জুবায়ের আহম্মেদ
তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে বড় পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে একত্রে বলা হয় ‘বিগ ফাইভ’। সেখানে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল বা ফেসবুকের সঙ্গে রয়েছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমাজন। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে বিস্তৃত করেছে বেশ কিছু দেশে। দুই দশকেরও বেশি সময়ের পথচলায় এর সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ যুক্ত হয়েছেন কর্মী হিসেবে। যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতায় তারা আমাজনের এগিয়ে চলায় নিরলসভাবে অবদান রাখছেন। তাদেরই একজন সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের ছেলে তিনি। কাজ করছেন আমাজনের প্রিন্সিপাল প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে। বর্তমানে আমাজন অস্ট্রেলিয়ার প্রোডাক্ট পেমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান তিনি। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর দ্রুতই এ পদে আসীন হন তানভীর। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন তাঁর বেড়ে ওঠা ও আমাজনে চাকরি পাওয়ার পেছনের নানা গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জুবায়ের আহম্মেদ।
আপনার ছোটবেলার গল্প জানতে চাই।
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: আমি কয়েকটি স্কুলে পড়েছি। স্কুল বদলের অভ্যাসের কারণে আসলে নানারকম বৈচিত্র্য তৈরি হয়। চিকিৎসক পরিবারের সন্তান হলেও ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হব। আমার বাবা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর চাকরির নিয়মিত বদলির সুবাদে ছোটবেলায় বিভিন্ন এলাকায় থাকা হয়েছে আমাদের। একপর্যায়ে আমি নিজ এলাকা সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয় ও পরে কুমিল্লার ইস্পাহানি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছি। ১৯৯৩ সালে সুনামগঞ্জে মাধ্যমিকে স্টার মার্কস ও ১৯৯৫ সালে উচ্চমাধ্যমিকে কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করি। পড়াশোনা ছাড়াও লেখালেখি ও গল্পের বই পড়ার নেশা ছিল। আমি যখন স্কুলছাত্র ছিলাম, তখনো দেশে কম্পিউটার খুব একটা ছিল না বললেই চলে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে কম্পিউটার স্পর্শের সুযোগ হয়নি। তবে আমার ফলাফল ভালো হওয়ায় পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার ব্যাপারেও পরিবারের সমর্থন ছিল সব সময়।
কর্মজীবনের শুরুটা কেমন ছিল?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: উচ্চমাধ্যমিকের পর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। তবে পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগেনি। এক বছর পর ছোটবেলার ইচ্ছাতেই ফিরে গিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার জন্য নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। পুরোটা সময় কম্পিউটার নিয়েই কেটেছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পাই। পরে তাদের মাধ্যমেই জাপানে যাই। চাকরির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ও যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করি। আমি মূলত একজন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে চেয়েছি। এর মাঝামাঝি সময়টায় চাকরি বদল করে জাপানের শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ হয়। প্রোডাক্ট পেমেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করেছি জাপানের টেক জায়ান্ট রাকুটেনে, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার ‘ভাইবার’ এই প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন। সবশেষে আমাজনে যোগ দিয়েছি।
আমাজনে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন কীভাবে?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: জাপানে যে কয়বছর কাজ করেছি, সেখানে প্রতিনিয়তই সহকর্মীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ ছিল। সে দেশের মানুষের কাজের প্রতি একাগ্রতা ও নিষ্ঠার কথা না বললেই নয়। সকাল ৯টায় যদি অফিস শুরু হয়, তারা সেখানে পৌঁছে যায় এক ঘণ্টা আগেই। আন্তরিক ব্যবহার, প্রতিটি কাজেই সৃজনশীলতা ও মননশীলতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ, লেগে থাকার অভ্যাসসহ নানা কারণেই তারা পৃথিবীর উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে থাকাকালে নানা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। একটা সময় উপলব্ধি করলাম, আমি এমন এক কর্মক্ষেত্র চাই, যেখানে ‘কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স’ নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকবে। আমাজনে সেই সুযোগ তো আছেই, পাশাপাশি রয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ভ্রমণ ও নানা মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ। আমাজনে কাজের পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেক বড়। জাপানের টোকিওতে যখন প্রোডাক্ট পেমেন্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করছিলাম, তখনই আমাজনে কাজের সুযোগ আসে। এখানে আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির পথচলায় অবদান রাখতে পারব, নতুন করে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাব—এমনটা ভেবেই আবেদন করি। পূর্বের সব অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লেগেছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমার চাকরি হয়। আমাজন জাপানে যোগ দেওয়ার পর ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বদলি হয়েছি।
আমাজনে নিয়োগের প্রক্রিয়া কেমন? চাকরির জন্য প্রার্থীর কোন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: আমাজনে চাকরিপ্রত্যাশীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় বেশ কয়েকটি ধাপে। প্রথমে ফোন স্ক্রিনিং, পরে রিটেন এক্সারসাইজ—যেখানে নিজের ‘আইডিয়া’ নিয়ে লিখতে হয়, আর তারপর ‘লুপ ইন্টারভিউ’-এ অবতীর্ণ হতে হয়। সেখানে আমাজনের একাধিক কর্মকর্তা আলাদাভাবে ইন্টারভিউ নেন। তাঁরা প্রার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি, মনস্তত্ত্ব ও সৃজনশীলতা যাচাই করেন। এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে কর্মী নির্বাচন করা হয়। একজন প্রার্থী তাঁর আগের কর্মস্থলে কেমন ভূমিকা রেখেছেন, সেখানে তিনি কোন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই বিষয়গুলোকে যাচাই করা হয়। আমাজনের ইন্টারভিউ প্রশ্নোত্তর কেন্দ্রিক না, বরং অনেকটাই আলাপচারিতার মতো। বলা যেতে পারে, পরতে পরতে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করেই কোনো এক বিষয়ে কথাবার্তা চালিয়ে নেওয়া হয়। এতে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর চিন্তাভাবনার বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে।
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের জন্য উন্নত বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ কেমন?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: বাংলাদেশের তরুণেরা ভালো করছে। ফলে সুযোগও বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই আমাদের তরুণেরা, কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ—যেমন ভারতের তরুণেরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা অন্য যে কারও সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন। বিশ্বমানের হওয়ায় তাঁদের আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। আমি মনে করি, এখনকার সময়ে সুযোগ অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেটের দরুন যেকোনো ব্যবসার বৈশ্বিক রূপ বা বৈচিত্র্য অনুযায়ী নানাবিধ সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ভালোমানের অনেক প্রতিষ্ঠানই মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তরুণেরা কর্মক্ষেত্রে কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে সফল হচ্ছে, যেটি আমাদের সুনাম তৈরি করছে।
কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য তরুণদের কী পরামর্শ দেবেন?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন লক্ষ্য স্থির করা। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া। লক্ষ্য যাই থাকুক না কেন, নিজের কর্ম ও দৃষ্টিকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। যেকোনো লক্ষ্যপূরণে তিনটি জিনিস খুব প্রয়োজন—উদ্দেশ্য, বিশ্বাস ও কর্ম। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, যেটি অর্জনের কথা ভাবছি, সেটি কেন আমি অর্জন করতে চাই। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ধাপে ধাপে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগোতে হবে। যদি আমাজনে যোগদান করা আমার লক্ষ্য হয়, তবে ওই তিনটি বিষয়কে কাজে লাগিয়েই সফল হওয়া সম্ভব।
শুধু ক্যারিয়ার নয়, একজন মানুষ হিসেবে সবদিক দিয়েই সমানভাবে বেড়ে উঠতে হবে। এটি হতে হবে ব্যক্তিত্ব গঠনে, পেশাদারি, ধর্ম কিংবা দর্শন এবং অর্থ-বিত্তে। নিজের বিকাশ ঘটাতে পারলে তখনই কেবল অন্যের উপকার করা সম্ভব হবে, অবদান রাখা যাবে দেশ বা বিশ্বের জন্য। সর্বোপরি, সচেতন মানুষ হতে হবে, আর সে লক্ষ্যে ভালো বই পড়া, সৃজনশীল কাজে নিজেকে জড়িত রাখা, কথা বলা, ভালো লেখালেখি, মেডিটেশনসহ সুন্দর লাইফস্টাইল তৈরি করলে জীবন সুন্দর হবে, আর সেটিই ভালো ক্যারিয়ার গড়ে দেবে।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলুন।
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: আমি মূলত সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বেশির ভাগ সময় ধরেই কাজ করছি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে। এই বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করেছি, যার নাম ‘আ ব্রেইনি পিপল গাইড টু পিএমপি’। ব্যক্তিগত ব্লগেও লেখালেখি করছি। আমাজনের সঙ্গেও দারুণ সময় কাটছে। তাই আপাতত নতুন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে দেশে কিছু করতে চাই। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সব শিক্ষাকে পূর্ণতা দেয় নৈতিক শিক্ষা। এ কারণে দেশে এমন একটি ‘এলিমেন্টারি স্কুল’ তৈরির স্বপ্ন দেখি, যেখানে নিয়মিত পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার চর্চা শেখানো হবে। তারা গড়ে উঠবে ইতিবাচক মানুষ হিসেবে। আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে হাল ধরলেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব।
তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে বড় পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে একত্রে বলা হয় ‘বিগ ফাইভ’। সেখানে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল বা ফেসবুকের সঙ্গে রয়েছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমাজন। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে বিস্তৃত করেছে বেশ কিছু দেশে। দুই দশকেরও বেশি সময়ের পথচলায় এর সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ যুক্ত হয়েছেন কর্মী হিসেবে। যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতায় তারা আমাজনের এগিয়ে চলায় নিরলসভাবে অবদান রাখছেন। তাদেরই একজন সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের ছেলে তিনি। কাজ করছেন আমাজনের প্রিন্সিপাল প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে। বর্তমানে আমাজন অস্ট্রেলিয়ার প্রোডাক্ট পেমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান তিনি। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর দ্রুতই এ পদে আসীন হন তানভীর। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন তাঁর বেড়ে ওঠা ও আমাজনে চাকরি পাওয়ার পেছনের নানা গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জুবায়ের আহম্মেদ।
আপনার ছোটবেলার গল্প জানতে চাই।
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: আমি কয়েকটি স্কুলে পড়েছি। স্কুল বদলের অভ্যাসের কারণে আসলে নানারকম বৈচিত্র্য তৈরি হয়। চিকিৎসক পরিবারের সন্তান হলেও ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হব। আমার বাবা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর চাকরির নিয়মিত বদলির সুবাদে ছোটবেলায় বিভিন্ন এলাকায় থাকা হয়েছে আমাদের। একপর্যায়ে আমি নিজ এলাকা সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয় ও পরে কুমিল্লার ইস্পাহানি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছি। ১৯৯৩ সালে সুনামগঞ্জে মাধ্যমিকে স্টার মার্কস ও ১৯৯৫ সালে উচ্চমাধ্যমিকে কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করি। পড়াশোনা ছাড়াও লেখালেখি ও গল্পের বই পড়ার নেশা ছিল। আমি যখন স্কুলছাত্র ছিলাম, তখনো দেশে কম্পিউটার খুব একটা ছিল না বললেই চলে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে কম্পিউটার স্পর্শের সুযোগ হয়নি। তবে আমার ফলাফল ভালো হওয়ায় পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার ব্যাপারেও পরিবারের সমর্থন ছিল সব সময়।
কর্মজীবনের শুরুটা কেমন ছিল?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: উচ্চমাধ্যমিকের পর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। তবে পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগেনি। এক বছর পর ছোটবেলার ইচ্ছাতেই ফিরে গিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার জন্য নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। পুরোটা সময় কম্পিউটার নিয়েই কেটেছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পাই। পরে তাদের মাধ্যমেই জাপানে যাই। চাকরির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ও যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করি। আমি মূলত একজন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে চেয়েছি। এর মাঝামাঝি সময়টায় চাকরি বদল করে জাপানের শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ হয়। প্রোডাক্ট পেমেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করেছি জাপানের টেক জায়ান্ট রাকুটেনে, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার ‘ভাইবার’ এই প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন। সবশেষে আমাজনে যোগ দিয়েছি।
আমাজনে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন কীভাবে?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: জাপানে যে কয়বছর কাজ করেছি, সেখানে প্রতিনিয়তই সহকর্মীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ ছিল। সে দেশের মানুষের কাজের প্রতি একাগ্রতা ও নিষ্ঠার কথা না বললেই নয়। সকাল ৯টায় যদি অফিস শুরু হয়, তারা সেখানে পৌঁছে যায় এক ঘণ্টা আগেই। আন্তরিক ব্যবহার, প্রতিটি কাজেই সৃজনশীলতা ও মননশীলতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ, লেগে থাকার অভ্যাসসহ নানা কারণেই তারা পৃথিবীর উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে থাকাকালে নানা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। একটা সময় উপলব্ধি করলাম, আমি এমন এক কর্মক্ষেত্র চাই, যেখানে ‘কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স’ নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকবে। আমাজনে সেই সুযোগ তো আছেই, পাশাপাশি রয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ভ্রমণ ও নানা মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ। আমাজনে কাজের পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেক বড়। জাপানের টোকিওতে যখন প্রোডাক্ট পেমেন্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করছিলাম, তখনই আমাজনে কাজের সুযোগ আসে। এখানে আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির পথচলায় অবদান রাখতে পারব, নতুন করে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাব—এমনটা ভেবেই আবেদন করি। পূর্বের সব অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লেগেছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমার চাকরি হয়। আমাজন জাপানে যোগ দেওয়ার পর ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বদলি হয়েছি।
আমাজনে নিয়োগের প্রক্রিয়া কেমন? চাকরির জন্য প্রার্থীর কোন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: আমাজনে চাকরিপ্রত্যাশীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় বেশ কয়েকটি ধাপে। প্রথমে ফোন স্ক্রিনিং, পরে রিটেন এক্সারসাইজ—যেখানে নিজের ‘আইডিয়া’ নিয়ে লিখতে হয়, আর তারপর ‘লুপ ইন্টারভিউ’-এ অবতীর্ণ হতে হয়। সেখানে আমাজনের একাধিক কর্মকর্তা আলাদাভাবে ইন্টারভিউ নেন। তাঁরা প্রার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি, মনস্তত্ত্ব ও সৃজনশীলতা যাচাই করেন। এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে কর্মী নির্বাচন করা হয়। একজন প্রার্থী তাঁর আগের কর্মস্থলে কেমন ভূমিকা রেখেছেন, সেখানে তিনি কোন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই বিষয়গুলোকে যাচাই করা হয়। আমাজনের ইন্টারভিউ প্রশ্নোত্তর কেন্দ্রিক না, বরং অনেকটাই আলাপচারিতার মতো। বলা যেতে পারে, পরতে পরতে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করেই কোনো এক বিষয়ে কথাবার্তা চালিয়ে নেওয়া হয়। এতে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর চিন্তাভাবনার বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে।
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের জন্য উন্নত বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ কেমন?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: বাংলাদেশের তরুণেরা ভালো করছে। ফলে সুযোগও বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই আমাদের তরুণেরা, কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ—যেমন ভারতের তরুণেরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা অন্য যে কারও সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন। বিশ্বমানের হওয়ায় তাঁদের আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। আমি মনে করি, এখনকার সময়ে সুযোগ অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেটের দরুন যেকোনো ব্যবসার বৈশ্বিক রূপ বা বৈচিত্র্য অনুযায়ী নানাবিধ সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ভালোমানের অনেক প্রতিষ্ঠানই মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তরুণেরা কর্মক্ষেত্রে কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে সফল হচ্ছে, যেটি আমাদের সুনাম তৈরি করছে।
কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য তরুণদের কী পরামর্শ দেবেন?
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন লক্ষ্য স্থির করা। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া। লক্ষ্য যাই থাকুক না কেন, নিজের কর্ম ও দৃষ্টিকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। যেকোনো লক্ষ্যপূরণে তিনটি জিনিস খুব প্রয়োজন—উদ্দেশ্য, বিশ্বাস ও কর্ম। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, যেটি অর্জনের কথা ভাবছি, সেটি কেন আমি অর্জন করতে চাই। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ধাপে ধাপে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগোতে হবে। যদি আমাজনে যোগদান করা আমার লক্ষ্য হয়, তবে ওই তিনটি বিষয়কে কাজে লাগিয়েই সফল হওয়া সম্ভব।
শুধু ক্যারিয়ার নয়, একজন মানুষ হিসেবে সবদিক দিয়েই সমানভাবে বেড়ে উঠতে হবে। এটি হতে হবে ব্যক্তিত্ব গঠনে, পেশাদারি, ধর্ম কিংবা দর্শন এবং অর্থ-বিত্তে। নিজের বিকাশ ঘটাতে পারলে তখনই কেবল অন্যের উপকার করা সম্ভব হবে, অবদান রাখা যাবে দেশ বা বিশ্বের জন্য। সর্বোপরি, সচেতন মানুষ হতে হবে, আর সে লক্ষ্যে ভালো বই পড়া, সৃজনশীল কাজে নিজেকে জড়িত রাখা, কথা বলা, ভালো লেখালেখি, মেডিটেশনসহ সুন্দর লাইফস্টাইল তৈরি করলে জীবন সুন্দর হবে, আর সেটিই ভালো ক্যারিয়ার গড়ে দেবে।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলুন।
সৈয়দ তানভীর মোনাওয়ার: আমি মূলত সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বেশির ভাগ সময় ধরেই কাজ করছি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে। এই বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করেছি, যার নাম ‘আ ব্রেইনি পিপল গাইড টু পিএমপি’। ব্যক্তিগত ব্লগেও লেখালেখি করছি। আমাজনের সঙ্গেও দারুণ সময় কাটছে। তাই আপাতত নতুন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে দেশে কিছু করতে চাই। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সব শিক্ষাকে পূর্ণতা দেয় নৈতিক শিক্ষা। এ কারণে দেশে এমন একটি ‘এলিমেন্টারি স্কুল’ তৈরির স্বপ্ন দেখি, যেখানে নিয়মিত পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার চর্চা শেখানো হবে। তারা গড়ে উঠবে ইতিবাচক মানুষ হিসেবে। আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে হাল ধরলেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪