অনলাইন ডেস্ক
ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে নিজেদের রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন অনেকেই। এই ধরনের সাইবারকন্ড্রিয়াক ব্যক্তিরা তাঁদের শারীরিক বা মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো উপসর্গ বা অসুস্থতার তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে থাকেন, যা তাঁদের উদ্বেগ বা অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে এখন সাইবারকন্ড্রিয়াক এবং আত্ম-চিকিৎসা (যাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেন) নেওয়া ব্যক্তিদের এই উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি। কারণ, ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চ্যাটবট চালু করতে যাচ্ছে, যা ব্যক্তিগত যত্নের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল চেইন গ্রুপ বলেছে, রোগীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইন্টারনেট অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা দূর করবে ইন্টারঅ্যাকটিভ চ্যাটবটটি। নির্দিষ্ট রোগীর তথ্যের সঙ্গে কাজ করতে, দ্রুত রোগ নির্ণয়ে করতে, সঠিক উপসর্গ চিহ্নিত করতে এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করার জন্য চ্যাটবটটি ডিজাইন করা হয়েছে।
গ্রুপটি আরও বলছে, ‘এটি অনলাইনে তথ্য খোঁজা এবং আত্ম-চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বাদ দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবে এবং সময়মতো পরামর্শের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করবে।’
অপর দিকে আরেকটি হাসপাতাল চেইন এমন একটি অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবনধারা সম্পর্কিত রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে। যেমন—ডায়াবেটিস, স্থূলতা, শারীরিক অকার্যকারিতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। রোগীদের স্বাস্থ্য ট্র্যাক করতে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংক) ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। যেমন—স্মার্টওয়াচ বা রক্তে শর্করা পর্যবেক্ষণমূলক ডিভাইস।
হাসপাতাল চেইনটি বলেছে, ‘অ্যাপটি নিয়মিতভাবে রোগীর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, পানি এবং ওষুধ সেবনের মতো স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ডেটা আপডেট করবে। এআইয়ের সাহায্যে এই ডেটাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে রোগী তার স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্য আরও ভালোভাবে আরও জানতে পারে। আর রোগীদের নির্ধারিত দৈনিক রুটিন তারা অনুসরণ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন চিকিৎসকেরা।
‘যদিও আইওটি সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা ডিভাইসগুলো কিছুদিন ধরেই রয়েছে, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উত্থান হাসপাতালগুলোকে এই প্রযুক্তির ব্যাপকভাবে গ্রহণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, সেন্ট জনস ন্যাশনাল একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেসের ফ্যামিলি মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. জন বলেন, রোগীদের মধ্যে এআইভিত্তিক চিকিৎসার ধারণা ব্যক্তিগত অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। অনেক রোগী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং প্রযুক্তি-পছন্দকারীরা এআইয়ের সুবিধাগুলো সাদরে গ্রহণ করবেন। তবে, চিকিৎসায় এআইয়ের অন্তর্ভুক্তিকে সন্দেহের দৃষ্টি দেখবেন কিছু রোগী এবং তারা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি পছন্দ করবেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ততার অভাবে কিছু মানুষ এআইয়ের ওপর নির্ভর করতে পারবে না।
অপেক্ষার সময় কমানো
বড় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি হলে, বহির্বিভাগে বা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেতে বা ওষুধের দোকানের কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াগুলো অনেক সহজ এবং দ্রুত করা সম্ভব। এই লক্ষ্যেই কাজ করছে ভারতের সেন্ট জনস হাসপাতাল, যেখানে তারা হাসপাতালের রোগীর ডেটা সংগ্রহ, বিলিং, কাজের ধারা এবং এমনকি নিয়োগ ব্যবস্থাও এআই মাধ্যমে পরিচালনা করছে।
বর্তমানে মানুষ এমন এক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, যেখানে তারা প্রায় সবকিছুই হাতের কাছে পেয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নয়ডায় একটি ১০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে, যাদের জরুরি চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন নেই, তাদের সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না, বরং সহজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
কাবেরী গ্রুপ অব হসপিটালসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ডা. এস চন্দ্রকুমার, এমডি বলেন, ‘আমরা এমন রোগীদের জন্য প্রস্তুত হতে চাই। আমরা এআই ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করতে চাই। রোগী ডেটার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এআই প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই।’ উল্লেখ্য, ভারতের প্রথম এআই-চালিত লাইফস্টাইল বা জীবনধারা সম্পর্কিত রোগ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে হাসপাতালটি।
অস্ত্রোপচারে এআই
অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মূল্যবান টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এআই। বর্তমানের বিশ্ব রোবোটিক সার্জারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। সার্জিকাল প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করে এআই। উদাহরণস্বরূপ, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের আগে, এআইয়ের ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি চিকিৎসকদের সঠিকভাবে কৃত্রিম অঙ্গের আকার এবং তার অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে। এমনকি কতটুকু হাড় কাটা হবে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করে এই প্রযুক্তি, যাতে জয়েন্টগুলোর ভারসাম্য থাকে। প্রচলিত রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিতে এই পরিমাপগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে। ডিজিটাল প্রতিকৃতি ও সার্জারির পরিস্থিতির ভার্চুয়াল মডেল তৈরি অস্ত্রোপচারের পূর্বপ্রস্তুতিতে সাহায্য করতে পারে এআই।
এ ছাড়া ইমপ্লান্ট নির্বাচন, অস্ত্রোপচার ফলাফল পূর্বানুমান এবং অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সুস্থতার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও এআই সাহায্য করে। মনিপাল হাসপাতাল এআই ব্যবহার করে রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে। আর কাওয়েরি হাসপাতাল ‘দ্য ভিঞ্চি’ এবং ‘মাকো ২.০’ এআই মডেল ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে রোবোটিক সিস্টেমের সঠিকতা বাড়াচ্ছে। সেন্ট জনস হাসপাতালেও এআই দিয়ে পরিচালিত রোবোটিক অস্ত্রোপচার করছে।
এআই ডায়াগনোসিস
মানুষের চোখে না দেখা সূক্ষ্ম অসংগতিগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম এআই অ্যালগরিদমগুলো, যা ডায়াগনোসিসে অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে। কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার সঠিক ব্যাখ্যা এবং ডায়াগনোসিস দিতে এআই ব্যবহার শুরু করেছে।
ডা. জন বলেন, ‘গত তিন বছরে বেঙ্গালুরুর অনেক হাসপাতাল এআইয়ের সাহায্যে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য, উপসর্গ, রোগের ইতিহাস এআই-চ্যাটবটের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু স্টার্টআপ এআই-ভিত্তিক সেবা প্রদান করছে, যেমন—প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্তকরণ, রক্তের ছবি বিশ্লেষণ, ক্যানসার স্ক্রিনিং, জেনেটিক স্ক্রিনিং, টেলিরেডিওলজি এবং রোগীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত স্বাস্থ্যসেবা।
মনিপাল হাসপাতালের ডা. দীপক দুবে বলেন, ‘কিছু স্টার্টআপ এআই-ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার তৈরি করেছে যা কার্ডিওলজিস্টদের এবং চিকিৎসকদের ইসিজি ট্রেসিং আরও সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় ডেটার অভাব
সঠিক রোগ নির্ণয় এবং জরুরি সতর্কতার জন্য বড় পরিমাণ ডেটার প্রয়োজন এআই সিস্টেমগুলোর। এ বিষয়ে ডা. সুনীল বলেন, ‘বর্তমানে, স্বাস্থ্য রেকর্ডের জন্য কোনো কেন্দ্রীভূত ডেটাবেইস নেই। ভারতে স্বাস্থ্য তথ্য খণ্ডিত, ছড়ানো ও প্রায়ই অসম্পূর্ণ এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী এআই সিস্টেম তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি ডেটা প্রয়োজন। এ সমস্যাগুলো তৈরি হয় কারণ অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অনুমোদিত নয় বা তারা অ-প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসক।
ডা. চন্দ্রকুমার বলেন, এই ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হল ডিজিটালাইজেশনের অভাব। এখনো অনেক হাসপাতাল এবং চিকিৎসক তাঁদের কাজের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে না। এর ফলে ডেটার অভাব দেখা যায়, যা এআই অ্যালগরিদমের প্রশিক্ষণে প্রভাব ফেলে। নির্দিষ্ট মান দ্বন্দ্ব মেনে চলার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতের স্বাস্থ্য তথ্যকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য তথ্যপ্রযুক্তির মান অনুসরণ করতে হবে। তবে আশার কথা হলো যে আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন এর মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি।
উল্লেখ্য, আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন হলো—ভারত সরকারের একটি উদ্যোগ, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—স্বাস্থ্যসেবার পরিষেবাগুলো ডিজিটালভাবে সংযুক্ত করা এবং সব নাগরিকের জন্য সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা
চিকিৎসকেরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ
ঐতিহ্যগত চিকিৎসা নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে এআই। তবে ডা. জন বলেন, ভবিষ্যতে এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনা করা কঠিন যেখানে এআই ডাক্তার থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এআইভিত্তিক টুলগুলো ডাক্তারদের জটিল রোগ নির্ণয়, অনুসন্ধান এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছে। তবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার চ্যালেঞ্জ এখনো চিকিৎসকদের ওপর রয়েছে, যেখানে তাকে একাধিক কৌশল সমন্বয় করতে হয়। বিশেষ করে একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।
মনিপাল হাসপাতালের ডা. দীপক বলেন, এআই কখনোই চিকিৎসকদের জায়গা নিতে পারে না, কারণ একজন ডাক্তার সরাসরি রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দেয়। তবে, এআই ডাক্তারদের দ্রুত এবং আরও সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা দিতে সাহায্য করতে পারে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে নিজেদের রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন অনেকেই। এই ধরনের সাইবারকন্ড্রিয়াক ব্যক্তিরা তাঁদের শারীরিক বা মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো উপসর্গ বা অসুস্থতার তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে থাকেন, যা তাঁদের উদ্বেগ বা অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে এখন সাইবারকন্ড্রিয়াক এবং আত্ম-চিকিৎসা (যাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেন) নেওয়া ব্যক্তিদের এই উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি। কারণ, ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চ্যাটবট চালু করতে যাচ্ছে, যা ব্যক্তিগত যত্নের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল চেইন গ্রুপ বলেছে, রোগীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইন্টারনেট অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা দূর করবে ইন্টারঅ্যাকটিভ চ্যাটবটটি। নির্দিষ্ট রোগীর তথ্যের সঙ্গে কাজ করতে, দ্রুত রোগ নির্ণয়ে করতে, সঠিক উপসর্গ চিহ্নিত করতে এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করার জন্য চ্যাটবটটি ডিজাইন করা হয়েছে।
গ্রুপটি আরও বলছে, ‘এটি অনলাইনে তথ্য খোঁজা এবং আত্ম-চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বাদ দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবে এবং সময়মতো পরামর্শের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করবে।’
অপর দিকে আরেকটি হাসপাতাল চেইন এমন একটি অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবনধারা সম্পর্কিত রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে। যেমন—ডায়াবেটিস, স্থূলতা, শারীরিক অকার্যকারিতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। রোগীদের স্বাস্থ্য ট্র্যাক করতে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংক) ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। যেমন—স্মার্টওয়াচ বা রক্তে শর্করা পর্যবেক্ষণমূলক ডিভাইস।
হাসপাতাল চেইনটি বলেছে, ‘অ্যাপটি নিয়মিতভাবে রোগীর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, পানি এবং ওষুধ সেবনের মতো স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ডেটা আপডেট করবে। এআইয়ের সাহায্যে এই ডেটাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে রোগী তার স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্য আরও ভালোভাবে আরও জানতে পারে। আর রোগীদের নির্ধারিত দৈনিক রুটিন তারা অনুসরণ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন চিকিৎসকেরা।
‘যদিও আইওটি সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা ডিভাইসগুলো কিছুদিন ধরেই রয়েছে, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উত্থান হাসপাতালগুলোকে এই প্রযুক্তির ব্যাপকভাবে গ্রহণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, সেন্ট জনস ন্যাশনাল একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেসের ফ্যামিলি মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. জন বলেন, রোগীদের মধ্যে এআইভিত্তিক চিকিৎসার ধারণা ব্যক্তিগত অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। অনেক রোগী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং প্রযুক্তি-পছন্দকারীরা এআইয়ের সুবিধাগুলো সাদরে গ্রহণ করবেন। তবে, চিকিৎসায় এআইয়ের অন্তর্ভুক্তিকে সন্দেহের দৃষ্টি দেখবেন কিছু রোগী এবং তারা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি পছন্দ করবেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ততার অভাবে কিছু মানুষ এআইয়ের ওপর নির্ভর করতে পারবে না।
অপেক্ষার সময় কমানো
বড় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি হলে, বহির্বিভাগে বা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেতে বা ওষুধের দোকানের কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াগুলো অনেক সহজ এবং দ্রুত করা সম্ভব। এই লক্ষ্যেই কাজ করছে ভারতের সেন্ট জনস হাসপাতাল, যেখানে তারা হাসপাতালের রোগীর ডেটা সংগ্রহ, বিলিং, কাজের ধারা এবং এমনকি নিয়োগ ব্যবস্থাও এআই মাধ্যমে পরিচালনা করছে।
বর্তমানে মানুষ এমন এক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, যেখানে তারা প্রায় সবকিছুই হাতের কাছে পেয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নয়ডায় একটি ১০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে, যাদের জরুরি চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন নেই, তাদের সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না, বরং সহজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
কাবেরী গ্রুপ অব হসপিটালসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ডা. এস চন্দ্রকুমার, এমডি বলেন, ‘আমরা এমন রোগীদের জন্য প্রস্তুত হতে চাই। আমরা এআই ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করতে চাই। রোগী ডেটার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এআই প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই।’ উল্লেখ্য, ভারতের প্রথম এআই-চালিত লাইফস্টাইল বা জীবনধারা সম্পর্কিত রোগ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে হাসপাতালটি।
অস্ত্রোপচারে এআই
অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মূল্যবান টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এআই। বর্তমানের বিশ্ব রোবোটিক সার্জারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। সার্জিকাল প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করে এআই। উদাহরণস্বরূপ, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের আগে, এআইয়ের ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি চিকিৎসকদের সঠিকভাবে কৃত্রিম অঙ্গের আকার এবং তার অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে। এমনকি কতটুকু হাড় কাটা হবে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করে এই প্রযুক্তি, যাতে জয়েন্টগুলোর ভারসাম্য থাকে। প্রচলিত রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিতে এই পরিমাপগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে। ডিজিটাল প্রতিকৃতি ও সার্জারির পরিস্থিতির ভার্চুয়াল মডেল তৈরি অস্ত্রোপচারের পূর্বপ্রস্তুতিতে সাহায্য করতে পারে এআই।
এ ছাড়া ইমপ্লান্ট নির্বাচন, অস্ত্রোপচার ফলাফল পূর্বানুমান এবং অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সুস্থতার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও এআই সাহায্য করে। মনিপাল হাসপাতাল এআই ব্যবহার করে রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে। আর কাওয়েরি হাসপাতাল ‘দ্য ভিঞ্চি’ এবং ‘মাকো ২.০’ এআই মডেল ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে রোবোটিক সিস্টেমের সঠিকতা বাড়াচ্ছে। সেন্ট জনস হাসপাতালেও এআই দিয়ে পরিচালিত রোবোটিক অস্ত্রোপচার করছে।
এআই ডায়াগনোসিস
মানুষের চোখে না দেখা সূক্ষ্ম অসংগতিগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম এআই অ্যালগরিদমগুলো, যা ডায়াগনোসিসে অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে। কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার সঠিক ব্যাখ্যা এবং ডায়াগনোসিস দিতে এআই ব্যবহার শুরু করেছে।
ডা. জন বলেন, ‘গত তিন বছরে বেঙ্গালুরুর অনেক হাসপাতাল এআইয়ের সাহায্যে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য, উপসর্গ, রোগের ইতিহাস এআই-চ্যাটবটের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু স্টার্টআপ এআই-ভিত্তিক সেবা প্রদান করছে, যেমন—প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্তকরণ, রক্তের ছবি বিশ্লেষণ, ক্যানসার স্ক্রিনিং, জেনেটিক স্ক্রিনিং, টেলিরেডিওলজি এবং রোগীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত স্বাস্থ্যসেবা।
মনিপাল হাসপাতালের ডা. দীপক দুবে বলেন, ‘কিছু স্টার্টআপ এআই-ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার তৈরি করেছে যা কার্ডিওলজিস্টদের এবং চিকিৎসকদের ইসিজি ট্রেসিং আরও সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় ডেটার অভাব
সঠিক রোগ নির্ণয় এবং জরুরি সতর্কতার জন্য বড় পরিমাণ ডেটার প্রয়োজন এআই সিস্টেমগুলোর। এ বিষয়ে ডা. সুনীল বলেন, ‘বর্তমানে, স্বাস্থ্য রেকর্ডের জন্য কোনো কেন্দ্রীভূত ডেটাবেইস নেই। ভারতে স্বাস্থ্য তথ্য খণ্ডিত, ছড়ানো ও প্রায়ই অসম্পূর্ণ এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী এআই সিস্টেম তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি ডেটা প্রয়োজন। এ সমস্যাগুলো তৈরি হয় কারণ অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অনুমোদিত নয় বা তারা অ-প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসক।
ডা. চন্দ্রকুমার বলেন, এই ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হল ডিজিটালাইজেশনের অভাব। এখনো অনেক হাসপাতাল এবং চিকিৎসক তাঁদের কাজের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে না। এর ফলে ডেটার অভাব দেখা যায়, যা এআই অ্যালগরিদমের প্রশিক্ষণে প্রভাব ফেলে। নির্দিষ্ট মান দ্বন্দ্ব মেনে চলার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতের স্বাস্থ্য তথ্যকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য তথ্যপ্রযুক্তির মান অনুসরণ করতে হবে। তবে আশার কথা হলো যে আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন এর মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি।
উল্লেখ্য, আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন হলো—ভারত সরকারের একটি উদ্যোগ, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—স্বাস্থ্যসেবার পরিষেবাগুলো ডিজিটালভাবে সংযুক্ত করা এবং সব নাগরিকের জন্য সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা
চিকিৎসকেরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ
ঐতিহ্যগত চিকিৎসা নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে এআই। তবে ডা. জন বলেন, ভবিষ্যতে এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনা করা কঠিন যেখানে এআই ডাক্তার থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এআইভিত্তিক টুলগুলো ডাক্তারদের জটিল রোগ নির্ণয়, অনুসন্ধান এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছে। তবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার চ্যালেঞ্জ এখনো চিকিৎসকদের ওপর রয়েছে, যেখানে তাকে একাধিক কৌশল সমন্বয় করতে হয়। বিশেষ করে একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।
মনিপাল হাসপাতালের ডা. দীপক বলেন, এআই কখনোই চিকিৎসকদের জায়গা নিতে পারে না, কারণ একজন ডাক্তার সরাসরি রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দেয়। তবে, এআই ডাক্তারদের দ্রুত এবং আরও সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা দিতে সাহায্য করতে পারে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
দেশে প্রথমবার রিওভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পাঁচজনের শরীরে এই ভাইরাস পেয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন...
১৪ ঘণ্টা আগেএইচএমপিভি (হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস) একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সিডিসির মতে, এটি শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
২ দিন আগেবিশ্বে নতুন করে পুরোনো এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। নভেল করোনা ভাইরাসের মতো এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস) নামের এই ভাইরাসটিও মানুষের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। প্রথমদিকে চীন ও জাপানে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। গতকাল সোমবার ভারতেও এ ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
৩ দিন আগেসভায় সর্বসম্মতিক্রমে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল করিম মিঠুকে ‘২৫তম বিসিএস স্বাস্থ্য ফোরাম’র আহ্বায়ক এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একাডেমিক রেজিস্ট্রার ডা. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন মিঠুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
৩ দিন আগে