ডা. মো. আরমান হোসেন রনি
কাজের চাপের কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না? দূরের বস্তু বা দূরের কোনো লেখা ঝাপসা লাগছে? চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে গেলে তাঁরা বলবেন, এই রোগের নাম সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি। এটি হলো চোখের একটি অবস্থা, যেখানে রেটিনার পেছনে তরল জমা হয় এবং দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে। সংক্ষেপে একে ‘সিএসআর’ বলে।
রেটিনা হলো চোখের পেছনের একটি পাতলা সংবেদনশীল পর্দা, যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। তরল জমা হওয়ার ফলে রেটিনা আংশিক বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এটি সাধারণত একটি চোখকে প্রভাবিত করে, যদিও উভয় চোখেই এ রোগ থাকতে পারে। নারীদের তুলনায় অল্পবয়সী কিংবা মধ্যবয়সী পুরুষদের এটি বেশি হয় এবং এর অনুপাত ৩:২।
লক্ষণ
প্রথমে যে লক্ষণটি দেখা যায়, তা হলো আক্রান্ত চোখে ঝাপসা দেখা। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
■ কেন্দ্রীয় দৃষ্টিতে অন্ধকার থাকে।
■ সরলরেখাগুলো আঁকাবাঁকা দেখা।
■ বস্তু মূল আকারের চেয়ে ছোট দেখা।
■ বস্তু প্রকৃত দূর থেকে আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
সিএসআরের দুটি ধরন রয়েছে
১. তীব্র: ২০ থেকে ৫০ বছর মধ্যবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এই রোগে সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তরল পদার্থ নিজে নিজে পরিশোষণ হয়।
২. দীর্ঘস্থায়ী: এ ক্ষেত্রে তরল পদার্থ ১২ মাসের বেশি সময় ধরে থাকতে পারে।
রোগের কারণ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা সিএসআরের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মানুষের শরীরে কর্টিসল নামের হরমোন নিঃসরণ করে, যা চোখের প্রদাহ তৈরি করতে পারে। ফলে রেটিনা ফুটো হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের সিএসআরের ঝুঁকি বেশি। অন্য ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
■ কর্টিকোস্টেরয়েডযুক্ত ওষুধ সেবন।
■ অটো ইমিউন রোগ, যেমন লুপাস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
■ হৃদ্রোগ বা উচ্চ রক্তচাপ।
■ অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব, অর্থাৎ লাজুক ব্যক্তি যাদের অন্যের সঙ্গে সহজে মিশতে বা কথা বলতে সমস্যা হয় এবং সে জন্য মানসিক চাপে ভোগে।
■ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
■ ঘুমের সমস্যা, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অনিদ্রা।
চিকিৎসা
সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি অনেক ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে
এটি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। যদি কয়েক মাসের মধ্যে তরল নিজ থেকে কমে না যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞদের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে।
ওষুধ
কিছু ওষুধ এই রোগ ভালো হতে সাহায্য করতে পারে। যেমন অ্যান্টি ভিইজিএফ ও দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ।
■ ফটো ডায়নামিক থেরাপি: রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হলে ফটো ডায়নামিক থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
■ লেজার চিকিৎসা: রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে লেজার চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিরোধ
■ প্রতিদিন রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
■ ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও স্টেরয়েড সীমিতভাবে ব্যবহার করতে হবে।
■ নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
■ প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।
■ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।
মনে রাখবেন, সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি নিজ থেকে চলে যেতে পারে অথবা এটি আরও খারাপ হতে পারে এবং দৃষ্টির স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে। যদি আপনার কোনো দৃষ্টি পরিবর্তন বা ক্ষতি হয়, তাহলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
লেখক: ডা. মো. আরমান হোসেন রনি, কনসালট্যান্ট (চক্ষু), দীন মোহাম্মদ আই হাসপাতাল সোবহানবাগ, ঢাকা
কাজের চাপের কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না? দূরের বস্তু বা দূরের কোনো লেখা ঝাপসা লাগছে? চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে গেলে তাঁরা বলবেন, এই রোগের নাম সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি। এটি হলো চোখের একটি অবস্থা, যেখানে রেটিনার পেছনে তরল জমা হয় এবং দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে। সংক্ষেপে একে ‘সিএসআর’ বলে।
রেটিনা হলো চোখের পেছনের একটি পাতলা সংবেদনশীল পর্দা, যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। তরল জমা হওয়ার ফলে রেটিনা আংশিক বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এটি সাধারণত একটি চোখকে প্রভাবিত করে, যদিও উভয় চোখেই এ রোগ থাকতে পারে। নারীদের তুলনায় অল্পবয়সী কিংবা মধ্যবয়সী পুরুষদের এটি বেশি হয় এবং এর অনুপাত ৩:২।
লক্ষণ
প্রথমে যে লক্ষণটি দেখা যায়, তা হলো আক্রান্ত চোখে ঝাপসা দেখা। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
■ কেন্দ্রীয় দৃষ্টিতে অন্ধকার থাকে।
■ সরলরেখাগুলো আঁকাবাঁকা দেখা।
■ বস্তু মূল আকারের চেয়ে ছোট দেখা।
■ বস্তু প্রকৃত দূর থেকে আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
সিএসআরের দুটি ধরন রয়েছে
১. তীব্র: ২০ থেকে ৫০ বছর মধ্যবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এই রোগে সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তরল পদার্থ নিজে নিজে পরিশোষণ হয়।
২. দীর্ঘস্থায়ী: এ ক্ষেত্রে তরল পদার্থ ১২ মাসের বেশি সময় ধরে থাকতে পারে।
রোগের কারণ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা সিএসআরের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মানুষের শরীরে কর্টিসল নামের হরমোন নিঃসরণ করে, যা চোখের প্রদাহ তৈরি করতে পারে। ফলে রেটিনা ফুটো হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের সিএসআরের ঝুঁকি বেশি। অন্য ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
■ কর্টিকোস্টেরয়েডযুক্ত ওষুধ সেবন।
■ অটো ইমিউন রোগ, যেমন লুপাস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
■ হৃদ্রোগ বা উচ্চ রক্তচাপ।
■ অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব, অর্থাৎ লাজুক ব্যক্তি যাদের অন্যের সঙ্গে সহজে মিশতে বা কথা বলতে সমস্যা হয় এবং সে জন্য মানসিক চাপে ভোগে।
■ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
■ ঘুমের সমস্যা, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অনিদ্রা।
চিকিৎসা
সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি অনেক ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে
এটি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। যদি কয়েক মাসের মধ্যে তরল নিজ থেকে কমে না যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞদের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে।
ওষুধ
কিছু ওষুধ এই রোগ ভালো হতে সাহায্য করতে পারে। যেমন অ্যান্টি ভিইজিএফ ও দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ।
■ ফটো ডায়নামিক থেরাপি: রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হলে ফটো ডায়নামিক থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
■ লেজার চিকিৎসা: রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে লেজার চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিরোধ
■ প্রতিদিন রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
■ ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও স্টেরয়েড সীমিতভাবে ব্যবহার করতে হবে।
■ নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
■ প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।
■ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।
মনে রাখবেন, সেন্ট্রাল সেরাস রেটিনোপ্যাথি নিজ থেকে চলে যেতে পারে অথবা এটি আরও খারাপ হতে পারে এবং দৃষ্টির স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে। যদি আপনার কোনো দৃষ্টি পরিবর্তন বা ক্ষতি হয়, তাহলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
লেখক: ডা. মো. আরমান হোসেন রনি, কনসালট্যান্ট (চক্ষু), দীন মোহাম্মদ আই হাসপাতাল সোবহানবাগ, ঢাকা
বিশ্বে প্রথমবারের মতো সফলভাবে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করে তিনজন ব্যক্তির চোখের ঝাপসা দৃষ্টি সারিয়ে ফেলেছেন জাপানের গবেষকেরা। চোখের কর্নিয়ার গুরুতর ক্ষতির কারণে তাদের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। এই গবেষণামূলক চিকিৎসা পদ্ধতিটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
৬ ঘণ্টা আগেঅ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে শিশুদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য জানা যায়।
১ দিন আগেবিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যগত অসমতা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। চারটি দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মিলিয়ে বৈশ্বিক ডায়াবেটিসের অর্ধেকেরও বেশি। ২০২২ সালে ভারতে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ২১ কোটি ২০ লাখ, যা বৈশ্বিক হিসাবের চার ভাগের এক ভাগ।
১ দিন আগেশারীরিক পুনর্বাসন চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আজ বুধবার ‘আন্তর্জাতিক শারীরিক পুনর্বাসন চিকিৎসা (পিএমআর) দিবস ২০২৪’ উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটি অফ ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (বিএসপিএমআর) এবং বিএসএমএমইউ-এর ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড
২ দিন আগে