অনলাইন ডেস্ক
সংস্কৃত কবি কালিদাস তাঁর বিখ্যাত সংস্কৃত মহাকাব্য মেঘদূতে আদর্শ যুবতীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এভাবে—তন্বী শ্যামা শিখরি–দশনা পক্ববিম্বাধরোষ্ঠী; মধ্যে ক্ষ্যামা চকিত-হরিণী প্রেক্ষণা নিম্ন-নাভি; শ্রোণিভারাদলস-গমনা স্তোক-নম্রা স্তনাভ্যাং; যা তত্র স্যাদ যুবতী-বিষয়ে সৃষ্টি রাদ্যের ধাতু।
এটির মোটামুটি বাংলা দাঁড়ায়—সে তন্বী, সে শ্যামা, সুন্দর শিখর যুক্ত তার দাঁত, পাকা বিম্ব ফলের মতো তার ওষ্ঠ ও অধর, তার কোমর সরু, তার দৃষ্টি হরিণীর মতো চঞ্চলা, গভীর তার নাভি, তার গতি নিতম্বের গুরুভারে শিথিল, স্তনের ভারে সে সামান্য ঝুঁকে থাকে—তুমি এ রকম যাকে দেখবে, তোমার মনে হবে যুবতী সৃষ্টিতে সে–ই বিধাতার আদর্শ!
অধর বা ওষ্ঠের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে কবি পক্ব বিম্ব অর্থাৎ পাকা বঁইচি ফলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সুন্দর ঠোঁট হবে গাঢ় গোলাপি বর্ণ। কালিদাস ছিলেন ৪ শ–৫শ শতাব্দী কালে। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে আদর্শ সৌন্দর্যের মধ্যে ওষ্ঠের রংও বিবেচ্য ছিল।
ইতিহাসও কিন্তু তা–ই বলছে। অধর রঞ্জনী বা আধুনিককালে যাকে বলছি ‘লিপস্টিক’, সেটির সর্বপ্রাচীন ব্যবহার ছিল মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের সুমের এবং সিন্ধু উপত্যকায় বা সিন্ধু সভ্যতায়। মূলত এসব সভ্যতায় রূপচর্চা বলতে মুখে রং মাখাই বোঝানো হতো। নারীরা চোখের চারপাশ ও ঠোঁটে রং করতেন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এই চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আধুনিককালে নারীর ফ্যাশনের পাশাপাশি লৈঙ্গিক পরিচয় ও ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে এই অধর রঞ্জন। লিপস্টিকের বিভিন্ন রং নান্দনিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নিদর্শন ধারণ করে। যেমন, ঐতিহাসিকভাবে লাল লিপস্টিক সংবেদনশীলতা অথবা নারী স্বাধীনতাকে প্রতীকায়িত করে। আর কালো লিপস্টিক নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সাব–কালচার বা বিকল্প সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে, বিশেষ করে পশ্চিমের পাঙ্ক এবং গোথ।
মিসরে লাল লিপস্টিক লিঙ্গ নির্বিশেষে ক্ষমতা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক ছিল। রানি ক্লিওপেট্রার অধর রঞ্জনীতে সেটিই প্রকাশিত।
সুমেরীয়রা লিপস্টিক তৈরি করতেন জেমস্টোন (রঙিন পাথর) গুঁড়া করে। এটি নারীরা ঠোঁট ও চোখের চারপাশে ব্যবহার করতেন। মিসরে লিপস্টিক বানানো হতো কারমাইন নামে একটি লাল পোকা শুকিয়ে গুঁড়া করে। আর সিন্ধু উপত্যকায় লিপস্টিক বানানো হতো গিরি বা গৈরিক মাটি দিয়ে। কামসূত্রতে পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত লাল রেজিন ও মৌচাকের মোম দিয়ে বানানো লিপস্টিক এবং এর ব্যবহার বর্ণনা করা আছে।
চীনে এক হাজার বছরেরও আগে লিপস্টিক তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা ঠোঁটের কোমল ও নাজুক ত্বক রক্ষার জন্য বিভিন্ন রঙের লিপস্টিক বানাতো। ৬১৮–৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাং রাজবংশের সময় মৌমাছির মোমের সঙ্গে সুগন্ধী তেল মিশিয়ে লিপস্টিক বানানো হতো।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাব উদ্যাপনের সময় তার মুখে গিরি মাটির সঙ্গে রং মিশিয়ে মুখ রঙিন করা হয়।
বলা হয়, আধুনিক লিপস্টিক বানানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবু আল জাহরাবি। ৯৩৬ থেকে ১০১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তিনি। তৎকালীন স্পেনের করডোভা শহরে প্রখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন তিনি। ১২ শ–১৭শ শতাব্দী থেকে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁর মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া পড়ানো হয়। বগলের ডিওডোরেন্ট, লোম পরিষ্কারক, হাতের লোশন, চুলে রং করা, চুলের যত্ন, নাকের স্প্রে ইত্যাদি উদ্ভাবন করেছেন তিনি। রূপচর্চা বা প্রসাধনীর বস্তুগুলো চিকিৎসারই অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আল জাহরাবি। আধুনিক লিপস্টিক বানানোর ফর্মুলাও তিনি দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে লিপস্টিক জনপ্রিয় হয় ১৬ শতাব্দীতে। রানি প্রথম এলিজাবেথের দেখাদেখি ওই সময় উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক এবং ধবধবে সাদা মুখ জনপ্রিয় ফ্যাশনে পরিণত হয়। ওই সময় কেবল উচ্চশ্রেণির নারী–পুরুষেরাই মেকআপ নিতেন। তবে উনিশ শতকে ভারী মেকআপ নেওয়া কোনো নারীকে আর মর্যাদাবান বলে মনে করা হতো না। কেউ ভারী মেকআপ করলে তাকে মানুষ নটী বা অভিনেত্রী অথবা যৌনকর্মী ঠাওরাতো।
ইউরোপে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে লিপস্টিক তৈরি শুরু করে প্যারিসভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান, ১৮৭০ সালে। তারা গোলাপি রঙের লিপস্টিক বানাতো। এর আগে লিপস্টিক বানানো হতো ঘরে। ইংল্যান্ডে মেকআপ প্রকাশ্য ও গ্রহণযোগ্য রূপচর্চার অংশ হয়ে ওঠে ১৯২১ সালের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রে লিপস্টিক জনপ্রিয় হয় বিশ শতকে। এ সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল গাঢ় লাল লিপস্টিক। লাল লিপস্টিক তখন বিশেষ করে কিশোরী–তরুণীদের সামাজিক বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। পরিবার ও সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন হওয়ার প্রতীক হিসেবে লাল লিপস্টিক পরতো তারা।
এরপর ক্রমেই বিভিন্ন রঙের লিপস্টিক রূপচর্চায় যুক্ত হতে থাকে। যদিও ১৯৪০–এর দশকের মাঝামাঝিতে বিভিন্ন বই এবং ম্যাগাজিনে কিশোরীদের মেকআপ না করা এবং স্বাভাবিক ত্বক ও সৌন্দর্য সুরক্ষার জন্য উৎসাহিত করা হয়। তাদের সতর্ক করা হয়, ভারী মেকআপ তাদের জনপ্রিয়তা এবং ক্যারিয়ারের জন্য খারাপ হতে পারে। ভারী মেকআপ নেওয়া কিশোরী বা তরুণীদের ‘উচ্ছৃঙ্খল’ বা ‘যৌনকর্মী’ বলা হতো।
পরবর্তীতে বিনোদন জগতের সেলিব্রিটিরা বিভিন্ন রঙের লিপস্টিক জনপ্রিয় করেন। ২০১২ সালের দিকে টেইলর সুইফটরা উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তোলেন। আবার ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হালকা রঙের লিপস্টিকের চল শুরু হয়। ‘মিনিমালিজম’ জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে এর একটি যোগসূত্র থাকতে পারে। ২০১৯ সালের কোভিড মহামারি কালে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা শুরু হলে লিপস্টিকের ব্যবহার একেবারে কমে যায়।
উপসংস্কৃতিতে কালো লিপস্টিক জনপ্রিয় করেন শিল্পী মেরিলিন ম্যানসন। ‘মনোহর বিদ্রোহী’ বিশেষণ বোঝাতে কালো লিপস্টিক পরার ফ্যাশন প্রচলিত আছে।
আবার সমকামী নারীরা বিশেষ লিপস্টিক পরে থাকেন। এটির একটি ‘কটাক্ষপূর্ণ’ নামও আছে—লিপস্টিক লেসবিয়ান। একজন সমকামী নারী আরেক নারীকে আকৃষ্ট করতে বিশেষ ধরনের লিপস্টিক পরে থাকেন। সেটিও অবশ্য বাঁধাধরা নারীত্বের ধারণাকেই প্রকাশ করে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক ও লেখক ডেবোরাহ বার্গম্যান ‘লিপস্টিক লেসবিয়ান’ শব্দটি জনপ্রিয় করেন।
অপরাধ বিজ্ঞানেও লিপস্টিকের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। গ্লাস, সিগারেটের বাট বা ফিল্টার, টিস্যু পেপার, পোশাক ইত্যাদি ব্যবহার্য জিনিসে লিপস্টিকের দাগ থেকে অপরাধীকে শনাক্ত করার কৌশল আবিষ্কার হয়েছে। বিশেষ করে যৌন নিপীড়ন, হত্যা এবং সরকার ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও বিতর্ক অনুসন্ধানে এ ধরনের আলামত ব্যবহার করা হয়।
তথ্যসূত্র: নাবিলাক ডটকম, মুসলিম হেরিটেজ ডটকম, উইকিপিডিয়া
সংস্কৃত কবি কালিদাস তাঁর বিখ্যাত সংস্কৃত মহাকাব্য মেঘদূতে আদর্শ যুবতীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এভাবে—তন্বী শ্যামা শিখরি–দশনা পক্ববিম্বাধরোষ্ঠী; মধ্যে ক্ষ্যামা চকিত-হরিণী প্রেক্ষণা নিম্ন-নাভি; শ্রোণিভারাদলস-গমনা স্তোক-নম্রা স্তনাভ্যাং; যা তত্র স্যাদ যুবতী-বিষয়ে সৃষ্টি রাদ্যের ধাতু।
এটির মোটামুটি বাংলা দাঁড়ায়—সে তন্বী, সে শ্যামা, সুন্দর শিখর যুক্ত তার দাঁত, পাকা বিম্ব ফলের মতো তার ওষ্ঠ ও অধর, তার কোমর সরু, তার দৃষ্টি হরিণীর মতো চঞ্চলা, গভীর তার নাভি, তার গতি নিতম্বের গুরুভারে শিথিল, স্তনের ভারে সে সামান্য ঝুঁকে থাকে—তুমি এ রকম যাকে দেখবে, তোমার মনে হবে যুবতী সৃষ্টিতে সে–ই বিধাতার আদর্শ!
অধর বা ওষ্ঠের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে কবি পক্ব বিম্ব অর্থাৎ পাকা বঁইচি ফলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সুন্দর ঠোঁট হবে গাঢ় গোলাপি বর্ণ। কালিদাস ছিলেন ৪ শ–৫শ শতাব্দী কালে। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে আদর্শ সৌন্দর্যের মধ্যে ওষ্ঠের রংও বিবেচ্য ছিল।
ইতিহাসও কিন্তু তা–ই বলছে। অধর রঞ্জনী বা আধুনিককালে যাকে বলছি ‘লিপস্টিক’, সেটির সর্বপ্রাচীন ব্যবহার ছিল মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের সুমের এবং সিন্ধু উপত্যকায় বা সিন্ধু সভ্যতায়। মূলত এসব সভ্যতায় রূপচর্চা বলতে মুখে রং মাখাই বোঝানো হতো। নারীরা চোখের চারপাশ ও ঠোঁটে রং করতেন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এই চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আধুনিককালে নারীর ফ্যাশনের পাশাপাশি লৈঙ্গিক পরিচয় ও ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে এই অধর রঞ্জন। লিপস্টিকের বিভিন্ন রং নান্দনিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নিদর্শন ধারণ করে। যেমন, ঐতিহাসিকভাবে লাল লিপস্টিক সংবেদনশীলতা অথবা নারী স্বাধীনতাকে প্রতীকায়িত করে। আর কালো লিপস্টিক নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সাব–কালচার বা বিকল্প সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে, বিশেষ করে পশ্চিমের পাঙ্ক এবং গোথ।
মিসরে লাল লিপস্টিক লিঙ্গ নির্বিশেষে ক্ষমতা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক ছিল। রানি ক্লিওপেট্রার অধর রঞ্জনীতে সেটিই প্রকাশিত।
সুমেরীয়রা লিপস্টিক তৈরি করতেন জেমস্টোন (রঙিন পাথর) গুঁড়া করে। এটি নারীরা ঠোঁট ও চোখের চারপাশে ব্যবহার করতেন। মিসরে লিপস্টিক বানানো হতো কারমাইন নামে একটি লাল পোকা শুকিয়ে গুঁড়া করে। আর সিন্ধু উপত্যকায় লিপস্টিক বানানো হতো গিরি বা গৈরিক মাটি দিয়ে। কামসূত্রতে পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত লাল রেজিন ও মৌচাকের মোম দিয়ে বানানো লিপস্টিক এবং এর ব্যবহার বর্ণনা করা আছে।
চীনে এক হাজার বছরেরও আগে লিপস্টিক তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা ঠোঁটের কোমল ও নাজুক ত্বক রক্ষার জন্য বিভিন্ন রঙের লিপস্টিক বানাতো। ৬১৮–৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাং রাজবংশের সময় মৌমাছির মোমের সঙ্গে সুগন্ধী তেল মিশিয়ে লিপস্টিক বানানো হতো।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাব উদ্যাপনের সময় তার মুখে গিরি মাটির সঙ্গে রং মিশিয়ে মুখ রঙিন করা হয়।
বলা হয়, আধুনিক লিপস্টিক বানানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবু আল জাহরাবি। ৯৩৬ থেকে ১০১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তিনি। তৎকালীন স্পেনের করডোভা শহরে প্রখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন তিনি। ১২ শ–১৭শ শতাব্দী থেকে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁর মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া পড়ানো হয়। বগলের ডিওডোরেন্ট, লোম পরিষ্কারক, হাতের লোশন, চুলে রং করা, চুলের যত্ন, নাকের স্প্রে ইত্যাদি উদ্ভাবন করেছেন তিনি। রূপচর্চা বা প্রসাধনীর বস্তুগুলো চিকিৎসারই অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আল জাহরাবি। আধুনিক লিপস্টিক বানানোর ফর্মুলাও তিনি দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে লিপস্টিক জনপ্রিয় হয় ১৬ শতাব্দীতে। রানি প্রথম এলিজাবেথের দেখাদেখি ওই সময় উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক এবং ধবধবে সাদা মুখ জনপ্রিয় ফ্যাশনে পরিণত হয়। ওই সময় কেবল উচ্চশ্রেণির নারী–পুরুষেরাই মেকআপ নিতেন। তবে উনিশ শতকে ভারী মেকআপ নেওয়া কোনো নারীকে আর মর্যাদাবান বলে মনে করা হতো না। কেউ ভারী মেকআপ করলে তাকে মানুষ নটী বা অভিনেত্রী অথবা যৌনকর্মী ঠাওরাতো।
ইউরোপে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে লিপস্টিক তৈরি শুরু করে প্যারিসভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান, ১৮৭০ সালে। তারা গোলাপি রঙের লিপস্টিক বানাতো। এর আগে লিপস্টিক বানানো হতো ঘরে। ইংল্যান্ডে মেকআপ প্রকাশ্য ও গ্রহণযোগ্য রূপচর্চার অংশ হয়ে ওঠে ১৯২১ সালের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রে লিপস্টিক জনপ্রিয় হয় বিশ শতকে। এ সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল গাঢ় লাল লিপস্টিক। লাল লিপস্টিক তখন বিশেষ করে কিশোরী–তরুণীদের সামাজিক বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। পরিবার ও সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন হওয়ার প্রতীক হিসেবে লাল লিপস্টিক পরতো তারা।
এরপর ক্রমেই বিভিন্ন রঙের লিপস্টিক রূপচর্চায় যুক্ত হতে থাকে। যদিও ১৯৪০–এর দশকের মাঝামাঝিতে বিভিন্ন বই এবং ম্যাগাজিনে কিশোরীদের মেকআপ না করা এবং স্বাভাবিক ত্বক ও সৌন্দর্য সুরক্ষার জন্য উৎসাহিত করা হয়। তাদের সতর্ক করা হয়, ভারী মেকআপ তাদের জনপ্রিয়তা এবং ক্যারিয়ারের জন্য খারাপ হতে পারে। ভারী মেকআপ নেওয়া কিশোরী বা তরুণীদের ‘উচ্ছৃঙ্খল’ বা ‘যৌনকর্মী’ বলা হতো।
পরবর্তীতে বিনোদন জগতের সেলিব্রিটিরা বিভিন্ন রঙের লিপস্টিক জনপ্রিয় করেন। ২০১২ সালের দিকে টেইলর সুইফটরা উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তোলেন। আবার ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হালকা রঙের লিপস্টিকের চল শুরু হয়। ‘মিনিমালিজম’ জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে এর একটি যোগসূত্র থাকতে পারে। ২০১৯ সালের কোভিড মহামারি কালে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা শুরু হলে লিপস্টিকের ব্যবহার একেবারে কমে যায়।
উপসংস্কৃতিতে কালো লিপস্টিক জনপ্রিয় করেন শিল্পী মেরিলিন ম্যানসন। ‘মনোহর বিদ্রোহী’ বিশেষণ বোঝাতে কালো লিপস্টিক পরার ফ্যাশন প্রচলিত আছে।
আবার সমকামী নারীরা বিশেষ লিপস্টিক পরে থাকেন। এটির একটি ‘কটাক্ষপূর্ণ’ নামও আছে—লিপস্টিক লেসবিয়ান। একজন সমকামী নারী আরেক নারীকে আকৃষ্ট করতে বিশেষ ধরনের লিপস্টিক পরে থাকেন। সেটিও অবশ্য বাঁধাধরা নারীত্বের ধারণাকেই প্রকাশ করে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক ও লেখক ডেবোরাহ বার্গম্যান ‘লিপস্টিক লেসবিয়ান’ শব্দটি জনপ্রিয় করেন।
অপরাধ বিজ্ঞানেও লিপস্টিকের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। গ্লাস, সিগারেটের বাট বা ফিল্টার, টিস্যু পেপার, পোশাক ইত্যাদি ব্যবহার্য জিনিসে লিপস্টিকের দাগ থেকে অপরাধীকে শনাক্ত করার কৌশল আবিষ্কার হয়েছে। বিশেষ করে যৌন নিপীড়ন, হত্যা এবং সরকার ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও বিতর্ক অনুসন্ধানে এ ধরনের আলামত ব্যবহার করা হয়।
তথ্যসূত্র: নাবিলাক ডটকম, মুসলিম হেরিটেজ ডটকম, উইকিপিডিয়া
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে