আধুনিক সমাজে খাবারের বৈচিত্র্য বেড়েছে। মানুষ পুষ্টিগুণ বিবেচনায় রেখে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে। সে কারণে দিনে দিনে আমাদের চিয়া সিড খাওয়ার প্রচলন বাড়ছে। এই বিদেশি শস্য এখন বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে।
চিয়া সিডে আঁশ, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ, যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস রয়েছে। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি, যেগুলোকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বিবেচনা করা হয়। চিয়া সিড পুডিং, ওটমিল, সিরিয়াল বা স্মুদি হিসেবে খাওয়া যায়।
চিয়া সিড হলো একধরনের ক্ষুদ্র কালো বা সাদা বীজ। এর উৎস সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদ। মধ্য আমেরিকার পুদিনা পরিবারের সদস্য এটি। এই ছোট বীজ ৫ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে মানুষের খাদ্যের অংশ। একসময় চিয়া সিড অ্যাজটেক ও মায়ানদের প্রধান খাদ্য ছিল বলে জানা যায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
- নিয়মিত চিয়া সিড খেলেরক্তচাপ কমে
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে
- হজমশক্তি বাড়ে
- ওজন কমে
- প্রদাহ কমে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে
- দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়া যাবে
- উদ্বেগ ও বিষণ্নতা থেকে মুক্তি মিলবে
যখন চিয়া সিড খাওয়া হয়, তখন তারা পেটে জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে। এতে ক্ষুধা ও ক্যালরি গ্রহণ কমে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
চিয়া সিড ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি পাওয়ার হাউস। এ ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাথমিকভাবে ফ্যাটি মাছ, বাদাম ও বীজে পাওয়া যায়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ও শরীরের প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া এর রক্তসংবহনতন্ত্র ও মস্তিষ্কের কাজ উদ্দীপ্ত করার গুণ আছে।
চিয়া সিড আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড নামে পরিচিত একধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার। শরীর নিজে আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না। তাই এই উপাদানসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
আঁশ
হজমশক্তি ঠিক রাখতে আঁশ বা ফাইবার খাওয়া একটি দুর্দান্ত উপায়। ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ বা এক আউন্স পরিমাণ চিয়া সিডে প্রায় ১০ গ্রাম খাওয়ার উপযোগী আঁশ রয়েছে। এই আঁশ করোনারি হৃদ্রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, প্রদাহ ও হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আঁশ এলডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি হৃৎপিণ্ডের প্রতিরক্ষামূলক এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। চিয়া সিডের আঁশ মল নরম করে হজমে সহায়তা করতে পারে। এটি মলকে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে আরও দ্রুত পরিবহন করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
চিয়া সিড টোকোফেরল, ফাইটোস্টেরল, ক্যারোটিনয়েড এবং পলিফেনলিক যৌগসহ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল সৃষ্ট ক্ষতির হাত থেকে শরীর রক্ষা করে।
চিয়া সিড প্রোটিনের একটি মূল্যবান উৎস। এতে ৯টি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। চিয়া সিডের প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে পারে।
কীভাবে ডায়েটে চিয়া সিড যোগ করবেন
দই, সিরিয়াল বা সালাদের মতো খাবারে ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড ছিটিয়ে দিতে পারেন। এ চাড়া স্মুদি বা স্যুপে চিয়া সিড যোগ করে খাওয়া যায়।
ডায়েটে চিয়া সিড পাওয়ার আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হলো চিয়া পুডিং তৈরি করা। এ জন্য চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে এটি ফুলে উঠে জেলটিনাস আবরণ তৈরি করে, আকারে প্রসারিত হয় এবং পুডিংয়ের মতো সামঞ্জস্য তৈরি করে।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ,প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র