সালমা চৌধুরী
বাঙালির ইলিশচর্চা চোখে পড়ার মতো—এ কথা নতুন করে বারবার বলতেই হয়। ইলিশ খেতে এই জাতির বিশেষ কোনো ঋতুর দরকার হয় না। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিই হোক আর উত্তরে হিমের ঠান্ডা কিংবা গরম, ইলিশ হলে সময় যেন জমে ক্ষীর!
বিষয়টা এমন নয় যে আমরাই এত আদিখ্যেতা করে ইলিশ খাচ্ছি আর তার জয়গান গেয়ে চলেছি; বরং আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রকারেরাও ইলিশের পাল্লায় পড়ে অনেক কিছু লিখে রেখে গেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো আয়ুর্বেদ। এই শাস্ত্রকারেরা লিখে গেছেন,
‘ইল্লিশো মধুর
স্নিগ্ধো রোচনো
বহ্নিবর্জনঃ…
অর্থাৎ, ইলিশ মাছ হলো মধুর, স্নিগ্ধ রোচক ও বলবর্ধক, পিত্তকারী, কিঞ্চিৎ কফকারী, লঘু পুষ্টিকর ও বাতনাশক।নারায়ণ দেব ও জানকীনাথের ‘পদ্মপুরাণ’-এ ইলিশের একটি পদ পাওয়া যায়। কবিরা জানাচ্ছেন, তারকা তার নন্দাই লখিন্দরের জন্য সরষেশাক দিয়ে ইলিশের মাথা রান্না করেছিলেন। ভিরমি খাওয়ার কিছু নেই। এ রকম অনেক পদ পাওয়া যায় মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যগুলোতে।
তবে কল্লোল লাহিড়ীর ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ উপন্যাসে ইলিশের একটি রেসিপি আমাদের বেশ পরিচিত! সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, খুলনার মেয়ে ইন্দুবালা তাঁর বউভাতে পুঁইশাকের সঙ্গে ইলিশের ছ্যাঁচড়া রান্না করেছিলেন।
লোকমুখে শোনা যায়, ইলিশ রান্নার প্রায় ৫০টি পদ্ধতি রয়েছে! বাংলার সাহিত্যিকেরাও ইলিশ রান্নার অনেক অদ্ভুত রেসিপি দিয়েছেন। এই যেমন ধরুন, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজের উদ্ভাবিত ইলিশ রান্নার রেসিপি দিয়েছেন তাঁর ‘মিসির আলির চশমা’ বইটিতে।
তাঁর এই উদ্ভাবিত পদের নাম ‘ইস্ত্রি ইলিশ’। ইলিশ মাছ, সরষেবাটা, কাঁচা মরিচ এবং লবণ দিয়ে লাউপাতায় মুড়ে গরম ইস্তিরির নিচে বসিয়ে দিতে হবে। এভাবেই চলতে থাকবে রান্না। কিছুক্ষণ পর মাছ উল্টে আবার ইস্তিরি দিয়ে চাপা দিতে হবে। তবেই তৈরি হবে সুস্বাদু ইলিশ পাতুরি! কিন্তু কতক্ষণ এই ইস্তিরি চাপা দিতে হবে তা তিনি বলেননি।
আস্ত ইলিশ মাঝ বরাবর কেটে, বাটা মসলা মেখে, কলাপাতায় মুড়ে আগুনে সেঁকা দেওয়ার অদ্ভুত রেসিপির কথা বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তাঁর ভাষায়, এই মাছ দেবভোগ্য তো বটেই, স্বাস্থ্যকরও।
ইলিশ রান্নার রেসিপি দেওয়ার পাশাপাশি সৈয়দ মুজতবা আলী ইলিশ নিয়ে একটি শ্লোকের কথাও বলেছেন এভাবে, ‘ঠিক মনে নেই, কিসের উপর যেন কি, তার উপরে যেন আরো কি, তার উপর বোধহয় জল, তার উপরে কচ্ছপ, কচ্ছপের উপরে পৃথিবী, তার উপরে হিমালয়...তার সর্বোচ্চ চূড়ায় এভারেস্টের উপরে শিব...শিবের উপর তার জটার ভেতর গাংগেস (গঙ্গা), তার জলের উপর কেলি করেন ইলিশ।’
সৈয়দ সাহেবের ইলিশপ্রীতির আরও গল্প আছে। শোনা যায়, একবার ইলিশ নিয়ে পাঞ্জাবি এক অধ্যাপকের সঙ্গে তাঁর তর্ক বাধে। তিনি বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার হলো সরু চালের ভাত আর ইলিশ। অন্যদিকে, সেই অধ্যাপকের মতে বিরিয়ানি। এ নিয়ে রাগ করে আলী সাহেব সেই অধ্যাপকের সঙ্গে নাকি সাত দিন কথা বলেননি।
এটা কিন্তু সত্য যে চর্বিযুক্ত হওয়ায় ইলিশ রান্নায় তেল লাগে কম। আর এতে আছে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড কোলেস্টেরল আর ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দেয় বলে জানা যায়। গরম ভাতে ভাজা ইলিশের তেল অমৃত তুল্য!
ইলিশের তেলের ব্যাপারটার সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি জড়িত আছে। শোনা যায়, বেলুড় মঠে ইলিশের তেল দিয়ে ভাত মেখে, ডাল দিয়ে ভাজা মাছ, ইলিশের ঝোল আর অম্বলের টক খেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর আগের দিন।
ওদিকে সৈয়দ মুজতবা আলী সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ইলিশ খাওয়াকে দায়ী করেছিলেন। যা হোক, ‘ঘাতক’ বলে অপবাদ দেওয়া হলেও বাঙালির ঘরে ইলিশের আনুষ্ঠানিক প্রবেশ ও প্রস্থানকে রীতিমতো আরাধনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যগুলোতে অন্যান্য মাছের বর্ণনা পাওয়া গেলেও ইলিশের উল্লেখ খুব একটা নেই।
তবে আঠারো শতকে রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে ভারতচন্দ্র পরপর ৩১টি মাছের নামজুড়ে ১০ লাইনের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ রচনা করেছিলেন। সেখানে একেবারে শেষ মাছটি ছিল ইলিশ। সম্ভবত রাজসভায় যাতায়াত ছিল বলেই ভারতচন্দ্র ইলিশের স্বাদ জানতেন। ইলিশ সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে রসনায় তৃপ্তি জোগানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের উচ্চমূল্যটাও সাবধানে আজ পর্যন্ত ধরে রেখেছে। তাই আজও ইলিশ মহার্ঘ্য! আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে তাই শুনেই যেতে হয়, এ মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। কিন্তু কোথায় সে ইলিশ, তা আর আমাদের চোখেও পড়ে না, পাতে পড়া তো দূরের কথা।
বাইশ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ। আবার সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইলিশ নাকি শতভাগ ডিম ছেড়েছে। আশা করতে দোষ কোথায়—এবার ইলিশ খাওয়া হবে প্রাণ খুলে!
বাঙালির ইলিশচর্চা চোখে পড়ার মতো—এ কথা নতুন করে বারবার বলতেই হয়। ইলিশ খেতে এই জাতির বিশেষ কোনো ঋতুর দরকার হয় না। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিই হোক আর উত্তরে হিমের ঠান্ডা কিংবা গরম, ইলিশ হলে সময় যেন জমে ক্ষীর!
বিষয়টা এমন নয় যে আমরাই এত আদিখ্যেতা করে ইলিশ খাচ্ছি আর তার জয়গান গেয়ে চলেছি; বরং আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রকারেরাও ইলিশের পাল্লায় পড়ে অনেক কিছু লিখে রেখে গেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো আয়ুর্বেদ। এই শাস্ত্রকারেরা লিখে গেছেন,
‘ইল্লিশো মধুর
স্নিগ্ধো রোচনো
বহ্নিবর্জনঃ…
অর্থাৎ, ইলিশ মাছ হলো মধুর, স্নিগ্ধ রোচক ও বলবর্ধক, পিত্তকারী, কিঞ্চিৎ কফকারী, লঘু পুষ্টিকর ও বাতনাশক।নারায়ণ দেব ও জানকীনাথের ‘পদ্মপুরাণ’-এ ইলিশের একটি পদ পাওয়া যায়। কবিরা জানাচ্ছেন, তারকা তার নন্দাই লখিন্দরের জন্য সরষেশাক দিয়ে ইলিশের মাথা রান্না করেছিলেন। ভিরমি খাওয়ার কিছু নেই। এ রকম অনেক পদ পাওয়া যায় মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যগুলোতে।
তবে কল্লোল লাহিড়ীর ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ উপন্যাসে ইলিশের একটি রেসিপি আমাদের বেশ পরিচিত! সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, খুলনার মেয়ে ইন্দুবালা তাঁর বউভাতে পুঁইশাকের সঙ্গে ইলিশের ছ্যাঁচড়া রান্না করেছিলেন।
লোকমুখে শোনা যায়, ইলিশ রান্নার প্রায় ৫০টি পদ্ধতি রয়েছে! বাংলার সাহিত্যিকেরাও ইলিশ রান্নার অনেক অদ্ভুত রেসিপি দিয়েছেন। এই যেমন ধরুন, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজের উদ্ভাবিত ইলিশ রান্নার রেসিপি দিয়েছেন তাঁর ‘মিসির আলির চশমা’ বইটিতে।
তাঁর এই উদ্ভাবিত পদের নাম ‘ইস্ত্রি ইলিশ’। ইলিশ মাছ, সরষেবাটা, কাঁচা মরিচ এবং লবণ দিয়ে লাউপাতায় মুড়ে গরম ইস্তিরির নিচে বসিয়ে দিতে হবে। এভাবেই চলতে থাকবে রান্না। কিছুক্ষণ পর মাছ উল্টে আবার ইস্তিরি দিয়ে চাপা দিতে হবে। তবেই তৈরি হবে সুস্বাদু ইলিশ পাতুরি! কিন্তু কতক্ষণ এই ইস্তিরি চাপা দিতে হবে তা তিনি বলেননি।
আস্ত ইলিশ মাঝ বরাবর কেটে, বাটা মসলা মেখে, কলাপাতায় মুড়ে আগুনে সেঁকা দেওয়ার অদ্ভুত রেসিপির কথা বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তাঁর ভাষায়, এই মাছ দেবভোগ্য তো বটেই, স্বাস্থ্যকরও।
ইলিশ রান্নার রেসিপি দেওয়ার পাশাপাশি সৈয়দ মুজতবা আলী ইলিশ নিয়ে একটি শ্লোকের কথাও বলেছেন এভাবে, ‘ঠিক মনে নেই, কিসের উপর যেন কি, তার উপরে যেন আরো কি, তার উপর বোধহয় জল, তার উপরে কচ্ছপ, কচ্ছপের উপরে পৃথিবী, তার উপরে হিমালয়...তার সর্বোচ্চ চূড়ায় এভারেস্টের উপরে শিব...শিবের উপর তার জটার ভেতর গাংগেস (গঙ্গা), তার জলের উপর কেলি করেন ইলিশ।’
সৈয়দ সাহেবের ইলিশপ্রীতির আরও গল্প আছে। শোনা যায়, একবার ইলিশ নিয়ে পাঞ্জাবি এক অধ্যাপকের সঙ্গে তাঁর তর্ক বাধে। তিনি বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার হলো সরু চালের ভাত আর ইলিশ। অন্যদিকে, সেই অধ্যাপকের মতে বিরিয়ানি। এ নিয়ে রাগ করে আলী সাহেব সেই অধ্যাপকের সঙ্গে নাকি সাত দিন কথা বলেননি।
এটা কিন্তু সত্য যে চর্বিযুক্ত হওয়ায় ইলিশ রান্নায় তেল লাগে কম। আর এতে আছে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড কোলেস্টেরল আর ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দেয় বলে জানা যায়। গরম ভাতে ভাজা ইলিশের তেল অমৃত তুল্য!
ইলিশের তেলের ব্যাপারটার সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি জড়িত আছে। শোনা যায়, বেলুড় মঠে ইলিশের তেল দিয়ে ভাত মেখে, ডাল দিয়ে ভাজা মাছ, ইলিশের ঝোল আর অম্বলের টক খেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর আগের দিন।
ওদিকে সৈয়দ মুজতবা আলী সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ইলিশ খাওয়াকে দায়ী করেছিলেন। যা হোক, ‘ঘাতক’ বলে অপবাদ দেওয়া হলেও বাঙালির ঘরে ইলিশের আনুষ্ঠানিক প্রবেশ ও প্রস্থানকে রীতিমতো আরাধনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যগুলোতে অন্যান্য মাছের বর্ণনা পাওয়া গেলেও ইলিশের উল্লেখ খুব একটা নেই।
তবে আঠারো শতকে রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে ভারতচন্দ্র পরপর ৩১টি মাছের নামজুড়ে ১০ লাইনের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ রচনা করেছিলেন। সেখানে একেবারে শেষ মাছটি ছিল ইলিশ। সম্ভবত রাজসভায় যাতায়াত ছিল বলেই ভারতচন্দ্র ইলিশের স্বাদ জানতেন। ইলিশ সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে রসনায় তৃপ্তি জোগানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের উচ্চমূল্যটাও সাবধানে আজ পর্যন্ত ধরে রেখেছে। তাই আজও ইলিশ মহার্ঘ্য! আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে তাই শুনেই যেতে হয়, এ মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। কিন্তু কোথায় সে ইলিশ, তা আর আমাদের চোখেও পড়ে না, পাতে পড়া তো দূরের কথা।
বাইশ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ। আবার সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইলিশ নাকি শতভাগ ডিম ছেড়েছে। আশা করতে দোষ কোথায়—এবার ইলিশ খাওয়া হবে প্রাণ খুলে!
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে