শীতকালে মুমিনের ৮ আমল

মুফতি আবু দারদা 
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮: ৫২

শীতকালীন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য মহান আল্লাহ তাআলার দান। এ সময় প্রকৃতি সাজে কুয়াশা ও শিশিরের কোমলতায়। নতুন ফলমূল ও শাকসবজি বাজারে আসে। এসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা মুমিনের কর্তব্য। তাই শীতকালে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিয়েছে ইসলাম। এ মৌসুমকে বলা হয়েছে ইবাদতের বসন্তকাল। এ লেখায় কোরআন-হাদিসের আলোকে শীতে মুমিনের ৮টি করণীয়ের কথা তুলে ধরা হলো।

শীতার্তের পাশে দাঁড়ানো

অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। প্রচণ্ড শীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক মানুষ কষ্ট পায়। শীতবস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে সবুজ রঙের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)

বেশি বেশি রোজা রাখা

শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম হয় এবং আবহাওয়া থাকে শীতল, যা রোজা রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী সময়। বিশেষ করে এই সময়ে কাজা রোজা আদায় করা খুবই সহজ। এ ছাড়া বেশি বেশি নফল রোজা রাখাও অফুরান সওয়াবের কাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (শুআবুল ইমান)

নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়

তাহাজ্জুদ নফল নামাজগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। শীতের দীর্ঘ রাতের প্রথম অংশে ঘুমিয়ে শেষাংশে জেগে ওঠা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে এই নামাজের অনেক গুরুত্বের কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তুমি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করো। এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদ, তথা প্রশংসিত স্থানে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭৯) মহানবী (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদ।’ (মুসলিম)

ভালোভাবে অজু করা

শীতকালে অজুর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা হাদিসে এসেছে। কারণ শীতের তীব্রতার কারণে অনেক সময় আমরা তাড়াহুড়ো করে অজু সম্পন্ন করি, যাতে অজুর অঙ্গ পুরোপুরি না ভেজার আশঙ্কা থেকে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, কোনো এক সফরে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের পেছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছালেন। এদিকে আমরা (আসরের) নামাজ আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম। তাই (তা আদায় করার জন্য) আমরা অজু করা শুরু করলাম। এ সময় আমরা আমাদের পা কোনোমতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চ স্বরে বলেন, ‘সর্বনাশ! গোড়ালির নিচের অংশের জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।’ তিনি দুই বা তিনবার এ কথা বললেন। (বুখারি ও মুসলিম)

তায়াম্মুমের বিধান

আমাদের দেশে যে মাত্রার শীত পড়ে, তার প্রভাবে পানি বেশি ঠান্ডা হয় না। ফলে তা দিয়ে অজু-গোসল করলে সাধারণত মৃত্যু বা অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। এ ছাড়া বর্তমানে সহজেই পানি গরম করা অথবা বদ্ধ ঘরে অজু-গোসল করা কিংবা দ্রুত শরীর গরম করার ব্যবস্থা সহজলভ্য। তাই শীতে অজুর বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডার মৌসুমে যে পরিপূর্ণ অজু করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ) তবে অসুস্থ ব্যক্তির যদি অজু করার কারণে রোগ বেড়ে যাওয়ার বা দেহের কোনো অঙ্গ অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তার জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ হবে।

চামড়ার মোজা ব্যবহার

শীতে অনেকেই চামড়ার তৈরি মোজা ব্যবহার করে। অজু করার ক্ষেত্রে পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করা ইসলামে বৈধ। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো—চামড়ার তৈরি মোজা হতে হবে, পবিত্র হয়ে মোজা পরতে হবে, মোজা দিয়ে টাখনু ঢাকা থাকতে হবে, ছেঁড়া থাকলে তা পায়ের কনিষ্ঠাঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম হতে হবে, ফিতা দিয়ে বাঁধা ছাড়াই পায়ে আটকে থাকতে হবে এবং মোজাগুলো পরে জুতা ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে পারতে হবে। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন, তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন, এক রাত।’ (আবু দাউদ)

শীতবস্ত্র পরিধান

শীতের পোশাক আমাদের আল্লাহ তাআলার নিয়ামত স্মরণ করিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্য আছে শীতবস্ত্রের উপকরণ।’ (সুরা নাহল: ৫) মহানবী (সা.) শীতের সময় শীতবস্ত্র পরিধান করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন সকাল সকাল বের হলেন। তখন তাঁর গায়ে কালো পশমের একটি চাদর ছিল। (আবু দাউদ)

নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা

শীতে আমাদের দেশে নতুন ফলমূল ও শাকসবজি বাজারে আসে। এসব মহান আল্লাহর অপার নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমি তো অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। এরপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফলফলারি ও ঘাস। এসব তোমাদের ও তোমাদের পালিত পশুকুলের জীবনধারণের জন্য।’ (সুরা আবাসা: ২৪-৩২) এসবের কৃতজ্ঞতা আদায় করা মুমিনের কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত