শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
‘সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণি?
নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!...’
—কাজী নজরুল ইসলাম
এমন বৃষ্টি দেখে কে বলবে শরৎ এসেছে! অথচ আজ শরতের পয়লা দিন। খানিক উজ্জ্বল, খানিক নিষ্প্রভ কিংবা হঠাৎ নীল, এই হলো শরৎ। আদি ও অকৃত্রিম শরৎ। সম্ভবত বসন্তের পর এই একটি ঋতুকে নিয়ে খানিক আদিখ্যেতা করে মানুষ। করে, কারণ এর চরিত্রই এমন।
স্বচ্ছ নীল আকাশে তুলোর মতো নরম মেঘের ভেলা ভাসিয়ে প্রকৃতি বন্দনা করছে শরতের আগমনী বার্তা। ভোরের শিউলি হাওয়ার কানে কানে জানিয়ে দিয়ে গেছে—আজ পয়লা ভাদ্র। এসেছে শরৎ। ভোরের নরম শিউলি, বিলের স্বচ্ছ পানিতে ফোঁটা শাপলা আর বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাশফুলে প্রকৃতির সেজে ওঠার দিন শুরু হলো।
ঋতুরাজ বসন্তের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে অগোছালো প্রকৃতিকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতেই যেন রাজসিংহাসনে আসীন হয় ঋতুর রানি শরৎ। ভাদ্র–আশ্বিন মাসজুড়ে কোমল সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ায় প্রকৃতির স্নিগ্ধ–সুন্দর সাম্রাজ্যে।
শরতের মোহনীয় সৌন্দর্য জাগ্রত করে সকলের মন। নির্মল নীলাকাশ, তুলোর মতো নরম অমল ধবল মেঘের ভেলা, দুধসাদা কাশবন, আমন ধানের শিষের ডগায় হাওয়ার মাতামাতিতে নেচে ওঠে মন। কখনো কখনো সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কিশোরীর মনের মতো শরতের আকাশে সাদা মেঘের দল সরে গিয়ে উঁকি দেয় ঘন কালো মেঘও। আবার মেঘমুক্ত আকাশে ভরা পূর্ণিমায় পড়া জ্যোৎস্না যেন আচ্ছন্ন করে রাখে শরীর–মন।
শরতের অন্যতম আকর্ষণ কাশফুল। নদীর ধার জুড়ে ফুটে থাকা সারি সারি কাশফুল উদ্বেলিত করে মন। এ কারণেই হয়তো নির্মলেন্দু গুণ তাঁর কবিতায় বলেছিলেন,
‘পুচ্ছ তোলা পাখির মত কাশবনে এক কন্যে
তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে...’
শরতের নির্মল প্রকৃতিতে কাব্যিক হয়ে ওঠে মানুষের মন। মানুষের চোখে শরতের এ মুগ্ধতা আজকালের নয় বরং হাজার বছরের। চর্যাপদের কবি থেকে শুরু করে আধুনিক কবিরাও শরতের নান্দনিকতায় সাহিত্যে যোগ করেছেন অমিয় সুধা।
‘ভরা বাদর মহা ভাদর
শূন্য মন্দির মোর’
শরতের বৃষ্টিতে রাধা বিরহের যে চিত্র বৈষ্ণব পদাবলির কবি বিদ্যাপতি এই দুই চরণে এঁকে গেছেন, তা যেকোনো প্রেমিক হৃদয়ে হাহাকার জাগিয়ে তোলে।
কিংবা কালিদাস যখন শরতের স্নিগ্ধতা কালির দোয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে লিখেছেন—
‘প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখ,
নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎ কাল সমাগত’, তখন শরৎকে মনে হয় নববধূর মতো, কোমল–রাঙা, অপরূপ।
আবার জীবনানন্দ দাশ একেবারেই নিজের মতো করে যখন বন্দনা করেছেন ঋতুর রানির রূপ, তখন শরৎকে মনে হয়েছে অতি আপন
এখানে আকাশ নীল নীলাভ
আকাশজুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম শাদা রং তার...
বাংলার বুকে শরতের রূপ লাবণ্যের বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন—
ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল
তোমার কাননসভাতে!
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,
শরৎকালের প্রভাতে।...
শরৎ এমনই, কিশোরী মনের মতো। কখনো উচ্ছল, কখনো আবার একটু গোমড়ামুখো। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে এলোমেলো হয়ে যাওয়া মন হোক কিংবা উজ্জ্বল অরুণালোকে আনন্দিত মন, শরতের প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা হয় না অন্য কোনো কিছুরই। আকাশে ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘের কোল ঘেঁষে উড়ে যাওয়া পাখির ঝাঁক প্রশান্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় সবখানে। জবা, টগর, দোলনচাঁপার সঙ্গে জুঁই, কেয়া, মালতী, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, রাধাচূড়া কিংবা পদ্মর সঙ্গে শিশুর নির্মল হাসির মতো হেসে ওঠে প্রকৃতি। বিলে ফুটে থাকা শাপলার গায়ে সোনালি রোদের আলো পড়ে সৃষ্টি হওয়া স্বপ্নিল দৃশ্য সগর্বে বুঝিয়ে দেয় শরৎ কেন ঋতুর রানি।
শরতের নান্দনিক সৌন্দর্য সবার হৃদয় মন্দিরে দিয়ে যায় স্বর্গীয় দোলা। প্রকৃতির এই কাব্যিক উপমায় ঝরুক শরতের কবিতার সুর। সবাইকে শরতের শুভেচ্ছা।
‘সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণি?
নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!...’
—কাজী নজরুল ইসলাম
এমন বৃষ্টি দেখে কে বলবে শরৎ এসেছে! অথচ আজ শরতের পয়লা দিন। খানিক উজ্জ্বল, খানিক নিষ্প্রভ কিংবা হঠাৎ নীল, এই হলো শরৎ। আদি ও অকৃত্রিম শরৎ। সম্ভবত বসন্তের পর এই একটি ঋতুকে নিয়ে খানিক আদিখ্যেতা করে মানুষ। করে, কারণ এর চরিত্রই এমন।
স্বচ্ছ নীল আকাশে তুলোর মতো নরম মেঘের ভেলা ভাসিয়ে প্রকৃতি বন্দনা করছে শরতের আগমনী বার্তা। ভোরের শিউলি হাওয়ার কানে কানে জানিয়ে দিয়ে গেছে—আজ পয়লা ভাদ্র। এসেছে শরৎ। ভোরের নরম শিউলি, বিলের স্বচ্ছ পানিতে ফোঁটা শাপলা আর বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাশফুলে প্রকৃতির সেজে ওঠার দিন শুরু হলো।
ঋতুরাজ বসন্তের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে অগোছালো প্রকৃতিকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতেই যেন রাজসিংহাসনে আসীন হয় ঋতুর রানি শরৎ। ভাদ্র–আশ্বিন মাসজুড়ে কোমল সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ায় প্রকৃতির স্নিগ্ধ–সুন্দর সাম্রাজ্যে।
শরতের মোহনীয় সৌন্দর্য জাগ্রত করে সকলের মন। নির্মল নীলাকাশ, তুলোর মতো নরম অমল ধবল মেঘের ভেলা, দুধসাদা কাশবন, আমন ধানের শিষের ডগায় হাওয়ার মাতামাতিতে নেচে ওঠে মন। কখনো কখনো সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কিশোরীর মনের মতো শরতের আকাশে সাদা মেঘের দল সরে গিয়ে উঁকি দেয় ঘন কালো মেঘও। আবার মেঘমুক্ত আকাশে ভরা পূর্ণিমায় পড়া জ্যোৎস্না যেন আচ্ছন্ন করে রাখে শরীর–মন।
শরতের অন্যতম আকর্ষণ কাশফুল। নদীর ধার জুড়ে ফুটে থাকা সারি সারি কাশফুল উদ্বেলিত করে মন। এ কারণেই হয়তো নির্মলেন্দু গুণ তাঁর কবিতায় বলেছিলেন,
‘পুচ্ছ তোলা পাখির মত কাশবনে এক কন্যে
তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে...’
শরতের নির্মল প্রকৃতিতে কাব্যিক হয়ে ওঠে মানুষের মন। মানুষের চোখে শরতের এ মুগ্ধতা আজকালের নয় বরং হাজার বছরের। চর্যাপদের কবি থেকে শুরু করে আধুনিক কবিরাও শরতের নান্দনিকতায় সাহিত্যে যোগ করেছেন অমিয় সুধা।
‘ভরা বাদর মহা ভাদর
শূন্য মন্দির মোর’
শরতের বৃষ্টিতে রাধা বিরহের যে চিত্র বৈষ্ণব পদাবলির কবি বিদ্যাপতি এই দুই চরণে এঁকে গেছেন, তা যেকোনো প্রেমিক হৃদয়ে হাহাকার জাগিয়ে তোলে।
কিংবা কালিদাস যখন শরতের স্নিগ্ধতা কালির দোয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে লিখেছেন—
‘প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখ,
নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎ কাল সমাগত’, তখন শরৎকে মনে হয় নববধূর মতো, কোমল–রাঙা, অপরূপ।
আবার জীবনানন্দ দাশ একেবারেই নিজের মতো করে যখন বন্দনা করেছেন ঋতুর রানির রূপ, তখন শরৎকে মনে হয়েছে অতি আপন
এখানে আকাশ নীল নীলাভ
আকাশজুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম শাদা রং তার...
বাংলার বুকে শরতের রূপ লাবণ্যের বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন—
ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল
তোমার কাননসভাতে!
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,
শরৎকালের প্রভাতে।...
শরৎ এমনই, কিশোরী মনের মতো। কখনো উচ্ছল, কখনো আবার একটু গোমড়ামুখো। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে এলোমেলো হয়ে যাওয়া মন হোক কিংবা উজ্জ্বল অরুণালোকে আনন্দিত মন, শরতের প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা হয় না অন্য কোনো কিছুরই। আকাশে ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘের কোল ঘেঁষে উড়ে যাওয়া পাখির ঝাঁক প্রশান্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় সবখানে। জবা, টগর, দোলনচাঁপার সঙ্গে জুঁই, কেয়া, মালতী, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, রাধাচূড়া কিংবা পদ্মর সঙ্গে শিশুর নির্মল হাসির মতো হেসে ওঠে প্রকৃতি। বিলে ফুটে থাকা শাপলার গায়ে সোনালি রোদের আলো পড়ে সৃষ্টি হওয়া স্বপ্নিল দৃশ্য সগর্বে বুঝিয়ে দেয় শরৎ কেন ঋতুর রানি।
শরতের নান্দনিক সৌন্দর্য সবার হৃদয় মন্দিরে দিয়ে যায় স্বর্গীয় দোলা। প্রকৃতির এই কাব্যিক উপমায় ঝরুক শরতের কবিতার সুর। সবাইকে শরতের শুভেচ্ছা।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে