অনলাইন ডেস্ক
গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’
গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।
আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।
আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।
অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’
রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।
এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।
আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত
গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’
গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।
আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।
আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।
অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’
রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।
এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।
আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।
বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কেবল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিই যথেষ্ট নয়। তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করা উচিত। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র
৪ মিনিট আগেপাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনগণের চুরি যাওয়া ম্যান্ডেট পুনরুদ্ধার ও দেশটির সংবিধানের ২৬ তম সংশোধনী বাতিলে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার সমর্থক দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে রওনা হন গতকাল রোববার। তবে তারা সেদিন...
১ ঘণ্টা আগেযে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে—এই প্রবাদের এক অনন্য উদাহরণ ভোপালের রাজকন্যা আবিদা সুলতান। তিনি ছোট বেলা থেকেই ছিলেন একেবারেই ভিন্নধর্মী এক রাজকন্যা। তিনি ছোট চুল রাখতেন, বাঘ শিকার করতেন এবং দুর্দান্ত পোলো খেলতেন। মাত্র ৯ বছর বয়স থেকেই নিজেই রোলস রয়েস গাড়ি চালাতেন, ওড়াতেন বিমানও। তলোয়ারবাজিতেও ছিলে দুর্দান্
৪ ঘণ্টা আগেপূর্ব তেল আবিবের পেতাহ তিকভাহ এলাকায় একাধিক হামলায় কয়েকজন মানুষ সামান্য আহত হয়েছে। একটি বাড়ি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। টেলিভিশন ফুটেজে একটি অ্যাপার্টমেন্টকে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে।
৫ ঘণ্টা আগে