ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রশান্ত মহাসাগরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি দ্বীপ বাল্ট্রা! যে দ্বীপে বৃষ্টি হয় না, পাখিও ওড়ে না! এ দ্বীপে গেলেই নাকি নাবিকেরা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। নাবিক বা অভিযাত্রীদের সঙ্গে থাকা কম্পাসের আচরণও বদলে যায়। সবসময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাসের কাঁটা এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কখনো এলোপাতাড়ি ঘুরতে থাকে অথবা ভুল দিক নির্দেশ করে।
সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো, বাল্ট্রা দ্বীপের ওপরের আকাশে থাকার সময় উড়োজাহাজের কম্পাসও এমন অদ্ভুত আচরণ করে। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক হয়ে যা।
বাল্ট্রা নামের এই দ্বীপ নিয়ে গত ১১ মার্চ ‘বিশ্ব ও মহাকাশ’ নামে ১ লাখ ২৬ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে ইউসুফ সরকার নামের একটি মডারেটর অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্যগুলো উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটি আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। কমেন্ট পড়েছে দেড়শর বেশি।
পোস্টটিতে বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, ‘দ্বীপটির আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো, এর মানসিক দিক। বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। বাল্ট্রার পাশ দিয়ে প্রাণী হেঁটে গেলেও এ দ্বীপে প্রবেশ করেনা। শুধু তাই নয়, পাখিরাও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যায়। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। আরেকটি রহস্য হলো ওই দ্বীপটির চারপাশে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এর ভেতরে কোন বৃষ্টির ফোটা পড়ে না! এমন অনেক আজব আজব রহস্যের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
দ্বীপটি নিয়ে দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল সময় এন্টারটেইনমেন্টে ২০২২ সালের ২৩ মে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতেও দাবি করা হয়, বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না এবং বাল্ট্রা দ্বীপ একদম প্রাণীশূন্য। সময় টিভির এই প্রতিবেদন ছাড়াও দেশীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম যেমন, জাগোনিউজ ২৪, বাংলা নিউজ ২৪, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল আরএমপির ওয়েবসাইট, ভারতের দ্য ওয়ালের বাংলা সংস্করণসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দ্বীপটি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে একই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাল্ট্রা দ্বীপটি কোথায়?
বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম ছোট একটি দ্বীপ। এর আয়তন ৮ বর্গমাইল বা ২১ বর্গকিলোমিটার। এটি ইকুয়েডর থেকে প্রায় ৬০০ মাইল বা ১ হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটি সান্তা ক্রুজ নামে আরেকটি দ্বীপের অংশ ছিল। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে এর বিচ্যুতি ঘটে এবং আলাদা একটি দ্বীপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইকুয়েডর দ্বীপটিতে বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে এবং দুই মাসের মাথায় দ্বীপটিতে প্রায় এক মাইল দীর্ঘ একটি এয়ারস্ট্রিপ (বিমান চলাচলের উপযোগী জায়গা) নির্মাণ করে। পরে দ্বীপটিকে ঘিরে পর্যটনের গুরুত্ব বাড়লে ইকুয়েডর সরকার বিমানঘাঁটিটি সংস্কার করে। এটি এখন দেশটির একটি সক্রিয় সামরিক ঘাঁটি।
দ্বীপটি নিয়ে প্রচারিত তথ্যগুলোর ভিত্তি কী?
বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না—এমন দাবির সত্যতা অনুসন্ধানে পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় বা হয় না এমন জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লাইভ সায়েন্সে পৃথিবীর এমন দশটি জায়গার একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের একাধিক দেশ ও অ্যান্টার্কটিকার নাম খুঁজে পাওয়া গেলেও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম নেই। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনটিতে এই স্থানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসব স্থানে বৃষ্টি খুব কমই হয় এবং কিছু স্থানে লাখ লাখ বছরেও বৃষ্টিপাত হয়নি। এমন শুষ্ক জলবায়ুতে কোনো প্রাণের বেড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। কারণ, ক্রমাগত বাষ্পীভবনের কারণে প্রাণের জন্য অপরিহার্য পানি মাটিতে জমে থাকে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চলগুলোর একটি উত্তর আফ্রিকা। বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার অবস্থান এখানে। এই অঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক, এখানে কিছু জায়গায় টানা এক বছরেরও বেশি সময় বৃষ্টিপাত না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
শিক্ষামূলক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকোভারির ওয়েবসাইটে পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আতাকামা মরুভূমি। এই মরুভূমি চিলির আরিকাতে অবস্থিত। আতাকামা মরুভূমিতেও বৃষ্টি হয়। যদিও স্থানটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ০৩ ইঞ্চি।
আন্তদেশীয় মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটেও আতাকামা মরুভূমিকে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটগুলোর বর্ণনায় কোথাও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম পাওয়া যায়নি।
বরং গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গবেষণা নিবন্ধ সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টিপাত হয়। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টিপাত ও সেখানে বসবাসরত ফিঞ্চ পাখির ডেমোগ্রাফি (পরিসংখ্যান) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দুজন গবেষকের করা একটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটি আমেরিকান অর্নিথোলজিক্যাল সোসাইটির গবেষণা সাময়িকী অর্নিথোলজিতে ১৯৮০ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় বাল্ট্রাতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত অনেক কম। গবেষণা চলাকালে দ্বীপটিতে ১৯৬৭ এবং ১৯৭০ উভয় সময়েই ১ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
এঞ্জি ড্রেক নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমন বিষয়ক উদ্যোক্তা বাল্ট্রা দ্বীপ ঘুরে এসে ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট নট ইয়ুর অ্যাভারেজ আমেরিকান নামের একটি ট্রাভেল ব্লগে নিজের অভিজ্ঞতা লেখেন। সেখানে ড্রেক জানান, তাঁরা যখন বাল্ট্রাতে পৌঁছান, সেখানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল এবং তখন বর্ষাকাল ছিল। ব্লগে তিনি সেখানকার বৃষ্টির ছবিও যুক্ত করেন।
দ্বীপটি সম্পর্কে গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সি নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইকুয়েডরের সঙ্গে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে সংযোগকারী দুটি বিমানবন্দরের একটির অবস্থান এই বাল্ট্রা দ্বীপে। দ্বীপটি এখন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পর্যটকদের প্রধান প্রবেশদ্বার। গ্যালাপাগোসে প্রতি বছর ২ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলে, যার প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ বাল্ট্রায় ওঠা–নামা করে। প্রতি বছর কয়েকশ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও নামে।
তবে বাল্ট্রা বেশ শুষ্ক। দ্বীপে গাছপালার মধ্যে আছে– লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ, ক্যাকটাস এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ। দ্বীপটিতে বুবি এবং ফ্রিগেটবার্ডসহ প্রচুর পাখি রয়েছে।
গ্যালাপাগোস ক্রুসেরোস নামের আরেকটি ওয়েবসাইট থেকেও বাল্ট্রা দ্বীপটির প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটি থেকে জানায়, বাল্ট্রা দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ আছে। দ্বীপটিতে বসবাসরত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে— ল্যান্ড ইগুয়ানা নামের এক ধরনের বড় আকৃতির টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি, যেমন: নীল পায়ের বুবি এবং পেলিকান।
প্রজনন ঋতুতে পাখিদের দ্বীপটির পাহাড় এবং সৈকতে ভিড় করতে দেখা যায়। সামুদ্রিক পাখি ছাড়াও বাল্ট্রা দ্বীপে সি গাল এবং বাজপাখির মতো পাখিরও দেখা মেলে। এ ছাড়া বাল্ট্রা দ্বীপের সৈকত এবং উপকূলে সি লায়নদের দেখা পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এদের বাল্ট্রার বালুময় সৈকতে বিশ্রাম নিতে বা আশেপাশের জলে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। দ্বীপটিতে ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে ঘন ঘন বৃষ্টিপাতও হয় বলে ওয়েবসাইটটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হোয়্যার অ্যান্ড হোয়েন নামের একটি ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাল্ট্রাতে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। দ্বীপটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় অক্টোবরে এবং সর্বোচ্চ ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ফেব্রুয়ারিতে।
অনুসন্ধানে বাল্ট্রা দ্বীপটি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, দ্বীপটিতে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা রয়েছে। আছে কয়েক প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী। এ ছাড়া দ্বীপটিতে বেশ বৃষ্টিপাতও হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি দ্বীপ বাল্ট্রা! যে দ্বীপে বৃষ্টি হয় না, পাখিও ওড়ে না! এ দ্বীপে গেলেই নাকি নাবিকেরা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। নাবিক বা অভিযাত্রীদের সঙ্গে থাকা কম্পাসের আচরণও বদলে যায়। সবসময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাসের কাঁটা এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কখনো এলোপাতাড়ি ঘুরতে থাকে অথবা ভুল দিক নির্দেশ করে।
সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো, বাল্ট্রা দ্বীপের ওপরের আকাশে থাকার সময় উড়োজাহাজের কম্পাসও এমন অদ্ভুত আচরণ করে। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক হয়ে যা।
বাল্ট্রা নামের এই দ্বীপ নিয়ে গত ১১ মার্চ ‘বিশ্ব ও মহাকাশ’ নামে ১ লাখ ২৬ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে ইউসুফ সরকার নামের একটি মডারেটর অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্যগুলো উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটি আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। কমেন্ট পড়েছে দেড়শর বেশি।
পোস্টটিতে বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, ‘দ্বীপটির আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো, এর মানসিক দিক। বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। বাল্ট্রার পাশ দিয়ে প্রাণী হেঁটে গেলেও এ দ্বীপে প্রবেশ করেনা। শুধু তাই নয়, পাখিরাও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যায়। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। আরেকটি রহস্য হলো ওই দ্বীপটির চারপাশে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এর ভেতরে কোন বৃষ্টির ফোটা পড়ে না! এমন অনেক আজব আজব রহস্যের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
দ্বীপটি নিয়ে দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল সময় এন্টারটেইনমেন্টে ২০২২ সালের ২৩ মে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতেও দাবি করা হয়, বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না এবং বাল্ট্রা দ্বীপ একদম প্রাণীশূন্য। সময় টিভির এই প্রতিবেদন ছাড়াও দেশীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম যেমন, জাগোনিউজ ২৪, বাংলা নিউজ ২৪, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল আরএমপির ওয়েবসাইট, ভারতের দ্য ওয়ালের বাংলা সংস্করণসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দ্বীপটি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে একই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাল্ট্রা দ্বীপটি কোথায়?
বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম ছোট একটি দ্বীপ। এর আয়তন ৮ বর্গমাইল বা ২১ বর্গকিলোমিটার। এটি ইকুয়েডর থেকে প্রায় ৬০০ মাইল বা ১ হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটি সান্তা ক্রুজ নামে আরেকটি দ্বীপের অংশ ছিল। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে এর বিচ্যুতি ঘটে এবং আলাদা একটি দ্বীপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইকুয়েডর দ্বীপটিতে বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে এবং দুই মাসের মাথায় দ্বীপটিতে প্রায় এক মাইল দীর্ঘ একটি এয়ারস্ট্রিপ (বিমান চলাচলের উপযোগী জায়গা) নির্মাণ করে। পরে দ্বীপটিকে ঘিরে পর্যটনের গুরুত্ব বাড়লে ইকুয়েডর সরকার বিমানঘাঁটিটি সংস্কার করে। এটি এখন দেশটির একটি সক্রিয় সামরিক ঘাঁটি।
দ্বীপটি নিয়ে প্রচারিত তথ্যগুলোর ভিত্তি কী?
বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না—এমন দাবির সত্যতা অনুসন্ধানে পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় বা হয় না এমন জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লাইভ সায়েন্সে পৃথিবীর এমন দশটি জায়গার একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের একাধিক দেশ ও অ্যান্টার্কটিকার নাম খুঁজে পাওয়া গেলেও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম নেই। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনটিতে এই স্থানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসব স্থানে বৃষ্টি খুব কমই হয় এবং কিছু স্থানে লাখ লাখ বছরেও বৃষ্টিপাত হয়নি। এমন শুষ্ক জলবায়ুতে কোনো প্রাণের বেড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। কারণ, ক্রমাগত বাষ্পীভবনের কারণে প্রাণের জন্য অপরিহার্য পানি মাটিতে জমে থাকে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চলগুলোর একটি উত্তর আফ্রিকা। বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার অবস্থান এখানে। এই অঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক, এখানে কিছু জায়গায় টানা এক বছরেরও বেশি সময় বৃষ্টিপাত না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
শিক্ষামূলক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকোভারির ওয়েবসাইটে পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আতাকামা মরুভূমি। এই মরুভূমি চিলির আরিকাতে অবস্থিত। আতাকামা মরুভূমিতেও বৃষ্টি হয়। যদিও স্থানটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ০৩ ইঞ্চি।
আন্তদেশীয় মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটেও আতাকামা মরুভূমিকে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটগুলোর বর্ণনায় কোথাও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম পাওয়া যায়নি।
বরং গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গবেষণা নিবন্ধ সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টিপাত হয়। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টিপাত ও সেখানে বসবাসরত ফিঞ্চ পাখির ডেমোগ্রাফি (পরিসংখ্যান) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দুজন গবেষকের করা একটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটি আমেরিকান অর্নিথোলজিক্যাল সোসাইটির গবেষণা সাময়িকী অর্নিথোলজিতে ১৯৮০ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় বাল্ট্রাতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত অনেক কম। গবেষণা চলাকালে দ্বীপটিতে ১৯৬৭ এবং ১৯৭০ উভয় সময়েই ১ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
এঞ্জি ড্রেক নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমন বিষয়ক উদ্যোক্তা বাল্ট্রা দ্বীপ ঘুরে এসে ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট নট ইয়ুর অ্যাভারেজ আমেরিকান নামের একটি ট্রাভেল ব্লগে নিজের অভিজ্ঞতা লেখেন। সেখানে ড্রেক জানান, তাঁরা যখন বাল্ট্রাতে পৌঁছান, সেখানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল এবং তখন বর্ষাকাল ছিল। ব্লগে তিনি সেখানকার বৃষ্টির ছবিও যুক্ত করেন।
দ্বীপটি সম্পর্কে গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সি নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইকুয়েডরের সঙ্গে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে সংযোগকারী দুটি বিমানবন্দরের একটির অবস্থান এই বাল্ট্রা দ্বীপে। দ্বীপটি এখন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পর্যটকদের প্রধান প্রবেশদ্বার। গ্যালাপাগোসে প্রতি বছর ২ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলে, যার প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ বাল্ট্রায় ওঠা–নামা করে। প্রতি বছর কয়েকশ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও নামে।
তবে বাল্ট্রা বেশ শুষ্ক। দ্বীপে গাছপালার মধ্যে আছে– লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ, ক্যাকটাস এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ। দ্বীপটিতে বুবি এবং ফ্রিগেটবার্ডসহ প্রচুর পাখি রয়েছে।
গ্যালাপাগোস ক্রুসেরোস নামের আরেকটি ওয়েবসাইট থেকেও বাল্ট্রা দ্বীপটির প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটি থেকে জানায়, বাল্ট্রা দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ আছে। দ্বীপটিতে বসবাসরত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে— ল্যান্ড ইগুয়ানা নামের এক ধরনের বড় আকৃতির টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি, যেমন: নীল পায়ের বুবি এবং পেলিকান।
প্রজনন ঋতুতে পাখিদের দ্বীপটির পাহাড় এবং সৈকতে ভিড় করতে দেখা যায়। সামুদ্রিক পাখি ছাড়াও বাল্ট্রা দ্বীপে সি গাল এবং বাজপাখির মতো পাখিরও দেখা মেলে। এ ছাড়া বাল্ট্রা দ্বীপের সৈকত এবং উপকূলে সি লায়নদের দেখা পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এদের বাল্ট্রার বালুময় সৈকতে বিশ্রাম নিতে বা আশেপাশের জলে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। দ্বীপটিতে ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে ঘন ঘন বৃষ্টিপাতও হয় বলে ওয়েবসাইটটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হোয়্যার অ্যান্ড হোয়েন নামের একটি ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাল্ট্রাতে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। দ্বীপটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় অক্টোবরে এবং সর্বোচ্চ ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ফেব্রুয়ারিতে।
অনুসন্ধানে বাল্ট্রা দ্বীপটি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, দ্বীপটিতে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা রয়েছে। আছে কয়েক প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী। এ ছাড়া দ্বীপটিতে বেশ বৃষ্টিপাতও হয়।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে