রক্ষণশীল মানুষেরা কম সৃজনশীল: ২৮ দেশ নিয়ে গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ২০: ৫৬
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৩৫

রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সৃজনশীলতার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। সম্প্রতি ২৮টি বৈচিত্র্যময় দেশ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিযুক্ত মানুষেরা নিম্ন স্তরের সৃজনশীলতা দেওয়া। 

জার্নাল অব ক্রস–কালচারাল সাইকোলজি সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে গবেষণাগুলোতে প্রধানত মানবিক বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞানীয় শৈলীগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছিল যেগুলো সৃজনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে, যেমন: নতুন অভিজ্ঞতার জন্য খোলা মন, নমনীয়তা এবং নতুনত্ব–সন্ধানী। বিপরীতে, রক্ষণশীল চিন্তাভাবনা সাধারণত শৃঙ্খলা, ঐতিহ্য এবং অনুমানযোগ্যতার ওপর জোর দেয়। অর্থাৎ রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি নতুনকে গ্রহণ করতে চায় না। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সৃজনশীলতার সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলোকে বাধা দেওয়ার পরামর্শ দেয়। 

সৃজনশীলতার জন্য প্রায়শই সমাজ ও দেশের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ও রীতিগুলো থেকে বেরিয়ে যেতে এবং বৃত্তের বাইরে বা প্রথাবিরোধী চিন্তা করতে হয়—এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে ওপরের অনুমানটি করা হয়। দেখা যায়, রক্ষণশীল মানুষের মধ্যে এই বিষয়গুলো থাকে না। 

অবশ্য দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতার মধ্যকার সম্পর্ক অন্বেষণের আগের গবেষণাগুলো বেশির ভাগই পশ্চিমা, শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলাফলগুলোর সাধারণীকরণ ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এই গবেষণাগুলোতে পরিবেশগত কারণগুলোর প্রভাব সেভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। অথচ এগুলো সামাজিক মূল্যবোধ এবং স্বতন্ত্র আচরণ উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে। 

বর্তমান গবেষণাটি এই সীমাবদ্ধতা উতরে গেছে। একটি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নমুনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গবেষকদের লক্ষ্য ছিল, রক্ষণশীলতা এবং সৃজনশীলতার মধ্যে পূর্বের পর্যবেক্ষণগুলো আরও বৈচিত্র্যময় পরিবেশে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক পটভূমির বিভিন্ন স্তর বিবেচনায় যাচাই করে দেখা। 

গবেষণায় ৩৭টি দেশের ৮ হাজার ১৮৬ জন অংশ নেন। যদিও বিশ্লেষণটি শেষ পর্যন্ত ২৮টি দেশের ৬ হাজার ৮৬৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। 

সৃজনশীলতা মূল্যায়ন করার জন্য গবেষকেরা ক্রিয়েটিভ থিঙ্কিং–ড্রয়িং প্রোডাকশন (টিসিটি–ডিপি) মডেল ব্যবহার করেছেন। এই মডেলকে ‘সাংস্কৃতিকভাবে ন্যায্য’ বলে মনে করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের একটি আংশিক শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ করতে বলা হয়। শিল্পকর্মটির অংশবিশেষে ছিল বিমূর্ত আকার এবং রেখা। এটি ইচ্ছেমতো সম্পূর্ণ করতে বলা হয়। সম্পূর্ণ অঙ্কনগুলো ১৩টি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে: ধারণার বিস্তৃতি, মৌলিকত্ব, রেখার সংযোগের জটিলতা, বিষয়গত ঐক্য এবং প্রচলিত সীমা ভাঙার মতো বিষয়। 

রক্ষণশীলতা মূল্যায়ন করার জন্য অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় যেমন: মৃত্যুদণ্ড, বহুসংস্কৃতিবাদ, কারাগারের কঠোর বিধিবিধান, সমকামী অধিকার এবং ধর্মীয় কর্তৃত্ব সম্পর্কে অবস্থান। 

গবেষকেরা ব্যক্তি পর্যায়ে রক্ষণশীলতা এবং সৃজনশীলতার মধ্যে একটি নেতিবাচক সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত দেয়, যারা বেশি রক্ষণশীল মূল্যবোধ ধারণ করেন তাঁরা কম রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের তুলনায় সৃজনশীলতার নিম্ন স্তরের হতে পারেন। 

এই সম্পর্ক পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে রক্ষণশীলতা সৃজনশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারলেও, এটি সৃজনশীল সক্ষমতার একমাত্র বা সবচেয়ে প্রভাবশালী নিয়ামক নয়। 

দেখা যায়, উচ্চ শিক্ষার স্তরগুলো সৃজনশীলতার সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত। আবার বয়স্কদের মধ্যেও কম সৃজনশীলতা পরিলক্ষিত হয়। 

এই ফলাফলগুলো বিদ্যমান গবেষণার সঙ্গে সামগ্রিকভাবে যে ধারণা দেয় তা হলো: শিক্ষা জ্ঞানীয় নমনীয়তা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা বাড়ায়। আবার সৃজনশীলতার কিছু জ্ঞানীয় দিক বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যেতে পারে। 

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, রক্ষণশীলতা এবং সৃজনশীলতার মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বিভিন্ন দেশে আলাদা। যাইহোক, কোনো দেশেই রক্ষণশীলতার সঙ্গে সৃজনশীলতার ইতিবাচক সম্পর্ক দেখা যায়নি। রক্ষণশীলতা বরাবরই নেতিবাচক সাধারণ প্রবণতাকেই শক্তিশালী করে। 

অবশ্য রক্ষণশীলতা সৃজনশীলতাকে সীমাবদ্ধ করে কিনা বা কম সৃজনশীল ব্যক্তিরা বেশি রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির হয় কিনা সেটি নিঃসন্দেহে বলা যায় না। তবে এই পর্যবেক্ষণ কোনো দেশের বা সমাজের জন্য উপযুক্ত সৃজনশীল ব্যবস্থার ধারণা তৈরিতে বিস্তৃত গবেষণার পথ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত