রাঙামাটি–বান্দরবান–কক্সবাজারে বড় একটি ভ্রমণ হয়েছিল। তিন বা চারটি অটোরিকশা নিয়ে দলবলসহ এই পথ ধরে গিয়েছিলাম। অবশ্য আমি যে অটোরিকশাটায় চেপেছিলাম সেটার কিছু গোলমাল ছিল। কোনো চড়াইয়ের কাছে এলেই গোঙাতে শুরু করে দিত। বাধ্য হয়ে নেমে পড়ে চড়াইটা হেঁটে উঠতে হয়েছে আমাকে। অবশ্য একটু ঘাম ঝরলেও পাহাড়ি চড়াই ধরে হাঁটার আলাদা মজা আছে। সেবারই দেখলাম পথের পাশে লেকের তীরের রেস্তোঁরাগুলোকে। এ রকম একটায় বেম্বো চিকেন, ডাল, সবজি আর আলু ভর্তা দিয়ে অসাধারণ এক লাঞ্চও করেছি। সত্যি বলতে খেতে খেতে দেখা পাহাড়-লেকের দৃশ্যই স্বাদটা বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ।
রাস্তাটা যেখানে কাপ্তাইয়ে পৌঁছে, ওই জায়গাটির আশপাশে কিছু বসতভিটায় কাঁঠালগাছ আছে অনেক। শুনেছি, কাঁঠাল খাওয়ার লোভে বুনো হাতির দল পাহাড় থেকে নামে মাঝে মাঝেই। কখনো-সখনো পথের ওপরও পেয়ে যেতে পারেন তাদের! আবার এই পথ ধরে আপনি রাম পাহাড়, সীতা পাহাড়কে দুই পাশে রেখে চলে যেতে পারবেন সেই চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত। ওই রাস্তাটাও অসম্ভব সুন্দর।
এই পথে শেষ গিয়েছি গত বছর মানে ২০২২–এ। সেবার গিয়েছিলাম কাপ্তাই। কিছু সংস্কার কাজ চলায় প্রিয় পথটির গোটাটা সরাসরি আসা যাচ্ছিল না। কাপ্তাই থেকে অর্ধেকটা পথ আসি। বরাবরের মতো দুই পাশের পাহাড়, লেকে মুগ্ধ হই। চাকমাদের এক দোকানে থেমে ভারি মজা করে শসা খেয়েছিলাম জুমের কাঁচা মরিচ দিয়ে।
গত বছর আমরা ঘুরে আসার পরপরই ঠিক হয়ে গেছে প্রিয় সেই পথ। কাপ্তাই–রাঙামাটি যেখানেই যান, একবারের জন্য হলেও অসম্ভব সুন্দর পথটা পেরোবেন আশা করি—কথা দিতে পারি মুগ্ধ করবে আপনাকে। আমার মনে হয়, প্রকৃতির মধ্যে এত সুন্দর রাস্তা গোটা বাংলাদেশে আছে হাতে গোনা কয়েকটি। আর যাওয়ার সময় পথের কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অর্ডার দিয়ে গেলে, ফেরার পথে কাপ্তাই লেক আর সবুজ পাহাড় দেখতে দেখতে তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারবেন। সব কথার শেষ কথা, সুন্দর এই পথকে পরিচ্ছন্ন রাখুন, শ্রদ্ধাশীল থাকুন এখনকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতি এবং ভালোবাসুন বন্য প্রাণীদের।
রাঙামাটি থেকে বান্দরবান যাওয়ার রাস্তাটা আগাগোড়া পাহাড়ের মাঝ দিয়ে গিয়েছে। ভারি সুন্দর ওই পথ দিয়ে যেতে পারবেন কাপ্তাই। তবে কাপ্তাই হ্রদের পাশ দিয়ে যাওয়া রাঙামাটি আর কাপ্তাইয়ের যে সংক্ষিপ্ত পথ আছে এর কোনো তুলনা নেই সৌন্দর্যে, সময়ও লাগে একেবারে কম। রাঙামাটি, কাপ্তাই যেখানেই গিয়েছি এই পথে ভ্রমণ করে মনকে রাঙিয়ে নিতে ভুল করিনি। নানা ধরনের স্মৃতিও জমা হয়েছে একে ঘিরে। আজ শোনাতে চাই ওই পথের গল্প।
সালটা সম্ভবত ২০০৫-০৬। চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। একদিন সেখান থেকে চলে যাই কাপ্তাই। প্রিয় নদী হালদার ওপরের সেতু পেরিয়ে চলে যাওয়া ওই রাস্তাটাও আমাকে টানে। কাপ্তাইয়ে বন বিভাগে ডরমিটরিতে গেলাম মাহফুজ মামার খোঁজে। রক্তের সম্পর্কের মামা না হলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক গভীর। মামা দেখালেন ডরমিটরির পেছনে ঢালু পাহাড়ে, গাছপালার জঙ্গলে মায়া হরিণের নাদি।
বিকেলে, ভোরের ডাক শোনেন মায়া হরিণদের। কখনো একেবারে ডরমিটরির কাছে চলে আসে গাছ থেকে নিচে ঝরে পড়া নানান জাতের ফল খাবার লোভে। তখন লুকিয়ে দেখেছেনও ওদের। তন্ময় হয়ে কাকরের (মায়া হরিণের আরেক নাম) গল্প শুনছিলাম।
মামা হঠাৎ বললেন, ‘চলো, কাপ্তাই থেকে রাঙামাটির দিকে যে নতুন রাস্তাটা হচ্ছে, ওটা দেখিয়ে আনি তোমাকে।’
কিছুক্ষণ হাঁটতেই ওই পথটার সামনে চলে এলাম। তৈরি হচ্ছিল কেবল। হাঁটতে লাগলাম মাটির অসমতল পথটা ধরে। শীতের বিকেলে, এই পথে চলার স্মৃতিটা এতটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল, এখনো খুঁটিনাটি অনেক কিছুই মনে আছে। পাশে একটু পরপর উঁচু উঁচু গাছ। পাহাড়ি একটা ময়না উড়াল দিয়ে গেল। ওই মাটির পথ ধরে মাইলখানেক যাওয়ার পর আবার একটা শুড়ি পথ চলে গেছে বাঁয়ে। ওটা ধরে যেতেই এক গাছে মেলা দেখেছিলাম টিয়াদের! তারপর মূল পথ ধরে দেড়-দুই মাইল হাঁটি।
এর বছর দুই-তিন পরের ঘটনা। রাঙামাটি গিয়ে পরিচয় আরস নামের এক ছেলের সঙ্গে। অদ্ভুত এক ছেলে। ওর গল্পটা হয়তো পরে কখনো বলব। ওকে নিয়ে রাঙামাটির দিক থেকে সদ্য তৈরি সেই কাপ্তাই-রাঙামাটির সড়ক ধরে হেঁটেছিলাম কিলোমিটার দুই-তিন। তখন এক চাকমা দোকানির সঙ্গে পরিচয়। পথের ধরেই দোকান-বাসা। অনেক গল্প করেন। বানরের দল কীভাবে তাঁর গাছের কলা শেষ করে দিল, জুমের খেতে শূকরের পালের হানা—এমন আরও নানান কিছু! অর্থাৎ দুই দিক মিলিয়ে হিসাব করলে সড়কের মোটামুটি চার ভাগের এক ভাগ ঘোরা হয়ে যায় আমার।
তবে এই পথের আগাগোড়া পুরোটাই প্রথম পেরোনোর সৌভাগ্য হয় ২০১১ সালে। বহু দিন পর দেখা হয়েছিল কলেজজীবনের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিশুক-মেহেদীর সঙ্গে। ওদের নিয়ে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্য হাজির হই রাঙামাটিতে। ঠিক করি মারমাদের পানি উৎসব দেখতে যাব কাপ্তাইয়ের চিৎমরম বা চিংম্রমে। সেই সূত্রেই সিদ্ধান্ত নতুন শর্টকাট পথটা ধরার। শুনেছিলাম সে ভারি সুন্দর, আর একটু পাড়ি দেওয়ার সুবাদে একে আবিষ্কারের কৌতূহলটা চূড়ায় গিয়ে ঠেকেছিল।
রাঙামাটির আসাম বস্তি থেকে একটা অটোরিকশা রিজার্ভ করে রওনা হলাম। পথের শুরুতেই একটা সেতু পড়ে। ওটাও আমার ভারি পছন্দ। তবে চমকালাম, চেনা অংশটি পেরোনোর পথ। এত সুন্দর কোনো পথ হতে পারে! দুই পাশেই লেক। বাঁয়ে লেকে পাহাড়ের সারি চোখে পড়ে দূরে, আর ডানে পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে জায়গা করে চলেছে কাপ্তাই লেক।
বাঁয়ের লেকের জল আশ্চর্য নীল, ডানে পাহাড়ের রঙে সবুজ। একটু পর পরই চাকমা-মারমাদের পাড়া পড়ছে, কখনো বাজার পেরোচ্ছি। বাজারময় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষজনের আনাগোনা। গোটা রাস্তাটা গেছে চাকমা-মারমা অধ্যুষিত পাড়া-গ্রামগুলোর মাঝখান দিয়ে বুঝে, ভারি আনন্দ হলো।
হঠাৎ হঠাৎ অনেকই উঁচুতে উঠে গেছে পথ। গাড়ির ইঞ্জিন সে পথে উঠতে গিয়ে কোকাচ্ছে, গোঙাচ্ছে, আরও কতভাবে প্রতিবাদ করছে। তবে চালক নাছোড়বান্দা। একটু পরপরই লেক পেরোতে হচ্ছে সেতু ধরে। সেতু থেকে দুই পাশে তাকালে কী যে সুন্দর লাগে কাপ্তাইকে, ওর মাঝখানের এবং পরের পাহাড়রাজ্যকে। আমরা ওই সব সেতুতে নেমে পড়ছি। একটা সেতুর ঠিক আগে এক চাকমা পরিবারের বাড়ি ও দোকান পেয়েছিলাম। ওই দোকানে ঢুকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে লেকটার দিকে চেয়ে ছিলাম অপলক!
পথ হঠাৎ হঠাৎ চলে গেছে একটু জঙ্গুলে এলাকার ভেতর দিয়ে। এ রকম জায়গায় হাতের বাঁয়ে একটা ঢালের পাশে দেখেছিলাম গেট দেওয়া পুরোনো এক বাড়ি। ওই বাড়িটা পরেও আরও দেখেছি। প্রতিবারই ইচ্ছা হয়েছে গাড়ি থেকে ভেতরে ঢোকার। তবে অস্বস্তি কাটিয়ে লোহার গেটে ঢং ঢং শব্দ করা হয়ে ওঠা হয়নি।
এই পথ শেষ না হলেই যেন ভালো হতো। তারপরও ওটা পেরিয়ে আমরা পৌঁছে যাই কাপ্তাই, তারপর চিংম্রংয়ে। ওই পথ ধরেই বিকেলে ফিরি রাঙামাটি।
আশ্চর্য সুন্দর এই পথে তারপর বারবার ভ্রমণ করেছি। ২০১৮ সালে আত্মীয়স্বজনের বড় একটি দল নিয়ে রাঙামাটি–বান্দরবান–কক্সবাজারে বড় একটি ভ্রমণ হয়েছিল। তিন বা চারটি অটোরিকশা নিয়ে দলবলসহ এই পথ ধরে গিয়েছিলাম। অবশ্য আমি যে অটোরিকশাটায় চেপেছিলাম সেটার কিছু গোলমাল ছিল। কোনো চড়াইয়ের কাছে এলেই গোঙাতে শুরু করে দিত। বাধ্য হয়ে নেমে পড়ে চড়াইটা হেঁটে উঠতে হয়েছে আমাকে। অবশ্য একটু ঘাম ঝরলেও পাহাড়ি চড়াই ধরে হাঁটার আলাদা মজা আছে। সেবারই দেখলাম পথের পাশে লেকের তীরের রেস্তোঁরাগুলোকে। এ রকম একটায় বেম্বো চিকেন, ডাল, সবজি আর আলু ভর্তা দিয়ে অসাধারণ এক লাঞ্চও করেছি। সত্যি বলতে খেতে খেতে দেখা পাহাড়-লেকের দৃশ্যই স্বাদটা বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ।
রাস্তাটা যেখানে কাপ্তাইয়ে পৌঁছে, ওই জায়গাটির আশপাশে কিছু বসতভিটায় কাঁঠালগাছ আছে অনেক। শুনেছি, কাঁঠাল খাওয়ার লোভে বুনো হাতির দল পাহাড় থেকে নামে মাঝে মাঝেই। কখনো-সখনো পথের ওপরও পেয়ে যেতে পারেন তাদের! আবার এই পথ ধরে আপনি রাম পাহাড়, সীতা পাহাড়কে দুই পাশে রেখে চলে যেতে পারবেন সেই চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত। ওই রাস্তাটাও অসম্ভব সুন্দর।
এই পথে শেষ গিয়েছি গত বছর মানে ২০২২–এ। সেবার গিয়েছিলাম কাপ্তাই। কিছু সংস্কার কাজ চলায় প্রিয় পথটির গোটাটা সরাসরি আসা যাচ্ছিল না। কাপ্তাই থেকে অর্ধেকটা পথ আসি। বরাবরের মতো দুই পাশের পাহাড়, লেকে মুগ্ধ হই। চাকমাদের এক দোকানে থেমে ভারি মজা করে শসা খেয়েছিলাম জুমের কাঁচা মরিচ দিয়ে।
গত বছর আমরা ঘুরে আসার পরপরই ঠিক হয়ে গেছে প্রিয় সেই পথ। কাপ্তাই–রাঙামাটি যেখানেই যান, একবারের জন্য হলেও অসম্ভব সুন্দর পথটা পেরোবেন আশা করি—কথা দিতে পারি মুগ্ধ করবে আপনাকে। আমার মনে হয়, প্রকৃতির মধ্যে এত সুন্দর রাস্তা গোটা বাংলাদেশে আছে হাতে গোনা কয়েকটি। আর যাওয়ার সময় পথের কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অর্ডার দিয়ে গেলে, ফেরার পথে কাপ্তাই লেক আর সবুজ পাহাড় দেখতে দেখতে তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারবেন। সব কথার শেষ কথা, সুন্দর এই পথকে পরিচ্ছন্ন রাখুন, শ্রদ্ধাশীল থাকুন এখনকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতি এবং ভালোবাসুন বন্য প্রাণীদের।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে